সংখ্যালঘুদের কতটা আস্থায় নিতে পারছে সরকার?

ছবির উৎস, CA PRESS WING, ছবির ক্যাপশান, জাতীয় ঐক্যের আহবান জানাতে দলগুলোর সাথে আলোচনা করছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
ছবির উৎস, CA PRESS WING, ছবির ক্যাপশান, জাতীয় ঐক্যের আহবান জানাতে দলগুলোর সাথে আলোচনা করছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

    রাকিব হাসনাত, বিবিসি নিউজ বাংলা, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪


বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের দৃশ্যত অবনতি ঘটার প্রেক্ষাপটে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহবান জানানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ বুধবার বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।


যদিও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আলোচনার মাধ্যমে আস্থায় নিতে না পারলে ‘একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য’ খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না।


তাদের মতে, সংকট জিইয়ে না রেখে সমাধানের উদ্যোগ নিলে সেটি একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে সম্প্রদায়গত সহনশীলতা তৈরিতেও ভূমিকা রাখবে এবং এর ফলে দেশের বাইরে থেকে ‘প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচারের’ সুযোগ কমে যাবে।


সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন সংখ্যালঘুদের সংকট সমাধান ও দাবি দাওয়া পূরণে সরকার তাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেছে এবং এটি চলমান থাকবে।


“পূজার ছুটিসহ কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও পদক্ষেপ নেয়া হবে। সবাইকে সাথে নিয়েই আমরা জাতীয় ঐক্য তৈরি করবো। তবে কেউ দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে,” বলছিলেন তিনি।


মি. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবি দাওয়াকে ঘিরে গড়া ওঠা আন্দোলনের একজন নেতাকে আটকের পর ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।


এই পটভূমিতেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়ার জন্য মঙ্গলবার ‘ছাত্রনেতাদের’ সাথে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বুধবার বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে বসেছেন তিনি।


ছবির উৎস, Getty Images, ছবির ক্যাপশান, আট দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা
ছবির উৎস, Getty Images, ছবির ক্যাপশান, আট দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা


সংখ্যালঘু ইস্যু থেকে জাতীয় ঐক্য


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবি এবার জুলাইয়ের শুরুতে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার সময় থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নানা ধরনের হামলা নির্যাতন শুরু হয়। এরপর পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের নানা জায়গায় হামলা নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।


সে সময় অন্তত ঊনত্রিশটি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করেছিলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এমন প্রেক্ষাপটে আটই অগাস্ট সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘু ইস্যু সামনে চলে আসলে দুর্গাপূজাকে ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়।


সেসময় সরকারের দিক থেকে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন যে সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তারা কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন, তবে ‘সংখ্যালঘু বলে কেউ আক্রমণের শিকার হননি’।


পরে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই তার বাসভবনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন, যেখানে ইসকন, পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।


তবে সংখ্যালঘু ইস্যু জোরালোভাবে সামনে আসে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট আট দফা দাবি নিয়ে সমাবেশের কর্মসূচি শুরুর পর। গত পঁচিশে অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের আয়োজন করে তারা এবং সেই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, যিনি এখন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় আটক হয়ে কারাগারে আছেন।


তারা যে আট দফা দাবি জানান তার মধ্যে ছিল: সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ ও হোস্টেলে প্রার্থনা রুম , সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেয়া।


তবে এর মধ্যেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রতিক্রিয়া জানায় ভারত এবং বাংলাদেশও নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেন।


ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।


এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচারণার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সংখ্যালঘু বিষয়ক ফোরামে বাংলাদেশ বলেছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর পদ্ধতিগত কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।


এরপর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটকের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ভারতে। কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার চেষ্টা হয় এবং পরে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন অফিসে হামলার ঘটনায় উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘দৃশ্যমান অবনতি’ ঘটে।


এমন পরিস্থিতিতে দেশের জাতীয় ঐক্যের জন্য আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরই অংশ হিসেবে বুধবার তিনি বেশকিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন।


ছবির উৎস, KAMOL DAS, ছবির ক্যাপশান, চিন্ময় দাস আটকের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে

ছবির উৎস, KAMOL DAS, ছবির ক্যাপশান, চিন্ময় দাস আটকের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে


সংখ্যালঘুদের আস্থায় নিতে কী করেছে সরকার


সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলছেন যে সংখ্যালঘুদের দাবি দাওয়ার প্রশ্নে সরকার শুরু থেকেই যত্নশীল এবং প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বৈঠক করেছেন তাদের সাথে।


“ইতোমধ্যেই পূজার ছুটি বাড়ানো হয়েছে। বাকি দাবিগুলো নিয়েও কাজ চলছে। ৫৩ বছরের সংকট সমাধানে কিছু সময় তো লাগবে। এর মধ্যেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এমন কিছু করেছেন যা দেশের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। এজন্যই আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে,” 


বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।


সনাতনী জাগরণ জোটের একজন প্রতিনিধি ড. কুশল বরণ চক্রবর্তী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন দাবি দাওয়া নিয়ে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং সেই আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছিলো।


“কিন্তু সরকারের মধ্যেই একটি অংশ আছে তারা চায় না দেশে সবাই মিলেমিশে থাকুক। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আটক করে তারাই সব শেষ করে দিয়েছে। এ গ্রেফতারই প্রমাণ করেছে যে সংখ্যালঘুদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টায় ঘাটতি আছে,” 


বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।


তার মতে সরকার আন্তরিক ও মানবিক হলেই কেবল সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করে ‘একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত রচনা’ করা সম্ভব।


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আরেকজন নেতা সুমন কুমার রায় বলছেন প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও অন্য উপদেষ্টারা তাদের সাথে বৈঠক করেছিলেন এবং সেসব বৈঠকে বলা হয়েছিলো যে দাবিগুলো ধাপে ধাপে পূরণ করা হবে।


“তারা আন্দোলন বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। আমরা সেটায় রাজি হইনি। আমরা একটা গাড়ি ভাঙিনি। কোথাও কোনো সহিংসতা করিনি। তারপরেও নির্যাতন কিন্তু চলছে। নির্যাতন করে সেটা স্বীকার না করে উল্টো আমাদেরই রাজনৈতিক রং দিয়ে সেই নির্যাতনকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা হয়,” 


বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. রায়।


তিনি বলেন, 


“এ সরকার গঠনের পর শপথ নেয়ার অনুষ্ঠানেও দেখেন একটি মাত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বার্তা তো এটায় আসেনি। আবার ইসকন ধরে জবাই কর- এমন শ্লোগান হয়েছে। সরকার কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে সরকার আলোচনার চেয়ে সংখ্যালঘুদের কণ্ঠরোধেই বেশি আগ্রহী। চিন্ময় দাসকে গ্রেফতার সে বার্তাই দিয়েছে।”


মি. রায় বলছেন, 


“সংখ্যালঘুদের আস্থায় নেয়ার উদ্যোগ কম। বরং সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ইসকন ইস্যু সামনে এসে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগাতে চাইছে।”


হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অবশ্য বলছেন দেশে এখন যা হচ্ছে তার সাথে সংখ্যালঘুদের দাবি দাওয়া বা ধর্মীয় বিষয়াদির কোনো সম্পর্ক নেই।


“আমাদের প্রতিটি ইস্যু নিয়েই সরকারের সাথে আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি ইস্যুই দেখা হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়েছে। কিছু তরুণ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় জড়িয়েছে। একজন আইনজীবী নিষ্ঠুরভাবে খুন হলেন। আর এখানে তো ভারতের কোনো বিষয় নেই। বাইরে থেকে প্রোপাগান্ডা হচ্ছে বলেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে সরকার,” 


বলছিলেন তিনি।


ছবির উৎস, Kamol Das, ছবির ক্যাপশান, সনাতনী জাগরণ মঞ্চের চট্টগ্রামের সমাবেশের ছবি (ফাইল ফটো)

ছবির উৎস, Kamol Das, ছবির ক্যাপশান, সনাতনী জাগরণ মঞ্চের চট্টগ্রামের সমাবেশের ছবি (ফাইল ফটো)


বিশ্লেষকরা যা বলছেন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সাব্বির আহমেদ বলছেন আলোচনার প্রয়োজনীয়তা সরকার যে উপলব্ধি করেছে এটি ভালো বলে মনে হয়েছে তার কাছে। তার মতে সরকার শুরুতেই এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে সংখ্যালঘু ইস্যুকে কেন্দ্র করে সমস্যা এতদূর গড়াতো না।


“জাতীয় ঐক্য মানে হলো কেউ যেন কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে। দেশের স্বার্থ বিরুদ্ধ কিছু যেন কেউ না করে। ভারতের সাথে সম্পর্ক তলানিতে নেয়া হবে অবাস্তব কাজ। আবার অন্যায় হলে শক্ত প্রতিবাদও করতে হবে। এজন্যই আলোচনা ও ঐকমত্য দরকার এবং সেটি সংখ্যালঘুদের সাথে নিয়েই করতে হবে,” 


বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।


তার মতে সংখ্যালঘুদের আস্থায় নিলে ও আলোচনার ভিত্তিতে তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারবে এবং সেটি না হলে জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা খুব একটা কাজে আসবে না।


আরেকজন বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলছেন সংখ্যালঘুদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ বা তাগাদা সরকারের দিক থেকে খুব একটা জোরালো নয়, যদিও এবারের অভ্যুত্থানের অঙ্গীকারই হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না।


“জাতীয় ঐক্য নিশ্চিতের জন্য শুধু ভারতকে নিয়ে আলোচনা করলে তো হবে না, বরং অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধান করতে হবে আগে। সংখ্যালঘুদের সংকট ও সমস্যা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সেটাকে আগে আমলে নিয়ে তাদের জন্য আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে জাতীয় ঐক্যের ডাক জোরালো হবে,” 


বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।


সূত্র: বিবিসি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ