নিরাপত্তার অভাব: পাহাড়ে এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দান উৎসব

 

“গোটা বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ এমন অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে উৎসাহ পাচ্ছেন না।”
নিরাপত্তার অভাব: পাহাড়ে এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দান উৎসব



“গোটা বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষুসংঘ এমন অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে উৎসাহ পাচ্ছেন না।”


নিরাপত্তার অভাব: পাহাড়ে এবার হচ্ছে না কঠিন চীবর দান উৎসব


রাঙামাটি প্রতিনিধি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, Published : 06 Oct 2024, 06:49 PM, Updated : 06 Oct 2024, 07:22 PM



বিদ্যমান পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এ বছর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ।


রোববার দুপুরে রাঙামাটি বনরূপা মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত শ্রদ্ধালংকার মহাথের।


তাদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে রাঙামাটি রাজবন বিহারও। সংবাদ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলার ১৫টি বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রদ্ধালংকার।


তিনি বলেন, 

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিহারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চারজন আদিবাসী ব্যক্তি নিহত হন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।


“পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর এভাবে বিনা বাধায় সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পবিত্র বিহারে আক্রমণ ও বুদ্ধমূর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়।”


এসব ঘটনায় প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই জানিয়ে শ্রদ্ধালংকার বলেন, 

“গোটা বৌদ্ধ সমাজ ও ভিক্ষু সংঘ উদ্বিগ্ন-শঙ্কিত। এমন অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে তারা উৎসাহ পাচ্ছেন না।


“তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দায়ক-দায়িকা ও ভিক্ষু সংঘের মধ্যে আলোচনাক্রমে চলতি বছরে কঠিন চীবর অনুষ্ঠান না করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি।”


গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে ‘পাহাড়ি-বাঙালি’ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এর জেরে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেয় হামলাকারীরা। সেখানে পাহাড়ি ও বাঙালিদের শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে।


সেদিন রাতে গুলিতে খাগড়াছড়িতে তিনজন নিহত হন। খাগড়াছড়িতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়ে রাঙামাটিতে ছড়িয়ে পড়ে।


এরপর ১ অক্টোবর খাগড়াছড়ির টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিভিল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর আবুল হাসনাত সোহেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা জেলা; পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।


সংবাদ সম্মেলন শেষে রাঙামাটি রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, 

“পূজনীয় ভিক্ষুরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার সঙ্গে আমরা একমত ও একাত্মতা ঘোষণা করছি। এই বছর রাজবন বিহারের অধিনে কোনো শাখা বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান হবে না।”


সংবাদ সম্মেলনে বনভান্তে শিষ্য সংঘ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ভদন্ত সৌরজগৎ মহাথের, পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ বান্দরবানের ভদন্ত তেজপ্রিয় মহাথের, রাজ নিকার মার্গ চিৎমরম কাপ্তাইয়ের সহসভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, ত্রিরত্ন ভিক্ষু অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ভদন্ত আপ্রাশ্রী মহাথের, খাগড়াছড়ি শাসনা রক্ষিতা ভিক্ষু সংঘের সভাপতি ভদন্ত সুমনা মহাথেরসহ অন্য ভিক্ষু সংঘের ভিক্ষু প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় এই ধর্মীয় আচারের প্রবর্তিত হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।


ধর্মীয় মতে, এই পদ্ধতিতে চীবর দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয়। তাই এই নিয়ম অনুসারে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদিবাসী নারীরা জুমে উৎপাদিত তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে কাপড় তৈরির পর সেলাই ও রঙ করে চীবর তৈরি করেন। এই চীবর আনুষ্ঠানিকভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়।


#বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ