মুন্সিগঞ্জের এক হিন্দু তরুণীর করুণ মৃত্যু আমাদের আবারো স্মরণ করিয়ে দিলো; বিশ্বাসের নামে, সাহায্যের নামে, ভালোবাসার নামে কতটা ভয়ানক ফাঁদ পাতা আছে এই সমাজে। এ-ই ঘটে যাওয়া ঘটনাটি শুধুই কোনো প্রেমঘটিত ভুল নয়, এটি ছিল পরিকল্পিত প্রতারণা, ছিল অসুস্থ শিক্ষা।
অভিযুক্ত ব্যক্তি, যিনি প্রেমের মুখোশে নিজেকে উপস্থাপন করছিলেন, সেই মুখোশের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল বিকৃত মানসিকতা ও অসুস্থ চেতনা। হিন্দু মেয়েটি তাকে বিশ্বাস করেছিল, হয়তো মনে করেছিল;
“সকলে একরকম হয় না, সকল মানুষ সমান, ভালোবাসায় কোনো ধর্ম থাকে না।”
কিন্তু প্রতিদানে সে পেয়েছে নির্মমতা; শরীরকে টুকরো করে দেওয়া এক বিভীষিকাময় পরিণতি।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে এক ভয়ানক মানসিকতা; যেখানে কিছু বিকৃত চেতনার মানুষ ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দেয় এবং শিখে থাকে, কীভাবে "বিধর্মী" মেয়েদের প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা সাহায্যের ফাঁদে ফেলে তাদের নিজেদের আদর্শে আনতে হবে। এমন মানুষদের উদ্দেশ্য থাকে স্পষ্ট; প্রেম নয়, সাহায্য নয়, বন্ধুত্ব নয় বরং ছলে-বলে-কৌশলে ধর্মান্তরণ, ভোগবাদ এবং অবশেষে পরিত্যাগ কিংবা নৃশংসতা।
এটা শুধু একটি ঘটনার কথা নয়, হাজারবার এমন ঘটনা সামনে আসছে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজের বহু তরুণী এখনও সচেতন নন। তাঁরা ভাবে, “সবাই একরকম নয়” এবং সেই উদার বিশ্বাসই অনেক সময় তাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু বাস্তব ও অভিজ্ঞতালব্ধ সতর্কতা উপেক্ষা করাও আত্মঘাতী। আমাদের মেয়েদের জানতে হবে; কে সত্যিকারের সঙ্গী, কে শুধু মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়।
ঘটনাটি হিন্দু সমাজের প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি বিপদ সংকেত, যদি সংকেত হিসেবে নেয়। ধর্ম ও সংস্কৃতির মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুতি, পরিবার ও আপনজনদের অশ্রদ্ধা এবং অন্ধ বিশ্বাস; এই তিনটির সম্মিলিত ফল কখনো কখনো হয়ে দাঁড়ায় এক নির্মম পরিণতি।
শাস্ত্রে বলা আছে "কর্মে ফল অনিবার্য"। যেমন:
"যেমন দ্রুতগামী রথ, তেমনি কর্ম ফল হয়ে দ্রুত ফিরে আসে কর্তার দিকে, তপ্ত অগ্নির ন্যায় প্রতিকূল দণ্ড হয়ে অসৎকর্মার দিকে, শীতল জলের ন্যায় অনুকূল সুখ হয়ে সৎকর্তার দিকে।" ~ অথর্ববেদ ৫/১৪/১৩
কেউ যদি নিজের পরিবার, ধর্ম, সংস্কৃতি ও আত্মরক্ষার মূল্য না বোঝে, তার ফল কখনো কখনো জীবন দিয়ে দিতে হয়। যেমনটি এই মেয়েটি দিলো।
ধর্মান্তর রোধে বাংলাদেশ অগ্নিবীরের পঞ্চনীতি সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর হবে, যদি সে নীতি অনুযায়ী সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া যায়। নীতিগুলি হচ্ছে:
১. বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র পড়া ও পড়ানো
সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি হলো বেদ। বেদ মানে জ্ঞান; এই জ্ঞানই মানবজীবনের প্রকৃত লক্ষ্য নির্দেশ করে। অথচ অধিকাংশ সনাতনীই জানেন না তাঁদের ধর্মের শাশ্বত মূলভিত্তি কী, কেন তা শ্রেষ্ঠ। বেদ ও উপনিষদে এমন গভীর আত্মজ্ঞান, চেতনা, বৈজ্ঞানিক বোধ ও সর্বজনীন মানবিকতা রয়েছে, যা জানলে কেবল ধর্ম নয়; নিজেকে হারানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই পরিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রম থেকে সমাজ; সবখানে নিয়মিত বেদাদি পাঠ, আলোচনা ও তার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রচলন করতেই হবে।
২. সনাতন ধর্মের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা
একটি জাতির আত্মপরিচয়ের মূলে থাকে তার ইতিহাস। সনাতন ধর্মের ইতিহাস কেবল আধ্যাত্মিকতাই নয়, ত্যাগ, জ্ঞান, শাসন, শিল্প ও মানবতার গৌরবগাথা। শ্রী রাম, শ্রী কৃষ্ণ, বিদুর, চাণক্য, মনু মহারাজ থেকে মহর্ষি দয়ানন্দ ও স্বামী বিবেকানন্দ; এনাদের সবাই আত্মমর্যাদা ও ধর্মনিষ্ঠার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। যখন একটি সমাজ তার ইতিহাস জানে না, তখন সে শিকড়হীন গাছের মতো; যা সামান্য বাতাসেই ভেঙে পড়ে। এই শিকড়হীনতাই বাইরের শক্তিকে ঢুকতে দেয়, ধর্মান্তরের সুযোগ তৈরি করে। তাই সনাতনের ইতিহাস পাঠ আবশ্যিক।
৩. ধর্ম ও মতবাদের মধ্যে পার্থক্য জানানো
ধর্ম (Sanatan Dharma) কোনো মত নয়; এটি শাশ্বত, কারণ এটি প্রকৃতি ও চেতনার সাথে একাত্ম। এটি আত্মার, কর্মফলের ও মোক্ষের বিজ্ঞানসম্মত পথ। পক্ষান্তরে মতবাদ বা "ইজম" (ism) কেবল কোনো এক সময় বা সমাজে উদ্ভূত একটি বিশ্বাসের কাঠামো, যা পরিবর্তনশীল ও সংকীর্ণ। যখন সনাতন ধর্মকে অন্যান্য মতবাদের সমতুল্য ভাবা হয়, তখনই এর মৌলিক শ্রেষ্ঠত্ব ভেঙে পড়ে। তাই নতুন প্রজন্মকে শেখাতে হবে; সনাতন ধর্ম কোনো ধর্মীয় মত নয়, এটি জীবন ও ব্রহ্মাণ্ডের মৌলিক সত্য। এই পার্থক্য বোঝা মানেই আত্মরক্ষা।
৪. বৈশ্বিক ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা জানানো
বর্তমানে ধর্মান্তর কোনো সাধারণ ঘটনা নয়; এটি পরিকল্পিত, সংগঠিত ও বহুমাত্রিক একটি আগ্রাসন। একে শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে হবে না। প্রেম, বন্ধুত্ব, উপহার, অর্থ, সাহায্য, মোহ; সব কিছুই এখন ব্যবহৃত হয় ধর্মান্তরের হাতিয়ার হিসেবে। শুধু কূপমণ্ডূক ভাবনায় আটকে থাকলে এই ফাঁদ বোঝা যাবে না। যুবসমাজকে স্থানীয় ও বৈশ্বিক কৌশল, সিনেমা-সিরিজে স্নায়ুযুদ্ধ এসব বিষয়ে সচেতন করতেই হবে, নইলে তারা প্রেমের ছলে বা দয়ার ছলনায় সর্বস্ব হারাবে।
৫. সনাতন ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ এবং ধর্মত্যাগের পরিণতি জানানো
সনাতন ধর্ম শ্রেষ্ঠ, কারণ এটি কেবল বিশ্বাস নয়; এটি একাধারে বিজ্ঞান, চেতনা ও কর্মনীতির পথ। এখানে ভক্তির সাথে যুক্ত আছে শক্তির সাধনা, কর্মের সাথে যুক্ত আছে আত্মউন্নয়ন, ও জ্ঞানের সাথে যুক্ত আছে মুক্তির দিশা। এই ধর্ম পরিত্যাগ মানে শুধু একটি পথ নয়; নিজেকেই হারানো। ধর্মত্যাগের পর একজন ব্যক্তি আত্মপরিচয়, সামাজিক স্বীকৃতি, ও নিজস্ব শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সে পড়ে অন্ধ অনুকরণে ও অপরিচিত ব্যবস্থায়। এটা এক ধরনের আত্মঘাতী বিকৃতি, যা ব্যক্তিকে ভেঙে দেয় এবং জাতিকে দুর্বল করে তোলে।
এই লেখার উদ্দেশ্য ঘৃণা নয়, সচেতনতা। আমরা চাই, প্রতিটি মেয়ে নিজের সত্তাকে ভালোবাসুক, নিজের বিশ্বাস, ধর্ম ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিক। ভালোবাসা হোক সততা ও শ্রদ্ধার ভিতের উপর, না যে কোনো মুখোশধারীর প্রলোভনের উপর।
প্রশ্ন হলো, আর কত ঘটনা ঘটলে আপনি / আপনারা সচেতন হবেন? আর কত মেয়ে এভাবে শেষ হলে আপনি / আপনারা বলবেন, "এখনই কিছু করা দরকার!"? আপনি এদের এই পরিকল্পিত উদ্দেশ্য ও ফাঁদ নিয়ে নিজে সচেতন হোন এবং নিজের চারপাশের আপনজনদের-ও যথাসম্ভব সচেতন করুন।
নমস্কার।
সংগৃহীত
0 Comments