সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় পাহারার আহ্বান বিএনপির

রূপান্তর ডেস্ক, প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০ এএম আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০০ এএম


সারা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন দেশবাসীকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থি দলগুলো। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ আয়োজিত সমাবেশে নেতারা এ আহ্বান জানান। এ ছাড়া জেলায় জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং নির্বিচারে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় গভীর হতাশা প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।


এদিকে গতকালও দেশের কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার হামলার পর বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।


বামপন্থি দলগুলোর সমাবেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়, সমাবেশে সারা দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন দেশবাসীকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এ সুযোগে বিভিন্ন জায়গায়, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীরা বিভিন্ন অফিসে তাদের দুর্নীতির ফাইল পোড়ানোর উৎসব করতে পারে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থেকে দুর্বৃত্তদের রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়।


বিবৃতিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রতিশোধমূলক কোনো তৎপরতায় লিপ্ত না হওয়া এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনীসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।


এদিকে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে সোমবার হামলার ঘটনা ঘটে। গতকালও কয়েকটি স্থানে হামলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের স্থাপনা হামলা না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :


খুলনা : দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে লুটপাট, অগ্নিকান্ড, ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের দাবিতে খুলনায় সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। গতকাল নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনারের পাদদেশে বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এ সংবাদ সম্মেলন করে।


নীলফামারী : নীলফামারীতে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিহত এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছে নীলফামারী জেলা বিএনপি। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের সম্পদ এবং সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তারা। জেলার সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় ও তাদের বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন বলেও জানিয়েছেন নেতারা।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া : গত দুদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বিজয়নগরে বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজন দত্তের বাসায় ভাঙচুর, লুটপাট, জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক রিটন রায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেঘা বিল্ডার্সে হামলা, সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক সাধন চৌধুরীর বাড়ির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সংখ্যালঘুদের প্রধান উপাসনালয় আনন্দময়ী কালীবাড়ির গেট কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও আবাসিক ভবনের জানালার গ্লাস ভাঙচুর, পূর্ব পাইকপাড়া রামঠাকুর আশ্রমের প্রাচীন ঘাট ভেঙে জায়গা দখল, বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের সঞ্জয় বিশ্বাসের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, চান্দুরা ইউনিয়নের রাধাগোবিন্দ মন্দিরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।


পঞ্চগড় : আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউই জড়িত ছিলেন না। একটি চক্র সেখানে হামলা করে, ভাঙচুর ও লুটতরাজ এবং অগ্নিসংযোগ করেছে এমনটাই দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল দুপুরে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি করেন নেতারা। সেই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন তারা। এদিকে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও বিভিন্ন হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পঞ্চগড় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।


কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : জেলার কুমারখালী উপজেলা শহরে নাশকতা সৃষ্টির সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই। তবে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একশ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল মানুষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে এমনটাই জানিয়েছেন পথসভায় উপস্থিত কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ। কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান তুহিন বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের মতো ঘটনা যাতে কেউ না ঘটাতে পারে সেজন্য প্রয়োজনে প্রত্যেকটি এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।


যশোর : অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। হামলাকারীরা বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি গরু, হাঁস, মুরগি, চাল ও বৈদ্যুতিক মোটর লুট করে নিয়ে যায়।


মনিরামপুর (যশোর) : কেউ যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিবার ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন না করতে পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ঘোলাপানিতে কেউ মাছ শিকার করতে না পারে, বিএনপির ভাবমূর্তি যেন ক্ষুন্ন না করা হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে মনিরামপুর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম এ কথা বলেন।


বাগেরহাট : ঘরে ঢুকে সাবেক স্কুলশিক্ষক মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জিকে (৬৫) পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই শিক্ষকের স্ত্রী ও মেয়ে। সোমবার রাতে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি মধুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক ছিলেন। এ সময় আহত তার স্ত্রী শেফালি চ্যাটার্জি (৬০) ও মেয়ে ঝুমা রানী চ্যাটার্জিকে (৩৫) বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


অন্যদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল এলাকায় নাজমা সিকদার সেতারা (৫৩) নামে এক নারীকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষরা। তার বাড়ি থেকে হাঁস-মুরগি গবাদি পশুসহ সবকিছু নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। নাজমা সিকদার কচুয়ার গোপালপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। দুই পায়ে ক্ষত-জখম হয়েছে।


এদিকে হামলা ও বিশৃঙ্খলা রোধে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় নেতা এবং ও ছাত্রদের সঙ্গে গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একাধিক সভা করেছে জেলা পুলিশ।


দিনাজপুর : বোচাগঞ্জ উপজেলার একটি বাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ৪০টি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি ছাড়া করার হুমকি প্রদান করেছে। এ ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার ঈশানিয়া ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সোমবার দুপুর থেকে জেলার সদর উপজেলার ফুলতলা শ্মশানঘাট, বোচাগঞ্জ উপজেলার চৌরঙ্গী বাজার, পার্বতীপুর উপজেলার পাঁচটি কালীমন্দিরসহ বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।


নাটোর : লালপুর উপজেলায় মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির বাড়িসহ চারটি বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুজন আহত হন। গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।



সূত্র: দেশ রূপান্তর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ