হবিগঞ্জে কোরআন নিয়ে পূজামণ্ডপে প্রবেশের সময় যুবক আটক

হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে প্রবেশের সময় আটক মিজান/ ঢাকা ট্রিবিউন
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে প্রবেশের সময় আটক মিজান/ ঢাকা ট্রিবিউন

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট,  প্রকাশিত ১২:২১ রাত নভেম্বর ২০, ২০২১


ওই যুবক দুপুর থেকে মণ্ডপের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় কয়েকজন যুবক তার উপর নজর রাখছিল


হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার সার্বজনীন পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে প্রবেশের সময় মিজান (২৫) নামে এক যুবককে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার লুয়াইতপুর গ্রামে।


শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক মন্দিরের পেছন দিক দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হলে তারা তাকে আটক করেন।


মিজানের দেহ তল্লাশি করলে একটি কোরআন শরীফ পাওয়া যায়। পরে তাকে চৌধুরীবাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।


স্থানীয় বাসিন্দা সনি রায় জানান, ওই যুবক দুপুর থেকে মণ্ডপের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় কয়েকজন যুবক তার উপর নজর রাখছিল। বিকেলে সে মণ্ডপে প্রবেশ করার চেষ্টাকালে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার ব্যাগে কোরআন শরীফ পাওয়া যায়।


জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন বলেন, “স্থানীয়রা যুবককে আটক করে আমাকে খবর দেন। আটক মিজান নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে। পরে তাকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।”


মিজানকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ। যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নানুয়ার দীঘির পাড় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় কুমিল্লা নগরের কয়েকটি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।


স্থানীয়রা জানান, তারা হনুমানের মূর্তির কোলে কোরআন দেখতে পান, এসময় হনুমানের গদাটি দেখা যায়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় বিকেলে শহরের বেশ কয়েকটি মন্দির এবং পূজামণ্ডপে হামলা চালানো হয়।


পরে পুলিশের সংগ্রহকৃত সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা প্রধান অভিযুক্ত ইকবালকে শনাক্ত করে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন মসজিদ থেকে কীভাবে পবিত্র কোরআন শরিফ নিয়ে বের হয়ে পূজামণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে হনুমানের গদা হাতে নিয়ে ফেরেন।


এ ঘটনায় কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় ৯ মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর সকালে নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে পূজামণ্ডপে ঘটনার সময় জেলার আদর্শ সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামের মো. ফয়েজ আহমেদ (৪১) ফেসবুক লাইভে এসে ঘটনাটি প্রচার করেন। দৃশ্যটি লাইভে প্রচার ও মোবাইল ফোনে ধারণ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ওইদিন রাতে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে একমাত্র আসামি করে মামলা করে।


প্রধান অভিযুক্ত ইকবালসহ কোরআন অবমাননা মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার তথ্য ৯৯৯-এ কল করে জানানো ইকরাম হোসেন এবং নগরীর শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি (রা.)-এর মাজারের সহকারী খাদেম হুমায়ুন আহমেদ ও ফয়সাল আহমেদ।


সূত্র: ঢাকাট্রিবিউন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ