বৃহস্পতিবার বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ‘পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষ থেকে স্থানীয় বাজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। |
বৃহস্পতিবার ’পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় এবং সদরে রুবেল ও জুনান আহত হয়েছিলেন।
খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত ৩, ১৪৪ ধারা জারি
চট্টগ্রাম ব্যুরো, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, Published : 20 Sep 2024, 12:45 PM, Updated : 20 Sep 2024, 03:40 PM
খাগড়াছড়িতে ‘পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
বৃহস্পতিবার রাতে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ।
নিহতরা হলেন, ধনঞ্জয় চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা (২৫) ও জুনান চাকমা (২০)।
ডিআইজি পলাশ বলেন, “বৃহস্পতিবার ‘পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় এবং সদরে রুবেল ও জুনান আহত হয়েছিলেন। পরে তাদের খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
“সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধনঞ্জয় এবং রাত দেড়টায় রুবেল ও জুনান মারা গেছেন।”
এদিকে নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে শুক্রবার বেলা ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন,
“যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে জেলা প্রশাসন এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। ”
খাগড়াছড়িতে পুড়ে যাওয়া দোকানপাট |
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ‘পাহাড়ি ও বাঙালিদের’ মধ্যে সংঘর্ষ থেকে স্থানীয় বাজারে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।
জেলা পুলিশ সুপার আরিফিন জুয়েল বলেন, “সেখানে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা চলছিল। সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।”
স্থানীয়রা বলেন, বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ মামুন নামে এক যুবক হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একপক্ষ। এতে ৬০ থেকে ৭০টি দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।
দীঘিনালার এই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে সদরসহ পুরো জেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টা) জেলা শহরের নারানখখাইয়া, স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। থেমে থেমে গভীর রাত পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
খাগড়াছড়িতে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল |
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, “হাসপাতালে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে ৯ জনকে। তারা বেশির ভাগই সদর উপজেলা থেকে রাতে এসেছেন। এর মধ্যে তিনজন মারা যান।
তিনি আরও বলেন,
“গুরুতর আহত চারজনকে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি রয়েছেন। “
নিহত তিনজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তাদের মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে, জানান রিপল বাপ্পি চাকমা।
এদিকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার সকালে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে যান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দীঘিনালা জোন অধিনায়ক। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানপাট পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
খাগড়াছড়িতে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর |
এ সময় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন,
"ঘটনার যাতে পুনারাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পাহাড়ি ও বাঙালি উভয়কে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ করছি।”
বৃহস্পতিবার আগুনে পুড়ে অন্তত ১০২টি দোকান ছাই হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে জেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর ফারুক বলেন,
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কালকে রাত থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত আছে। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 মন্তব্যসমূহ