গতবছর অক্টোবরে দূর্গাপূজার সময় কুমিল্লার নানুয়ারদিঘি পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের উপর কোরান শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের অনেক স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে বেশকিছু মানুষ নিহত হন। বহু মানুষ আহত হন। এই ঘটনার পর হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ্রচন্দ্র প্রামাণিক ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ শেষে ফিরে এক টকশোতে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন:
“ঘটনা ঘটার পরপরই আমাদের একটি টীম কুমিল্লা ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গিয়েছি। ওখানে আমরা সাধারণ জনগণের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি, পূজাকমিটির যারা আছেন তাদের সাথে আলোচনা করেছি, মণ্ডপের সাথে আলোচনা করেছি, যার ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সাথেও আলোচনা করেছি। যারা ঢাক বাজায়—ঢাকি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি যারা আহত হয়েছে, বেশ কিছু মুসলিম ভদ্রলোক যারা হিন্দুদেরকে সেইভ করতে গিয়ে প্রথমে আহত হয়েছেন তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি।
তো সবকিছু মিলিয়ে আগের যে দুজন, যে পর্যবেক্ষণ, তাদের যে মতামত বললেন, আমারও ওই একই মতামত এবং সাধারণ জনগণের মতও একই যে, এটা টোটালটাই পলিটিক্যাল। এবং সেই পলিটিক্যালের ব্যাপারে যারা ওখানে ইয়ে ছিলেন, খুলেই বলি, সাধারণ জনগণ মানে ওখান থেকে যারা বলেছেন, ওখানকার এমপি সাহেবের সঙ্গে মেয়র সাহেবের একটা দ্বন্দ্ব। এবং এই দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে এবং তাদেরই কেউ যারা বেনিফিটেড হতে চেয়েছেন যে, আগামী ইলেকশনের আগে আমার গ্রহণযোগ্যতা এখানে বেশী। সেইটে প্রমাণ করার জন্য আমাকে ভবিষ্যতে এমপি বানাতে হবে, কিংবা আমাকে পজিশন দিতে হবে, সেই তার কারসাজিতে এইরকম ঘটেছে, এটা হচ্ছে ওইখানকার যারা তাদের বক্তব্য।
...আমাদের সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ যারা আছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, তারাও এই অভিযোগটাই করেন। আওয়ামী লীগ করে, যারা আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত তারাও কিন্তু এই কথাটাই বলছেন যে, এই ঘটনাটা তার ইন্ধনে হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশী।
...সেখানে আমরা যেটা দেখেছি, এই ঘটনাগুলো কিন্তু দফায় দফায় ঘটেছে, সকালবেলা, দুপুরে, বিকাল পর্যন্ত। এবং সেখানে পুলিশের হেলপ চেয়ে চেয়ে, যারা পূজামণ্ডপের সাথে যুক্ত তারা কিন্তু কোনো হেলপ পায়নি। ওখানে প্রত্যেকটি মণ্ডপে পুলিশের যে একটা চার্য থাকে যে নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য, এমনকি ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়েছে তারা আসেনি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিয়েছে তারা আসেনি।
তার মানেটা হচ্ছে যে এর সঙ্গে একটা বড়ো ধরণের গভীর চক্রান্ত যুক্ত ছিল, যে কারণে একটা ম্যাসাকার হয়ে যাক এটা অনেকেই চেয়েছে।
একই সঙ্গে আমরা জিজ্ঞেস করেছি ওইখানের সবাইকে যে, এর সঙ্গে কোনো হলুদ টুপিওয়ালা হলুদ-টলুদ কেউ যুক্ত আছে কিনা? এবং পূজারীরা, যারা মহিলা আক্রান্ত হয়েছে তারা বলেছে, না। ওই টুপিওয়ালা হলুদ, বা যাদেরকে আমরা মৌলবাদী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করি, মূলত তাদেরকে কিন্তু তারা ইয়ে করছে না, কি বলে, তাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করছে না।
তো সেই দিক দিয়ে আমার মনে হচ্ছে যে টোটালটাই পলিটিক্যাল এবং পলিটিক্যালের সাথে যেটা ঘটেছে ওইখানে যারা জয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে যে আমি নিজে এখন নাই সেইজন্য ঘটনাটা ঘটেছে, আমি থাকলে এরকম ঘটতো না। কারণ আমার একটা বিশাল গ্রহণযোগ্যতা আছে। এরকম একটা ইয়ে হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশী, আমার কাছে যেটা, আমার কাছে মানে আমি যেটা ওখানে গিয়েছি প্রত্যক্ষ সবার সাথে আলোচনা করেছি, আমি এরকম সংবাদটাই পেয়েছি।
...আরেকটু, একমিনিট, একটু যুক্ত করি, সুনামগঞ্জের শাল্লায় যে ঘটনাটা ঘটলো, সেখানেও কিন্তু আমরা দেখেছি ঠিক একই রকমের। আমাদের এর আগে যশোরের অভয়নগরের যে ঘটনাটা ঘটলো সেখানেও দেখলাম সরকারী দলের দুজন এমপির দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দুরা। এবং নাসিরনগরেও কিন্তু একই অবস্থা। এবং যেখানে যেখানে, রামুতেও...”
ব্যক্তিগতভাবে আমি রামু-সাঁথিয়া-অভনগরের গণতদন্ত কমিটির সাথে দূরবর্তীভাবে ছিলাম। আমাদের বন্ধু ও ঘনিষ্ঠজনেরাই এর সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই কমিটির প্রতিবেদন থেকেও আমরা জানি সবখানে আওয়ামী লীগ কিভাবে এদেশের হিন্দুদের বলির পাঁঠা বানিয়ে চলেছে। আজ একটি-দুটি বছর নয়, স্বাধীনতার সমান বছর ধরে। দেশের প্রায় আশি ভাগ হিন্দু উচ্ছেদ ও সম্পত্তি দখল তাদের নেতৃত্বে হয়েছে—এই হিসাব এখনকার নয়, আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগেকার। এখন তাদের অংশ নিশ্চিভাবেই আরো বেড়েছে!
তবু এখনও আমরা আর আমাদের যেসব বন্ধুরা সাম্প্রদায়িক হামলা হলেই ভাঙা প্রতিমা, পোড়া মন্দির আর ফুপিয়ে ওঠা কান্নার ছবি শেয়ার করে নিজেদের শোক প্রকাশ করি, তাদের কি এখনো ভাবার সময় আসেনি? প্রশ্ন করার সময় আসেনি? বলার সময় আসেনি যে, লঘু-গুরু বুঝি না, আমি এই দেশের নাগরিক! আমার ট্যাক্সের টাকায় রাষ্ট্র চলে! আমার নিরাপত্তা দিতে সরকার বাধ্য! নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে ব্যক্তির নিজের নিরাপত্তা রক্ষার অধিকার আইনসম্মত। আওয়ামীলীগ, আমাকে নিয়ে আর রাজনীতি খেলো না! প্রতিমার হাত ভাঙার আগে তোমার হাত রেখে দেবো!
এক-দুই লক্ষ নয়, এখনো দুই-দুই কোটি হিন্দু! করুণা আর দয়াদাক্ষিণ্যের পাত্র থেকে নিজের নাগরিক অধিকার বুঝে নেওয়ার, যুঝে নেওয়ার শক্তিতে কবে বলীয়ান হবে?
[রাখাল রাহা, জুলাই ২০২২]
https://www.facebook.com/rakhal.raha/posts/pfbid0VqQnTGVRjd9fKSXcXHLvuG4hvXqb2jy1AaENxrTj8dkezUGbYX47NsHLNpkpzvqMl
0 মন্তব্যসমূহ