উত্তরঃ- প্রশ্নটা হবে আজ পর্যন্ত মুসলমানরা কেনো হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর কয়জন সেটা বুঝে উঠতে পারে নি?
হিন্দুরা সবাই জানে হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর একজনই। দেবতা অনেকজন। দেবতারা সবাই একজন ঈশ্বরেরই বিভিন্ন রূপ ও বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ।
দেবতা ও দেবী কনসেপ্ট মুসলমানরা বুঝে না। অনেকে আরব মুশরিকদের ঈশ্বর ও উপ-ঈশ্বরদের সাথে এক করে ফেলে হিন্দুদের দেব-দেবীদের।
হিন্দু ধর্ম বহু দেবতাবাদী ধর্ম, বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম না।
মুসলমানরা হিন্দু ধর্মের দেবতাদের সাথে ইসলাম ধর্মের আল্লাহকে তুলনা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে এবং মনে করে দেবতারা একেকজন আলাদা আলাদা ঈশ্বর।
দেবতা ও দেবী রূপ বা অবতার হচ্ছে একজন পরমেশ্বরের বিভিন্ন শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
তিনি একেক দেবতা হয়ে সবখানে বিরাজ করেন। দেবতারা দেবকুলে থাকেন কিন্তু দেবতারা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের মাঝেও বিরাজ করেন।
দেবী দূর্গা, দেবী কালী এই দেবীরা আবার অন্য দেবী পার্বতীর একেকটি অবতার। দেবী পার্বতী আবার পরমেরশ্বর ব্রহ্মের নারী অবতারের অন্যতম শক্তির বহিঃপ্রকাশ।
হিন্দু ধর্মে দেবতা ও দেবী অবতারদের প্রতিমা মূর্তির পূজা করা হয়। সবই একজনেরই সাকার অবতার। গনেশের পূজা, গনেশের "বাবা-মা" শিবঠাকুর ও পার্বতীর পূজা সবই একজনেরই পূজা।
আসলে হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের দেবতা অবতার অসংখ্য। গুনে শেষ করা যাবে না। ৩৩ প্রকারের শক্তির বহিঃপ্রকাশ বলা হলেও এই ৩৩ প্রকারের দেবতা রূপের থেকে আরো যে কত দেবতা এসেছে সেই হিসেব করা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এমনকি মানুষও এক দেবতারূপ।
এক দেব-দেবী থেকে আরো দেব-দেবী এসেছেন। যেমন, শিব-পার্বতী থেকে গনেশ দেবতার আবির্ভাব।
এখন কেউ যদি গনেশ ঠাকুরের পূজা করে তাহলে আদতে শিব ও পার্বতীর পূজাই তিনি করছেন।
এরকমই ঈশ্বরের একজন দেব ও একজন দেবী রূপের মাধ্যমে আরো অসংখ্য দেব দেবী অবতীর্ণ হয়েছেন বা আবির্ভাব ঘটেছে।
এই দেবতা ও দেবীদের কাহিনীর সন্নিবেশ হচ্ছে বেদ, পুরান, উপনিষদ, রামায়ন, মহাভারত এসব।
আল্লাহর সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেললে হিন্দুদের ঈশ্বর মনে হবে কোটি কোটি ঈশ্বর। আসলে হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়েও বেশি একেশ্বরবাদী। তাদের মধ্যে ঈশ্বর কয়জন সেটা নিয়ে বিবাদ নেই, যদি বিতর্ক হয় তবে সেটা ঈশ্বরের কোন দেবতা অবতার শক্তিশালী বেশি সেটা নিয়ে হতে পারে।
হিন্দুদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলছেনঃ
যখনই ধার্মিকতা ক্ষয় হয় এবং অন্যায় বেড়ে যায় আমি নিজেকে প্রেরণ করি।
ভালোকে রক্ষার জন্য এবং মন্দের বিনাশের জন্য,
এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য,
আমি সময়ের পরে সময় ধরে আসছি।
- ভগবত গীতা 4.7 - 8
হিন্দু ধর্ম শুধু না, বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব ধর্মেরই ঈশ্বর একজন। শুধু বুঝার ভুলের কারনে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা নিজ ধর্ম ছাড়া বাকি সব ধর্মকে বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম মনে করে।
মুসলমানরা অনেকেই নবীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চায়। হিন্দুরা দেবতাদের মাধ্যমে দেবতাদের কাছেই চায়। হিন্দুদের দেবতারা সবাই হিন্দুদের একজন ঈশ্বরেরই অংশ।
এমন অনেক মুসলমান আছে তারা নবীজি মুহাম্মদ সাঃ কে উছিলা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করে। কিন্তু হিন্দুরা দেবতাদের কাছেই আশির্বাদ বা 'দোয়া' চায়। মানে হিন্দুরা সরাসরি ঈশ্বরের কাছেই চাচ্ছে। কাউকে উছিলা মেনে চাচ্ছে না।
শিরক বা ঈশ্বরের সাথে কাউকে এক করে ফেললে সেটা মুসলমানরাই মনের অজান্তে অনেক সময় করে ফেলে যদিও শিরক করা অনেক বড় গুনাহ কিন্তু হিন্দুরা কখনো শিরক করে না। কারন তাদের যেই কোটি কোটি দেব-দেবী আছেন সবাই একজন ঈশ্বরেরই অসংখ্য শক্তির বহিঃপ্রকাশ। আলাদা কোনো স্বত্তা না।
****
যার জ্ঞান যতটুক, সে ততটুক বুঝবে। তার মধ্য অন্ধবিশ্বাসী হলে কথাই নাই। তার মাথায় যা ঢুকিয়ে দেয়া হবে তার বাইরে আর যেতে পারবেনা।
****
খুব সুন্দর ও বোধগম্য বিশ্লেষণ করেছেন।
এই বিশ্লেষণ টি আরো আগে করতে পারলে ভালো হতো।
ধন্যবাদ রইল।
****
একটা বিষয় অনেকেই বুঝে না, শাস্ত্রীয় উত্তর শুধু মাত্র তাদের জন্যই যারা শাস্ত্র সম্পর্কে অবগত, যারা শাস্ত্র পড়ে নাই বা জানে না তাদের জন্য শুধু যুক্তিই প্রযোজ্য ।
আবার যিনি বিধর্মী তাদের সাথে আমার ধর্ম নিয়ে আলোচনায় মোটেও আমি আগ্রহী নই কারণ, যিনি কখনো বেদ চোখে দেখে নাই, উপনিষদ কখনো ছুঁয়েও দেখে নাই, গীতার বানী কখনো শুনেও নাই বা যিনি সনাতনে বিশ্বাস রাখে না তার সাথে আপনি কি আলোচনা করবেন? তার জ্ঞান অনলাইলের বিভিন্ন প্রপাগান্ডামূলক পোষ্ট আর যেহেতু সে সেই প্রপাগান্ডাকেই বিশ্বাস করে নিয়েছে তাই আপনি তাকেই যুক্তি কিংবা শাস্ত্র থেকে প্রমাণ দেন তিনি তা মানতে মোটেও আগ্রহী নন। তারপরেও যদি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেই হয় তাহলে সহজ করে বলে দিন যে-
সনাতন ধর্ম পরমাত্মা , জীবাত্মা ও প্রকৃতি এই তিন অনাদি সত্বার সমষ্টি ।
পরমাত্মা ঈশ্বর নিরাকার তিনি ওম নামে ব্যপ্ত। নিরাকার ঈশ্বরের গুণবাচক সাকার সত্বায় তিনি যখন সৃষ্টিকারী তখন তাকে ব্রক্ষ্মা নামে তিনি যখনপালন কর্তা তখন তাকে বিষ্ণু ও তিনি যখন ধংস তথা প্রলয় কর্তা তখন তাকে শিবরূপে আমরা মানি । আমরা জানি শক্তির কোন ধংস নাই শক্তির শুধু মাত্র রূপান্তর হয় আবার রূপান্তর শক্তিই তখন শক্তিরূপে বিভিন্ন দেব দেবী হিসেবে পূজিত হন। আবার সেই দৈব শক্তি যখন মানব রূপে জন্ম নেন তখন তাকে আমরা অবতার বা ভগবান রূপে শ্রদ্ধা করি।
তাছাড়া সনাতন ধর্ম যেহেতু প্রাচীন জীবিত ধর্ম তাই এখানে বহু প্রাচীন রীতিনীতি থাকাটা স্বাভাবিক যা আমরা যারা সনাতনী তাদের কাছে সহজ বিষয় কিন্ত যারা সনাতনে বিশ্বাস রাখে না তাদের কাছে অহেতুক প্রশ্নের কারণ।
ব্যস এটাই, আপনি এর বাইরে সহজ করে তাদের বলতেও পারবেন না, আর বললেও তারা এমনিতেও মানতো না আর মানবেও না ।
****
0 মন্তব্যসমূহ