দীপ্তি ও তিথীদের পক্ষে কে বলবে?

Mojib Rahman,
Mojib Rahman,- ফেসবুক থেকে নেয়া 

Mojib Rahman, 25 November at 18:29 


মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ শুনছি ঢাকা-মাওয়া সড়কে ইলিশ পরিবহণে৷ তারা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য অনবরত এমন ওয়াজগুলো প্রচার করে ঘৃণা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির জন্য৷ আজহারী পুরো ওয়াজটিই করছেন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণার প্রকাশ করে৷ মূর্তিপূজা নিয়ে আজগুবি গল্প বলে হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে অনবরত আঘাত দিচ্ছেন৷ কেউ কি অনুভূতিতে আঘাত পেয়ে মামলা করতে পারবে? 

অথচ ফেইসবুক পোস্টে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার অভিযোগে এক বছরের বেশি সময় সংশোধন কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়েছে কলেজ ছাত্রী দীপ্তি রানী দাসকে৷ তার মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জরুরি পদক্ষেপ’ চেয়েছে আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা। ফেইসবুকে দেওয়া একটি ছবিতে ‘কোরআন অবমাননা’ হয়েছে অভিযোগ করে গত বছর ২৮ অগাস্ট দিনাজপুরের পার্বতীপুরের ১৭ বছর বয়সী দীপ্তি রানীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি রাজশাহীর একটি সংশোধন কেন্দ্রে আছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেওয়ার এই ‘ভুয়া অভিযোগে’ দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাত বছরের জেলও হতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার ক্যাম্পেইনার বলেন, “কেবলমাত্র ফেইসবুক পোস্টের কারণে একটি শিশুর বিকাশের সময়টিতে সাজা দিয়ে আটকে রাখায় উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই।

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত নিবর্তনমূলক আইন কাউকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে কতটা কার্যকর, এখানে সেটাই দেখা যাচ্ছে।”

রাষ্ট্রকে জনগণের অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, “নিরাপত্তা না দিয়ে, কিশোর বয়সী একটি মেয়েকে এক বছরের বেশি সময় সংশোধন কেন্দ্রে দুর্ভোগে রাখা হয়েছে। দীপ্তি রানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকা উচিত, বন্দিশালায় নয়।” অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, গত বছর অগাস্টে দীপ্তি রানী পার্বতীপুর সরকারি কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু আটকের পর থেকে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছেন না।

বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইলেও পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মানবিকে ভর্তি হওয়া দীপ্তি রানী ছবি আঁকতে এবং গল্প লিখতে ভালবাসেন। গ্রেপ্তারের পর নিম্ন আদালতে তিনবার তার জামিন আবেদন খারিজ করা হয়। পরে চলতি বছর ১১ মে হাই কোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করলেও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সে আদেশ স্থগিত করে আদালত।

দীপ্তি, তার পরিবার এবং বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত’ সহিংসতা থেকে রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ‘মত প্রকাশের কারণে’ গ্রেপ্তার সবাইকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলোপ অথবা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধনেরও আহ্বান জানানো হয়েছে তাদের বিবৃতিতে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী তিথী সরকারের কথা মনে পড়ছে৷ মেধাবী, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও উচ্ছ্বল মেয়েটির লেখাপড়া শেষ হয়েছে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জন্য৷ তার পোস্টটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম যে এতেও মানুষ অনুভূতিতে আঘাত পায়৷ পুরাণ ঢাকায় অহরহই দেখি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করতে৷ পেছন দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে কোন নারী৷ কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে না৷ তিথী সরকার ছিলেন মাত্রই আঠারো পেরোনো ছাত্রী৷ কেউ তাঁর পক্ষে দাঁড়ায় নি৷ প্রাণিবিদ্যার ছাত্রী ছিলেন৷ চোখভরা স্বপ্ন ছিল৷ আত্মগোপনে থাকতে পরিবার তাঁর বিয়ে দিয়ে দেয়৷ কেউ যাচাইও করেনি মেয়েটি সত্যি তথ্য দিয়েছে না ভুল তথ্য দিয়েছে৷ তাঁর বিচার শেষে যদি খালাশ পায় এবং প্রমাণ হয় সে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়নি তখন এর দায় কে নিবে? মেয়েটির ছাত্রত্ব শেষ হল, আঠারোতেই বিয়ে হয়ে গেল অথচ তাতে কেউ দায় নিবে না৷ দিপ্তী বা তিথীরা একদমই ছোট মানুষ৷ রাস্তাঘাটে অনবরত ঘৃণা শুনতে হয় তাদের৷ কখনো সামান্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন আর তাতেই সারা রাষ্ট্র ঝাপিয়ে পড়ে ছোট্ট মেয়েটির উপর৷ অথচ সে প্রত্যাশা করে রাষ্ট্র অন্তত তাঁর পাশে থাকবে!


সূত্র: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ