নমস্কার ৷ আমি একটা কথা বারবার বলেছি, আগের অনেক পোষ্টে, যে ১৬-১৭ বছর বয়সী মেয়েরা ভীষণ সফট টার্গেট হয়, বিশেষত গ্রাম মফস্বলে ৷ এই বয়সে পাওয়া অল্প স্বাধীনতাকে ওরা চেটেপুটে উপভোগ করতে চায় ৷ আর ট্র্যাপে পড়ে ৷ পোস্টটা মে বি একটু বড় হবে,তবে পড়লে ভালো লাগবে ৷
একটা মেয়ে, ১৬ বছর বয়স ৷ তখন ক্যামেরাওয়ালা ফোন অতটা আসেনি ৷ অল্প কিছু দামী সেটে ক্যামেরা থাকত ৷ বাকি নর্মাল ফোন ৷ বোর্ডের পরীক্ষা তে ভালো রেজ়াল্ট করায় সে একটা মোবাইল পেয়েছিল ৷ তারপর যা হয়, বন্ধুদের ফোন, মিসডকল, কার্ড ভরে মেসেজ..সব চলছিল ৷ এরই মাঝে কোন কোন আননোন নাম্বার থেকে মিসডকল বা মেসেজ এলে আলাদাই উত্তেজনা ৷ কখনও কখনও কথা চলতেই থাকত ৷ এরব থেকেই নতুন কোন ইনফ্যাচুয়েশন, টিনএজ প্রেম..এইসব ৷
তো যাই হোক, মেয়েটির ফোনে একদিন আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে ৷ তারপর আসতেই থাকে ৷ মেয়েটি কখন স্কুল গেছিল, কখন বাড়ি ফিরেছে, কখন টিউশন গেছিল, কি ড্রেস পরে গেছিল, কি ব্যাগ নিয়েছিল, বৃষ্টি হলে সে ছাদে ভিজেছিল, মিষ্টির দোকানের সামনে তার সাইকেল খারাপ হয়ে গেছিল, স্কুল ফেরত তারা বন্ধুরা কেক পেস্ট্রির দোকানে প্যাটিস খেয়েছিল....সব সব টাইম বাই টাইম তার মোবাইলে আসতে থাকে ৷ সে সুন্দরী, তাকে ভোরের ফুলের মতো স্নিগ্ধ লাগে, লাল স্কার্টটায় তাকে পরীর মতো লাগছিল , আগের দিনের মতো খোলা চুলেই সে যেন বেরোয়..সব সব সব ৷
মেয়েটির প্রথম দিকে প্রচন্ড শিহরণ জাগে , কেউ তাকে এতটা খুঁটিয়ে দ্যাখে !! এত মুগ্ধ তার প্রতি !! সে ভালোলাগায় ভেসে যায় ৷ এবার সে ও টুকটাক রিপ্লাই দিতে থাকে ৷ কথা জমে ওঠে ৷ মেয়েটি কিন্তু কারোর সাথে তখনও শেয়ার করেনি এগুলো ৷ কিন্তু অজান্তেই সেই মেসেজকর্তার মনোমত সাজগোজ ড্রেসআপ সব করতে থাকে ৷
এক এক সময় মেয়েটির মনে হয়, কোন বন্ধু হয়তো ঠাট্টা করছে, বা প্র্যাকটিক্যাল জোক ৷ কিন্তু সে তো একদিন দুদিন হবে, এতদিন ধরে কন্টিনিউ হবেনা তো !! আর যাদের ফোন আছে, তাদের নাম্বার তো সে জানে, তারা অন্য নম্বর থেকে এরকম করছে !! নাহ্, সম্ভব না ৷
এদিকে সেই মেসেজকারী এবার ফোনে কথা বলতে চায় ৷ মেয়েটি বারংবার নাম জিজ্ঞেস করা স্বত্ত্বেও সে বলেনি ৷ কিন্তু রোজনামচা দিয়েই চলেছে ৷
মেয়েটি এবার অস্বস্তিতে পড়ে, কারণ তার মনে হয়, সবসময় সে কারোর নজরদারি তে রয়েছে ৷ কেউ সারাক্ষণ তার দিকে নজর রাখছে, কিন্তু তখন সেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে ৷
তারপর একদিন ছেলেটি প্রবল পীড়াপীড়িতে নাম বলে, আবদুল ৷ আবদুল নাকি তাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে, তাকে ছাড়া সে কিছুই ভাবতে পারছেনা ৷ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল পড়া শেষ করে বাড়ি এসে বাবার ব্যবসা দেখতে শুরু করেছে ৷ আবদুল তার কথা বাড়িতে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং বিয়ে সে ওকেই করবে, প্রবল প্রেমে পড়েছে ৷
মেয়েটি মারাত্মক পাজ়লড রইল কটা দিন, এদিকে তার ভালো লাগছে, কেউ থাকে এতটা ভালোবাসে, চায় ৷ সে বন্ধু মারফৎ খবর নিল, ছেলেটি যা বলেছে সব সত্যি ৷ আবদুল ইঞ্জিনিয়ার, আবদুল হ্যান্ডসাম, আবদুলের রইস ফ্যামিলি ৷ সব ৷ মিথ্যাচার সে করেনি ৷ পাশের গ্রামেই থাকে ৷
কদিন পর তার যেন ঘোর কাটল, যেন মোহের ঘুম থেকে সে জেগে উঠল ৷ তাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি ৷ কাজ়িন দিদিদের অনেক দিন হল বিয়ে হয়ে গেছে, বাড়ির একটা মেয়ে এখন সে ৷ মা হারা মেয়েটি জেঠু জেম্মা কাকা কাকিমনি দাদা দিদি জামাইবাবু সবার চোখের মণি, সব্বার আদরের ৷ মায়ের অভাব যেন বুঝতে না পারে, সবাই সেদিকে তৎপর থাকে ৷
সেই মেয়ে একজন বিধর্মীর সাথে প্রেম বিয়ে করবে জানলে বাড়ি থেকে তো মানবেই না, উল্টে কোন সম্পর্ক রাখবেনা ৷ সে হাউহাউ করে কাঁদল , এদের ছেড়ে সে থাকতে পারবে না ৷ উপরন্তু বড় দাদার নতুন বিয়ে হয়েছে, বৌদি তার বেস্টফ্রেন্ড ৷ সে বৌদি কে ছেড়ে কি করে থাকবে ??!! না, এ হতে পারেনা ৷ ফ্যামিলির কাছে কিচ্ছু নেই ৷ কিচ্ছু না ৷
সে বাড়িতে সব জানালো ৷ সবটা, প্রথম থেকে ৷ বাড়ি থেকে বকা খেলেও দাদারা তার ফোন নাম্বার চেঞ্জ করল, স্কুল টিউশনে জেঠু দিয়ে আসতে লাগলেন, লোকাল থানায় জানানো হল, প্রয়োজন ছাড়া এবং বাড়ির কারোপ সাথে ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হল, আড্ডা দাও, বাড়িতে দাও, বন্ধুদের ডাকো বাড়িতে, বাইরে না ৷ স্কুলেও কথা বললেন ভ্রাতৃসম জামাইবাবু ৷
তারপর ছেলেটি হয়তো চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে চেষ্টার লেশমাত্র প্রভাব মেয়েটির পরিবার তার উপর পড়তে দেয়নি ৷
পরে জানা গেছিল, ফোন রিচার্জের দোকান থেকে নাম্বার জোগাড় হয়েছিল ৷ মেয়েটিকে আগে থেকেই স্টক করছিল, তারপর লাকিলি গ্রামেরই ফোনের দোকানের খাতা থেকে নাম্বার নিয়ে ওইসব করেছিল ৷
ঈশ্বর, পরিবার, মেয়েটির মনের জোর সেদিন মেয়েটিকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ৷
এখন আবদুল পর্দা করা বিবিকে নিয়ে বেরোয়, শিক্ষিত আবদুলের দুই বিবি ৷
মেয়েটি ফ্রক পরে পোষ্যকে হাঁটাতে নিয়ে যেতে যেতে বোরখা দেখে ভাবে, সে কতটা স্বাধীন, কতটা মর্যাদা তাকে তার ধর্ম দিয়েছে ৷
সেদিনের সেই ষোড়শী আমি ৷ 😊
0 মন্তব্যসমূহ