- আপনে যে হিন্দুদের নির্যাতন নিয়ে এত কথা লিখেন আপনি জানেন ওরা এখনো মুসলমানদের নিজেদের রান্নাঘরের ছায়াও মারাতে দেয় না? দেশভাগের আগে হিন্দু বাড়িতে মুসলমানদের বড়জোর বাংলাঘর পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি ছিলো। মুসলমানদের জন্য আলাদা চায়ের কাপ গ্লাস ছিলো। এখনো হিন্দুরা নিজেদের ‘হিন্দু’ ছাড়া আর কিছুই মনে করে না...
= জ্বি, আমি জানি। আমি জানি হিন্দুরা খুব একটা বদলায়নি। আমার জীবনে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে এগুলো দেখার। তাই, হিন্দুরা তাদের ঘরে অহিন্দুদের পছন্দ না করলে আমার বয়েই গেছে! আমি কি থাকতে চাইছি তাদের কাছে? তাদের কাছে আমি অছুত হলে তারাও আমার কাছে তাই! কিন্তু তার জন্য তাদের নিজ মাতৃভূমি হারানো বৈধ হয়ে যায়? না, কোনভাবেই তা হয় না। এই দেশে যদি কোন সম্প্রদায় কিছু হারিয়ে থাকে, যদি কেউ ত্যাগ স্বীকার করে থাকে তো সেটা হিন্দুরা। এটা আমি বলব কারণ এটা সত্য। তাদের জাতপাতের বিশ্রী ভেদবিচার- দেশভাগের দুর্ভোগ, সাম্প্রদায়িক হামলা নির্যাতনকে বৈধ করে না। এই বাংলাদেশে দেশভাগের প্রসঙ্গ যখনই কোন ‘বাঙালি মুসলমান লেখক’ তার কলমে তুলে এনেছেন তখনই হিন্দুদের বাড়িতে মুসলমানরা অছ্যুত ছিলো জানিয়ে দেশভাগে তাদের করুণ নির্মম অমানবিক পরিস্থিতিকে হালকা করতে চেয়েছে। এটা লজিক্যাল ফ্যালাসী।
হিন্দুদের নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। ইহুদী খ্রিস্টান বৌদ্ধ... যে কোন ধার্মিকদের নিয়েই নেই। আজকের যুগে আমার গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে কেউ যদি বাড়িতে গিয়ে স্নান করে পবিত্র হতে চায় তাকে নিয়ে আমি হাসাহাসি করব বড়জোর! কিন্তু সেই একই হিন্দু বা খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ যখন নওমুসলিম হয়ে গলাকাটতে আসবে আমার চিন্তা ভাবনার কারণে সেটির সঙ্গে হিন্দুত্বের বৌদ্ধেত্বের খ্রিস্টত্বের তুলনা বুদ্ধিভিত্তিক দেউলিয়াত্ব। একটা ছেলে হিন্দু ছিলো। গিটার বাজিয়ে গান গাইত। মন্দিরে গিয়ে ঘন্টা বাজাতো। হয়ত মুসলমানদের বাড়িতে গিয়ে খেতে মনে মনে ঘেন্নাও করত কে জানে।... তারপর একদিন মোটিভেশনাল স্পিকারদের হাতে পরে নওমুসলিম হয়ে গেলো! গিটার তো গেলোই সে এখন পাহাড় জঙ্গলে জিহদী ট্রেনিং নিতে ব্যস্ত! আল্লার আইন জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে সে এখন খুন করতে প্রস্তুত! আমি কোন কল্পিত গল্প বলছি না। নওমুসলিম জঙ্গিদের হিস্টি এটা। এক ডজন নওমুসলিম পেশাদার ওয়াজী হুজুর আছে যাদের ওয়াজের টপিকই হলো হিন্দু ধর্মকে আক্রমন করা। তাদের বায়না করে নেওয়াও হয় একারণেই। হিন্দুদের অন্য যত দোষই থাকুক তারা অন্যের ধর্ম নিয়ে কথা বলে কম। হিন্দুরা বস্তুত ধর্ম বিষয়ে জানেও কম। কোন হিন্দু ছেলেমেয়েই নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানে খুব কম। তারা নিয়ম ব্রত কবে কোনদিন সেটা জানে কিন্তু কেন কি কারণে এসব তা জানে না। তাত্বিক ধর্মীয় জ্ঞান তাদের থাকে না। ফলে হিন্দুদের মধ্যে আব্রাহামিক ধর্ম গ্রহণের পরিমাণ বেশি কারণ আব্রাহামিক ধর্মগুলো তাদের সম্প্রদায়ের মাঝে তাত্ত্বিকভাবে শক্ত ভীতের উপর গড়ে তুলে। তাই ধর্মে উদাসিন হিন্দু বা উগ্র ধার্মিক হিন্দুর ধর্মান্তর হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গতে গিয়েছিলো যেসব হিন্দু তারা কি কেউ ভালো মানুষ ছিলো? মোটেই না। সেই রকম এক হিন্দু পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। এখন তার পেশা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে বলা তিনি বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছিলেন আর কিভাবে হিন্দু ধর্ম অসত্য বুঝতে পেরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন...।
ইসলাম কি চিজ সেটি বুঝতে কেবল চীনের উইঘুরদের দিকে তাকান। সেই কোনকালে আবদুর রহমান আবদেল উইঘুর গিয়ে ধর্মান্তরিত করে এলো। এখন সেই চাইনিজরা নিজেদের নাম আরবীতে রাখে। নিজেদের পরিচয় দেয় ‘মুসলমান’। উইঘুরকে তারা ইসলামী খিলাফত বানাবে। আল্লার আইন কায়েম করবে। চীন কি আর এই ভাইরাস আস্তা রাখবে? শেকড় তুলে ফেলার চেষ্টা করতেই সারাবিশ্বে মানবতার কান্না উঠেছে উইঘুররা নির্যাতিত...। তাহলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ কিভাবে এগুবে? কেউ কি প্রমাণ করে দেখাতে পারবে ইসলামে ইসলামী খিলাফত ও আল্লা আইন প্রতিষ্ঠা করতে বলে নাই? যদি বলে থাকে তাহলে জঙ্গিবাদ কিভাবে ইসলামকে রেখে নির্মূল সম্ভব?
লেখাটা শুরু করেছিলাম হিন্দুদের এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও প্রথা পার্বন পালনের পাগলামী আর মানুষকে জাত ধর্মে উত্কৃষ্ট নিকৃষ্ঠ মনে করা নিয়ে। এসব নিয়ে আসলে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। কোন ধর্ম নিয়েই নেই। মানুষের ধার্মিকতা দেখে বড়জোর আমি নিরবে হাসি। ইসলাম নিয়েও আমার সেরকমই পজিশন থাকত। কিন্তু ইসলাম তা নয়। দেশভাগের হাজারটা কারণ থাকলেও ইসলামের প্যান ইসলামিজম চেতনা যে মুসলিমদের দিয়ে মুসলমানদের নিজস্ব দেশ বাস্তবায়ন করিয়েছিলো সেটি আমরা ভুলে যাই। সমস্যা কি ছিলো এই দেশে হিন্দু মুসলমান কারোর সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রেখেই পাশাপাশি বসবাস করলে? কিন্তু তা কি হবার ছিলো? এই দেশে সুফিরা এসেছিলো ধর্মান্তরিত করার মিশন নিয়ে। বখতিয়ার খিলজি বা মুহাম্মদ বিন কাসেম তাদের সকলের সফর সঙ্গি ছিলো সুফিরা যারা ‘গজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠা করতে সুদূর ভারত এসেছিলো। ইউরোপের জাহাজে চড়ে একদিন খ্রিস্ট ধর্মও এই উপমহাদেশে এসেছিলো। তারাও ধর্মান্তরিত মিশন চালিয়েছিলো আব্রাহামিক ধর্মের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম কি এই মহাদেশকে জাতিগতভাবে বিভক্ত করেছিলো? বুকে হাত দিয়ে সত্য বলুন? না করেনি কারণ খ্রিস্টধর্ম ইসলামের মত ভাষা সংস্কৃতির উপনিবেশ চালায় না। সাম্রাজ্য স্থাপনের মিশন চালায় না। ইসলামে কোন জাতপাত ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা নেই সেটা ইসলামের উদারত নয়। এসব থাকলে আপনি ধর্মান্তরিত করতে কি করে মানুষের কাছে গিয়ে বসবেন? জাতপাত বিশ্বাস করা হিন্দু আসলে প্যাসিভ, জাতপাতহীন মুসলিম আসলে এক্টিভ! আমি হিন্দুদের ইগ্নোর করে গেলেও ইসলামকে ইগ্নো করে গেলে সে চুপ করে বসে থাকবে না। সে আমাকে আমার মত বাস করতে দিবে না!
0 Comments