সুনামগঞ্জে হিন্দু বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ হেফাজতের বিরুদ্ধে

সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা
সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম


Published: 17 Mar 2021 10:23 PM BdST Updated: 17 Mar 2021 11:23 PM BdST


একটি ফেইসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার সকালে উপজেলার নোয়াগাও গ্রামে ওই হামলায় ৬০-৭০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও আসবাবপত্র তছনছ করা হয় বলে পুলিশের ভাষ্য। খবর পেয়ে শাল্লা থানা পুলিশসহ ও দিরাই থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।


তবে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন ওই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন।


সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা
সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা


এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, গত সোমবার দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সম্মেলনে যান হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সম্মেলনে মামুনুল হকের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন স্থানীয় এক হিন্দু যুবক।


সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর
সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর


“ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে।”


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাতেই ওই যুবককে আটক করে বলে জানান ওসি।


“বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে।”

ওসি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিনসহ জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।


হেফাজতে ইসলামের জনসমাবেশ
হেফাজতে ইসলামের জনসমাবেশ


সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন; পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে বলে জানান ওসি।


হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বলেন, বুধবার সকাল ৯টার দিকে কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়।

“তারা এসে হঠাৎ গ্রামে হামলা, লুটপাট চালায়। আমাদের অনেকের দেবতার ঘরও ভাংচুরও করেছে। লুট করেছে ঘরবাড়ি।”

খবর পেয়ে শাল্লা থানার পাশাপাশি দিরাই উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।


হেফাজতে ইসলামের জনসমাবেশ
হেফাজতে ইসলামের জনসমাবেশ

‌নোয়াগাঁও গ্রামের আশু দাস বলেন, “আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘরের সব কিছু লুটপাট করা হয়েছে।”


একই গ্রামের রন্টু দাস বলেন, “আমাদের কী দোষ? আমরা কী করেছি? আমাদের উপর এমন অত্যাচার কেন? ঘরের মন্দির থেকে শুরু করে সব ভেঙেছে তারা। আমরা আতঙ্কে আছি।”


শাল্লার কৃষক আন্দোলনের নেতা অমরচান দাস বলেন, “সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাম নোয়াগাওয়ে কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গ্রামবাসী পালিয়ে গেছে।”


অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়। পরে সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ওই যুবকের বাড়িতে হামলা করে।”

ওই হামলার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের ‘কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই’ দাবি করে তিনি বলেন, “স্থানীয় হেফাজত ইসলামের নেতারা হামলাকারীদের প্রতিরোধ করেছে, বাধা দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিয়েছে।”


সূত্র: বিডিনিউজ২৪

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ