প্রতিমা পুজা প্রসঙ্গে যা জানা প্রয়োজন

(মন্দিরে পুজা শেষ করে আশ্রমে এক বটবৃক্ষের তলায় মহারাজ আসীন হয়েছেন। ভক্ত পরিবেষ্টিত।ভক্তগণ প্রশ্ন করছেন মহারাজ ভক্তের কৌতুহল নিবারণ করছেন।)


জনৈক ভদ্রলোক : নমস্কার মহারাজজী। আমার প্রশ্ন হলো জড় মূর্তি বা বস্তু তো কাউকে কিছুই দিতে পারে না। তাহলে আমরা কেনো প্রতিমা পুজা করি?


অবধুত মহারাজ : (মুচকি হেসে মহারাজ একজন সেবায়েতকে একটা গ্লোব আনতে বললেন।)

আচ্ছা পৃথিবীতে আপনার দেশের অবস্থান কোথায়?


(মহারাজ গ্লোবটা আনমনে আস্তে আস্তে ঘোরাচ্ছেন।)


জনৈক ভদ্রলোক : এইযে এইযে এখানে! দক্ষিণ এশিয়াতে। (গ্লোবটির দিকে ইশারা করে)


অবধুত মহারাজ : কীভাবে বুঝতে পারলেন?


জনৈক ভদ্রলোক : কেনো?! এইযে আপনি গ্লোবটা ঘোরাচ্ছেন এটা থেকেই বুঝতে পারলাম।


অবধুত মহারাজ : কিন্তু এটা তো আসল পৃথিবী নয়। আপনি কীভাবে এতো নিশ্চিত হলেন?


জনৈক ভদ্রলোক : এটা পৃথিবী নয় ঠিকই কিন্তু এটার উপর যে মানচিত্র অঙ্কিত, সেটা দিয়ে নিখুঁতভাবে পৃথিবীর অবস্থান জানা সম্ভব। যারা সমগ্র পৃথিবীটা ভ্রমণ করেছে তারাই ভূখন্ডের অনুরূপ মানচিত্র অঙ্কন করেছে। কিন্তু আপনি তো আমার প্রশ্নের উত্তর তো এখনো দিলেন না? কথা ঘোরাচ্ছেন শুধু।


অবধুত মহারাজ : (হেসে) আপনার প্রশ্নের উত্তর তো আপনি স্বয়ং দিয়ে বসে আছেন। প্রতিমাটাও ঠিক ওই গ্লোবের মতোই। ব্রহ্মদ্রষ্টা ঋষিরা ওই রূপের সন্ধান দিয়ে গেছেন আপনার মানচিত্রের আবিষ্কারকদের মতোই। ওটা আসল নয় কিন্তু আসল বস্তুর সন্ধান মিলায়।


জনৈক ভদ্রলোক : কিন্তু ঈশ্বর তো নিরাকার। তাঁর তো আর ছেলেপুলে নেই লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতীর মতো। তাঁর স্বামীও নেই শিবের মতো। বাপের বাড়ি বা শশুড়বাড়িও নেই যেমনটা বলেন আপনারা।


অবধুত মহারাজ : ছেলেপুলে নেই আবার! এইযে আমি আছি, আপনি আছেন। সমগ্র জগতের সবাই-ই তার সন্তান। মা যেরূপ সন্তানের জন্মদাত্রী, তদ্রুপ দেবীও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্মদাত্রী। "ব্রহ্ম ব্রহ্ম" বা "প্রভু প্রভু" ডাকার চেয়ে পরমাত্মাকে আমরা "মা মা" বলে ডাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই ব্রহ্মের প্রতিমা হলো স্ত্রী রূপে, দেবী রূপে, মায়ের রূপে। দশ হাত দিয়ে দশ দিক ধরে রেখেছেন, দশদিকে ব্রহ্মের বিস্তার তাই দশহাত। বেদের ভাষায়, "বৃত্যাত্ততিষ্ঠদশাঙ্গুলম্"। দশহাতে আবার দশটা অস্ত্র। শঙ্খ ব্রহ্মনাদের প্রতীক, চক্র বহমান সময়ের প্রতীক, গদা শাসনের প্রতীক, পদ্ম প্রস্ফুটিত সৃষ্টির প্রতীক, ত্রিশুল তিনগুণের প্রতীক, খড়গ অজ্ঞানরূপ মুন্ড কর্তনকারী জ্ঞানের প্রতীক, তীর ধনুক এক লক্ষ্যের প্রতীক, ঘন্টা মঙ্গলধ্বনির প্রতীক, নাগপাশ কুল কুন্ডলিনীর প্রতীক, বজ্র শক্তি এবং ঐশ্বর্যের প্রতীক। সাথে যে চারজনকে দেখেন তাঁরাও ঐ দেবীরই আরও চাররূপের প্রকাশ; চতুর্বগের প্রকাশ, যথা:- ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষের প্রকাশ। উপরের শিব নির্গুণ ব্রহ্ম আর দেবী ভক্তের সগুণ সাকার ব্রহ্ম। সমগ্র তেজের অধিশ্বরী তাই তেজরূপ সিংহের উপর তাঁর অবস্থান। সেই ব্রহ্মতেজস্বরূপা অজ্ঞানতা স্বরূপ মহিষাসুরকে নাশ করেছে।


জনৈক ভদ্রলোক: আর শশুড়বাড়ির ব্যাপারটা?


অবধুত মহারাজ : পুরাকাল থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্য যোগীর তপোভূমি কৈলাস পর্বত। যেখানে ব্রহ্ম যোগীর হৃদয়ে নিরাকার নির্গুণ অবস্থায় থাকেন, যখন ভক্তের নিকট লোকালয়ে আসেন তখন তিনি সাকার। তাই কৈলাসকে লোকগাথায় দেবীর শশুড়বাড়ি কল্পনা করা হয়েছে। যখন তিনি সগুণ সাকার রূপে আসেন তখন সেটাকেই লোকগাঁথায় বলে কৈলাস থেকে দেবী বাপের বাড়ি মর্ত্যে এলেন। সনাতন ধর্মে পরমাত্মাকে চার ভাব ধারণ করে উপাসনা করা যায়:- দাস্য, সাখ্য, বাৎসল্য এবং মধুর। বাৎসল্য ভাবে ব্রহ্ম মা, বাবা অথবা সন্তানের মতো। প্রকৃত ভক্ত শ্রীবিগ্রহকে তাঁর সন্তানের ন্যায় যত্ন করে। ভগবানকে সন্তানের ন্যায় জ্ঞান করে। তাই লোকালয় তথা ভক্তের বাড়ি হলো দেবীর বাপের বাড়ি।


জনৈক ভদ্রলোক : আচ্ছা প্রতীকের সামনে আপনারা নত হন, আপনাদের ভাবের প্রকাশ জানান সেটা কি ঐ প্রতিমা শুনতে পায়?


অবধুত মহারাজ : ঐযে বললাম গ্লোবের মতোই। গ্লোবটা প্রতীক কিন্তু প্রতীকের কাঁচামাল তো পৃথিবী থেকেই নেয়া। আরেকটু ব্যাখা করে বলি। (প্রদীপের দিকে ইশারা করে) ঐ প্রদীপের আগুনকে দেখুন। ঐ তেল সলতে না থাকলে আগুন জ্বলতো কার উপরে? হয়তো অন্য কোনো আধারে। কিন্তু আধার ছাড়া কি জ্বলতে পারবে? অবশ্যই না। তদ্রূপ "সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম" যিনি তাঁকে উপাসনা করতে গেলেও আধার দরকার। যোগীদের ক্ষেত্রে তাঁদের হৃদয় ব্রহ্মের আধার, আর আমাদের ক্ষেত্রে এই প্রতিমা অথবা যজ্ঞাগ্নি। সমুদ্ররূপ ব্রহ্ম এই সমগ্র জগত ব্যাপী। তাই যেটাই বলুন আর করুন সে শুনতেও পায়, দেখতেও পায়।


জনৈক ভদ্রলোক: প্রতিমা যদি ঈশ্বর হয় তাহলে আপনারা প্রতিমাকে জলে ডুবান কেনো?


অবধুত মহারাজ : পূর্বেই বলেছি জগৎ ব্রহ্মময়। সেই ব্রহ্ম সকল স্থানেই আছেন। শুধু উপাসনা কর্মের আধার হিসেবে প্রতিমা ব্যাবহার করা হচ্ছে। যে জলে ডোবানো হচ্ছে সেই জলও ব্রহ্ম। যেরূপ বুদবুদ ফেনা নদীর উপরে তৈরি হয়ে পুনরায় নদীতেই বিলীন হয়ে যায়, তদ্রুপ জগতও অন্তকালে ব্রহ্মেই বিলীন হয়ে যায়। এই দার্শনিক আধার প্রতিমা তথা দারুব্রহ্ম বা মৃন্ময় ব্রহ্মের ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটে। বিশেষ তিথিতে ভগবান বিশেষ রূপে পুজো নেন। ভক্তের কাছে সাকার আধার রূপে প্রকাশ হন। পুজো শেষে ব্রহ্ম পুনরায় স্বরূপে ফেরেন অর্থাৎ নির্গুণ স্বরুপ ধরেন ব্রহ্ম। বিসর্জনে যেমন মাটির প্রতিমা জলে বিলীন হয়ে যায়।


জনৈক ভদ্রলোক: আপনাদের শাস্ত্রে কোথায় প্রতিমা পুজার কথা আছে? ঈশ্বরের রুপের কথা কোথায় আছে? আপনি তো কেবলই খোঁড়া যুক্তি দিয়ে চলেছেন।


অবধুত মহারাজ: (মুচকি হেসে) নেই কোথায় আবার! শাস্ত্রের সবখানেই তো আছে। এরই মধ্যে কিছু সংখ্যক উদ্ধৃতি আপনাকে দেয়ার চেষ্টা করবো।


"রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায়৷

ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হস্য হরয়াঃ শতা দশ ৷।

(ঋগ্বেদ-৬/৪৭/১৮)


অনুবাদঃ— “রূপে রূপে প্রতিরূপ (তাহার অনুরূপ) হইয়াছেন, সেই ইহার রূপকে প্রতিখ্যাপনের (জ্ঞাপনের) জন্য ইন্দ্র(ঐশ্বর্যময় প্রভু) মায়াসমূহের দ্বারা বহুরূপ প্রাপ্ত হন। যুক্ত আছে ইহার অশ্ব শত দশ (অর্থাৎ সহস্র রুপে তিনি দশ দিকে ব্যাপ্ত)৷”


"যো বিশ্বস্য প্রতিমানং বভুব

(ঋগ্বেদ-২৷১২৷৯)


অর্থাৎ— তিনি নিখিলের প্রতিমা হইয়াছিলেন।"


"অগ্নির্যথৈকো ভুবনং প্রবিষ্টো রূপং রূপং প্রতিরূপো বভুব৷

একস্তথা সর্বভূতান্তরাত্মা রূপং রূপং প্রতিরূপো বহিশ্চ৷৷

(কঠ উপনিষদ-২৷২৷৯)


অর্থাৎ- অগ্নি যেমন এক হয়েও ভুবনের মধ্যে প্রবেশ করে রূপে রূপে বহুরূপ হয়ে আপনাকে ধরে দিয়েছে, তেমনি সর্বভূতের অন্তরস্থ অন্তরাত্মা এক হয়েও বাহির অবধি ভিন্ন ভিন্ন রূপ গ্রহণ করেছে ৷”


"অশ্মা চ মে মৃত্তিকা চ মে গিরয়শ্চ মে পর্বতাশ্চ

মে সিকতাশ্চ মে বনস্পতয়শ্চ মে হিরণ্যং

চ মেঽযশ্চ মে শ্যামং চ মে লোহং চ মে সীসং

চ মে ত্রপু চ মে যজ্ঞেন কল্পতাম্।।

(শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা-১৮/১৩)


অর্থাৎ- (পরমব্রহ্ম বললেন) প্রস্তর, মৃত্তিকা, গিরি, পর্বত, বালুকা,বৃক্ষ-বনস্পতি সুবর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, লৌহ, সীসা, ত্রপু (রঙ্গ বা রাং) -এগুলোর দ্বারা আমার যজ্ঞ সুসম্পন্ন হোক।"


"শৈলী দারুময়ী লৌহী লেপ্যা লেখ্যা চ সৈকতী।

মনোময়ী মণিময়ী প্রতিমাষ্টবিধা স্মৃতা।।

(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ-১১/২৭/১২)


অর্থাৎ- (শ্রী ভগবান বললেন) আমার পূজা অষ্টবিধ উপকরণে নির্মিত যে কোন প্রতিমায় বিধেয়। এ অষ্টবিধ উপকরণ হল: পাথর, কাঠ, ধাতু, মাটি, চিত্রপট, বালুকা, মনোময়, মণিময়।"


"মৃণ্ময়ী দারুঘটিতা লোহজা রত্নজা তথা ॥

শৈলজা গন্ধজা চৈব কৌসুমী সপ্তধা স্মৃতা।

কৌসুমী গন্ধজা চৈব মৃণ্ময়ী প্রতিমা তথা ॥

তৎকালপুজিতাশ্চৈতাঃ সৰ্বকামফলপ্ৰদাঃ।

(অগ্নিপুরাণ- ৪৩/৯-১১)


অর্থাৎ -"মৃণ্ময়ী, দারুময়ী, লোহময়ী, রত্নময়ী, শৈলময়ী, গন্ধময়ী ও কুসুমময়ী, এই সাতপ্রকার প্রতিমা শাস্ত্রে নির্দিষ্ট রয়েছে। এরমধ্যে মৃণ্ময়ী, গন্ধময়ী ও কুসুমময়ী প্রতিমা পুজিত হয়ে তৎকালমাত্রে সৰ্বপ্রকার কামনা এবং ফল প্রদান করে থাকে।"


"মাতৃণাং প্রবরাং দেবী সর্বদেবনমস্কৃতা।

হৈমা বা রত্নবার্ক্ষা বা শৈলা বা চিত্রজাপি বা।

স্থাপ্যা পূর্ববিধানেন সর্বকামপ্রসাধনী।।

(দেবীপুরাণ- ৫০/৩৭)


অর্থাৎ-দেবী মাতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠা এবং সর্বদেবতার পূজনীয়া। স্বর্ণময়ী, রত্নময়ী, কাষ্ঠময়ী, শৈলময়ী কিংবা চিত্রময়ী, যে কোন মূর্তি পূর্বোক্ত বিধান অনুসারে স্থাপন করলে সর্ব কামনার ফল সিদ্ধ হয়।"


"স চ বৈশ্যস্তপস্তেপে দেবীসূক্তং পরং জপন্।

তৌ তস্মিন্ পুলিনে দেব্যাঃ কৃত্বা মূর্তিং মহীমহীম্।।

(শ্রীচণ্ডী-১৩/১০)


অর্থাৎ-রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য জগন্মাতার দর্শন লাভমানসে নদীতীরে অবস্থান করে শ্রেষ্ঠ দেবীসূক্ত পাঠ ও অনুধ্যান করতে করতে তপস্যারত হলেন। তাঁরা উভয়ে সেই নদীতটে দুর্গাদেবীর মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করলেন।"


"যো যো যাং যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি।

তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধ্যাম্যহম্।।

(শ্রীমদ্ভগবতগীতা- ৭/২১)


সরলার্থ:- যে যে স্বকামীভক্ত যে যে দেবতাকে শ্রদ্ধাপূর্বক অর্চনা করে, আমি তাদের শ্রদ্ধা সেই সেই দেবতার প্রতি স্থির করি।


"যেহপ্যন্যদেবতাভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ।

তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপূর্বকম্।। (শ্রীমদ্ভগবতগীতা- ৯/২৩)


সরলার্থ:- হে কৌন্তেয়! যারা অন্য দেবতাদের ভক্ত এবং শ্রদ্ধ সহকারে তাদের পূজা করে, প্রকৃতপক্ষে তারা আমারই পূজা করে।"


"যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।

মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।

(শ্রীমদ্ভগবতগীতা- ৪/১১)


সরলার্থ:- যারা যেভাবে আমার ভজনা করে আমি তাকে সেই ভাবেই তুষ্ট করি। হে পার্থ, মনুষ্যগণ সর্বভাবের মধ্য দিয়ে আমার পথই অনুসরণ করছে।"


"চিন্ময়স্যাপ্রমেয়স্য নির্গুণস্যা শরীরিণঃ।

সাধকানাং হিতার্থায় ব্রহ্মণো রূপকল্পনা ॥

(কুলার্ণব তন্ত্রম্- ৬/৭৩)


সরলার্থ:- অধিকারী সাধকদের হিত বা কল্যাণের জন্যই চিন্ময়, অপ্রমেয়, নির্গুণ, শরীররহিত ব্রহ্মের রূপকল্পনা করা হয় ।"


"গবাং সর্বাঙ্গজং ক্ষীরং স্রবেৎ স্তনমুখাৎ যথা।

তথা সর্বগতো দেবঃ প্রতিমাদিষু রাজতে ॥

(কুলার্ণব তন্ত্রম্- ৬/৭৬)


সরলার্থ:-গাভীর সর্বাঙ্গে দুগ্ধোপাদান থাকলেও দুগ্ধ যেমন কেবল গাভীর ওলান হইতে ক্ষরিত হয় তেমনি পরমব্রহ্ম সর্বস্থানে থাকিলেও প্রতিমাদিতে তিনি দীপ্তি পান।"


"আভিরূপ্যাচ্চ বিমবস্য পূজায়াশ্চ বিশেষতঃ।

সাধকস্য চ বিশ্বাসাৎ সন্নিধৌ দেবতা ভবেৎ ॥

(কুলার্ণব তন্ত্রম্- ৬/৭৭)


সরলার্থ:-প্রতিমার সৌন্দর্যে, পূজার বিশেষত্বে এবং সাধকের বিশ্বাসে দেবতা সন্নিধিস্থ হন।"


জনৈক ভদ্রলোক : (খানিকটা ইতস্ততভাবে) বুঝলাম দর্শনগত দিক দিয়ে আপনারা ব্রহ্মের উপাসনা করেন। কিন্তু আপনারা প্রতিমা যখন বানান তখন ঐররূপ নগ্ন অবস্থায় কেনো রাখেন? যে প্রতিমাকে ঈশ্বররুপে আরাধনা করবেন সেটা কেনো ঐরূপ অশ্লীল হবে! নিজের মাকে তো আর ঐরূপ রাখা উচিত না!


অবধুত মহারাজ : (মুচকি হেসে) জন্মের পর আপনার প্রথম খাদ্যের উৎস কি ছিলো? আর আপনার যখন জন্ম হচ্ছিলো তখন আপনার জননী কি বস্ত্রাবৃত ছিলেন?


জনৈক ভদ্রলোক : (রেগে গিয়ে) এসব আপনি কিরকম প্রশ্ন করছেন। আদৌ জানেন কিছু!?


অবধুত মহারাজ : পূর্বেই বলেছি তিনি সবার মা। আপনারও মা, আমারও মা। পুজোর সময় ঐ সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটির মতোই ভাব হতে হয়। তাই মায়ের ঐ স্তনযুগল আমাদের নিকট অমৃতধারা। মায়ের কোনো অঙ্গই আমাদের মনে বিপরীত চিন্তা সৃষ্টি করেনা। হ্যাঁ তবে তার যেসব সন্তান ষড়রিপুর তাড়নে জর্জরিত তাদের জন্য মা ওই পুতনার মতোই হয়ে যান। মজার বিষয় হলো, এবার স্তনপানকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নন। (হেসে)


নোংরা কাঁদার মধ্যে শিশু খেলছে মা তাঁকে দু ঘা দিয়ে পরক্ষণেই কোলে তুলে নিচ্ছে। আমার ব্রহ্মময়ীও ওরকম। মায়ার জালে ষড়রিপুর তাড়নে জর্জরিত সন্তানদের তিনি শাস্তি দেন ঠিকই, কিন্তু অন্তিমে তাঁদেরও ঠাঁই হয় সেই রাঙা শ্রী চরণযুগল।


(ভদ্রলোক মহারাজের পায়ে লুটিয়ে পড়লেন। ভক্তগণ মহারাজের জয়ধ্বনি দিতে লাগলো।)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ