আমি কেন নমস্কার সম্বোধন করবো

আমি কেন নমস্কার সম্বোধন করবো

 


আমি কেন নমস্কার সম্বোধন করবো⁉️ 


✍️ এ ধরিত্রী মাঝে বহু মানুষ তাদের আবাস গড়েছে। তবে তারা আলাদা কোনো জাতি নয়, কেউ নয় ছোট, সকলেই অমৃতের সন্তান। বহু ভাষা সংস্কৃতির মানুষের বসবাস এই পৃথিবীতে। সকলে বহু শব্দ দ্বারা একে অপরকে সম্বোধন করে থাকে। পবিত্র বেদ সবর্দা মানবজাতির মঙ্গলের উপদেশ দিয়েছে। যা অনুসরণ করে মানুষ পৌঁছাতে পারে শান্তির নীড়ে। তেমনি পবিত্র বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে একজন মানুষ অপরকে কোন শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা উচিত তা উল্লেখিত রয়েছে। 


নিচে নমস্কার বা নমস্তে শব্দের বিশ্লেষণ ও শাস্ত্রীয় প্রমাণ করা হলো :- 


📑🌿 নমস্তে এ শব্দ দ্বারা একজন মানুষ অপরকে সম্বোধন করার কথা বলা হয়েছে। "নমস্তে" শব্দটি সংস্কৃত শব্দ । 'নম’ শব্দের সংকীর্ণ অর্থ হল "নত হওয়া"।  কিন্তু ব্যাপকভাবে এর অর্থ "শ্রদ্ধা" / "সম্মান" প্রদর্শন করা । যার সাথে ‘তে’ ধাতু যুক্ত হয় , এই 'তে' ধাতুর অর্থ হল "তোমাকে/আপনাকে" ।


অর্থাৎ "নমস্তে" শব্দের সম্পূর্ণ অর্থটা হল "তোমার প্রতি শ্রদ্ধা/সম্মান রইলো" । ‘নমস্তে’ শব্দটির বাংলা অর্থ হল "তোমাকে/আপনাকে নমস্কার জানাই" ।


তাই যাঁরা শুধুমাত্র "নমস্কার" বলেন তাঁরা "নমস্তে"-র সম্পূর্ণ অর্থ প্রয়োগ করেন না । একমাত্র "নমস্তে" শব্দটিই সম্পূর্ণ , আর শুধু "নমস্কার" শব্দটি অর্ধপূর্ণ। 


⁉️কিন্তু নমস্কার বা নমস্তে বলার শাস্ত্রীয় প্রমাণ ব্যতিত আমরা তাকে মান্য করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই নিম্নে সে সকল শাস্ত্রীয় প্রমাণ উত্থাপন করা হলো: 



📑 পবিত্র বেদ অনুসারে নমস্কার:


নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চনমং পূর্বজায় চাপরজায় চনমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চনমো জঘন্যায় চ বুধ্যায় চ।। -যজুর্বেদ১৬/৩২📖🌿


অর্থাৎ, নমস্তে জ্যেষ্ঠদেরকে,নমস্তে কনিষ্ঠদেরকে, নমস্তে উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,ধনী-গরীব,জ্ঞানী,স্বল্পজ্ঞানী সকলকে।


নমস্তে স্ত্বায়তে নমো অস্ত্ত পরায়তে । নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোততে নমঃ।।                  

- অথর্ববেদ ১১/২/১৫📖🌿


অর্থাৎ,  হে রুদ্রদেব! আপনাকে আসতে, যেতে, উঠতে, বসতে সব স্থিতেতে আপনার প্রতি আমাদের নমস্কার। 



📑🍂 উপনিষদ অনুসারে নমস্কার: 


"সা হোবাচ ব্রাহ্মণ্য ভগবন্তস্তদেব বহু মন্যেধ্বং যদস্মান্নমস্কারেণ মুচ্যেধ্বং ন বৈ জাতু যুন্নাকমিমং কশ্চিদ্ ব্রহ্মদ্যেং জেতেতি ততো হ বাচক্সব্যুপররাম"

- বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩/৮/১২📖🌿


অর্থাৎ, গার্গী বললেন, শ্রদ্ধেয় ব্রাহ্মণগণ যদি যাজ্ঞবল্ক্যকে নমস্কার করে এনার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পান তবে যথেষ্ট মনে করবেন। ব্রহ্মবিচারে আপনারা কেউই এনাকে পরাস্ত করতে পারবেন না। 


"তিস্রো রাত্রীর্যদবাৎসীর্গৃহে মেহনশ্নন্ ব্রহ্মন্নতিথির্নমস্য 

নমস্তেহস্তু ব্রহ্মন্ স্বস্তি মেহস্তু তস্মাৎ প্রতি ত্রীন্ বরান্ বৃণীত্ব"।।  - কঠোপনিষদ ১/১/৯📖🌿


অর্থাৎ, যম নচিকেতাকে বললেন, " হে ব্রাহ্মণ, নমস্কার যোগ্য অতিথি, তোমাকে নমস্কার করি। হে ব্রাহ্মণ আমার কল্যান হোক। যেহেতু তুমি আমার গৃহে অনাহারে তিনরাত্রি যাপন করেছ, তাই প্রতি রাত্রির জন্য একটি করে মোট তিনটি বর প্রার্থনা করো। 



📑🍂 সনাতন ধর্মের জনপ্রিয় ও বিশ্বনন্দিত গ্রন্থ শ্রীমদভগবদগীতায় নমস্কার:


"নমো নমস্তেহস্তু সহস্ৰকৃত্বঃ পুনশ্চ ভূয়োহপি নমো নমস্তে"। -গীতা ১১/৩৯📖🌿

অর্থাৎ আপনাকে পুনঃ পুনঃ নমষ্কার, সহস্রবার নমষ্কার, পুনরায় আবারও নমষ্কার।"

"নমঃ পুরস্তাদথ পৃষ্ঠতস্তে নমোহস্তু তে সর্বত এব সর্ব"

 - গীতা১১/৪০📖🌿


অর্থাৎ, আপনার সামনে পেছনে নমষ্কার, আপনার সবদিকেই নমষ্কার।"


পবিত্র বেদ বৈদিক শাস্ত্র ব্যতিত ঐতিহাসিক গ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতেও রয়েছে নমস্কার দ্বারা সম্বোধন করার উল্লেখ: 



📑🍂 বাল্মিকী রামায়ণে নমস্কার:


"সর্ব্বাথা চ মহাপ্রাজ্ঞ পূজার্হেণ সুপূজিতঃ।

নমস্তেহস্তু পমিষ্যামি মৈথেণেক্ষম্ব চক্ষুসা"।।

- বাল্মিকী রামায়ণ -> বাল কান্ড ৫২/১৭📖🌿


অর্থাৎ, বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠকে বললেন,  হে মহাপ্রাজ্ঞ! আশ্রমের অন্যান্য বস্তু দ্বারা  আপনি আমার সর্বপ্রকারে পূজা করেছেন। এক্ষণ আমি যাই,  আপনাকে নমস্কার। আপনি আমার সকরুণ নয়নে আমাকে অবলোকন করুন।



📑🍂 মহাভারতে নমস্কার: 


"আচার্য প্রণিপত্যৈষ পৃচ্ছামি তাং নমোহস্তু তে"

- মহাভারত -> ভীষ্মপর্ব ৪৩/৬৩📖🌿


📑 এখানে যুধিষ্ঠির দ্রোণাচার্যকে প্রথমে নমস্কার বলে চরণস্পর্শ করে প্রণাম করছেন। 


"সঞ্জয়ো অয়ং ভূমিপতে নমস্তে"

- মহাভারত -> উদ্যোগ পর্ব ৩২/৫📖🌿


📑 এখানে দ্বারপাল মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে নমস্কার করেছেন-


"শিবেন পাণ্ডবান্ পাহি নমস্তে ভারতষর্ভ"

- মহাভারত -> শল্যপর্ব ৬৩/৫৪📖🌿


📑 এখানে স্বয়ং আর্য শ্রেষ্ঠ বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে নমস্কার জানাতে দেখা যায়। 


"নমস্তে দেহি মামস্মৈ লোকে নান্যং পতি বৃণে"

- মহাভারত -> আদিপর্ব  ৮১/৩০📖🌿


📑 এখানে দেবযানী শুক্রাচার্যকে নমস্কার করছেন।



✍️ নমস্কার সম্বোধন এর যেমন ধার্মিক গুরুত্ব রয়েছে তেমনি রয়েছে বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব যা ইতিমধ্যে প্রমাণিত সত্য। 


📑 ২০০২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত "ইন্ট্যারন্যশনাল ইয়োগা সোসাইটির" ম্যগাজিনে বলা; হয়েছে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্তে ভঙ্গীতে অর্থাৎ, অঞ্জলি মুদ্ৰায় প্রানায়াম বা ধ্যন করলে তা হাতের মাংসপেশীকে শিথিলকরে এবং এটি মাংসপেশী জনিতভব্যথা নিরাময়ে উপকারী।


✍️ নমস্কার - বৈদিক ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও ভগবান শ্রীরাম নমস্কার বা নমস্তে দ্বারা সম্বোধন করতেন। পবিত্র বেদ, উপনিষদ ও শ্রীমদভগবদগীতা এবং বাল্মিকী রামায়ণ ও মহাভারতে নমস্তে বলা কথা বলা হয়েছে। তদরুপ বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত নমস্কার এর উপকারিতা। তাহলে সিদ্ধান্ত আপনার প্রিয় মিত্র প্রমুখ। শাস্ত্র ও বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত নমস্কার দ্বারা এক অপরকে সম্বোধন করে বৈদিক সত্য গৌরবান্বিত করি।



# সূত্র: VEDA

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ