ধর্মান্তর নয়, আত্মজাগরণ চাই: পুষ্পা রাণীর পরিণতি আমাদের কী শেখায়❓


 

পুষ্পা রাণী দাস; একজন সনাতনী কন্যা, যিনি প্রেমের ফাঁদে পড়ে বিবাহ করেছিলেন একজন তথাকথিত জিহাদিকে, যার উদ্দেশ্য ছিল বাকিদের মতোই। পুষ্পা ভেবেছিলেন, এটি একটি আন্তঃধর্ম প্রেম ও বিবাহ, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান ও পারস্পরিক মমত্ববোধ থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো।


পুষ্পাকে সে ভালোবাসার নামে দাসত্বে পরিণত করে, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের মাধ্যমে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়, কারণ; তখন তার উদ্দেশ্য সফল হয়ে গিয়েছিল। মাত্র তিন মাসের মধ্যে পুষ্পা সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এটি শুধুই একটি মেয়ের মৃত্যু নয়; বরং একটি সংস্কৃতির, একটি বিশ্বাসের, একটি সম্ভ্রমের উপর হামলা।


এই ঘটনা আজকের সমাজে একটি নিখুঁত উদাহরণ; কিভাবে হিন্দু মেয়েদের লক্ষ্য করে কিছু উগ্রপন্থী ব্যক্তি প্রেমের নামে, সাহায্যের নামে, বিবাহের নামে, ধর্মান্তরের উদ্দেশ্যে ফাঁদ পাতে। 


উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট- 


  • একজন সনাতনী নারীকে তার ধর্মচ্যুতি করানো, 
  • তাকে ভোগ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা, এবং 
  • তার সম্মান ও সম্পদ আত্মসাৎ করে তাকে শেষ করা বা রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া। 


এটি কেবল একটাই ঘটনা নয়, এমন হাজারে-হাজার ঘটনা ঘটে চলেছে। এগুলোর সূত্রপাত, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে; এই মানসিকতা ছোটবেলা থেকেই অনেক পরিবারে সন্তানদের শেখানো হয়। এই শিক্ষা তাদের বিকৃত করে তোলে, যেখানে নারী শুধুই একটি লক্ষ্য, একটি ‘অস্ত্র’, একটি ‘অন্য ধর্মকে দমন করার মাধ্যম’ হয়ে ওঠে। এবং এই মানসিকতা বয়স্ক থেকে কিশোরদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।


সনাতনী সমাজ যদি এই চক্রান্ত ও ফাঁদ সম্পর্কে যথাসময়ে সচেতন না হয়, তবে পুষ্পার মতো আগে যেমন হাজারে-হাজার বলির পাঠা হয়েছে তেমনি আরও অনেক মেয়ে এই পথে ধ্বংসের দিকে ঠেলে যাবে। এখানে আবেগ নয়, বাস্তবতা বুঝে সচেতন হওয়াই প্রয়োজন। সনাতন নারীদের আত্মরক্ষা ও আত্মসম্মান রক্ষায় এখন সময় এসেছে সক্রিয় হওয়ার, ভাবনার বাইরে এসে কাজ করার।


এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে বাংলাদেশ অগ্নিবীর কার্যকর আত্মরক্ষামূলক পথ; পঞ্চনীতির কথা বারবার বলে। এটি কেবল একটি সাংগঠনিক আহ্বান নয়, বরং প্রতিটি সনাতনী পরিবার, যুবক, কিশোর, নারী ও বুদ্ধিজীবীর জন্য একটি জরুরি করণীয়।


আসুন, পঞ্চনীতি অনুসরণ করি


১) বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র পড়া ও পড়ানো।

এই সমাজে নিজের শিকড় জানলে তবেই আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে। বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র পড়া মানে আত্মজ্ঞান, আত্মরক্ষা ও নৈতিকতা শেখা। একজন সনাতনী যদি নিজ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তবে তার মনে সহজেই বিভ্রান্তি ঢুকে পড়ে।

২) সনাতন ধর্মের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা।

যে জাতি তার ইতিহাস জানে না, সে নিজের সম্মান রক্ষা করতে পারে না। ঋষি, মুনি, রাজা, বীর ও ত্যাগীদের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যাতে তারা জানে, সনাতন ধর্ম মানেই পরম শৃঙ্খলা, সহিষ্ণুতা ও গৌরবের ধারক।

৩) ধর্ম ও মতবাদের মধ্যে পার্থক্য জানানো।

ধর্ম মানে চিরন্তন সত্য ও ন্যায়নীতি। মতবাদ মানে কোনো একটি নির্দিষ্ট কালের ব্যাখ্যা। অনেকেই ধর্মের মোড়কে মতবাদের প্রচার করে। এই বিভ্রান্তি দূর করতে হলে পার্থক্য শেখাতে হবে, বুঝাতে হবে।

৪) বৈশ্বিক ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা জানানো।

শুধু ধর্মীয় বই পড়লেই হবে না। বর্তমান সমাজে কী হচ্ছে, কোথায় কী ষড়যন্ত্র চলছে, কাদের মাধ্যমে ধর্মান্তরণ ঘটছে, কাদের দ্বারা মেয়েরা বিপদে পড়ছে—এই বাস্তবতা জানানো জরুরি। তথ্য ও উদাহরণের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

৫) সনাতন ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ ও ত্যাগের পরিণতি জানানো।

যে ধর্ম অপরের উপর জোর করে না, যে ধর্ম নারীকে মা রূপে পূজা করে, যে ধর্ম জ্ঞান, বিজ্ঞান ও মানবতার ভিত্তি স্থাপন করেছে; সেই ধর্ম ত্যাগ মানে আত্মপরিচয়ের মৃত্যু। যারা এই ধর্ম ত্যাগ করেছে, তারা কী পেয়েছে এবং কী হারিয়েছে, সে ইতিহাস তুলে ধরা উচিত।


পুষ্পা রাণী দাসের মৃত্যু আমাদের জন্য এক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সতর্কতা। এটি কেবল একটি প্রেমের পরিণতি নয়; এটি একটি জাতির প্রতি হুমকি, একটি চেতনাবিরোধী আঘাত। এ ধরনের পরিকল্পিত প্রবণতার বিরুদ্ধে সনাতনী সমাজের প্রতিটি স্তরে আত্মরক্ষামূলক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।


পঞ্চনীতি কোনো কেবলমাত্র তাত্ত্বিক প্রচারণা নয়; এটি হলো আত্মরক্ষা, আত্মসম্মান ও আত্মজাগরণের জন্য একটি সুদৃঢ় নীতি। যার মধ্যে দিয়ে প্রতিটি সনাতনী নারী-পুরুষ একসাথে জেগে উঠতে পারে, নিজেদের আত্মপরিচয় রক্ষা করতে পারে, এবং এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখে দিতে পারে।


পরিশেষে বলতে হয়, উনিও উনার কৃতকর্মের ফল ভোগ করেছেন। কৃতকর্মের ফল প্রাপ্ত করা শাস্ত্রের এক মহাবাণী- "যেমন দ্রুতগামী রথ, তেমনি কর্ম ফল হয়ে দ্রুত ফিরে আসে কর্তার দিকে, তপ্ত অগ্নির ন্যায় প্রতিকূল দণ্ড হয়ে অসৎকর্মার দিকে, শীতল জলের ন্যায় অনুকূল সুখ হয়ে সৎকর্তার দিকে।" ~ অথর্ববেদ ৫/১৪/১৩ ; তবুও উনার আত্মার শান্তি কামনা করি। 


নমস্কার।


সংগৃহীত

Post a Comment

0 Comments