‘The Kerala Story’ দেখার পর শায়লা খান বান্নার স্মৃতিচারণ

‘The Kerala Story’ দেখার পর শায়লা খান বান্নার স্মৃতিচারণ

 

‘The Kerala Story’ দেখার পর থেকে অস্থিরতায় ভুগছি, মেয়েগুলোর অসহায় চাহনী সারারাত আমাকে ঘুমাতে দেয়নি, সেইসাথে আমার নিজের দেখা একটা ঘটনা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আমি জানি না সেই মেয়েটির জীবনের পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল!


৯২ সালের কোন একসময় আমার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি ছিলাম ধানমন্ডির একটা প্রাইভেট হাসপাতালে।

অল্প বয়সের একটা মেয়ে নার্স খুব বেশী হলে ১৭/১৮ বছরের হবে, সবসময় মলিন মুখে কাজ করতো।

কেন যেন আমাকে খুব পছন্দ করতো, ডিউটি না থাকলেও মাঝে মাঝে আমার রুমে চলে আসতো, নানা কাজে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করার সাথে সাথে টুকটাক গল্পও করতো। কিন্তু সন্ধ্যার সময় কোনমতেই তাকে ধরে রাখা যেত না, হাজার প্রয়োজনেও শুধু ওকে নয় বেশীর ভাগ নার্সদের ওই সময়টাতে পাওয়া যেত না।


ধরো ওর নাম ছিল সুনিতা, একদিন সকালে আমি খুব বিরক্ত হয়ে সুনিতাকে বললাম- সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের পাওয়া যায় না কেন? কাল সন্ধ্যায় এতো দরকার ছিল অনেক কল করেছি কিন্তু পাইনি তোমাকে!


মুখ নিচু করে সুনিতা বললো, সরি আপা, সন্ধ্যায় আমাদের একটা গোপন ক্লাস হয় ওখানে আমাদের যেতেই হয়, না গেলে চাকরি থাকবে না।

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ক্লাস করার মধ্যে আবার গোপনতার কি আছে, আসলে আমি ভেবেছিলাম ওদের নার্সের ট্রেনিং দেয়া হয়।


সুনিতা হঠাৎ আমার হাত ধরে কাঁদতে লাগলো, বললো আপা আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে, বড় বোনের মতো মনে হয়, আমার কথা যদি বলি আপনি কাউকে বলবেন না তো, যদি কেউ জানে তাহলে আমার অনেক সমস্য হবে।

আমি ওকে ভরসা দিয়ে বলেছিলাম, আমি কাউকে বলবো না নিশ্চিন্তে বলতে পারো-


সুনিতার কথা-

সুনিতারা চার ভাইবোন, থাকে ঢাকার অদুরে একটা গ্রামে, বাবা কৃষক অন্যের জমি চাষ করে তাদের সংসার চলতো।


সুনিতা সবার বড় ক্লাস টেন পর্যন্ত স্থানীয় স্কুলে লেখাপডা করেছে, টাকার অভাবে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসতে পারেনি।


এর মধ্যে বাবা হঠাৎ প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে, এবং বাবার চিকিৎসায় ওরা প্রায় সর্বশান্ত হয়ে যায়।


সেইসময় জামাতে ইসলাম নতুন করে তাদের শক্তি সংগঠন করছে, তাদের টার্গেট ছিল বিভিন্ন গ্রামের অসহায় গরীব মানুষদের চাকরি দিয়ে অর্থনৈতিক সাহায্য করে তাদের দলের লোকবল বাড়ানো।


সুনিতারা একে গরীব তার উপর হিন্দু, কাজেই ওদেরকে খাওয়া পড়ার সাথে নিশ্চয়তা দিতে পারলে তো ওদের পোয়াবারো।


তবে সুনিতা বলেছিল শুধু আমাদের নয় অনেক হতদরিদ্র মুসলিম মেয়েদেরও চাকরির লোভে তারা দল ভারি করছিল।


জামাতি মহিলা গ্রুপের মহিলারা গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে সুনিতাদের মতো পরিবার খুঁজে বার করার দায়িত্ব পালন করে।


তেমনি এক মহিলা ওকে এই হাসপাতালে চাকরি দিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসেছে, বিনিময়ে ওদের সবাইকে জামাতে ইসলামের খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে।


ধর্মান্তরিতের সাথে সাথে ওকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটা ইসলামিক ক্লাস নিতে হয়, সেখানে ওদের শেখানো হয় কি ভাবে ইসলামের সম্প্রসারণ করতে হবে, বিধর্মীদের ইসলামের ছায়াতলে আনতে হবে, এবং প্রতিটা মিটিং যারা এ্যাটেন্ড করে তাদের প্রচুর টাকা দেয়া হয়, ভালো ভালো খাবার দেয়া হয়।


আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওরা তো তোমাদের ব্রেইন ওয়াশ করে দিচ্ছে, পরে তো এখান থেকে বার হতে পারবে না, তোমার মা ভাইবোন ওদের কি অবস্থা, ওদেরও কি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে হয়েছে?


সুনিতা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল এখনো হয়নি, তবে কতদিন না হয়ে থাকতে পারবে জানি না।


আমি বলেছিলাম বার হয়ে যাও এখান থেকে, এখনো সময় আছে, ওরা মানুষ না ধর্মের নামে ওরা মানুষ হত্যা করে। এখানে না থাকতে পারলে ইন্ডিয়ায় চলে যাও!


ওরা তোমাদের ট্রেনিং দিচ্ছে হয়তো বাইরে কোথাও পাঠিয়ে দেবে, তখন মরা ছাড়া গতি থাকবে না!


অসহায় মেয়েটা আমাকে বলেছিল, চেষ্টা করবো আপা, আমার খুব কষ্ট হয়, শুধুমাত্র মা আর ছোট ছোট ভাইবোনদের কথা মনে করে এখান থেকে এখনো চলে যেতে পারছি না।


পরদিন আমি চলে এসেছিলাম বাসায়, কিন্তু সারাক্ষণই সুনিতার কথা মনে হতো, কিছুদিন পর আমি গিয়েছিলাম ওই হাসপাতালে ওর খোঁজে, কিন্তু পাইনি ওকে, একজন বলেছিল ও চাকরি ছেড়ে চলে গেছে।


আমি জানি না, আসলেই কি ও চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিল নাকি— “The Kerala Story” শালিনী’দের মতো অবস্থা হয়েছিল


সূত্র


# 'কেরালা স্টোরি' সিনেমা প্রকাশের খবর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ