বাংলাদেশের মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মন সর্বদা রহস্যময়। ইতিহাসের পাঠ থেকে দেখা যায়,অবিভক্ত ভারতে তারা জিন্নাহ্ পন্থী সাংস্কৃতিক কর্মী থাকলেও, যে মাত্র স্বাধীন বিভক্ত পাকিস্তান দেশে পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা বৈষম্যের শিকার, সেইমাত্র তারা নিজ অধিকারের জন্য সোচ্চার হয়ে দাঁড়ান। ই*সলামে সংস্কৃতির নামে যা নিষিদ্ধ, তা তারা করে গেলেও,পেশা হিসেবে নিলেও,দিনশেষে ধর্মীয় পরিচয় ও গন্ডির উপরে উঠতে পারেনা,বের হয়ে অসাম্প্রদায়িক হতে পারে না।
সেরকমই একজন কথিত বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান।
৭০ এর দশকে ক্যারিয়ারের তুঙ্গে ছিলো হেনা ভট্টাচার্য ওরফে সুমিতা দেবী। "আকাশ আর মাটি" সিনেমা দিয়ে অভিষেক হওয়া এই নায়িকার বিবাহ হয় অমূল্য লাহিড়ীর সাথে। "মাটির পাহাড়, সংগ্রাম,আগুন নিয়ে খেলা " নামের বাংলা ছবি দ্বারা নামযশের খ্যাতিতে যখন এই সুন্দরী নায়িকা ব্যস্ত,তখনই জীবনে আসেন নাট্যকার ও পরিচালক জহির রায়হান। অমূল্যের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর, জহির রায়হান বিবাহ করেন সুমিতা দেবীকে। তবে, বিবাহের আগে চিরাচরিত বাঙালি মুসলমানের মতো ধর্মান্তরিত করে, হেনা ভট্টাচার্যকে নিলুফার বেগম করেই তাকে স্ত্রী হিসেবে গণ্য করে। ১৯৬২ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে বিবাহিত নিলুফা বেগম অনেকটা লাইমলাইট হতে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। মূল কারণ, বাঙালি মুসলমান সাংস্কৃতিক কর্মীরা অন্য ললনা-বিবির সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও,নিজের স্ত্রীকে অবরোধবাসিনী করে রাখতে বদ্ধ পরিকর। ফলাফল, ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সময়ে নিলুফা বেগম একজন মুসলমান গৃহের মুসলিম নারীর আবেশে আবদ্ধ হয়ে গেলো। এসময়, সমাজ ও সাংস্কৃতিক পাড়ায় জহির রায়হানের যে ইমেজ,তা কিছুটা ধরে রাখার জন্যেও কিছুটা কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলো সুমিতা দেবী ওরফে নিলুফার বেগম। পরিচালক হিসেবে কিছু কাজও সেসময় করা হয়েছে।
১৯৬৮ সালে মাত্র ৪ বছরের সংসারজীবনের ইতি টেনে,ধর্মান্তরিত নিলুফার বেগমকে ত্যাগ করে, জহির রায়হান বিবাহ করেন তৎকালীন আরেক সুন্দরী অভিনেত্রী সুচন্দাকে। সুচন্দার বাবা মেয়ের এ বিবাহতে কোনভাবেই রাজি ছিলেন না এবং নায়িকা সুচন্দা এই শর্তে জহির রায়হানের সাথে পালিয়ে বিয়ে করেন যে, তাকে আগে নিলুফার বেগম ওরফে সুমিতা দেবীকে তালাক দিতে হবে। অবশেষে, সুচন্দার প্রেমে পাগল জহির রায়হান, দু সন্তানসহ নিলুফার বেগমকে তালাক দিয়ে, সুচন্দাকে বিবাহ করেন।
এরপর, ৭১ এ জহির রায়হান গুম হলে, ৭১ পরবর্তী সময়ে ঢাকায় সুমিতা দেবীর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়। এরপর, ব্রেণের দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে, ২০০৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন সুমিতা দেবী।
"প্রেম মানে না জাত ধর্ম"- এমন একটা বাক্য হিন্দু সমাজের তরুণ তরুণীদের একটি কমন স্টেটমেন্ট। যার কারণে, বৃন্দাবন দাসের মতো নাট্য ব্যক্তিত্বরা শাহনাজ খুশির মতো মহিলাকে বিনা ধর্মান্তরে বিবাহ করেন।
কিন্তু, জহির রায়হানের মতো বঙ্গ বুদ্ধিজীবীদেরও বিবাহের আগে ধর্মান্তরিত করা আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে, সন্তানসহ ত্যাগ করার ঘটনা, শাকিব খানদের মতো মাজহাবী ব্যক্তিদের তৈরি করে।
দিনশেষে, সিনেমা,নাটকের ব্যক্তিদের ন্যায় এসব বুদ্ধিজীবি তথা মুসলিম সমাজের তারকাদের প্রেম ভালোবাসার উর্ধ্বে "ধর্মান্তর" বিষয়টা কতটা প্রকট, সেটাই আমাদের অনুধাবন করার সময় কি আসেনি?
সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ