শত চেষ্টা করেও শতাব্দী প্রাচীন রমনা কালীমন্দির নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যায়নি: নারায়ণ দেবনাথ

রমনা কালী মাতার প্রতিমা
রমনা কালী মাতার প্রতিমা

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ঢাকার রমনা কালীমন্দির উদ্বোধন করলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কবিন্দ। ভারতের আর্থিক সহায়তায় ১৯৭১ সনে ধ্বংসপ্রাপ্ত রমনা কালীমন্দির পুনঃনির্মিত হল। ১৯৭১ সনে পাকবাহিনী মন্দিরটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কোন সরকারই এতদিন শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরটি পুনঃনির্মাণের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। শেষ পর্যন্ত সনাতন ধর্মের পথিকৃত ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় মন্দিরটি পুনঃনির্মিত হল। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশে সম্প্রতি ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। ৮হাজার ৭২২কোটি টাকা ব্যয়ে এমন আরো ৫৬০টি মসজিদ সারাদেশে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু  মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাতের কলংক মাথায় নিয়ে এই সরকার দীর্ঘ ৫০ বছরেও এই মন্দিরটি পুনর্নিমান করেনি।


রমনা কালী মাতার পূজা চলছে

অযোধ্যায় রাম মন্দির শিলান্যাসের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আঘাত করতে পারে এমন পদক্ষেপ ভারতের নেয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের এই বক্তব্য ছিল কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ। ভারত এক্ষেত্রে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি যে কারনে তা বুঝার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। ভারত রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কোন অন্যায় করেনি কারন দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ভারত সে অধিকার অর্জন করেছে। কিন্তু  বাংলাদেশ কি আজ পর্যন্ত একটি প্রমান দেখাতে পারবে? যেখানে সে দেশে হাজার হাজার মন্দির ভাঙ্গার একটির আইনি ফয়সালা হয়েছে? হয়নি উপরন্তু মন্দির ভাঙ্গা বা দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে তাকে দেশ ছাড়া হতে হয়েছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঐজমি আর ফেরত দেয়া যাবেনা সেখানে মন্দিরও করতে দেওয়া হবে না। সেখানে মন্দির স্থাপনে মুসলমানরা বরদাস্ত করবে না। তারপর একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিভাবে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে এমন উক্তি করতে পারে ভাবতে লজ্জাবোধ হয়।


হাজার ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য যা থেকে প্রমাণিত হয় হিন্দু সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ইসলামের অগ্রযাত্রা। যার দায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন সরকারই অস্বীকার করতে পারবে না।




এক সময় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ২৬ একর জমি ছিল রমনা কালী মন্দিরের নামে দেবোত্তর। সেখানে হিন্দু সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধারণ করে দাড়িয়ে ছিল হাজার বছরের বিশ্বখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালী মায়ের মন্দির যা রমনা কালী মন্দির নামে পরিচিত। পূর্বভারতের উচ্চতম চূড়ার এই মন্দিরটি ছিল হিন্দু সংস্কৃতির পূর্বভারতের সনাতন ধর্মের এক অহংকার। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদরী নারায়নের কাছে জোশীমঠের সন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে প্রথমে রমনায় একটি আখড়া স্থাপন করেছিলেন। তখন এই আখড়া কাঠঘর নামে অভিহিত ছিল। পরবর্তীতে সতের শতকের গোড়ার দিকে ঐস্থানে হরিচরন গিরি মূল মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন।


২৬ একরের উপর প্রতিষ্ঠিত ১২০০ বছরের ঐতিহাসিক আনন্দী মায়ের কালী মন্দিরের উচ্চতা ছিল ২১১ফুট। হিন্দু সংস্কৃতির এই পীঠস্থান মন্দিরের চূড়াটি বহুদূর থেকে দেখা যেত। এই চূড়ার দিকে তাকালেই হিন্দু সংস্কৃতির ঐতিহাসিক স্মৃতি মানুষের মনে যাতে জেগে না উঠে তারজন্যই ১৯৭১ সনের ২৭ মার্চ প্রথম আঘাতটি করেছিল পাকবাহিনী। সেদিন কালো রাত্রিতে পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি করে মন্দিরের সেবাইত সহ প্রায় শতাধিক আশ্রমবাসীকে হত্যা করেছিল। তারপরে ডিনামাইট ও ট্যাংক দিয়ে মন্দিরটি ধ্বংসস্তূপে পরিনত করেছিল। যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল অযোধ্যার রাম মন্দির, কাশির শিব মন্দির মথুরার শ্রীকৃষ্ণ মন্দির সহ আরো অসংখ্য ধর্মস্থান।


স্বাধীনতার পর সনাতন ধর্মের এই ঐতিহ্যটি রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। মন্দিরটি পুনঃস্থাপনের জন্য এক সময় কয়েকজন হিন্দু নেতা দল বেধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ করেছিলেন মন্দিরের জমি ফেরত দেয়ার জন্য। মন্দিরটি হিন্দুদের সাহায্যেই নির্মিত হবে। কিন্তু শেখ মুজিব স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন এই জমি ফেরত দেয়া যাবেনা। আর সেখানে মন্দিরও করতে দেয়া হবেনা। তার বদলে তিনি শ্যামপুর শ্মশানের পাশে ১০কাঠা জমি দেয়ার কথা বলেছিলেন। (সূত্রঃবাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অন্তরালে শেখ মুজিব-লেখকঃ-ডাঃকালিদাস বৈদ্য)। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২৬ একরের জায়গায় ২.২২একর সম্পত্তি রমনা কালী মন্দিরের জন্য দেয়া হয়েছিল। বাকী ২৬ একর জমির মাঠ শেখ মুজিবুর রহমান ক্যালকাটা কিলিংয়ের মাস্টার মাইণ্ড সোহরাওয়ার্দীর নামে একটি উদ্যানের নামকরন করে দেন।


মন্দিরটি এতদিন অরক্ষিতই ছিল।সম্প্রতি ভারত সরকার হিন্দু ঐতিহ্যের এই মন্দিরটি পুনঃস্থাপনে ৭কোটি টাকা অনুদান দেয়। ৫তলা বিশিষ্ট একটি নিবাসী আশ্রম এবং এক হাজার আসন বিশিষ্ট একটি অডিটোরিয়াম সহ মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছে। আজ থেকে মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য উন্মুক্ত হল। সেখানে এখন মায়ের নিত্যপূজা হবে এবং দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসবেন মায়ের মন্দির দর্শনে।


সূত্র: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ