![]() |
ছবি: বার্তা২৪.কম |
০৫:১১ পিএম | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫, কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। মালাকার নামে পরিচিত এই মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশই বংশ পরম্পরায় এই শিল্পের সাথে যুক্ত। পৈতৃক সূত্রে হাল ধরা এই ব্যবসায় লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে তাদেরকে। দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণের ব্যয়ের তুলনায় বিক্রি হচ্ছে স্বল্প মূল্যে। লাভের অঙ্কে গত বছরের তুলনায় কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।
২৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকার প্রতিমা তৈরির কারখানাগুলো সরেজমিনে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে এই এলাকাটি প্রতিমা নির্মাণে জেলার অন্যতম স্থান হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। এলাকাটিতে ছোট-বড় মিলে মোট ১৮ টি প্রতিমা নির্মাণ কারখানা রয়েছে। সেগুলোতে দুর্গাপূজার জন্য এবার মোট প্রতিমা নির্মাণ হয়েছে ২৩২ সেট। প্রতিবছর মৌসুমের এই ব্যস্ত সময় ঘিরে দুই শতাধিক মালাকারের কর্মসংস্থান হয় এগুলো কারখানায়। নিজ জেলা ছাড়াও লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা এবং নীলফামারীতে প্রতিমা সরবরাহ হয় এখান থেকেই।
শুরুতেই কথা হয় ছত্রজিৎ গ্রামের টোলের পাড় এলাকায় মিথুন মালাকারের সাথে। দুই মাস আগে থেকে ৫ জন শ্রমিক খাটিয়ে এবার তিনি প্রস্তুত করেছেন ৯ সেট প্রতিমা। ইতোমধ্যে ৪ সেট বিক্রি করতে পারলেও বাকি ৫ সেট প্রতিমা নিয়ে চিন্তিত তিনি। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন,
‘এক সেট প্রতিমা নির্মাণে গড় খরচ হয়েছে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিক্রি করতে হয় প্রতি সেট ১৮ থেকে ২০ হাজারে। কিন্তু এবার ক্রেতারা বেশি দাম বলছেন না। ৪ সেট বিক্রি করেছি ১২ থেকে ১৪ হাজার করে। দুই মাস পরিশ্রমের পর এমন দাম আশা করিনি। এবার একদম লচ। বাকি ৫ সেট বিক্রি হবে কিনা আর বিক্রি হলেও দাম বেশি হবেনা। এমন লচ আগে কখনও হয়নি।’
পাশের কারখানাটি তপন মালাকারের। ৩ জন শ্রমিক ও পরিবারের সদস্যসহ মোট ৭ জন ৩ মাস পরিশ্রমে নির্মাণ করেছেন ২০ সেট প্রতিমা। ইতোমধ্যে ১২ সেট বিক্রি হয়েছে। মান ভেদে তিনি বিক্রি করেছেন প্রতিসেট ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত।
তিনি বলেন,
'আমরা যে দাম পাচ্ছি এতে আমাদের আশানুরূপ লাভ থাকছে না। দামের এমন অবস্থায় বাকি ৮ সেট প্রতিমা উৎপাদন মূল্যেই বিক্রি করতে বাধ্য হতে হবে। কারণ রেখে দিলে তো আরও লচ। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিতো এবং শিল্পী হিসেবে আমাদের সুযোগ সুবিধা দিতো তাহলে বাপ-দাদার আমলের এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।'
অন্যদিকে ২০ সেট প্রতিমা নির্মাণ করা একটি কারখানার মালিক সন্তোষ মালাকার বলেন, ‘
প্রতি সেট প্রতিমা গড়ে ২০ হাজারে বিক্রির টার্গেট থাকলেও ১৫ হাজারের মধ্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। জিনিসপাতির যে দাম, সেই হিসেবে এখন এই ব্যবসায় লাভ নাই। রঙের দাম বেড়ে গিয়ে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু বিক্রয়মূল্য বাড়েনি। সরকার যদি জিনিসপাতির দাম কমিয়ে দিতো তাহলে আমাদের একটু সুবিধা হতো। আমার মনে হয়না আমার পরের প্রজন্ম এই ব্যবসায় থাকবে।'
আরেক ব্যবসায়ী বিধান মালাকার বলেন,
'গতবছর প্রতি সেট প্রতিমা ২৫ থেকে ৩০ হাজারে বিক্রি করছিলাম। এবার ২০ থেকে ২২ হাজারের উপর বিক্রি করতে পারছিনা। আমার কারখানার ২২ সেটের মধ্যে ১৭ টা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু লাভের অঙ্ক করতে বসলেই মাথা খারাপ হয়। গতবারের থেকে এবার বিনিয়োগ বেশি করছি। তাও দাম নাই। ক্রেতারা বেশি দাম বলছেন না।'
বাপ-দাদার হাত ধরে হাল ধরা এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন মালাকাররা।
সূত্র: বার্তা ২৪
0 মন্তব্যসমূহ