সবাই তো সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু। কে মুসলমান? কীভাবে সে মুসলমান?

সবাই তো হিন্দু। কে মুসলমান? কীভাবে সে মুসলমান?

যখনই কোনো মুসলমান আপনার সামনে এসে ধর্ম নিয়ে চুলকানো শুরু করবে, মানে আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করবে বা সেরকম কোনো ইঙ্গিত দিতে চাইবে, এমন কিছু বুঝতে পারলেই সেই মুসলমানকে বেশি সময় না দিয়ে প্রশ্ন করবেন- আচ্ছা, আপনি কি গান শোনেন? বাসায় বা বাড়িতে টিভি আছে? কোনো দিন ছবি তুলেছেন?


এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ৯৯.৯৯% এক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ হবেই। যখনই বলবে- হ্যাঁ; তখনই প্রশ্ন করবেন, আপনি কি নিজেই মুসলিম?


মুসলমানটি বলতে পারে, তার মানে? কী বলছেন এসব? আমি মুসলিম নই মানে কী? ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কিছু…


এতে উত্তেজিত না হয় মাথা ঠাণ্ডা করে বলবেন- আপনি কি জানেন, ইসলামে গান গাওয়া বা শোনা হারাম, ছবি দেখা বা ছবি তোলা হারাম?


এগুলো সবাই জানে, তাই কোনো মুসলমান এগুলো অস্বীকার করতে পারবে না।


তারপর বলবেন, নিজেই ইসলামের কিছু মানতে পারেন না, আবার আমার কাছে এসেছেন ইসলামের দাওয়াত দিতে? আগে নিজে খাঁটি মুসলমান হন, তারপর আমার কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসবেন, বুঝেছেন?


দেখবেন মুসলমানটির ধর্ম নিয়ে চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে।


এরপর সিচুয়েশন অনুকূলে থাকলে বলবেন, আমার ধর্ম এগুলোর কোনোটিই আমাকে করতে নিষেধ করে নি; কারণ, হিন্দু ধর্ম হলো বাস্তবতার ধর্ম, আর বাস্তবতা এটাই যে- মানুষ গান গাইবে, গান শুনবে; ছবি তুলবে, ছবি আঁকাবে, ছবি দেখবে; টিভিতে নাটক-সিনেমা-নাচ-গান দেখবে।


মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ায় যেকোনো মানুষ এগুলো করতে বাধ্য এবং বাধ্য আপনারা মুসলমানরাও, তাহলে যা করতে বাধ্য হচ্ছেন, তা আপনাদের ধর্মে নিষেধ কেনো? মানুষ যা বিশ্বাস করে, তাই তার ধর্ম; আর মানুষ যা পালন করে বা করতে বাধ্য হয় তাই কালচার বা সংস্কৃতি; তাহলে মানুষের ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে মিল থাকবে না কেনো? হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। তাহলে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের সংস্কৃতির মধ্যে এত পার্থক্য কেনো?


এরপর বলবেন, বলতে পারেন, যারা ইসলামের বিধান মানে না, তারা সহীহ মুসলমান নয়, তাহলে আপনি কি সহীহ মুসলমান? আপনি কি ইসলামের সব বিধান মেনে চলতে পারেন? পারেন না। তাহলে আপনি কিভাবে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেন? আর সেই ইসলামের দাওয়াত আবার অন্যকে দিতে এসেছেন?


পৃথিবীর সকল শিল্প সংস্কৃতির কোনোটিই হিন্দু বা সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ নয় এবং যে ব্যক্তি, যে ধর্মেই বিশ্বাস করুক না কেনো, তাকে এই সব শিল্পের চর্চা কারণে বা অকারণে এবং প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে করতেই হবে; একারণেই হিন্দু ধর্ম হলো বাস্তবতার ধর্ম এবং এই বাস্তবতা মানুষকে মেনে চলতে হয় বলেই হিন্দু ধর্মের অপর নাম সনাতন মানব ধর্ম; কারণ, মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে মানুষকে যা করতে হয় এবং মানুষের যা করা উচিত তার বিধিবদ্ধ সংবিধানই হলো সনাতন ধর্ম।


এখন বলতে পারেন, সনাতন ধর্মের বিধি বিধানই যদি সকল মানুষের জন্য পালনীয় ধর্ম হয়, তাহলে হিন্দু ধর্মের এই সব পূজা-পার্বন, এগুলো কী?


-এগুলো উৎসব, এগুলো কোনো ধর্ম নয়। পৃথিবীর কোনো ধর্মের পালনীয় কোনো উৎসবই পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য ধর্ম নয়, সেই কারণে কোনো উৎসবই ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়; ধর্ম হলো মানুষের সাথে মানুষের ন্যায্য আচরণের সমষ্টি; আর এই ন্যায্য আচরণ হলো অন্যের সম্পদের প্রতি লোভ না করা এবং অন্যের স্ত্রী কন্যাদের দিকে দৃষ্টি না দেওয়া; আর এই দুই কথা ই বলা আছে সনাতন ধর্মে, ঠিক এই ভাবে-


“পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ”


অর্থাৎ, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো জানবে।



এবং



“মাতৃবৎ পরদারেষু, কন্যাবৎ পরকন্যাষু”


অর্থাৎ, পরের স্ত্রী কন্যাদের মায়ের মতো দেখবে।



পৃথিবীর আর কোন ধর্ম কি মানবতার এই মহান কথা বলতে পেরেছে ? আপনার ইসলাম কি বলতে পেরেছে ? পারে নি। এজন্যই সনাতন ধর্ম হলো মানুষের ধর্ম এবং এ কথাও বলা আছে হিন্দু শাস্ত্রে, ঠিক এই ভাবে-



“এষঃ ধর্মঃ সনাতনঃ”


অর্থাৎ , মানুষের ধর্ম হোক সনাতন ।- (মনুসংহিতা)



মানব শিশু, সে যে ব্যক্তিমতের ধর্ম বিশ্বাসীর ঘরেই জন্ম গ্রহন করুক না কেনো, তার জন্ম হয় খতনা বিহীনভাবে অর্থাৎ সনাতন ধর্মের উপরে এবং তার মধ্যে কিছু না কিছু স্বাভাবিক শিল্প প্রতিভা থাকবেই, এজন্যই হিন্দু শাস্ত্র বলা হয়েছে-



“সনাতন মানবধর্মমূলং হি প্রকৃতি”

অর্থাৎ, মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সনাতন ধর্ম নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।



অথচ আপনারা মুসলমানরা, এই কথাকেও গায়ের জোরে দখল করে বলেন,



“মানব সন্তান জন্মগ্রহন করে ইসলামের উপরে, পরে তার কাফের পিতা মাতা তা্কে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত করে।”



যদি এটা সত্য হয়, তাহলে ইসলামের জন্ম পৃথিবীর শুরু থেকে না হয়ে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে হলো কেনো? ইসলামের আবির্ভাবের পর ১৪০০ বছর গত হলেও এখনো কেনো কোনো পুরুষ শিশু খতনাসহ জন্ম নিচ্ছে না বা কেনো সকল প্রকার শিল্প চর্চা মুসলিম পরিবারে নিষিদ্ধ হলেও, মুসলিম পরিবারের শিশুরা সেই সব শিল্পের প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে বা করে?


এছাড়াও ইসলামের দাওয়াতকারী যদি কোনো মেয়ে হয় এবং যদি দেখেন যে, সেই মেয়ের পরণে বোরকা হিজাব নাই, তাহলে তাকে উপরের বিষয়গুলো বলার আগে এ্যাটাক করবেন এইভাবে- আপনি যে পোষাক প’রে আছেন, সেজন্যই তো আপনি মুসলমান নন; আর যদি সেই মহিলা বিবাহিত হয়, তাকে জিজ্ঞেস করবেন, বাসায় কি শাড়ি পরেন? যদি বলে হ্যাঁ, তাহলে বলবেন, আপনি তো হিন্দু কালচার পালন করেন, তাহলে কিভাবে আপনি মুসলমান? আর নিজে মুসলমান না হয়ে অন্যকে ইসলামের দাওয়াত দিতে এসেছেন?


এরপর মহিলা বলতে পারে কিভাবে আমি মুসলমান নয়? বলবেন, শাড়ি পৃথিবীতে একমাত্র হিন্দু বিবাহিতা নারীদের পোষাক, মুসলমানদের পোষাক নয়, তাহলে আপনি শাড়ি প’রে কিভাবে মুসলমান থাকেন? রেফারেন্স হিসেবে আরও বলবেন, কোনো সৌদি নারীকে কী কখনো শাড়ি পরতে দেখেছেন?


এরপর দেখবেন, সে কোন ফাঁদে পরেছে?


এরপরও যদি সে বলে, সাজ পোষাকে তো ধর্ম থাকে না, ধর্ম হলো মনের বিশ্বাসের ব্যাপার।


তখন বলবেন, সাজ পোষাকে যদি ধর্ম না ই থাকে, তাহলে শাঁখা সিঁদুর পরেন না কেনো?


এরপর দেখবেন, সকল প্রকার চুলকানি একদম বন্ধ হয়ে গেছে, টোটালি অফ।


# সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ