∆ আতঙ্কিত হিন্দুরা, প্রান্তজ্যোতির 'গ্রাউন্ড রিপোর্ট'
∆ হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে
∆ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার প্রান্তজ্যোতিকে বলেন, গত ১০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, নির্যাতন, উচ্ছেদের কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমছে
∆ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব মনে করেন, নিরাপত্তার অভাবেই সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছে
অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য, প্রান্তজ্যোতি প্রতিবেদক, ঢাকা, ২৭ জুলাই, 2022
বাংলাদেশে এখন মুসলমানের সংখ্যা ৯১ শতাংশ। সনাতন ধর্মাবলম্বী ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিল শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের শুমারিতে ছিল শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারির চেয়ে এবারের জনশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমল দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তখন মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল হিন্দু। এপর ১৯৮১ সালের ১২ দশমিক ১ ভাগ, ১৯৯১ সালে ১০ দশমিক ৫, ২০০১ সালে ৯ দশমিক ৩।
২০১১ সালের আদমশুমারিতে বলা হয় মোট জনগোষ্ঠীর ৮ দশমিক ৫৪ ভাগ হিন্দু। এতে স্পষ্ট যে স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে কমেছে।
দেশে সংখ্যালঘু কমে যাবার দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই করছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর যাবত দাবি করা হচ্ছিল এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে, কমেছে অন্যান্য ধর্মের মানুষ। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিন্দু জনসংখ্যা ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, বৌদ্ধ জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ৬২ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ, খ্রিস্টান জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ৩১ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ১৪ থেকে কমে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশে নেমেছে।
প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি হলেও প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিবিএস বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১ দশমিক ৬ ভাগ। এখানে হিন্দুদের শতকরা হার আলাদাভাবে দেয়া হয়নি।
বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তার ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ নামের গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল সময়কালে আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন। এই গবেষণার বাইরে তিনি তার কিছু পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের দেশ ত্যাগের ৬ টি কারণ চিহ্নিত করেন তিনি। সেগুলো হলো- এই অঞ্চলে মুসলমানদের প্রজনন হার বেশি, ৬৪ সালের দাঙ্গা, ৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, এনিমি প্রোপার্টি এ্যাক্ট, ভেস্টেড প্রোপার্টি এ্যাক্ট এবং নিরপত্তাহীনতা।
সরকারের পরিসংখ্যানে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমার পেছনে দু’টি অর্থ আছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধা খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি প্রান্তজ্যোতিকে বলেন, সরকারি তথ্যও বলছে দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমছে। এ ক্ষেত্রে দু’টি অর্থ থাকতে পারে। প্রথমত; সংখ্যালঘুদের হার কম করে দেখানো অতীতের রাষ্ট্রীয় প্রবণতা, এবং বাংলাদেশ যে ক্রমশই ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে বা ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গেছে এটি দেখানো। দ্বিতীয়ত; সংখ্যালঘুদের জন্য পাকিস্তান যা ছিল বাংলাদেশও তাই আছে। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হলেও সংখ্যালঘুদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বরং পরিস্থিতি তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করছে। আর এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ড. আবুল বারকাতের ভাষায় আগামী ২ দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আফগানিস্তান হতে চলেছে। যদি জনসংখ্যা ব্যুারোর হিসাব এই দাঁড়ায় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি আমরা গোটা জাতি একটা বিপর্যয়ের দিকে চলেছি। সংখ্যালঘু কমার পেছনে হিন্দুদের প্রজনন ক্ষমতা কম বলে বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, জনসংখ্যা ব্যুারোর যে হিসাব, এই হিসাবে পরিবার প্রতি জনসংখ্যার যে হার তাতে দেখা যাচ্ছে হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার সন্তান উৎপাদনের হার একই। এই হার মুসলমানদের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেশি। তাই এই যুক্তিটি সঠিক নয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার মনে করেন, গত ১০ বছর ধরে অব্যাহতভাবে ঘটে যাওয়া সহিংসতা, নির্যাতন, উচ্ছেদের কারণে হিন্দু জনগোষ্ঠী কমছে। তিনি প্রান্তজ্যোতিকে বলেন, অবকাঠামোর দিক থেকে পরিবর্তন হচ্ছে ঠিকই অন্য কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবও মনে করেন নিরাপত্তার অভাবেই সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছে। আর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমছে।
দীর্ঘ দিনের নির্যাতন, অবঞ্চনার কারণে দেশে সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের কম করে দেখানোর মানসিকতাও আছে বলে তিনি মনে করনে। তিনি প্রান্তজ্যোতিকে বলেন, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমার পেছনে দেশত্যাগ তো একটি বড় কারণ। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা আশা করেছিলাম, বাংলাদেশ যেহেতু স্বাধীন ধর্ম নিরপেক্ষ একটি দেশ সেখানে মানুষ দেশত্যাগ করবে না। ১৯৭১ সালের পরপরই অত্যাচার নিপীড়নের কারণে অনেক সংখ্যালঘুই দেশ ত্যাগ করে। সরকার শত্রু সম্পত্তি আইন পুনরুজ্জ্বীবিত করায় অনেকেই বাড়ি ঘর ফিরে পায়নি। অনেকে দেশে ফিরে এসেও থাকতে পারেনি। সরকারের হিন্দুদের কম করে দেখানোর প্রবণতাও থাকতে পারে। কারণ সংখ্যা অনুপাতে হিন্দুরা যাতে কোন দাবি না করতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার রিপোর্ট প্রকাশের পর পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দরীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বাংলাদেশের জনশুমারির তথ্য জানান দিচ্ছে যে ২০১১ সালের ন্যায়ে ২০২২ সালে সংখ্যালঘু হিন্দু সনাতনীদের জনসংখ্যা মূল জনসংখ্যার ৮.৫৪ শতাংশ থেকে কমে ৭.৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৯০.৩৯ থেকে ৯১.০৪ শতাংশ হয়েছে।
এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, ১৯৪০ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী এই ভৌগলিক এলাকায়, অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববঙ্গে মূল জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ বসবাসকারী ছিলেন সংখ্যালঘু হিন্দু সনাতনী সম্প্রদায়ের। মূলত দুই দফায়, প্রথমত ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের সময় ও দ্বিতীয়ত ১৯৭১ এর পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই জনসংখ্যা হ্রাস পায়। তবু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ১৯৭৪ সালে সংখ্যালঘু হিন্দু সনাতনী সম্প্রদায় সে দেশের জনসংখ্যার ১৩.০৫ শতাংশ ছিল।
অথচ ২৩ বছরের পাকিস্তানি চরমপন্থী অপশাসন এবং অত্যাচারের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও, একই ভাষা ব্যবহারকারী ও এক প্রকার একরকম জীবন যাপন করে থাকেন এমন জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচারের ফল হলো যে ১৯৭৪ সালের ১৩.০৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী ২০১১ তে কমে গিয়ে ৮.৫৪ শতাংশ এ গিয়ে ঠেকে, তা আবার বর্তমানে ৭.৯৫ শতাংশে এসেছে। হয় এই ক্রমশঃ অত্যাচারের ফলে একটা বড় অংশ ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে অথবা সর্বস্বান্ত হয়ে উদ্বাস্তু হিসেবে অন্যত্র পাড়ি দিয়েছে। কিছু নিরীক্ষায় তো এমন সম্ভাবনাও উঠে আসছে যে এই ভাবেই চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছর পর বাংলাদেশে হিন্দুরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ১৯৭৪ সালের প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৯৮ হাজার। এর মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার; যা মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল মুসলমান।
হিন্দুদের জনসংখ্যার হার যদি ৫০ বছর আগের মতো থাকত, তাহলে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুর সংখ্যা কত হতো, তা একটি প্রশ্ন। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার। ৫০ বছর আগের হার (১৩ দশমিক ৫ শতাংশ) ঠিক থাকলে হিন্দুর সংখ্যা ২ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার হওয়ার কথা। কিন্তু সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমছে। জনসংখ্যাবিদেরা একে বলছেন ‘মিসিং হিন্দু পপুলেশন’ বা ‘হারিয়ে যাওয়া হিন্দু জনগোষ্ঠী’। প্রতি দশকে ১৫ লাখের বেশি হিন্দু কমে যাচ্ছে। এর পেছনে দেশান্তর হওয়ার পাশাপাশি প্রজনন হার কমা এবং মৃত্যুহার বেশি হওয়ার বিষয়টি যুক্ত। হিন্দুর সংখ্যা বা হার কমে যাওয়ার প্রবণতা ঐতিহাসিক। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশ ভাগ হওয়ায় পাকিস্তান (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) মুসলমানদের এবং ভারত হিন্দুদের দেশ বলে বিবেচিত হতে থাকে।
দেশ ভাগের আগে ব্রিটিশ ভারতের ১৯৪১ সালের আদমশুমারিতে পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ২৮ শতাংশ। ১০ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রথম আদমশুমারিতে হিন্দু কমে ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কারণে অনেক হিন্দু দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। ভারত থেকেও অনেক মুসলমান পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসেন। এই দেশান্তর জনসংখ্যার অনুপাতে প্রভাব ফেলে। এরও আগে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমার প্রবণতা ছিল। ১৯০১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩৩ শতাংশ। এরপর প্রতি ১০ বছর পর পরিচালিত আদমশুমারিতে এই হার কমতে দেখা গেছে। অর্থাৎ এই প্রবণতা ১০০ বছরের বেশি পুরোনো। ২০০১ সালের আদমশুমারির বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়া, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এ দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মাবলম্বীর অধিকার সমান বলে স্বীকৃতি পায়। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তান আমলে করা অর্পিত সম্পত্তি আইন বহাল থাকে, যা ছিল বৈষম্যমূলক। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম আঘাতটি আসে ১৯৭৭ সালে, যখন পঞ্চম সংশোধনী অনুমোদনের মাধ্যমে সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। এর ১১ বছর পর ১৯৮৮ সালের জুনে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠন এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছিল। দুটি ঘটনা সামরিক সরকারের আমলে হলেও পরবর্তীকালে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রীয় আদর্শকে অসাম্প্রদায়িক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়নি।
সাধারণ হিন্দু অনেকে মনে করেন, দেশত্যাগের অন্যতম কারণ অর্পিত সম্পত্তি আইন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এই আইন করেছিল পাকিস্তান সরকার। যুদ্ধ ১৭ দিনে শেষ হলেও আইনটি এখনো বলবৎ আছে। এই আইনের অজুহাতে সারা দেশের হাজার হাজার হিন্দু পরিবার জমি হারিয়েছে, হয়েছে বাস্তুচ্যুত। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের পর সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে ধর্মের নামে বিভক্ত করা হয়েছে। হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। হিন্দুরা পাকিস্তান আমলে সমনাগরিকত্ব পাননি, স্বাধীন বাংলাদেশেও তাঁরা একই পরিস্থিতির শিকার। রাষ্ট্রধর্মের জন্য হিন্দু-মুসলমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আজকের এই সমস্যা জাতীয় সমস্যা, রাজনৈতিক কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ##
https://www.facebook.com/newstimebarak/posts/1826507081074359
0 মন্তব্যসমূহ