মেয়েটার বাবা মারা গেছেন ৩ বছর হয়েছে।
সংসারে মা, এক বড় বোন তারপর এক বড় ভাই আর পরিবারের সবার ছোট মেয়েটা সুমি। সুমি এবার অনার্স ২য় বর্ষে সিএসই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর আগেই। দাদা এখনো বিয়ে করেনি। বাবার মৃত্যুর পর সুমির দাদাই বেশ সুন্দর করে সংসারটাকে গুছিয়ে নিয়েছিলো। দাদার কাছে সুমি ছিলো সব থেকে আদরের, স্নেহের ছোট বোন। সুমিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দাদার। অনেক বড় স্বপ্ন দেখেছে ছোট বোনটাকে উচ্চশিক্ষিত করে বিদেশ পাঠাবে। যেদিন সুমি প্রতিষ্ঠিত হবে তখন তার দাদা বিয়ে করবেন এমনই ইচ্ছে দাদার। সে উদ্দেশ্য নিয়েই ছোট বোনকে সিএসই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করায়।
এখন সুমি পড়ালেখার উদ্দেশ্যে বাইরে থাকে। দাদা তার থাকা, খাওয়াসহ সব ধরনের খরচ চালায়। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো। সুমি এতটাই আদরের ছিলো যে, বাসায় তার মা নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিতো, যখন যা চায় তাই দিতো, দাদা সবসময় বোনের খেয়াল রাখতো, কখন কোথায় যাচ্ছে, কি খাচ্ছে, কোনোকিছু প্রয়োজন আছে কিনা, দাদা তার বেতনের এক-তৃতীয়াংশ টাকা ছোট বোনকেই দিতো। এদিকে মেয়ে সনাতনধর্মীয় সকল রীতিনীতি, ব্রতপালন করতো। দেখা গেছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতি করতো, গীতাপাঠ করতো, প্রত্যেকটা একাদশী ব্রত সে রাখতো। এক কথায় ধর্মের প্রতি অনেক ডেডিকেটেড ছিলো সুমি।
সে এবার ২য় বর্ষ ৩য় সেমিস্টারে ৫মাস অতিবাহিত হলো। গত রোজার ঈদের আগে সুমি তার ক্যাম্পাসেরই সিএসই ডিপার্টমেন্টের ৪র্থ বর্ষের এক মুসলিম ছেলে (সেলিম হাসান রাজ) এর সাথে রিলেশনে জড়ায়।কিন্তু তার রিলেশনের কথা কেউই জানতে পারেনি তখন। রোজার ঈদের বন্ধে সে বাড়ি আসে। ছুটি কাটিয়ে মে মাসের ১তারিখে ক্যাম্পাসে যায়। বরাবরের মতো সকল ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শুরু হতে থাকে। সুমিও ক্লাসে আসে। এর মধ্যেই আমার কয়েকটা ফ্রেন্ড ওদের ঘুরতে দেখে সেখান থেকে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু আমরা বিষয়টা ততটাও জটিলভাবে নেইনি বেপারটা। কিন্তু তার কয়েকদিন পর থেকে দেখা যায় সুমি হিজাব পরে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করে। তখনই আমরা সনাতন স্টুডেন্টরা এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। আর মেয়েকে ডাকি দেখা করার জন্য কিন্তু মেয়ে বারবার ডেট দেয় কিন্তু দেখা করেনা। এরপর গত বৃহস্পতিবার ৮ তারিখে, মেয়ে আমাদের সাথে দেখা করে। আমরা তাকে তার হিজাব পরা নিয়ে, মুসলিম ছেলের সাথে রিলেশন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিন্তু মেয়ে খুব গর্বের সহিত সব স্বীকার করে এবং বলে সে মুসলিম হয়েছে। মুসলিম ধর্মই তার কাছে সেরা।
এসবের কারন জানতে চাইলে বলে যে সনাতনধর্ম মিথ্যা আর তা প্রমাণ করার চেষ্টাও করে। কিন্তু আমাদের কাছে শেষ অবধি তর্কে হার মানে। তবুও মেয়ে সনাতন ধর্মে ফিরবেনা বলে দেয়। এরপরে আমরা বিষয়টা মেয়ের বাড়িতে জানাই। ওর দাদা সুমির সাথে কথা বলে আর পরেরদিন শুক্রবার ৯তারিখ, সকাল ৮টার গাড়িতে বাড়ি যেতে বলে আর সুমি তাতে রাজি হয়। কিন্তু পরেরদিন শুক্রবার মেয়ে বাড়ি যায়নি। মেয়ে সেই মুসলিম ছেলের হাত ধরে ছেলের বাড়ি খুলনায় চলে যায়। এর পরের দিন ছেলে ওর দাদাকে ফোনে বলে দেয় বোনের জন্য চিন্তা না করতে আর তারা অনেক আগেই বিয়ে করেছে। বিয়ে করেছে মে মাসের ১তারিখে যেদিন মেয়েটা ঈদের ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে আসে সেদিন।
এইসব শোনার পরে মেয়ের মা,দাদা একদম ভেঙে পড়ে। তার মা বর্তমানে মৃতপ্রায়। ঐ মুসলিম ছেলেকে মেয়ের দাদা অনেক অনুরোধ করেছে যাতে মেয়ে ওর মাকে বলে যে "মা আমি ভালো আছি, তুমি ঠিকমতো খাওয়া করো" কিন্তু সেই পাষন্ড ছেলে মায়ের সাথে কথাটুকু বলতে দেয়নি। ওর দাদা মেয়েকে ফিরে আসার জন্য অনেক অনুরোধ করে কিন্তু মেয়ে মুখের উপর বলে দেয় সে ফিরবেনা। তার মা, দাদা যদি মরেও যায় তবুও সে ফিরবেনা। যে দাদা তাকে এতবড় করলো সে দাদাকে বলে যে, তার দাদার কাছে ও সেইভ না, তারা জাহান্নামী।🥲
এমনই নির্মম আঘাত পেয়ে পরাজিত হয় তার ত্যাগী দাদা, গর্ভধারিনী মা। দাদা আদরের বোনটাকে ফেরাতে পারেনি উল্টো শূলের আঘাতের মতো সেই বোনের কাছে অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। আর তার মা এখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। এসব জেনেও সে মেয়ের হৃদয় এতটুকু নরম হয়নি। গর্ভধারিনী মায়ের সাথে হ্যালো শব্দটা অবধি বলেনি। হ্যাঁ, ২৩টা বছরের ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা এভাবেই দুই মাসের ভালোবাসার কাছে হেরে গেলো।😔
অদ্ভুত লাগে যে, একটা রিলেশন শুরুর এক/দেড় মাসের মধ্যেই বিয়ে অবধি করে ফেললো! কিভাবে সম্ভব?
পরে জানতে পারি, ক্যাম্পাসের সনাতনীরা ব্যতিত অধিকাংশ মুসলিম স্টুডেন্ট ও টিচার এই বিষয়টা শুরু থেকে জানে এবং তারাই তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে।
"দাদার এত স্বপ্ন, এত ভালোবাসা, স্নেহ, মায়ের মমতা, স্বপ্ন সব শেষ করে দিয়ে, মাকে মুমূর্ষু করে দিয়ে সব ধ্বংস করে দিয়ে বিদায় নিলো পতিত আত্মাটা।"🤐
আজ জুন মাসের ১২ তারিখ, এই ঘটনা গত দুইদিন আগের। এমন নির্মম, হৃদয়বিদারক ঘটনা আমি এই প্রথম সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছি এর আগে কেবল শুনেছিলাম। চেষ্টা করেছি মেয়েকে ফেরানোর কিন্তু পারিনি। এমন ঘটনার যে এত যন্ত্রণা তা অনুভব করেছি, তাতে আমারই আত্মহত্যার ইচ্ছে জেগেছে, জানিনা তার দাদা কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আছে। 😭
আর কোনো সনাতন পরিবারের সাথে এমনটা না ঘটুক। আর কোনো সনাতনী মেয়ে যেন মুসলিমের সাথে রিলেশনে না জড়ায়। সবাই যেন বুঝে, এটা কত ভয়ংকর নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সনাতন সমাজের জন্য।
পরিশেষে সকল সনাতনী মা,বাবা, ভাই, বোনদের প্রতি অনুরোধ করছি, সবাই সচেতন হোন, যারা উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়েদের বাইরে পাঠাচ্ছেন তারা সতর্ক হোন, সবাই নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানুন, কেবল ব্রত, পূজা পালন করলেই হবেনা। জানতে হবে সনাতন ধর্মের সত্যতা। সর্বোপরি নিজেদের পরিবারে এমন যেন না হয় তাই ছোট থেকেই বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দিন।
0 মন্তব্যসমূহ