শিবের সন্ধানে - অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক

শিবের সন্ধানে - অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক


🌼🌼শিবের সন্ধানে🌼🌼


ভগবান্ মহাদেব শিব এক ঐতিহাসিক মহাপুরুষ ছিলেন, যিনি দেব বর্গে উৎপন্ন হয়েছিলেন। কৈলাশ ক্ষেত্র তার রাজধানী ছিল। আজ শ্রাবণ মাসের প্রারম্ভ থেকেই দেশ ও বিদেশের শিবালয়ে পূজা, কীর্তন, কথাবাচন, শিবলিঙ্গের অশ্লীল পূজা, যা শিবপুরাণে বর্ণিত দারুবন কথার উপর আধারিত তথা এই কথাকে কোনো সভ্য ও সুসংস্কৃত মহিলা বা পুরুষ শুনতেই পারবে না। শিবলিঙ্গের উপর দুধ চড়ানো, যা বয়ে নর্দমায় গিয়ে পরিবেশকে দূষিত করে, পূজা করার স্বরূপ কি সত্যিই এইরকম ? কখনো আম্ররসের অভিষেক গ্রীষ্ম ঋতুতে করতে দেখেছেন বা শুনেছেন ? আশ্চর্যজনক যে ভগবান্ শিবের এই অভাগা রাষ্ট্রে কোটি কোটি শিশু বা বৃদ্ধ পেটভরে রুটি খাওয়ার জন্য ভুগছে, সেই দেশে এইভাবে দুধ চড়ানো স্বয়ং সেই ক্ষুধার্ত নর নারীর সাথে স্বয়ং ভগবান্ শিবের সাথে অপমান নয় কি? কত শিবভক্ত ভগবান্ শিবের বিমল ও দিব্য চরিত্র, শৌর্য, ঈশ্বরভক্তি, যোগসাধনা এবং অদ্ভুত জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত? এটা আপনারা স্বয়ং আত্মনিরীক্ষণ করুন। ভগবান্ শিব কেমন ছিলেন, তার কি প্রতিভা ছিল, তার কি উপদেশ ছিল, এগুলো জানা-বোঝার না কারও কাছে সময় আছে আর না আছে বোধ। এই কারণে আমরা শিব জীর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলো ও জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মহাভারত গ্রন্থের আধারে প্রস্তুত করতে যাচ্ছি। এই বর্ণনা ভীষ্ম পিতামহের সেই উপদেশগুলো যা তিনি শরশয্যাতে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে দিয়েছিলেন, থেকে উদ্ধৃত। আজ এটা বড় সমস্যা যে পৌরাণিক (কথিত সনাতনী) ভাইয়েরা ভগবত্পাদ মহাদেব শিবকে অত্যন্ত অশ্লীল, চমৎকারী ও কাল্পনিক রূপে চিত্রিত করেছে, অন্যদিকে আর্য সামাজী বন্ধুরা তাকে যেন জঞ্জালের পাত্রে ফেলে দিয়েছে। এমতাবস্থায় তার যথার্থ চিত্রন এই সংসারের সম্মুখে নিতান্ত নিখোঁজ হয়ে গেছে।


পৌরাণিক বন্ধুরা ধর্মের নামে প্রচলিত বিভিন্ন মান্যতা ও কথনকে বুদ্ধির দৃষ্টি বন্ধ করে সেটিকে অক্ষরশঃ সত্য বলে মেনে নেয় আর যদি বা কেউ মিথ্যা কথনের খণ্ডন করে, তো তাকে হিন্দু বিরোধী বলে ঝগড়া করা শুরু করে। তারা একবারও এটা ভাবে না যে মিথ্যা কথন আর অন্ধবিশ্বাসের কারণে এই ভারত আর হিন্দু জাতির কিনা দুর্গতি হয়েছে, ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞান আর ইতিহাস নষ্ট হয়ে গেছে, ভারত সহস্র বছর ধরে বিদেশীদের দাস ছিল। অন্যদিকে আর্য সামাজী বন্ধু বিনা গম্ভীর চিন্তন ও স্বাধ্যায় করে পুরাণের সাথে সাথে মহাভারত, বাল্মিকী রামায়ণের সব বা অধিকাংশ কথাকে কাল্পনিক বলে মনে করে খন্ডন করার জন্য তৎপর হয়ে যায়। যদিও বা তারা মহাদেব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ইন্দ্রের মতো ভগবানদের ভুলে যাওয়ার পাপ করুক না কেন, তারা খন্ডন করাকেই আর্যবর্ত বলে মনে করে। তারা এটা ভাবে না যে যদি মিথ্যা কথন আর অন্ধবিশ্বাসের খন্ডন করতে হয়, তো এই দেবগণের সত্য ইতিহাসও তো অবশ্যই জানতে আর জানাতে হবে।


পাঠকগণের কাছে আগ্রহ যে, আপনারা এগুলো পড়ুন, বিচার করুন তথা তার উপর আচরণ করে বাস্তবিক শিবভক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। ঈশ্বর আমাদের সকলকে এরকম আসল শিবভক্ত হওয়ার বুদ্ধি ও শক্তি প্রদান করুক, এটাই কামনা করি।


ভগবান্ শিবের বিষয়ে প্রায়ঃ শিবপুরাণের গল্প-কাহিনী প্রচলিত, কিন্তু মহর্ষি বেদব্যাস জী কৃত মহাভারতকে পড়ার পাঠক আর নেই বললেই চলে। বলা হয় যে মহর্ষি বেদব্যাস জী দ্বারা রচিত আঠারো পুরাণ কিন্তু বাস্তবে তার দ্বারা নয় বরং অন্য আচার্য দ্বারা রচিত ছিলো আর এইসব গ্রন্থ কোনো প্রামাণিক গ্রন্থের ধাঁচে আসে না। যদিও মহাভারতেও প্রায় ৯৫% এমনটা আছে, যা মহর্ষি বেদব্যাস জীর পশ্চাৎ তার শিষ্য আর অনেক অপ্রামাণিক বিদ্বানেরা লিখে জুড়ে দেন। তা সত্ত্বেও বলবো মহাভারত খুবই মহত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত সত্যার্থঃ প্রকাশ আর ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকার গম্ভীর অধ্যায়ণ হতে প্রাপ্ত ও নীর-ক্ষীর বিবেক যুক্ত প্রজ্ঞা দ্বারা আমরা যেকোনো আর্ষ গ্রন্থকে সঠিকভাবে বুঝতে পারবো। আমার ‘বেদবিজ্ঞান আলোক’ গ্রন্থটিও এরকম উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরীক্ষাতে সহযোগ করতে পারে।


এখন আমরা মহাদেব শিবের চর্চায় আসি -


মহর্ষি দয়ানন্দজী তার পুনা প্রবচনে মহাদেব শিব জীকে অগ্নিষ্বাতের পুত্র বলেছেন। অগ্নিষ্বাত কার পুত্র ছিলেন, এটা খুব স্পষ্ট নয় তবে তিনি ব্রহ্মা জীর বংশজ অবশ্যই ছিলেন। এদিকে মহাভারতে মহর্ষি বৈশম্পায়ন বলেছেন -


উমাপতির্ভূতপতিঃ শ্রী কণ্ঠো ব্রহ্মণঃ সুতঃ।

উক্তবানিদমব্যগ্রো জ্ঞানম্ পাশুপতম্ শিবঃ।।

শান্তিপর্ব । মোক্ষধর্মপর্ব । অ ৩৪৯ । শ্লোক ৬৭ (গীতাপ্রেস)


এখানে ভগবতী উমা জীর পতি ভুতপতি, যা ভগবান্ শিবেরই নাম, যাকে মহর্ষি ব্রহ্মা জীর পুত্র বলা হয়েছে। তার পাশুপত অস্ত্র বিশ্ব প্রসিদ্ধ ছিল। মহাভারত অনুশীলন করে জানা যায় যে, ভগবান্ শিব অত্যন্ত বীরত্ব পুরুষ, সর্বদা যোগসাধনায় লীন, বিবাহিত হয়েও পূর্ণ জিতেন্দ্রিয়, আকাশগমন আদি অনেকগুলো মহত্বপূর্ণ সিদ্ধি দ্বারা সম্পন্ন, বেদ-বেদাঙ্গের মহান বৈজ্ঞানিক, সুগঠিত তেজস্বী ও অত্যন্ত বলিষ্ঠ শরীর ও বীরতার অপ্রতিম ধনী দিব্য পুরুষ ছিলেন। তিনি জীবনমুক্ত অবস্থা প্রাপ্ত মহাবিভূতি ছিলেন। তার ইতিহাসের বর্ণনা তো অধিক পাওয়া যায় না তবে তার উপদেশগুলোকে আমরা মহাভারতে পড়তে পারি। এই কারণে আমরা এর উপরেই ধ্যান কেন্দ্রিত করবো। শ্রীমহেশ্বর উবাচ -


অহিম্সা সত্যচনম্ সর্বভূতানু কম্পনম্।

শমো দানম্ যথাশক্তি গার্হস্থ্য়ো ধর্ম উত্তমঃ ।। ২৫।।


শ্রীমহেশ্বর বলেন - দেবী ! কোনো প্রাণীর উপর হিংসা না করা, সর্বদা সত্য বলা, সকল প্রাণীর উপর দয়া করা, মন ও ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ করা তথা নিজের সামর্থ্য অনুসারে দান দেওয়া, এইসব হলো গৃহস্থ আশ্রমের উত্তম ধর্ম ।।২৫।।


পরদারেষ্বসম্সর্গো ন্যাসস্ত্রীপরিরক্ষণম্।

অদত্তাদানবিরমো মধুমাম্সস্য বর্জনম্ ।।২৬।।

এষ পঞ্চবিধো ধর্মো বহুশাখঃ সুখোদয়ঃ।

দেহিভির্ধর্মপরমৈশ্চর্তব্য়ো ধর্মসম্ভবঃ ।।২৭।।

মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪১


পরস্ত্রী সম্পর্ক হতে দূরে থাকা, ঐতিহ্য আর নারীগণের রক্ষা করা, বিনা দেওয়া কোনো বস্তু না নেওয়া তথা মাংস ও মদ্য মাদকাদিকে ত্যাগ করা, এই হলো ধর্মের পাঁচটি ভেদ, যা সুখ প্রাপ্তির দিকে নিয়ে যায়। এরমধ্যে এক একটি ধর্মের অনেক শাখা আছে। যারা ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মানে সেসকল মানবদের উচিত, যেন পুণ্যপ্রদ ধর্মের পালন অবশই করে ।।২৬-২৭।।


ভগবান্ শিবের এই উপদেশগুলোর উপর সকল গৃহস্থ যারা নিজেকে শিবভক্ত বলে, গম্ভীরতার সাথে বিচার করুন যে আপনি কি সকল জীবের প্রতি দয়া ও প্রেম করেন? শিব মন্দিরগুলোর মধ্যে নিজেরই কথিত দলিত ভাইয়েদের প্রতি আত্মিক প্রেম আর সমান্তার ভাব রাখেন? আপনি কি সারাজীবন মাছ, মাংস, ডিম আর সকল প্রকার নেশা জাতীয় পদার্থ পরিত্যাগ করার শপথ নিবেন? আপনি কি অশ্লীল কথন, মোবাইল, ইন্টারনেট ও পত্র-পত্রিকার অশ্লীলতা থেকে বাঁচার ব্রত নিবেন? আপনি কি সকল পরস্ত্রীগণের প্রতি কুদৃষ্টিপাত থেকে বাঁচতে পারবেন? আপনি কি সত্যই বলেন আর তার উপর আচরণ করেন? পারবেন চুরি, চোরাচালান, ঘুষ, বস্তুতে ভেজাল মিশ্রণ তথা কারো অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রবৃত্তকে ত্যাগ করতে; তথা নিজের জীবনের শ্ৰেষ্ঠ বেদানূকুল কার্য্যের মধ্যে দান ও ত্যাগের ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে? যদি না পারেন তো আপনার শিবভক্তি হলো সর্বথা নিরর্থক আর অজ্ঞানতাপূর্ণ।


ব্রাহ্মণের ধৰ্ম:


স্বাধ্যায়ো য়জনম্ দানম্ তস্য ধর্ম ইতি স্থিতিঃ ।

কর্মাণ্যধ্যাপনম্ চৈব য়াজনম্ চ প্রতিগ্রহঃ ।।

সত্যম্ শান্তিস্তপঃ শৌচম্ তস্য ধর্মঃ সনাতনঃ ।


বেদের অধ্যয়ন করা, যজ্ঞ ও দান ব্রাহ্মণের ধর্ম, এটি শাস্ত্রের নির্ণয়। বেদ পড়ানো, যজ্ঞ করানো, দান নেওয়া, এইসব হলো ব্রাহ্মণের কর্ম। সত্য, মনোনিগ্রহ, তপ এবং বাহির ও আন্তরিক পবিত্রতা, এই হলো তার সনাতন ধর্ম।


বিক্রয়ো রসধান্যানাম্ ব্রাহ্মণস্য বিগর্হিতঃ ।।

মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪১ (গীতাপ্রেস)

অর্থাৎ রস আর ধান্য (অন্ন)বিক্রয় করা হলো ব্রাহ্মনের জন্য নিন্দিত।


পাঠক এখানে ভগবান্ শিবের বচনের উপর বিচার করলে স্পষ্ট জানবেন যে, ব্রাহ্মণাদি বর্ণ জন্ম থেকে নয় বরং কর্ম আর যোগ্যতানুসার হয়। এর স্পষ্টীকরণ পরে করা হবে। এখানে এটা চিন্তার বিষয় যে, আজ নিজেকে শিবভক্ত বলে এমন ব্রাহ্মণ বেদাদি শাস্ত্রের মহান জ্ঞান বিজ্ঞানকে তারা কি আদৌ বোঝে, নাকি তারা গাঞ্জা ভাং পানে ব্যাস্ত? তারা কি দান দেওয়াও জানে নাকি শুধু নেওয়াই জানে? তারা কি মনসা বাচা কর্মণা সত্যের পালন আর নিজের ইন্দ্রিয়কে বশে রাখতে পারে? তারা কি ধর্মের পথে আসা সুখ-দুখ, হানি-লাভ, মান-অপমান, সর্দি-গর্মি আদি বাধা বিপত্তিকে সহ্য করা রূপী তপকে করে? তারা কি মন-বচন-কর্মে পবিত্র আচরণ করে? যারা নিজেকে ব্রাহ্মণ অথবা সাধু, সন্ন্যাসী বলে তারা কি ব্যবসা-বাণিজ্য আদি বৈশ্য কর্ম থেকে দূরে? যদি তাদের এই গুণ নেই, তো তারা ভগবান্ শিবের দৃষ্টিতে ব্রাহ্মণ নয়।


আসুন, কথিত ব্রাহ্মণ বন্ধুগণ ! সত্য ব্রাহ্মণ হওয়ার প্রয়াসের ব্রত নিন।


ক্ষত্রিয়ের ধর্ম:


ক্ষত্রিস্য স্মৃতো ধর্মঃ প্রজাপালনমাদিতঃ ।।৪৭।।

ক্ষত্রিয়দের সর্ব প্রথম ধর্ম হলো প্রজাদের পালন করা।

তস্য রাজ্ঞঃ পরো ধর্মো দমঃ স্বাধ্যায় এব চ ।

অগ্নিহোত্রপরিস্পন্দো দানাধ্যয়নমেব চ ।।৪৯।।

যজ্ঞোপবীতধরণম্ যজ্ঞো ধর্মক্রিয়াস্তথা ।

ভৃত্যানাম্ ভরণম্ ধর্মঃ কৃতে কর্মণ্যমোঘতা ।।৫০।।

সম্যগ্দণ্ডে স্থিতির্ধর্মো ধর্মো বেদক্রতুর্ক্রিয়াঃ ।

ব্যবহারস্থিতির্ধর্মঃ সত্যবাক্যরতিস্তথা ।।৫১।।

মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪১ (গীতাপ্রেস)


রাজার ধর্ম হলো - ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ, বেদের স্বাধ্যায় করা, অগ্নিহোত্র কর্ম, দান, অধ্যয়ন, যজ্ঞোপবীত-ধারণ, যজ্ঞানুষ্ঠান, ধার্মিক কাজের সম্পাদন, পোষ্যবর্গের ভরণ-পোষণ, প্রারম্ভ করা কার্য পূর্ণ করা, অপরাধের অনুসারে উচিত দণ্ড দেওয়া, বৈদিক যজ্ঞাদি কর্মের অনুষ্ঠান করা, ব্যবহারে ন্যায়ের রক্ষা করা আর সত্যভাষণে অনুরুক্ত থাকা। এই সকল কর্মই রাজার জন্য ধর্ম ।।৪৯-৫১।।


যারা নিজেকে ক্ষত্রিয় বলে মনে করে তথা বেদমতানুসার রাজনেতা, প্রশাসনিক, ন্যায়িক, পুলিশ অধিকারী আদি যদি ধর্মাত্মা হয়, তো তারা ক্ষত্রিয় বলার যোগ্য। তারা সকলে ভগবান্ শিবের বচনের উপর ধ্যান দিক। আর তারা বিচার করুক -


  • ১. তারা কি নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে অর্থাৎ নিজের কাম, ক্রোধ, অহংকার, ঈর্ষা, দ্বেষ ও লোভের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে? নাকি ভ্রষ্টাচার, দুরাচারে ডুবে আছে?
  • ২. তারা কি বেদাদি শাস্ত্রের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে বোঝে?
  • ৩. তারা কি প্রতিদিন হবন করে?
  • ৪. তারা কি সুপাত্রদের দান দেয়?
  • ৫. তারা কি ঈশ্বরোপাসনা, বৃদ্ধদের সেবা, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের পালন, পশু-পাখিদের এবং বিদ্বান অতিথিদের ভরণ-পোষণ করে?
  • ৬. তারা কি নিজের অধীনস্থ কর্মচারীদের হিতের পূর্ণ ধ্যান রাখে?
  • ৭. তারা কি দৃঢ় সংকল্প হয়ে রাষ্ট্র রক্ষার কাজে নিষ্কাম ভাবে সংলগ্ন থাকে?
  • ৮. তারা কি অপরাধীকে উচিত দণ্ড অবশ্যই দেয় ও নিরপরাধদের রক্ষা করে?
  • ৯. তারা কি বৈদিক কর্মের সম্পাদন করে?
  • ১০. তারা কি ন্যায়যুক্ত ব্যবহার করে নাকি জাতি, মজহব, ভাষা ও ক্ষেত্রের নামে দেশকে ভাগ করতে ব্যস্ত?
  • ১১. তারা কি মন, বচন ও কর্মে সত্যের পালন করে?


যদি আপনি এরকম না করেন, তো আপনাকে ক্ষত্রিয় অর্থাৎ দেশের নেতা, প্রশাসনিক ও সুরক্ষা অধিকারী বা ন্যায়াধীশ হবার কোনো অধিকার নেই। আসুন, নিজেকে সত্য শিবভক্ত হবার জন্য ভগবান্ শিবের এই উপদেশগুলোর উপর আচরণ করা শুরু করুন।


বৈশ্যের ধর্ম:


বৈশ্যস্য সততম্ ধর্মঃ পাশুপাল্যম্ কৃষিস্তথা ।

অগ্নিহোত্রপরিস্পন্দো দানাধ্যয়নমেব চ ।।৫৪।।

বাণিজ্যম্ সপ্তথস্থানমাতিথ্যম্ প্রশমো দমঃ ।

বিপ্রাণাম্ স্বাগতম্ ত্যাগো বৈশ্যধর্মঃ সনাতনঃ ।।৫৫।।


পশুদের পালন করা, ক্ষেতি, ব্যবসা ও বাণিজ্য, অগ্নিহোত্রে সর্বদা বিশেষ সক্রিয় থাকা, দান, অধ্যয়ন, সদাচারে সর্বদা স্থির থাকা, বিদ্বান অতিথিদের সম্মান করা, মন ও ইন্দ্রিয়কে সর্বদা নিয়ন্ত্রণে রাখা, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের স্বাগত করা আর ত্যাগ ভাবনায় ধনকে উপভোগ করা, এসব হলো বৈশ্যদের সনাতন ধর্ম ।।৫৪-৫৫।।


সর্বাতিথ্যম্ ত্রিবর্গস্য য়থাশক্তি য়র্থাহতঃ ।।৫৬।।

মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪১ (গীতাপ্রেস)


ত্রিবর্গ অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও শূদ্র, এই তিন বর্ণকে প্রত্যেক বৈশ্যগণ সবপ্রকার যথাশক্তি যথাযোগ্য আতিথ্যসত্কার করা উচিত ।।৫৬।।


বর্তমানের উদ্যোগপতি, ব্যাপারী, কৃষক ও পশু পালন, মিস্ত্রি আদি কর্ম যারা করে, বৈশ্য বর্ণের অন্তর্গত হবে, তবে শর্ত এটাই যে তাদের মধ্যে উপযুক্ত গুণও থাকতে হবে। এখন এরকম সকল শিবভক্ত বিচার করুক-


  • ১. তারা কি সদাচারপূর্বক অর্থাৎ সততার সাথে ব্যবসা ও বাণিজ্য করে?
  • ২. তারা কি নিজের কর্মচারীদের উচিত ও পর্যাপ্ত বেতন আদি সুবিধা দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে পারে?
  • ৩. তারা কি কর্তব্যভাবনায় সুপাত্রগণকে দান দেয়?
  • ৪. তারা কি নিজের মন ও ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা রাখার চেষ্টা করে?
  • ৫. তারা কি ত্যাগপূর্বক উপভোগ করে?
  • ৬. তারা কি রাষ্ট্র রক্ষা ও পালনে সংলগ্ন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও শূদ্রদের পালন করে? অর্থাৎ রাষ্ট্রকে এদের জন্য পর্যাপ্ত ও উচিত কর সততার সাথে দেয়?


যদি না হয় তো আপনার শিবভক্তি হলো কেবল লোক দেখানো আর ধর্মের নামে লোক দেখানোতে পাপ হয়।


শূদ্রের ধর্ম:


শুদ্রধর্মঃ পরো নিত্যম্ শুশ্রুষা চ দ্বিজাতিষু ।।৫৭।।

স শুদ্রঃ সম্শিততপাঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ ।

শুশ্রুষুরতিথি প্রাপ্তম্ তপঃ সম্চিনুতে মহত্ ।।৫৮।।


শূদ্রের পরম ধর্ম হলো তিন বর্ণের সেবা করা। যে শূদ্র সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয়, আর ঘরে আসা বিদ্বান অতিথির সেবাকারী, সে মহান তপের সঞ্চয় করে নেয়। তার সেবারূপ ধর্ম হলো তার জন্য কঠোর তপ ।।৫৭-৫৮।।


নিত্যম্ স হি শুভাচারো দেবতাদ্বিজপুজকঃ ।

শুদ্রো ধর্মফলৈরিষ্টৈঃ সম্প্রয়ুজ্যেত বুদ্ধিমান্ ।।৫৯।।

মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪১ (গীতাপ্রেস)


নিত্য সদাচার পালন আর ঈশ্বরভক্ত তথা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যকে সম্মানকারী বুদ্ধিমান শূদ্র ধর্মের মনোবাঞ্ছিত ফল প্রাপ্ত করে থাকে ।।৫৯।।


বেদ ও ভগবান্ মনুর মতানুসারে শ্রমিককে শূদ্র বলা হয়েছে। শূদ্রের অর্থ কখনো অচ্ছুৎ ও অধার্মিক নয়। বর্তমান বিশ্বে শ্রমিক সেই কর্ম করে, যার বিধান এখানে রয়েছে। হ্যাঁ, শাস্ত্রে শূদ্র অর্থাৎ শ্রমিককে অধিক সভ্য, শিক্ষিত ও সংস্কারী মানা হয়েছে। শিবভক্ত শ্রমিক বিচার করুক-


  • ১. তারা কি মন, বচন ও কর্মে সত্যের পালন করে?
  • ২. তারা কি নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে?
  • ৩. তারা কি নিজের কর্ম নিষ্ঠাপূর্বক করে?
  • ৪. তারা কি নিজের স্বামীর প্রতি সম্মান ভাব রাখে?
  • ৫. তারা কি ঈশ্বরভক্তির সঙ্গে সঙ্গে যজ্ঞাদি কর্ম ও বেদাদি শাস্ত্রে সম্মান রাখে?
  • যদি না হয়, তো তারা শিবভক্ত হওয়ার যোগ্য নয়।


বর্ণ পরিবর্তন:


স্থিতো ব্রাহ্মণধর্মেণ ব্রাহ্মণ্যমুপজীবতি।

ক্ষত্রিয়ো বাথ বৈশ্য়ো বা ব্রহ্মভূয়ম্ স গচ্ছতি ।।৮।।


যদি ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য ব্রাহ্মণ ধর্মের পালন করে ব্রাহ্মণত্বের সহায়তা নেয় তো সে ব্রহ্মাভাবকে প্রাপ্ত অর্থাৎ ব্রাহ্মণ হয়ে যায় ।।৮।।


য়স্তু বিপ্রত্বমুত্সৃজ্য ক্ষাত্রম্ ধর্ম নিষেবতে।

ব্রাহ্মণ্যাত্ স পরিভ্রষ্টঃ ক্ষত্রয়োনৌ প্রজায়তে ।।৯।।


যে ব্রাহ্মণত্বকে ত্যাগ করে ক্ষত্রিয় ধর্মের সেবন করে, সে নিজের ধর্মে ভ্রষ্ট হয়ে ক্ষত্রিয় য়োনিতে জন্ম নেয় অর্থাৎ সে ক্ষত্রিয় হয়ে যায় ।।৯।।


বৈশ্যকর্ম চ য়ো বিপ্রো লোভমোহব্যপাশ্রয়ঃ ।

ব্রাহ্মণ্যম্ দুর্লভম্ প্রাপ্য করোত্যল্পমতিঃ সদা ।।১০।।


স দ্বিজো বৈশ্যতামেতি বৈশ্য়ো বা শুদ্রতামিয়াত্ ।

স্বধর্মাত্ প্রচ্য়ুতো বিপ্রস্ততঃ শুদ্রত্বমাপ্নুতে ।।১১।।


যে বিপ্র দুর্লভ ব্রাহ্মণত্বকে পেয়ে লোভ ও মোহে বশীভূত হয়ে নিজের মন্দবুদ্ধির কারণে বৈশ্যের কর্ম করে, সে বৈশ্য য়োনিতে জন্ম নেয় অর্থাৎ সে বৈশ্য হয়ে যায় অথবা যদি বৈশ্য শূদ্রের কর্মকে গ্রহণ করে, তো সেও শূদ্রত্বকে প্রাপ্ত হয়ে যায়। শূদ্রচিৎ কর্ম করে নিজের ধর্মে ভ্রষ্ট হওয়া ব্রাহ্মণ শূদ্রত্বকে প্রাপ্ত হয়ে যায় ।।১০-১১।।


এখানে পাঠক বিচার করলে স্পষ্ট জানবেন যে, ব্রাহ্মণাদি বর্ণ জন্ম থেকে নয় বরং কর্ম আর যোগ্যতানুসারে নির্ধারিত হয়। বর্তমানে তথাকথিত জাতিতে বিভাজিত তথা বেদোক্ত বর্ণব্যবস্থাকে না জেনে, নিন্দাকারীগণ বিচার করুক-


  • ১. যারা নিজেকে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বলে নিজের-নিজের কর্মে ভ্রষ্ট হয়ে তথা শূদ্রের কর্ম করে স্বয়ংকে শূদ্র মানার হেতু উদ্যত কি?
  • ২. তারা নিজের পূর্বজের নামের উপর গর্ব করতে-করতে নিজের বর্তমান স্তর ও কর্মের উপেক্ষা করবে কি?
  • ৩. যারা নিজেকে শূদ্র বলে নেতা, শিক্ষক, অধিকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী ও পশুপালক হয়েও স্বয়ংকে শূদ্র না মেনে সরকারি আরক্ষণ-রিজার্ভেশন আদি লাভগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য উদ্যত কি?


যদি এমনটা না হয়, তো আপনারা সকলে শিবভক্ত বলার যোগ্যই না আর না ধার্মিক।


উল্লেখনীয় যে চার বর্ণতেই সদাচার, জিতেন্দ্রিয়তা, মন, বচন ও কর্মে সত্যের পালন আদি গুণ সমান। বিদ্যার স্তর অনুসারে কর্মের বিভাজন করা হয়েছে, সকলে পরস্পর একে অপরের হিতকারী।


যে ব্যাক্তি মাংসাহারী, ডিম ও মাছের ভক্ষণকারী, যেকোনো প্রকারের নেশার সেবনকারী, চুরি, চোরাচালান, হিংসা, অসত্য আচারণকারী, লম্পট, কামি, ক্রোধী, ঈর্ষালু, ঘুষখোর, ঠকবাজ, বস্তুতে ভেজাল মিশ্রণকারী, রাষ্ট্র বা সমাজ ধ্বংসকারী, এদের বৈদিক মতানুসারে অনার্য অর্থাৎ দস্যু বলে। এই কারণে তারা না তো ব্রাহ্মণ, না ক্ষত্রিয়, না বৈশ্য আর না শূদ্র, বরং তারা হলো পাপী ও অনাচারী ব্যাক্তি, তারা যতই লৌকিক বৈভব সম্পন্ন হোকনা কেন, তাদের থেকে সত্য শূদ্র অর্থাৎ শ্রমিক হলো শ্রেষ্ঠ।


জ্ঞানবিজ্ঞানসম্পন্নঃ সম্স্কৃতো বেদপারগঃ ।

বিপ্রো ভবতি ধর্মাত্মা ক্ষত্রিয়ঃ স্বেন কর্মণা ।।৪৫।।


এই প্রকার ধর্মাত্মা ক্ষত্রিয়া নিজের কর্মের দ্বারা জ্ঞানবিজ্ঞান সম্পন্ন, সংস্কারযুক্ত তথা বেদের পারঙ্গত বিদ্বান ব্রাহ্মণ হয়ে থাকে ।।৪৫।।


এতৈঃ কর্মফলৈর্দেবি ন্যুনজাতিকুলোদ্ভবঃ ।

শুদ্রোsপ্যাগমসম্পন্নো দ্বিজো ভবতি সম্স্কৃতঃ ।।৪৬।।


দেবী ! এই কর্ম ফলের প্রভাব দ্বারা নীচ জাতি এবং হীন কুলে উৎপন্ন হওয়া শূদ্রও শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন আর সংস্কারযুক্ত ব্রাহ্মণ হয়ে থাকে ।।৪৬।।


ন য়োনির্নাপি সম্স্কারো ন শ্রুতম্ চ সম্ততিঃ ।

কারণানি দ্বিজত্বস্য বৃত্তমেব তু কারণম্ ।।৫০।।


মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪৩ (গীতাপ্রেস)


ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্তিতে না তো কেবল য়োনী, না সংস্কার, না শাস্ত্র জ্ঞান আর না সন্ততিই কারণ। ব্রাহ্মণত্বের প্রধাণ হেতু তো সদাচারই ।।৫০।।


এখানে সর্বথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বর্ণ জন্ম থেকে নয় বরং কর্ম দ্বারা হয়ে থাকে। বেদ তথা বেদের পশ্চাৎ এই পৃথিবীর সবথেকে প্রথম গ্রন্থ মনুস্মৃতিরও এটাই উপদেশ। এই কারণে একই ব্যাক্তি নিজের বর্ণের কর্তব্য থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গেলে সে সেই বর্ণ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে অন্য নিম্ন বর্ণতে প্রাপ্ত হয়ে যায় তথা এক ব্যাক্তি অন্য শ্রেষ্ঠ বর্ণের যোগ্যতা অর্জন করে নিলে, তো সে সেই শ্রেষ্ঠ বর্ণতে নিশ্চিতই প্রাপ্ত হয়ে যায়। দুর্ভাগ্য এই যে আজ কেউ জন্মের স্থানে কর্মের বর্ণ গ্রহণ করতে চায় না। নিজের নিজের স্বার্থতে ফেঁসে জন্মনা জাতি ব্যবস্থাতেই থাকতে চায়, যা হলো অনুচিত আর অধর্ম। আসুন, আমরা মহাদেব শিব জির এই বচনগুলোর আদর করে এক সুন্দর বর্ণ ব্যবস্থা নির্মাণের প্রয়াস করি, কিন্তু এই কার্যতে শাসনের সংরক্ষণ অনিবার্য।


স্বর্গের (মোক্ষের) অধিকারী কে?


বীতরাগা বিমুচ্যন্তে পুরুষাঃ কর্মবন্ধনৈঃ ।

কর্মণা মনসা বাচা য়ে ন হিম্সন্তি কিম্চন ।।৭।।


যারা মন, বচন ও কর্ম দ্বারা কারো প্রতি হিংসা করে না আর যার আসক্তি সর্বদা দূর হয়ে গেছে, সে পুরুষ কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়।


য়ে ন সজ্জন্তি কস্মিশ্চিত্ তে ন বদ্ধ্যন্তি কর্মভিঃ।

প্রাণাতিপাতাদ্ বিরতাঃ শীলবন্তো দয়ান্বিতাঃ ।।৪।।


তুল্যদ্বেষ্য়প্রিয়া দান্তা মুচ্যন্তে কর্মবন্ধনৈঃ ।

যারা কোথাও আসক্ত হয় না, কারো প্রাণের হত্যা থেকে দূরে থাকে তথা যারা সুশীল ও দয়ালু, তারাও কর্মবন্ধনে পরে না, যাদের কাছে শত্রু এবং প্রিয় মিত্র দুটোই সমান, সেই জিতেন্দ্রিয় পুরুষ কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায় ।।৯।।


সর্বভূতদয়াবন্তো বিশ্বাস্যাঃ সর্বজন্তুষু ।।৯।।

ত্যক্ত হিম্সাসমাচারাস্তে নরাঃ স্বার্গগামিনঃ ।

যারা সব প্রাণীর প্রতি দয়া করে, সকল জীবের বিশ্বাসী পাত্র তথা হিংসাময় আচরণগুলোকে যারা ত্যাগ করেছে, সেই মনুষ্য স্বর্গে যায় ।।১০।।


পরস্বে নির্মমা নিত্যম্ পরদারবিবর্জকাঃ ।।১০।।

ধর্মলব্ধান্নভোক্তারস্তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।

যারা অন্যের ধনের প্রতি লোভ রাখে না, পরস্ত্রী থেকে দূরে থাকে, আর ধর্মের দ্বারা প্রাপ্ত খাদ্যই ভোজন করে থাকে, সেই মনুষ্য স্বর্গলোকে যায় ।।১১।।


আত্মহেতোঃ পরার্থে বা নর্মহাস্যাশ্রয়াত্ তথা ।

য়ে মৃষা ন বদন্তীহ তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।১৯।।


শ্রীমহেশ্বর বলেন- যারা হাস্য ও পরিহাস দ্বারাও নিজের বা অন্যের জন্য মিথ্যা কখনো বলে না, সেই মনুষ্য স্বর্গলোকে যায় ।।১৯।।


বৃত্ত্যর্থে ধর্মহেতোর্বা কামকারাত্ তথৈব চ ।

অনৃতম্ য়ে ন ভাষন্তে তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।২০।।


যারা জীবিকা অথবা ধর্মের জন্য স্বেচ্ছাচার দ্বারাও কখনো অসত্য ভাষণ করে না, সেই মনুষ্য স্বর্গগামী হয় ।।২০।।


পিশুনাম্ ন প্রভাষন্তে মিত্রভেদকরীম্ গীরম্ ।

ঋতম্ মৈত্রম্ তু ভাষন্তে তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।২৩।।


যারা মিত্রের মধ্যে ছেদ উৎপন্নকারী পরচর্চা করে না, সত্য আর মৈত্রীযুক্ত বচন বলে, সেই মনুষ্য স্বর্গলোকে যায় ।।২৩।।


য়ে বর্জয়ন্তি পুরুষম্ পরদ্রোহম্ চ মানবাঃ ।

সর্বভূতসমা দান্তাস্তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।২৪।।


যে মানব অন্যের প্রতি কঠোর ভাষা ও দ্রোহ ছেড়ে দিয়েছে, যারা সব প্রাণীর প্রতি সমান ভাব রাখে আর জিতেন্দ্রিয় হয়, তারা স্বর্গলোকে যায় ।।২৪।।


গ্রামে গৃহে বা য়ে দ্রব্যম্ পারক্যম্ বিজনে স্থিনম্ ।

নাভিনন্দন্তি বৈ নিত্যম্ তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।৩২।।


গ্রাম বা ঘরের একান্ত স্থানে পরে থাকা অন্যের ধনের যে অভিনন্দন করে না অর্থাৎ যার সে ধনের প্রতি আগ্রহ নেই, সেই মনুষ্য স্বর্গগামী হয় ।।৩২।।


তথৈব পরদারান্ য়ে কামবৃত্তান্ রহোগতান্ ।

মনসাপি ন হিম্সন্তি তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।৩৩।।


এই প্রকার যে মনুষ্য একান্ত স্থানে প্রাপ্ত হওয়া কামাসক্ত পরস্ত্রীকে মন দ্বারাও তাদের সঙ্গে অন্যায় করার বিচার করে না, তারা স্বর্গগামী হয় ।।৩৩।।


শত্রুম্ মিত্রম্ চ য়ে নিত্যম্ তুল্যেন মনসা নরাঃ ।

ভজন্তি মৈত্রাঃ সম্গম্য তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।৩৪।।


যে সকলের প্রতি মৈত্রীভাব রেখে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে তথা শত্রু ও মিত্রদের সর্বদা সমান হৃদয়ে আপন করে নেয়, সে মানব স্বর্গলোকে যায় ।।৩৪।।


শ্রুতবন্তো দয়াবন্তঃ শুচয়ঃ সত্যসম্গরাঃ ।

স্বৈরর্থৈঃ পরিসম্তুষ্টাস্তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।।৩৫।।


মহাভারত অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম পর্ব, অধ্যায়ঃ ১৪৪ (গীতাপ্রেস)


যে বেদাদি শাস্ত্রের জ্ঞাতা, দয়ালু, মনসাবাচাকর্মণা পবিত্র, সত্যের আচরণকারী, আর যে নিজের ধনেই সন্তুষ্ট অর্থাৎ পরের ধনে যে কখনো লোভ করে না, সে স্বর্গলোকে যায় ।।৩৫।।


ও৩ম্ দ্যৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষম্ শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ

শান্তিঃ। বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বেদেবাঃ শান্তির্ব্রহ্ম শান্তিঃ সর্বম্ শান্তিঃ

শান্তিরেব শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধি।।


।। ওওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।।


লেখকঃ অগ্নিব্রত নৈষ্ঠিক


বঙ্গানুবাদঃ আশীষ আর্য

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ