![]() |
গল্প - ইসকন এবং আমার বন্ধু - সায়ন্তন সৈকত রায় |
এলাকার এক বন্ধু ফেসবুকে পোস্ট দিছে, ইসকন একটি ঝিঙ্গা সংগঠন। ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আজ এক্সাম উপলক্ষে ঢাকা আসছে, দেখা হয়ে গেল, কোলাকুলি শেষে বললাম- চল খাওয়াই তোকে। বেকার মানুষ তাই গোশত মাছ খাওয়াতে পারমু না কিন্তু।
সে বলল, চল মামা প্যারা নাই।
তো একটা নিরামিষ হোটেলে ঢুকে দুজনে দিলাম হ্যাচকাই খাওয়া। বন্ধু শেষে আঙুল চাটতে চাটতে বলছে- ভাই, আমার বউও তো সবজি রান্ধে, এমন স্বাদ তো হয় না।
আমি ভাবির নিন্দা না করে বললাম, মামা দেখ হোটেলডা ইসকনের!- সেও দেখে আঁতকে উঠল, আরে তাইতো... কিন্তু এরা এতো ভাল রান্ধে?
আমি - মনে হয় নাইট্রিক এসিড মিক্স করে 😂..
- আরে না কী বলস।
- শোন ভাই, ইসকন একটা ধর্মীয় সংগঠন। বাংলায় যেটা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনা+অমৃত সংগঠন, সেটাই ইংলিশে International Society for Krishna Consciousness. এদের দিন শুরু হয় তোদের মতই ফজরের ওয়াক্তে। দিনে ১৬ বার ১০৮ গুটির তসবিহতে "হরে কৃষ্ণ হরে রাম" জপতে হয়। আর প্রতিটা ইসকন মন্দিরে বিগ্রহ বা তুই মূর্তি বললে মূর্তি, ঐ মূর্তির সেবা, সাজগোজ, ভোগ বানানো এসবেই কত সময় লাগে তুই ধারণা করতে পারবি না।
আরো সহজ করে বলি, ইসকন ভক্তদের নিয়মটা এরকম যে এরা যদি প্রস্রাব করে তাও কোমর পর্যন্ত ধুয়ে নেয়। আর দিনে যতবার বড় টয়লেটে যাবে, ততবার পরিপূর্ণ স্নান করে নেবে। শীত গ্রীষ্ম কোন পার্থক্য নাই। তুই বল, এরা ঝিঙ্গাবাদি কার্যক্রম করার টাইম কই পাবে?
- কিন্তু ওরা যে জয় শ্রীরাম বলে? আমি তো সবখানে, হিন্দুপাড়া, মন্দিরে হরে কৃষ্ণ হরে রাম কীর্তনই দেখছি।
- দেখ, হরে কৃষ্ণ হরে রামই কিন্তু ইসকনের মূল মন্ত্র। এমনকি ওরা কারো সাথে দেখা হলেই হরেকৃষ্ণ বলে।
বলতে না বলতেই কে একজন কাউন্টারের লোককে ফোন দিলো। তিনি রিসিভ করলেন, "হরে কৃষ্ণ, বৃন্দাবন হোটেল, কে বলছেন?"
আমি বলে চললাম, আর দেখ "হরে কৃষ্ণ হরে রাম"-ও তো ভারতীয়। আমাদের ছোটবেলাতেই তো ভুলভুলাইয়া মুভির গান বের হইছিল, এখনো বের হচ্ছে... তো আমি তোর কোন সিদ্ধান্ত চাই না। জাস্ট বললাম যে ভুল প্রচার করিস না। এসব ভুল পোস্টের জন্য কাল এলাকায় শ্লোগান হচ্ছে- একটা একটা ইস কন ধর, ধরে ধরে জোবাই কর।
তুই সবকিছু বাদ দিয়ে ঐ লোকটারে দেখ। মনে হয় জবাই করার মত কেউ?
বন্ধু এতক্ষণ চুপচাপ আমার ভ্যাজরভ্যাজর শুনছিল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "সবকিছু বাদ, কিন্তু এত স্বাদের রান্না যারা বানাইতে পারে, তারা আশা করি এতটা খারাপ হইতে পারে না... কিন্তু হালার ভাই, তুই আবার আমারে প্রসাদ খাওয়াই দিসসনি?"
- আরে ফাগল নি কোন। হালা তুই হইছস আমার সেই দোস্ত, যে জুলেখার বিয়াতে আমারে, অনুপরে নিমন্ত্রণ করেও মুরগি করে নাই, খালি গরু করসে বলে ঝগড়া করছিলি ওর আব্বার সাথে, আমাদের জন্য। আমাদের জন্য খানা বাদ দিয়ে বের হয়ে গেছিলি। তোর হারাম হালাল আমি দেখব না? প্রসাদ পাওয়া যায় মন্দিরে। হোটেলে সব বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এরা বেচাবিক্রি করে। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকে আছে শিবের প্রসাদ ছাড়া খায় না, অনেকে গুরুপ্রসাদ ছাড়া খায় না। তাই এখানে ইন জেনারেলই রান্না করে। আর যদি কোনদিন জেনে-বুঝে এমন বদমাইশি করিও, আমার বিশ্বাস উপরে যিনি আছেন, তিনি পাপটা আমার খাতাতেই লিখবেন, তোর না।
অতঃপর তাকে বাসে তুলে দিয়ে মেসে ফিরে এই "গপ্পো" লিখলাম।
সূত্র: ফেসবুক
0 মন্তব্যসমূহ