পৌরাণিক শিক্ষাই ভারতকে নিয়ে যাবে ঈপ্সিত লক্ষে - নারায়ণ দেবনাথ

পৌরাণিক শিক্ষাই ভারতকে নিয়ে যাবে ঈপ্সিত লক্ষে - নারায়ণ দেবনাথ

পৌরাণিক শিক্ষাই ভারতকে নিয়ে যাবে ঈপ্সিত লক্ষে

✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️


ধর্ম কখনো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।ধর্ম উপলব্ধির বিষয়। কে কোন ধর্ম গ্রহণ বা পালন করবেন তা নির্ভর করে 


তার বুৎপত্তি জ্ঞান আর পছন্দের উপর। যেমন ধর্ম সম্পর্কে গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্মকে বলেছিলেন,

"বাস্তবে ধর্ম কোন মৃত চিন্তার নাম নয়,না তো কোন এক ঐতিহ্যের নাম মাত্র। ধর্ম জীবনের নাম আর জীবন নিরন্তর পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনই-তো জীবনের গুণ। আর পরিবর্তন হেতু মানুষকে কর্ম করে যেতে হয়। আর আপনি কর্মকেই ত্যাগ করছেন মহামহিম। 


>- ভীষ্ম শ্রীকৃষ্ণের কথার উত্তরে বলেছিলেন, 

"কিন্তু আমি তো প্রতিটি পদে উচিত ধর্ম পালন করেছি বাসুদেব"।


না মহামহিম এই জন্মে আপনি কর্মের বন্ধনে যাতে আবদ্ধ না হন এই কারনে আপনি কোনদিন বাস্তবিক কর্ম করেননি। কর্মের অর্থ হল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আর নিজের সিদ্ধান্তের পরিনামকে স্বীকার করা। 


সনাতন ধর্ম হলো সেই ধর্ম যা কর্মের সিদ্ধান্তকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। সনাতন শুধু অনন্ত লোকের সাধনাই করতে বলে না সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে রাজধর্ম আর লোকধর্ম এক নয়। শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে শত্রু নিধন করবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনীতিবিদ কৌটিল্যের এই নীতি পরিহার করেছিলেন বলেই সম্রাট অশোক তার তিরোধানের পর দেখা দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়। সম্রাট অশোকের সময় তার রাজত্বের সীমা ছিল উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বত দক্ষিণে তামিল ভূমি পর্যন্ত ছিল মগধ সাম্রাজ্য। কিন্তু সেই সাম্রাজ্যে একের পর এক ঘোষিত হতে থাকে স্বাধীনতা। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে শুরু হয়েছিল বিদেশি বর্বরদের উপূর্যপরি আক্রমণ। একটা সময় অন্ধ্র কলিঙ্গ পাটালিপুত্র সম্রাজ্যের নতজানু হতে হয়েছিল।


ইহলোক নিয়ে সাধনা হল মানবতা শিক্ষা ও সংস্কৃতি আর অনন্তলোক নিয়ে সাধনা হল ধর্ম। বসুন্ধরা বীরভোগ্যা হতে পারে কিন্তু অনন্ত লোকের জন্য নয়। ভারত শুধু অনন্ত লোকের সাধনাই করেনি ইহলোকের সাধনায়ও তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নাতীত। পৌরানিক যুগে ভারতের আয়তন ছিল বিশালতম। যুদ্ধের পর মৌর্য যুগে ভারত তার লুপ্ত গৌরব আংশিক উদ্ধারে সমর্থ হয়েছিল। সেই যুগের শ্রেষ্ঠ সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বে ভারতের সীমানা পশ্চিমে আফগানিস্তান ছাড়িয়ে পারস্য পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বহুধা বিভক্ত ভারতে গড়ে উঠেছিল ঐক্য জনগনের মধ্যে বিকাশ লাভ করেছিল রাষ্ট্রীয় চেতনা। চন্দ্রগুপ্তের পর তার পুত্র বিন্দুসার ২৭বছর রাজত্ব করেছিল।


তার মৃত্যুর পর মগধের সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন সম্রাট অশোক। ঐতিহাসিকদের বিচারে তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা। ভারতের ইতিহাসে তার রাজত্বকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু কলিঙ্গের যুদ্ধে ব্যাপক নরহত্যায় তিনি গভীরভাবে শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। তারপর থেকেই তিনি দিগ্বিজয় ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ধর্মের নিগূঢ় সত্যে। প্রেম ও অহিংসার সাধনা ছিল তার জীবনের ব্রত। অহিংসা হল রাষ্ট্রের আদর্শ উপেক্ষিত হলো রাজধর্ম। পরবর্তীতে ভারতের ইতিহাসে এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। শান্তি ও অহিংসার নামে ভারতীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছিল সমরবিদ্যা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও উন্নয়নের প্রতি প্রবল অনীহা উদ্যমহীনতা কাজে অনাসক্তি জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে হয় উদাসীন। যার পরিনামে ভারত হারিয়েছে তার ব্যাপ্তি লুপ্ত হয়েছে সনাতনী চেতনা সহ্য করতে হয়েছে ধর্মান্তর হারাতে হয়েছে নারীর সম্ভ্রম লুন্ঠিত হয়েছে ধন সম্পদ ভোগ করতে হয়েছে অপরিসীম দু:খ কষ্ট আর বেদনা।


এতদিন ভারত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি কায়েম করতে চেয়েছিল পূর্বসূরিদের আদর্শ। কিন্তু ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে হাজার বছরের সনাতন সংস্কৃতি আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়। প্রয়োজন শুধু ঐক্য আর সমর্থন।


লিংক: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ