প্রতিটি মানুষ ৫০টি বৃত্তির দ্বারা প্রভাবিত। উক্ত বৃত্তিগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে যম, নিয়ম ও স্বাত্তিক আহার আবশ্যকীয়।
১) যম- যম মানে বাহ্যিক পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে সংযত করা অর্থাৎ অপরের সঙ্গে সংযত ব্যবহার। মানুষ-পশু-পক্ষী-উদ্ভিদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। যমের পাঁচটি অঙ্গ রয়েছে। যেমন- অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ।
অহিংসাঃ অহিংসা মানে হিংসা না করা। আর যখন কোন কথা, চিন্তা বা কাজ অন্য কাউকে দুঃখ বা কষ্ট দেবার জন্য বলা বা করা হয় তাকে হিংসা বলে। তাই মন, বাক্য ও শরীরের দ্বারা কারো ওপর পীড়ন না করার নামই অহিংসা।
সত্যঃ অপরের কল্যাণের জন্যে, ভালোর জন্যে কিছু ভাবা ও সেই অনুসারে কিছু বলা বা করাকেই সত্য বলা হয়।
অস্তেয়ঃ অস্তেয় মানে চুরি না করা। টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্তর লুকিয়ে নিয়ে পালালে বা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করে নিয়ে পালালেই যে কেবল চুরি হ'ল তা নয়। গায়ের জোরে, অস্ত্রের জোরে বা বুদ্ধির জোরে অন্যকে ঠকিয়ে বা পদমর্যাদার জোরে ঘুষ বা উপঢৌকনের মাধ্যমে অন্যের টাকা-পয়সা বা ধন-সম্পত্তি যা কিছু অপহরণ কর না কেন, তা চুরি পর্যায়ভূক্ত।
ব্রহ্মচর্যঃ ‘ব্রহ্মচর্য' শব্দের প্রকৃত অর্থ হ'ল ব্রহ্মের ভাব নিয়ে কাজ করা। অর্থাৎ যে বস্তুকে বা জীবকে নিয়ে কাজ করছি বা চিন্তা করছি তাকে জড়বস্তু হিসাবে না দেখে ব্রহ্মেরই বিকাশ হিসাবে দেখা।
অপরিগ্রহঃ নিজের তথা পরিবারের জন্য যতটা প্রয়োজন তার বেশী জড়বস্তুর ভোগের চেষ্টা না করাকে অপরিগ্রহ বলে।
২) নিয়ম- নিয়ম মানে আত্মশুদ্ধির জন্য যে আচার-আচরণ। অর্থাৎ নিজেকে নিজের বহির্মুখী প্রবণতার বিরুদ্ধে সংযত করার প্রয়াস। নিয়মও পাঁচ প্রকার। যথা- শৌচ, সন্তোষ, স্বাধ্যায়, তপঃ ও ঈশ্বর প্রণিধান।
শৌচঃ শৌচ মানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। শৌচ দুই প্রকার। যথা- বাহ্যিক শৌচ ও মানসিক শৌচ। বাহ্যিক শৌচ মানে শরীর, জামা-কাপড়, ঘর ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। মানসিক শৌচ মানে সব সময় অপরের ভাল চিন্তা করা। মনে মনেও কারো ক্ষতির চিন্তা না করা।
সন্তোষঃ সহজ ভাবে যা পাওয়া যায় তাতে সন্তুষ্ট থাকার নামই সন্তোষ। অর্থাৎ শরীর ও মনের সামর্থের বেশী চাপ না দিয়ে যা উপার্জন করা যায় তাতে সন্তুষ্ট থাকাকেই সন্তোষ বলে।
তপঃ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শারীরিক-মানসিক কষ্ট স্বীকার করাকে তপঃ বলে।
স্বাধ্যায়ঃ অর্থ বুঝে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করাকে স্বাধ্যায় বলে । সৎসঙ্গ, সাপ্তাহিক ধর্মচক্রে অংশগ্রহণ করাও স্বাধ্যায়ের অঙ্গ।
ঈশ্বর প্রণিধানঃ সুখে-দুঃখে, সম্পদে-বিপদে ঈশ্বরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা ও জাগতিক সমস্ত ব্যাপারেই নিজেকে যন্ত্রী মনে না করে যন্ত্র মনে করে চলা।
৩) আসনঃ নিয়মিত আসন অভ্যাসের দ্বারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকা যায় তথা সারিয়ে তুলতে পারা যায় আর গ্রন্থিগত ত্রুটি দূর করে জৈবিক বৃত্তির ওপর বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়।
৪) প্রাণায়ামঃ আমাদের শরীর ও মন কাজ করে প্রাণশক্তির গতিধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে। তাই এই প্রাণশক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। প্রাণায়ামের দ্বারা প্রাণবায়ু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় আবার অধিক বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে অক্সিজেনের অভাব মিটিয়ে শারীরিক সুস্থ্যতা রক্ষা করা যায়।
৫) প্রত্যাহারঃ বাহ্যিক বা কাল্পনিক বস্তুর প্রতি মানসিক আসক্তি কাটিয়ে ওঠার বা মানসিক আসক্তি নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস।
৬) ধারণাঃ মনকে একটা বিশেষ স্থানে বা ভাবে স্থিত করার প্রয়াস।
৭) ধ্যানঃ আরাধ্যের ভাব নিয়ে তাঁর পানে মানসিক ভাবপ্রবাহকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ছুটিয়ে দেবার প্রয়াস।
৮) সমাধিঃ আরাধ্যের ভাবে একীভুত অবস্থা, চরম আনন্দঘন অবস্থায় সমাহিত হয়ে যাওয়া।
0 মন্তব্যসমূহ