সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হামলায় বিচলিত নির্মলেন্দু গুণের কবিতা 'সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালির গল্প'

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ওই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ অন্তত ২০টি মানবতাবিরোধী অভিযোগের মধ্যে আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিবিসি

এই রায় ঘোষণার পরপরই জামায়াতে ইসলামী তার ছাত্র সংগঠন শিবিরসহ সমমনা অন্যান্য দলগুলোকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক সহিংসতা শুরু করে। তাদের আক্রমণের প্রধান শিকার হয় বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী। তাদের বসতবাড়ি-মন্দিরসহ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে তারা আক্রমণ করে, আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়, দেশে একটি অরাজকতা শুরু করে। ডাচেস ওয়েলে

বাঙালি হিন্দু পোস্ট নামক একটি ব্লগের 'সাইদির ফাঁসির রায় পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মন্দির ধ্বংসের খতিয়ান' শীষর্ক পোস্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সংঘটিত বেশ কয়েকটি ঘটনার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক হলে উক্ত পোস্টের লিংকগুলোতে ক্লিক করে দেখবেন ২০১৩ সালে প্রকাশিত খবরের বেশিরভাগ বর্তমানে আর ইন্টারনেটে নেই। পত্রিকাগুলোর কোনটি নিজেদের লিংক পাল্টিয়েছে, আবার কোনটি খবরের লিংকগুলো মুছে ফেলেছে।

সেই ভয়ংকর সময়ে বাংলাদেশের প্রথিতযশা কবি নির্মলেন্দু গুণ 'সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালীর গল্প' শিরোনামের একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতাটি অনলাইনে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পাঠকের জানার সুবিধার্থে কবিতাটি প্রকাশ করা হল। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের কোন মুসলিম লেখক হিন্দুদের উপর সহিংসতা নিয়ে সেই সময়ে কোন গল্প কবিতা উপন্যাস কিছুই লিখেন নি।

-----------


নির্মলেন্দু গুণের কবিতা 'সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালির গল্প'

সুন্দরগঞ্জ বা বাঁশখালীর গল্প

নির্মলেন্দু গুণ


'রাইতভর ঘুমুইতে পারি না,

ওরা আবার কহন আয়ে, কহন আয়ে।"


আর কাঁন্দিস না মা, আমার কথা শোন,

তুই তোর হাতের শাঁখা খুলে ফেল,

মুছে ফেল তোর সিঁথির সিঁদুর।

মা-কালীর শেষকৃত্য দেখে-দেখে, শেষে

আমাদের শেষকৃত্য ডেকে আনবি নাকি?

চল মা, তোর ভগবান পুড়ছে, পুড়ুক।


এই চন্দ্রমুগ্ধ মূর্খের উল্লাস থেমে গেলে

একাত্তরের মতো আবারও আমরা

ফিরে আসবো আমাদের অগ্নিশুদ্ধ ঘরে।

তখন তিনিই তোরে ফিরিয়ে দেবেন তোর

শাঁখা সিঁদুর, তোর প্রতিমার ছিন্নভিন্ন দেহ।

তোর ভগবান কি অথর্ব, অন্ধ নাকি?


তবে তাই কর বাবা, এই যে আমি

বন্ধ করলাম আমার চোখ, তুই ভেঙে দে

আমার শাঁখা, মুছে দে আমার সিঁদুর,

জ্বলে পুড়ে শুদ্ধ হোক আমার ঠাকুর।

-----


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ