হিন্দুদের লক্ষ্মীপূজায় যে নাড়ু বানানো হয় তার সবই কিন্তু প্রতীমার ভোগের জন্য না।
পূজারীতির বাইরেও তারা অনেক নাড়ু মুড়কি বানিয়ে রাখে মানুষকে আপ্যায়ন করার জন্য।
আজ এক ছোটোভাই বাড়ি থেকে নাড়ু এনেছে আমার জন্য। কষ্ট করে আবার বাসে চড়ে অফিসের সামনে এসে অপেক্ষা করেছে। শুধুমাত্র আমাকে নাড়ু দিবে এজন্য।
এমন অসামান্য ভালোলাগায় আমি বহুবার সিক্ত হয়েছি।
আজও তেমন ভালোলাগা ছিলো।
নাড়ু নিয়ে অফিসে ঢুকে কলিগদের সাথে ভাগ করে খাবো বলে সবাইকে দিচ্ছি।
হিন্দু দিয়েছে শুনে প্রথমে একজন খেলো না।
তারপর আরেকজনও খেলো না।
তারপর আরেকজনও খেলো না।
মাঝেরজন এমনভাবে না না করলো যেন আমি তাকে নাড়ু না, গু খেতে দিচ্ছি৷
আমি দ্বিতীয়বার সাধলাম না।
আমার সাথে সবার চমৎকার সম্পর্ক।
তাই শুধু স্পষ্ট করে তাকে বললাম- "ধার্মিক হওয়ার আগে একটু মানুষ হও।"
সিনিয়র কলিগ। তুমি করে বলি তবু সম্পর্ক ভালো তাই।
সে উত্তর দিলো না। থ হয়ে রইলো।
আমি এত ব্যথিত হলাম ব্যাপারটা নিয়ে।
এত অপমানিত আর লজ্জা লাগতে লাগলো আমার।
আমি বাসায় ফেরার পথে সারাপথ ভাবছিলাম, এই যে মাটির একটা প্রতীমার সামনে খাবার দেয়, তাই খাওয়া যাবে না সেটা। এমন ভাবছে ওরা।
এর মানে কি এরা বিশ্বাস করে নিচ্ছে না যে মাটির প্রতীমার রূপে ভগবান বলে আসলেই কিছু আছে?
সৃষ্টিকর্তা তো একজনই।
এর বাইরে আর কিছুই বিশ্বাস করার কথা না। মানার কথা না।
মাটির প্রতীমার ভোগের জন্য বানাইছে, এই সন্দেহে সে নাড়ু খেলো না মানেই তো সে বিশ্বাস করে নিচ্ছে যে আসলেই কিছু আছে। এটা কি শিরক হলো না?
বরং বাকি সবকিছু মিথ্যা, ভুয়া ভেবে খাবার হিসেবে সেই নাড়ু খেলেই তো তার ইমানের জায়গায় সে ঠিক থাকতো। একত্ববাদে তার যৌক্তিকতা প্রকাশ পেতো।
যাইহোক, শেষে আবারও বলি।
এই নাড়ু ওর মা বানিয়েছিলো আতিথেয়তার জন্য। ছেলের কাছের মানুষদের জন্য। বানিয়ে দিয়েছে মা। সে ঢাকা এনে তার বন্ধু ও কাছেরজনকে দিয়েছে মাত্র।
লক্ষ্মীঠাকুরের জন্য বা পূজার জন্য নয়।
ছোটোভাই ও মাকে মন থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
©Nasir Khan
0 মন্তব্যসমূহ