হিন্দুবিদ্বেষের মুখোমুখি ও আমার উত্তর

আমি হিন্দু হওয়ার কারনে প্রায়ই বুলিং এর শিকার হই যেমন, " তোমরা তো গরুকে পুজো করো, তোমাদের ঈশ্বর কয়জন, তো তুমি কাকে মানো, তোমাদের পুর্বপুরুষরা তো পাহাড়ে থাকতো "। তো আমি এইগুলার লজিক্যালি ভাবে কিভাবে উত্তর দিতে পারি?


আমি একজন স্টুডেন্ট, একবছরের বেশি সময় ধরে পড়ালেখা জন্য বিদেশে তে আছি। অসংখ্য মানুষের সাথে দেখা হয়েছে, হয়েছে অনেক কথাও। সাদা, কালো, ব্রাউন, চাইনিজ আরো যতো ধরনের মানুষ আছে না কেনো, এই দেশে সবাই থাকে। খ্রিস্টান ধর্মালম্বী মানুষরাই এইখানে বেশি। খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে আমার কোন ধারনা ছিলো না এবং বাংলাদেশে থাকতেও আমি এমন কাউকে ব্যাক্তিগত ভাবে জানতাম না। এইখানে আসার পর বেশিরভাগ যাদের সাথেই কথা হয়েছে তারা ওই ধর্ম পালন করে। যখন কলেজে প্রথম প্রথম যেতাম একা একাই থাকতাম, বিদেশিদের সাথে কথা বলতে একটু নার্ভাস বোধ করতাম। প্রথম প্রথম চুপ থাকলেও এখন আর থাকি না। তো আমি হিন্দু হওয়ার কারনে ওদের থেকে অনেক ব্যাড কমেন্টও পেয়েছি। যেমন:  তোমরা তো গরুকে পুজো করো, তোমাদের ঈশ্বর কয়জন, তো তুমি কাকে মানো, তোমাদের পুর্বপুরুষরা তো পাহাড়ে থাকতো এবং আরো অনেক কিছু। আজকে আপনাদের সাথে কয়েকটা ঘটনা শেয়ার করবো।


ঘটনা ১ম: 

আইটি ক্লাসে ওয়েস্টার্ন ২টা ছেলের সাথে বসতাম, যাদের মধ্যে একটা খ্রিস্টান ছিলো আরেকটা মুসলিম ছিলো। তো খ্রিস্টান ছেলেটা যখন জানতে পারলো আমি হিন্দু সে আমাকে অন্যধর্ম নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা আমাকে বলত, আমি এইগুলাতে মজা নিতাম, আবার সেইম মুসলিম ছেলেটাও করতো। একদিন এইধরনের ধর্ম নিয়ে কথা বলতে বলতে খ্রিস্টান ছেলেটা আমাকে বলে উঠলো যে,  তুমি তো গরুকে পুজো করো তাই না? তোমারা তো গরুকে তোমাদের ঈশ্বর মনে করো। গরু খেতে কিন্তু অনেক টেস্টি। তখন মুসলিমটা পাশে থেকে বলে উঠলো যে, যারা মুর্তি পুজো করে তারা এই পৃথিবীতে অনেক পাপ করতেছে। আমি ২ মিন চুপ থাকলাম,  তারপর প্রথমে মুসলিম ছেলেকে বললাম যে খ্রিস্টানরা চার্চে জিজাস এর মুর্তির সামনেই তো মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালায়, তাইলে তারা কি পাপ করতেছে না? আর তুমি ওদের এই পাপী দেশে আছো, হারাম দেশে আছো, তোমার তো উচিত আফগানিস্তান, পাকিস্তানে চলে যাওয়া, ঐখানে মুর্তিপুজা হয় না। সে চুপ হয়ে গেলো, এখন চুপ করানোর পালা খ্রিস্টানকে। তাকে বললাম যে, সারাদিন টিকটক দেখলে এইগুলাই জানবা, এইগুলা বাদ দিয়ে কিছু বই আছে, ইউটিউবে ভিডিও আছে তা দেখো। আমিও তো তোমাকে বলতে পারি যে, জিজাস ঈশ্বরের সন্তান হয়েও কয়েকজন তুচ্ছ মানুষের কাছে ধরা খেয়ে জীবন দিয়েছে, এ আবার কেমন ঈশ্বর? আমি কি কখনো তা বলেছি? তারপর থেকে ওরা আমাকে ধর্ম নিয়ে আর কখনো কিছু বলে নি। 


ঘটনা ২য়:

ক্লাস শেষে কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিলাম আর ফোন ইউজ করছিলাম। হঠাৎ করে চার্চের একজন লোক এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি চার্চে যাও? উত্তরে আমি বললাম, না যাই না। আবার প্রশ্ন করলো,  তুমি কি রবিবারেও চার্চে যাও না? বললাম যে, আমি আমার জীবনে কখনো চার্চে যাই নি। তখন সে বলতেছে তুমি কি জানো যে, তুমি অনেক বড় পাপ করতেছো? আমি অনেক বিরক্ত হয়ে ওরে বললাম, আমি হিন্দু ধর্ম পালন করি। তখন সে আমাকে সরি বললো এবং আমাকে বললো, তোমার ধর্মে কিছু আদর্শের কথা আমাকে বলো। তো উত্তরে বললাম, আমার ধর্ম আমাকে শিখায় প্রথমে কাউকে জিজ্ঞেস করো যে, সে কোন ধর্ম পালন করে এবং তারপর তাকে জিজ্ঞেস করো, সে কি মন্দির বা চার্চে যায় নাকি। কাউকে দেখা মাত্রই এমনটা বলা শিখায় না। সে একটু লজ্জিত হয়ে আমাকে সরি এবং "গড ব্লেস ইউ" বললো এবং জানতে চাইলো আমরা কি বলি? আমি বললাম, ওম নমঃ শিবায়।


ঘটনা ৩য়: 

আজকে একটা খ্রিস্টান প্রফেসর সাথে বসে একটা প্রজেক্ট করছিলাম এবং গল্প করছিলাম। তো তখন আমার ব্যাগ থেকে আমি একটা চিপ্স বের করে খাওয়া শুরু করলাম। প্রফেসর আমাকে প্রশ্ন করলো যে, তুমি কি রোজা রাখো নি? ফাস্টিং করতেছো না? উত্তরে আমি বললাম, আমি মুসলিম না, আমি হিন্দুধর্ম পালন করি। তখন সে আমাকে বললো, তো তোমার ঈশ্বর কয়জন এবং তুমি কাকে পুজো করো? আমি উনার কাছে এই প্রশ্ন আশা করি নি। আমি উনাকে বললাম, আমি শিবের ভক্ত, আমি উনার আরাধনা করি। তখন উনি হেসে হেসে আমাকে আবার বললেন, তো তুমার শিব দেখতে কেমন? উত্তরে আমি হেসে হেসে বললাম, আপনি চাইলে আমি ছবি একে দেখাতে পারবো, কিন্তু আপনি কি আপনার ঈশ্বরের ছবি আঁকতে পারবেন? তখন পাশের আরেকজন ইন্ডিয়ান প্রফেসর আমার কথায় হাসছিলেন এবং উনাকে বললেন যে, সবাই কে এইগুলো বলতে যেয়ো না, অন্য ধর্মের কাউকে এমন প্রশ্ন করলে তোমাকে গুলি করে দিতো। সবাই তখন হাসছিলাম এবং যাওয়ার সময় উনি আমাকে বললেন যে, আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম, মনে কিছু নিও না। আমিও হেসে হেসে বললাম, আপনার ঈশ্বরের ছবির অপেক্ষায় রইলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ