নমস্কার প্রসঙ্গে সনাতন ধর্মীয় মত

নমস্কার সবাইকে দেওয়া যায়। 

বয়সে ছোট বা বড় কোন কিছুই নমস্কার প্রদানে বাধা নয়। অর্থাৎ আপনি মার্জিত, শিক্ষিত, নিরহংকারী, উদার মানুষ হলে আপনার চাইতে বয়সে ছোট বা বড় সবাইকে নমস্কার দিতে পারেন।

নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চনমঃ পূর্বজায় চাপরজায চ 

নমো মধ্যমায় চাপগল্ডায় চ নমো জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।। (যজুর্বেদ ১৬.৩২)


অনুবাদ- নমস্কার জ্যেষ্ঠদেরকে, নমস্কার কনিষ্ঠদেরকে, নমস্কার উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, ধনী-গরীব, জ্ঞানী, স্বল্পজ্ঞানী সকলকে। অর্থাৎ এ থেকে আমরা জানতে পারি যে নমস্কার এমন ই এক অনন্য অভিবাদন যাতে ধনী-গরীব, ছোট-বড়, শিক্ষিত- অশিক্ষিত ভেদ নেই। যে কেউ এইটা যে কাউকে দিতে পারে। আমাদের বৈদিক ঋষিগন সকলেই নমস্কার দিয়ে অভিবাদন জানাতেন। শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ সকলেই নমস্তে ব্যবহার করতেন অভিবাদন জানাতে। 


'নম' শব্দের অর্থ হল নত হওয়া বা শ্রদ্ধা/সম্মানপ্রদর্শন করা যার সাথে 'তে' ধাতু যুক্ত হয় যার অর্থ তোমাকে অর্থাৎ নমস্তে/নমস্কার অর্থ হল তোমার প্রতি রইলশ্রদ্ধা। 


বেদাদি সত্য শাস্ত্র এবং পুরাণাদি গ্রন্থ সকলেই একস্বরে বলে যে পরস্পর 'নমস্তে' শব্দের ব্যবহার হওয়া উচিত।


যেমনঃ-


১. নমস্তে স্থায়তে নমো অন্তু পরায়তে। নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোততে নমঃ - অথর্ববেদ ১১.২.১৫

অনুবাদ- হে রুদ্রদেব! আপনাকে আসতে, যেতে, উঠতে, বসতে সব স্থিতেতে আপনার প্রতি আমাদের নমস্কার। 


২. নমস্তে সর্বসংস্থায়, নমস্তে জলশায়িনে। 

নমস্তে ক্ষিতিরূপায়, নমস্তে তৈজসাত্মনে - বারাহ পু০ ১১।১২

সর্বব্যাপ্ত, জলে শ্রবণকারী, পৃথিবীরূপ এবং তেজস্স্বরূপ বিষ্ণুকে নিত্য নমস্তে করি।


৩. নমো নমস্তেহস্তু সহস্ৰকৃত্বঃ পুনশ্চ ভূয়োহপি নমো নমস্তে - গীতা ১১/৩৯

অর্থাৎ আপনাকে পুনঃ পুনঃ নমষ্কার, সহস্রবার নমষ্কার, পুনরায় আবারও নমষ্কার।"


৪. সা হোবাচ ব্রাহ্মণ্য ভগবন্তস্তদেব বহু মন্যেধ্বং যদস্মান্নমস্কারেণ মুচ্যেধ্বং ন বৈ জাতু যুন্নাকমিমং কশ্চিদ্ ব্রহ্মদ্যেং জেতেতি ততো হ বাচক্সব্যুপররাম - বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩/৮/১২

অর্থাৎ, গার্গী বললেন, শ্রদ্ধেয় ব্রাহ্মণগণ যদি যাজ্ঞবল্ক্যকে নমস্কার করে এনার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পান তবে যথেষ্ট মনে করবেন। ব্রহ্মবিচারে আপনারা কেউই এনাকে পরাস্ত করতে পারবেন না। 


বৈজ্ঞানিক যুক্তি:-

২০০২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত "ইন্ট্যারন্যশনাল ইয়োগা সোসাইটির" ম্যগাজিনে বলা হয়েছে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্তে ভঙ্গীতে অর্থাৎ, অঞ্জলি মুদ্ৰায় প্রানায়াম বা ধ্যান করলে তা হাতের মাংসপেশীকে শিথিলকরে এবং এটি মাংসপেশী জনিত ব্যথা নিরাময়ে উপকারী।


আসুন আমরা একে অপরকে নমস্কার বলি। নমস্কারই একমাত্র সর্বজনীন অভিবাদন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ