হিন্দুদের মন্দির ভাঙচুরের দায় হিন্দুদের উপর চাপানোর জন্য পুলিশের ষড়যন্ত্র ফাঁস

হিন্দুদের বিরুদ্ধে পুলিশের ষড়যন্ত্র ফাঁস
হিন্দুদের বিরুদ্ধে পুলিশের ষড়যন্ত্র ফাঁস

 অভূতপূর্ব নির্লজ্জতায় নিজেদের আগের রেকর্ড ভেঙে পুনরায় গিনেজ বুকে নাম লেখালো বাংলাদেশ প্রশাসন

প্রথম প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪


হাসিনা সরকারের "পাগল" নাটকের কথা সবাই জানেন। তৎকালীন সময়ে আমরা তার এই নাটক নিয়ে অবিরাম লিখে গেছি সুতীক্ষ্ণ ভাষায়। হাসিনা সরকারের রেসিপি ছিল কোন মন্দির ভাং.লেই ভেঙে ফেলা লোকটিকে জনতা ধরে ফেললে তাকে বাধ্য হয়ে গ্রেফতার করে "লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন/পাগল তাই না বুঝে করে ফেলেছে" বলে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়া। ২০২১ সালে ইকবাল আহমেদ নামক লোকটি যে কিনা মন্দিরে দেবপ্রতিমার পায়ের কাছে কো.রান রেখে দেশের উ*গ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে উন্মত্ত করে তুলে এবং ফলশ্রুতিতে দেশে ১০৪ টিরও অধিক মন্দির/মণ্ডপ ধ্বংস করা হয়, জ্বা.লিয়ে দেয়া হয় শতাধিক সনাতনী পরিবারের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং বীরগতি প্রাপ্ত হন ৪ জন সনাতনী। হাসিনা সরকার ও তার মিডিয়া সম্পূর্ণ ঘটনাটিকে অলমোস্ট ব্ল্যাকআউট করে ফেলে। কিন্তু এত বিশাল ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তা জানাজানি হয়ে যায়। ২০২১ এর ঘটনা ভাইরাল হওয়া শুরু হয় আমাদের পেজে আপলোড করা অগ্নিস.ন্ত্রাসে আটকে পড়া এক সনাতনী বোনের আর্তচিৎকারের ভিডিয়োর মাধ্যমে যেটি তখনকার সময়ে কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয়। এসব ঘটনার ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ইকবালকে গ্রেফতার করে এবং মাস্টারমাইন্ড ইকবালকে "পাগল" ঘোষণা করে পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেয়। ভেবে দেখুন দেশে ১০৪+ মন্দির/মণ্ডপ ধ্বং.স হয়ে গেল, শত শত বাড়িঘর, দোকানপাট ধ্বং.স হয়ে গেল কেবল হিন্দু হবার অপরাধে অথচ ১ টি লোকের পর্যন্ত বিচার হলো না! অথচ সেবারে ভাংচুর অগ্নিসং.যোগ করা হয়েছে দিনের আলোয় প্রশাসন পুলিশ সকলের সামনে, অধিকাংশ ঘটনার লাইভ ভিডিয়ো পর্যন্ত আছে। ৪ জন নিহত ব্যক্তির বিষয়ে সরকার অজুহাত দিয়েছিল তারা আক্র.মণের কারণে মারা যায়নি, হার্ট এটাক করে মারা গেছে! মে।রে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়া ব্যক্তির বিষয়ে অজুহাত দিয়েছিল সে পানিতে পড়ে মারা গেছে! একমাস পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় মিথ্যাবাদী হাসিনা গিয়ে বলে আসেন দেশে কিছুই হয়নি, কোন হামলা হয়নি, ২-১ টা বিচ্ছিন্ন ঝামেলা হয়েছে!


এবার সেই নির্লজ্জতার রেকর্ড ভাঙল ইউনুস সরকার। আপনারা জানেন ২ দিন আগে ফরিদপুরের ভাঙা  উপজেলায় প্রায় ৮ টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফরিদপুরে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পুলিশ তখন বাধ্য হয়ে একজনকে গ্রেফতার করে এবং অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি দেয় যে এই লোক ভারতীয়, তার নাম সঞ্জিত। অর্থাৎ সুকৌশলে দেশের গুজবসম্রাট জনগণ যারা রাস্তাঘাটের সবাইকে "র" এজেন্ট মনে করে তাদের অশিক্ষাপ্রসূত আবেগকে উস্কে দিয়ে নিজেদের মন্দির ভাংচুরকে ধামাচাপা দেয়া। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় সেখানেই।  


হঠাৎ করে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে সঞ্জিতের বাবা মা, তারা বাংলাদেশের ই নাগরিক, সঞ্জিতও বাংলাদেশী। এই ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চরম বিব্রত হয়ে পড়ে প্রশাসন।


ভেবে দেখুন একটা দেশের পুলিশ জাস্ট আন্দাজে একজন মানুষকে ভারতীয় বলে চালিয়ে দিলো। তাও সেই লোকটিকে দেখে যে কেউ বুঝবে লোকটি পাগল, বহুকাল ধরে নিখোঁজ এবং রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ নিবাস তার। অর্থাৎ স্ক্রিপ্টটা সহজ, হাসিনা সরকারের মতোই পথ থেকে একটা পাগলকে ধরা হবে, তার উপরে মন্দির ভাঙার দায় চাপিয়ে দেয়া হবে। যেহেতু সে পাগল সে প্রতিবাদও করতে পারবেনা। এবার যেহেতু ধরে আনা সেই পাগলটির নাম সঞ্জিত তাই পুরনো রেসিপির সাথে গুজবসম্রাট বাঙালীর "র" প্রলাপকে উস্কে দিতে তাকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করে দেয়া। তারা ভাবতে পারেনি বাংলাদেশেই বসবাসরত সঞ্জিতের বাবা মা হারানো ছেলের ছবি মিডিয়ায় দেখে যোগাযোগ করবে আর সব নাটক ফাঁস হয়ে যাবে। 


আমার ধারণা এমনকি পাকিস্তানও ২০২৪ সালে এসে এরকম নির্লজ্জ নাটক করতো না, এভাবে ধরা খাবার পরেও যাদের লজ্জা নেই তাদেরকে আসলে মনুষ্যেতর হিসেবে গণনা করা ছাড়া উপায় নেই। যতদিন এই দেশের নেতা ও সাধারণ জনগণ স্বীকার না করবে যে দেশের প্রচুর মানুষের মাঝেই আছে প্রকাশ্যে স্বীকার করা অন্যধর্মের প্রতি বিদ্বেষ, ততদিন এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। সমস্যা স্বীকার করলেই কেবল সেই সমস্যা হতে সমাধানের উপায় খোঁজা সম্ভব। বিচ্ছিন্ন, কিছু হয়নি, পাগলে ভেঙেছে, গুজব এইসব মিথ্যা কথা বছরের পর বছর বলতে থাকলে কখনোই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এত মিথ্যা, এত ডিনায়াল, কেবল নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের সাম্প্র.দায়িকতাকে ধামাচাপা দিতে। অকল্পনীয়, অবর্ণনীয় এই নির্লজ্জতা, এর শেষ কোথায়!


বাংলাদেশ অগ্নিবীর 

সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক


সূত্র



এই বিষয়ে DW এর বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন পড়ুন-

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ