ইচ্ছামতো চাঁদাবাজি চলছে সীতাকুণ্ডের চতুর্দশী মেলায়

ইচ্ছামতো চাঁদাবাজি চলছে সীতাকুণ্ডের চতুর্দশী মেলায়

 

 সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি, প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩


প্রতিবছরের ন্যায় সীতাকুণ্ডে শুরু হয়েছে শতবর্ষী শিব চতুর্দশী মেলা। শনিবার মেলার দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলাকে ঘিরে বসেছে রংবেরঙের পণ্য সামগ্রীর দোকান। তবে মেলায় আগত দোকান ও পুরোহিতদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।


অন্যান্য বারের তুলনায় এবার মেলায় মৌসুমী দোকানের সংখ্যা কিছুটা কম। তবে গত দুই দিনে চার শতাধিক দোকান ও ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পুজো ও তর্পণ করতে আসা আড়াইশো পুরোহিতের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদা আদায়ের তথ্য মিলেছে। কমিটির নামে চাঁদা আদায় করলেও চাঁদা আদায়ের কথা অস্বীকার করছে মেলা ও তীর্থ কমিটির নেতৃবৃন্দ।


সরেজমিনে শনিবার দুপুরে মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধাম এলাকায় তীর্থ যাত্রী, দোকানী, পুরোহিত এবং সনাতনী বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের মেলাকে ঘিরে একটি মহল ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। মেলায় আগত প্রতিটি দোকান থেকে সর্বনিম্ম ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা (চার দিনের জন্য) আদায় করা হচ্ছে। এ চাঁদাবাজির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ব্যাসকুন্ডের পাড়ে পূজা করতে আসা পুরোহিতরাও। প্রত্যেক পুরোহিতকে আড়াই হাত জায়গায় বসার অনুমতি দিয়ে মেলার তিন দিনের জন্য আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা। এভাবে ৫ শতাধিক দোকান ও আড়াই’শ পুরোহিতের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া মেলার বিভিন্ন স্থানে তীর্থ যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যাগ, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলেও জানা গেছে।


পরিদর্শনকালে কথা হয় ফরিদগঞ্জ থেকে আসা ষাটোর্ধ বৃদ্ধা শোভা রানী ও রামগতি থেকে আসা বৃদ্ধা মায়া রানী সূত্রধরের সাথে। শোভা রানী বলেন, জীবনের একটা বড় ইচ্ছা ছিলো সীতাকুণ্ডের শিব চতুর্দশী মেলায় আসব। অবশেষে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে পথে পথে শুধু হয়রানির শিকার হলাম। গাড়ি থেকে নেমে একটি ডাব কিনেছি ১২০ টাকা দিয়ে। এই ডাবের দাম ৪০-৫০ টাকার বেশি হবার কথা নয়। পূজার জন্য প্লাষ্টিকের শাখা কিনলাম জোড়া ৪০০ টাকায়। যা বাজারে খুব বেশি হলে ১৫০ টাকা হতে পারে। এভাবে ব্যাসকুন্ডের পাড়ে পুরোহিতের কাছে গেলাম কিছু ধর্মীয় কাজ করতে। তিনি দাবি করেন ৭০০ টাকা। সবখানেই এরকম অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আমরা দিশেহারা।


 অন্যদিকে তীর্থ যাত্রী মায়া রানী জানান মেলায় এসে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার কথা। এক যুবক হঠাৎ তার ব্যাগ টান দিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। 


এদিকে কেন এভাবে সর্বত্র অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে দোকানিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এখানে দোকান বসালেই অনেক অনেক টাকা দিতে হয়। 


চন্দ্রনাথ ধামের মোহন্ত আস্তানার পাশে বসা টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী দেবদুলাল জানান, মেলার তিন দিনের জন্য ছোট একটি দোকান করতে তাকে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। মেলা কমিটির নাম দিয়ে কতিপয় যুবক এই টাকা জোরপূর্বক দিতে বাধ্য করেন। টাকা না দিলে দোকানের মালামালও তারা লুট করে। এভাবে অতিরিক্ত টাকা দিতে হওয়ায় তারাও ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত দামে পন্য বিক্রি করেন। 


ব্যাসকুন্ডের পাড়ে বসা পুরোহিত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে আসা বিনয় ভূষণ চক্রবর্তী ও চাঁদপুরের কচুয়া থেকে আসা শুভ চক্রবর্তী জানান, তারা এখানে ভক্তদেরপূজা করিয়ে দিতে বসেন। এ জন্য কমিটির নামে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ফলে তারাও ভক্তদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। এখানে অন্তত আড়াই’শ পুরোহিত এভাবে চাঁদা দিচ্ছে বলে জানান তারা। 


অন্যদিকে মেলায় মহাশ্মশানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে প্রকাশ্যে গাজা, ভাং বিক্রি ও খাওয়া হচ্ছে। যা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মেলা থেকে অর্ধ কোটি টাকার বেশি আদায় হলেও এসবের দায় নিতে রাজি নয় মেলা ও স্রাইন কমিটি। 


এসব বিষয়ে মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, আমরা কোন টাকা তুলি না। দোকানপাট বা অন্যান্য ইজারার টাকা তুলে স্রাইন (তীর্থ কমিটি)। তারা আমাদের মেলার খরচের জন্য মাত্র আড়াই লাখ টাকা দেন। আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। 


অন্যদিকে তীর্থ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাস বলেন, পুরোহিতদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি গতবছরও প্রতিবাদ করেছি। কেন পুরোহিতরা পূজা করতে এসে চাঁদা দেবে ? কিন্তু তবুও একটি মহল জোর করে চাঁদা আদায় করছে। আর দোকানপাটের জায়গাও আমরা ইজারা দিই না। স্থানীয় এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৩-৪ জন এসব ইজারা দেয়া, টাকা তোলা এসব করেন। কিন্তু দায় আসে আমাদের উপর।


এসব বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ (বিপিএম) বলেন, এখানে চাঁদাবাজির কারণে দূরাগত তীর্থযাত্রীরা হয়রানির শিকার হলে বদনাম আমাদেরও। তাই এসব বন্ধ করব আমরা। তিনি সীতাকুণ্ড থানার ওসিকে এসব চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।


https://www.cvoice24.com/chattogram/news/61528

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ