প্রাচীন ভারতের কিছু গৌরবময় তথ্য - শ্রী সন্তু পাল

প্রাচীন ভারতের কিছু গৌরবময় তথ্য (প্রশাসনিক) - শ্রী সন্তু পাল

পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলো ভারতবর্ষ। এই রাষ্ট্রে এখন ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় যথাক্রমে ৫৪৩ ও ২৪৫ টি আসন বিশিষ্ট। ভবিষ্যতে এই আসন সংখ্যা জনসংখ্যার তারতম্যের বিচারে বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ নতুন ভারতের কাহিনী নয়, বরং প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যবাহী গৌরবময় কিছু ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে লিখছি। চলুন প্রিয় ভারতবাসীসহ ভারতকল্যাণের কামনাকারী বিশ্ববাসী, আজ ভারতের অতীতে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর ইতিহাস পড়া যাক....


প্রাচীন ভারতের দুটি গণতান্ত্রিক রাজ্য ছিল ১) মল্ল এবং ২) বৃজি। অর্থাৎ যখন পুরো বিশ্ব গণতন্ত্র কী সে সম্পর্কে জানতোই না, তখনই ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রের ধারণার উত্থান ঘটেছিল।


আমরা এখন শাসনব্যবস্থা কেন্দ্র, রাজ্য এবং রাজ্যের মধ্যে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত— এইভাবেই বিভক্ত ব্যবস্থা লক্ষ্য করে থাকি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই ধারণা বিকাশলাভ করেছিল চোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ স্তর থেকে গ্রামীণ স্তরে।


যদি প্রশ্ন করেন চোল সাম্রাজ্য কত বছর আগেকার, তবে এই প্রশ্নের উত্তর রসগোল্লা খাবার মতোই সহজ ও কোমল, উত্তর হলো ৮৪৮ সালে। চোল সাম্রাজ্যের নৃপতিদের নৌশক্তিও ছিল প্রবল। এই নৌশক্তির বলে চোল নৃপতিরা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, মালোয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যাণ্ড ও লাওস বিজয়ে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে দেশীয় নৃপতিদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও দেশের অখণ্ডতার প্রশ্নে ভারতের চতুর্সীমা সুরক্ষার কাজটা উত্তর পশ্চিমে জাঠ ও রাজপুত, দক্ষিণে চোল ও চালুক্য, পূর্বে পাল সম্রাটরা দক্ষ হাতেই করছিলেন।


এই প্রসঙ্গে এক টুকরো ইতিহাস বলি, একবার পালসম্রাট মহীপালের সঙ্গে চোলসম্রাট প্রথম রাজেন্দ্র চোলের মতবিরোধ ঘটেছিল, ফলে প্রথম রাজেন্দ্র চোল মহীপালের অহংকার চূর্ণ করে রাজ্যপাঠে মনোনিবেশ করানোর চেষ্টায় মহীপালকে পরাজিত করে গঙ্গোইকোণ্ডচোল নামে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু জয়লাভের পরেও প্রথম রাজেন্দ্র চোল মহীপালের রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ প্রথম রাজেন্দ্র চোলের উদ্দেশ্য মহীপালকে পরাজিত করা ছিল না, উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে রাজ্যপাঠে মনোনিবেশ করিয়ে পূর্বভারত রক্ষার দায়িত্ব স্মরণ করানো। কারণ মহীপাল সেই সময়ে শাসনকার্যের দিকে লক্ষ্য রাখার থেকেও বেশী আমোদ প্রমোদে সময় অতিবাহিত করতে শুরু করেছিলেন—যা একজন সুযোগ্য সম্রাটের পক্ষে শোভা পায় না। অনেকেই বলবে চোলরা বঙ্গদখলের মানসিকতায় আক্রমণ করেছিল, কিন্তু এই অভিযোগের সর্বৈব মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত। বঙ্গদখলের মানসিকতাই যদি উদ্দেশ্য থাকতো, তবে পাল সম্রাট মহীপালকে পরাজিত করেও তার সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দিতেন না প্রথম রাজেন্দ্র চোল।


আমরা হয়তো পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রধান কৃতিত্ব গান্ধীজিকে দিয়েই নিজেদের বড়োই বিজ্ঞ ও পণ্ডিত প্রমাণ করতে চাই, কিন্তু তিনিও নিশ্চিত চোল সম্রাজ্যের ইতিহাস পড়েছিলেন। পড়া তো উচিত, জানা তো উচিত, আর যাই হোক তিনি তো একজন ব্যারিস্টার ছিলেন। ব্যারিস্টার হবার খাতিরে তিনি তো ভারতের প্রাচীন ইতিহাস জানতেন আশা করি।


যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা আজ লুটতরাজ মানসিকতার আঞ্চলিক নেতানেত্রীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে থাকে প্রতিদিন অন্ততঃ আধাঘন্টা অন্তর অন্তর, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল অতীতে দক্ষিণ ভারতেই বিস্তার লাভ করা চোল সম্রাজ্যে। কিছু দিন আগেই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী যে 'সেঙ্গোল' দণ্ডটি রাজপুরোহিত দ্বারা গ্রহণ করলেন এই রাজদণ্ড গ্রহণের পরম্পরাই ছিল ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন চোল সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনার প্রথম স্তর। অর্থাৎ আমাদের দেশ সঠিক পথেই হাঁটছে, অতীতের ঐতিহ্যময় ইতিহাসকে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করেই।


আজ জানাবো প্রাচীন ভারতের ১৬টি মহাজনপদ (ষোড়শ মহাজনপদ) বর্তমানে কোন স্থানে অবস্থিত আছে ও তার নাম কী হয়েছে সেই সম্পর্কে.... চলুন জেনে নেওয়া যাক।


।। ষোড়শ মহাজনপদের বর্তমান ভারতে অবস্থান।।


  • ১) কাশী (এখন অবস্থান বারাণসী)= কাশীর রাজধানী ছিল কাশীপুর
  • ২) কোশল (এখন অবস্থান অযোধ্যা)= কোশলের রাজধানী অযোধ্যা
  • ৩) অঙ্গ (এখন অবস্থান পূর্ব বিহার) = অঙ্গের রাজধানী ছিল চম্পাপুরী
  • ৪) মগধ (এখন অবস্থান দক্ষিণ বিহার)= মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ বা পাটলিপুত্র
  • ৫) বৃজি (এখন অবস্থান উত্তর বিহার)= বৃজির রাজধানী ছিল বৈশালী
  • ৬) মল্ল (এখন অবস্থান গোরক্ষপুর)= মল্লের রাজধানী ছিল কুশিনারা
  • ৭) বৎস (এখন অবস্থান প্রয়াগরাজ)= বৎসের রাজধানী ছিল কৌশাম্বী
  • ৮) চেদি (এখন অবস্থান বুণ্ডেলখণ্ড)= চেদির রাজধানী ছিল সুক্তিমতি
  • ৯) কুরু (এখন অবস্থান দিল্লী)= কুরুর রাজধানী ছিল ইন্দ্রপ্রস্থ
  • ১০) পাঞ্চাল (এখন অবস্থান রোহিলখণ্ড)= পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র ও কাম্বিল্য
  • ১১) মৎস্য (এখন অবস্থান জয়পুর)= মৎসের রাজধানী ছিল বিরাটনগর
  • ১২) শূরসেন (এখন অবস্থান মথুরা)= শূরসেন রাজধানী ছিল মথুরা
  • ১৩) অস্মক (এখন অবস্থান গোদাবরী উপত্যকা)= অস্মকের রাজধানী ছিল পোতলা
  • ১৪) অবন্তী (এখন অবস্থান মালব) = অবন্তীর রাজধানী ছিল উজ্জয়িনী ও মাহেষ্মতী
  • ১৫) গান্ধার (এখন অবস্থান পেশোয়ার)= গান্ধারের রাজধানী ছিল তক্ষশীলা
  • ১৬) কম্বোজ (এখন অবস্থান পশ্চিম কাশ্মীর)= কম্বোজের রাজধানী ছিল রাজপুর


সম্রাট অশোকের সময় ভারত বর্তমানের অবস্থান সুবিশাল ছিল।


অখণ্ড ভারতের মানচিত্রে বর্তমানের যে স্থানগুলি আসবে সেগুলি হলো —


  • ১) আফগানিস্তান (বর্তমান ইরানের একটা বৃহৎ অংশ সমেত)
  • ২) পাকিস্তান (pok সমেত)
  • ৩) আকসাই চিন
  • ৪) তিব্বত
  • ৫) নেপাল
  • ৬) ভুটান
  • ৭) বাংলাদেশ
  • ৮) মায়ানমার
  • ৯) থাইল্যাণ্ড
  • ১০) লাওস
  • ১১) কম্বোডিয়া
  • ১২) ভিয়েতনাম
  • ১৩) ইন্দোনেশিয়া
  • ১৪) মালোয়েশিয়া
  • ১৫) সুমাত্রা-জাভা
  • ১৬) শ্রীলঙ্কা
  • ১৭) ফিলিপাইন
  • ১৮) মালদ্বীপ


আগের কিছু লেখায় এ সম্পর্কে লিখেছিলাম। কেহ কেহ মনে করেন বঙ্গ ভারতের অংশ ছিল না— একথা সবৈব মিথ্যা। বঙ্গদেশের নাম বৌদ্ধ গ্রন্থ ত্রিপিটকেও উল্লেখ আছে এবং মহাভারতেও উল্লেখ আছে। এই বঙ্গের সম্রাট সমুদ্রসেন, চন্দ্রসেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন। তৎকালীন পৌণ্ড্র ও অঙ্গ নামক ভারতের পূর্বদিকের দুটি রাজ্য ছিল। এই পৌণ্ড্রদেশের সম্রাট ছিলেন পৌণ্ড্রক বাসুদেব—যিনি তাঁর অপকর্মের জন্য শ্রীকৃষ্ণের হাতে নিধন হয়েছিলেন এবং অঙ্গদেশের সম্রাট ছিলেন দুর্যোধনের মিত্র তথা পরশুরামের শিষ্য কুন্তীপুত্র কর্ণ। সুতরাং তৎকালীন ভারতের সুবিশালতা আজ ইউরোপীয় ও আফ্রিকান সাম্রাজ্যের চারগুণের অধিক ছিল— একথা সুদৃঢ় কণ্ঠে বলতে কোনো জড়তা না থাকাই উচিত।


আর একটি ঐতিহাসিক কাহিনী বলি, জরাসন্ধের নাম সকলেই শুনে থাকবেন নিশ্চিত। এই জরাসন্ধের সময় ভারতের পূর্ব উত্তর প্রায় রাজ্যের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তাঁর। অতি অত্যাচারী জরাসন্ধের মৃত্যুর পর এই সাম্রাজ্য কুরুসাম্রাজ্যের অধীনে আসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ঐ অঞ্চলে। এর পর কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে সুদূর বর্তমানের পশ্চিমে ইরান-আফগানিস্তান থেকে শুরু করে উত্তরে কাশ্মীর- তিব্বতসহ পূর্বে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া মালোয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যাণ্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, মালদ্বীপ, এমনকি শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এখনকার অস্ট্রেলিয়া এবং এখনকার ভারতের পুরোটাই পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠ যুধিষ্টিরের চক্রবর্তী সম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ভাবুন তো কী বিরাট ভারত ছিল!!! যুধিষ্ঠিরের পরে পরিক্ষিৎ জনমেজয় এমনকি চন্দ্রগুপ্ত, বিন্দুসার, অশোক, পৃথ্বীরাজ চৌহান ও যশপালের সময়েও এই অখণ্ড ভারতের ভিত্তি মজবুত ছিল। মহারাণা প্রতাপের পূর্বপুরুষ বীর যোদ্ধা বাপ্পা রাওয়াল তো যুদ্ধ করতে করতে বর্তমান ইউরোপের প্রবেশদ্বার তুরস্ক অবধি জয়লাভ করে এগিয়ে গিয়েছিলেন। এসব ইতিহাস ভারতবাসীকে জানতে দেওয়া হলোই বা কই?? ভারত স্বাধীন হবার পর ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী শুধু নয় পরবর্তী ৫জন শিক্ষামন্ত্রী তো ভারতীয় ছিলই না। তাহলে ভারতীয় ঐতিহ্যময় বীরত্বের ইতিহাস লুপ্ত সুপ্ত হবে না তো কী জাগরিত হবে !!! একথা তো একজন দুধের বাচ্চাও বুঝতে পারবে বলেই আশা করি।


এখন ইতিহাসের ঐ মহান পরিচ্ছেদকে সন্তর্পনে পরবর্তী সময়ে পুনঃজাগরণের জন্য হৃদয়ে রেখে এবার জেনে নেওয়া যাক মহাভারতের সময়কালে ভারতের রাজ্যগুলির বর্তমান অবস্থান নিয়ে—


  • ১. কুরুরাষ্ট্র: মহাভারতের সবচেয়ে নামকরা রাজ্য। বর্তমান ভারতের দিল্লী, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কিছু অংশ এবং উত্তর প্রদেশের পশ্চিম অংশ নিয়ে কুরু রাষ্ট্র ছিল। কুরুরাষ্ট্রের রাজধানী হস্তিনাপুর বর্তমান উত্তর প্রদেশের মীরাটের কাছেই অবস্থিত।

  • ২. পাঞ্চাল প্রদেশ: পাঞ্চাল প্রদেশের উত্তরে হিমালয় এবং দুইটি অংশই বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত। অন্যদিকে রাজধানী অহিচ্ছত্র বর্তমানে রামনগর জেলার অন্তর্গত।

  • ৩. গান্ধার: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যবর্তী অববাহিকায় অবস্থিত এক সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল। এর রাজধানী ছিল তক্ষশীলা— যা বর্তমান রাওয়ালপিণ্ডি (এই নামটি বাপ্পা রাওয়ালের নাম অনুসারে হয়েছে)। তৎকালীন পুরো গান্ধার বর্তমানে পেশওয়ার প্রভিন্স, খাইবার পাখতুনখোয়া এর দক্ষিণে এবং পাঞ্জাবের উত্তরে অবস্থিত।

  • ৪. শূরসেন রাজ্য: বর্তমানে পুরো রাজ্যটি উত্তর প্রদেশের অংশবিশেষ। শূরসেন প্রধান শহর ছিল মথুরা যা বর্তমানে মথুরাতেই ছিল।

  • ৫. মৎস্যদেশ: মৎস্যদেশ বর্তমান জয়পুরের অতি সন্নিকটে ছিল। এর উত্তরের অংশ বর্তমান দক্ষিণ হরিয়ানার অংশ। এর রাজধানী বিরাট নগরী বর্তমানে বিরাটনগর হিসেবে পরিচিত।

  • ৬. কুন্তিভোজ: বর্তমান রাজস্থানে কুন্তিভোজ রাজ্য অবস্থিত।

  • ৭. কাশী: কাশী রাজ্যের রাজধানী ছিল কাশীপুর। যা বর্তমানে বারাণসী নামে সমধিক পরিচিত। এটি গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। কাশী রাজ্যটি উত্তর প্রদেশের অন্তর্গত।

  • ৮. অঙ্গ রাজ্য: অঙ্গ রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী ছিল চম্পাপুরী। বর্তমানে অঙ্গ দক্ষিণ-পশ্চিম বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা অঞ্চলজুড়ে আছে।

  • ৯. মগধ: মগধের রাজধানী ছিল রাজগীর। বর্তমানে শহরটি পাটনার অন্তর্গত। আর পুরো রাজ্যটা বিহারের অন্তর্গত।

  • ১০. বিদর্ভ: বিদর্ভ বর্তমান মহারাষ্ট্রের উত্তরপূর্ব নাগপুর ও অমরাবতী অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল। বর্তমান মধ্যপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার সাথে তৎকালীন বিদর্ভের সীমানা সংযোগ ছিল।

  • ১১. চেদি রাজ্য: তৎকালীন চেদি রাজ্যের কিছু অংশ বর্তমান উত্তর প্রদেশ এবং বাকি অংশ মধ্যপ্রদেশে পড়েছে। চেদি রাজ্যের রাজধানী শুক্তিমতী, এটি বর্তমান উত্তর প্রদেশের বান্দা প্রদেশের নিকটবর্তী।

  • ১২. মদ্র দেশ: মদ্রদেশের রাজধানী ছিল সাগালা। যা বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিয়ালকোট শহর। বর্তমান কাশ্মীরের পশ্চিম প্রান্ত থেকে রাজ্যটি পূর্ব-পশ্চিম বরাবর বিস্তৃত ছিল।

  • ১৩. নিষাদ রাজ্য: নিষাদ রাজ্যটির অবস্থান বর্তমান রাজস্থানে ছিল।

  • ১৪. ইন্দ্রপ্রস্থ: এই নগরটির অবস্থান এখনকার নতুন দিল্লিতে ছিল।

  • ১৫. দ্বারকা: এই শহরটি এখন গুজরাটের নিকটে আরব সাগরে ডুবে আছে।


আবার কেহ কেহ বলছেন বাংলাদেশ নাকি ভারতের অংশ ছিল না। এমন কথা বলা আর গগনপুস্তক পড়া একই ব্যাপার। কারণ ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ নামটির কোনো অস্তিত্ব বিশ্বের মানচিত্রেই ছিল না। মহাভারতের সময়কালীন সময়ে প্রাকজ্যোতিষপুর নামক একটি স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। অঙ্গ বঙ্গ পৌণ্ড্র সুহ্ম কলিঙ্গ (যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় উৎকল বলা হয়েছে) থাকলেও প্রাচীন কোনো গ্রন্থে ১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ নামটির উল্লেখ নেই। আসলে ভারতের পূর্বে অঙ্গ বঙ্গ পৌণ্ড্র সুহ্ম রাজ্যগুলিই ছিল। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সম্রাটের শাসনকালে নামের পরিবর্তন হলেও স্থান অপরিবর্তিত থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এখন যেখানে ইরান সেটাই আগে নাম ছিল পারস্য, এখন যেখানে ভিয়েতনাম সেটার নাম ছিল চম্পা, এখন যেটি মালদ্বীপ সেটাই আগে নাম ছিল মালয়দ্বীপ।


এমন বহু উদাহরণ আছে। কিন্তু ভারত নামটির উপস্থিতি সদা সর্বদা সেই গ্রিক রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিসের লেখায় এবং টলেমি থেকে শুরু করে ইবন বতুতা, হিউয়েন সাঙের ভ্রমণ কথাতেও পাওয়া যায়। সুতরাং একথা অমূলক নয় যে বাংলাদেশের শিকড় আসলে ভারত। ইতিহাসকে বদলে দেবার অপচেষ্টা হলেও সমগ্র বিশ্ব আজ ভারতের দিকে তাকিয়ে। সকলেই দেখছে পুনর্বার কীভাবে ভারত শির উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। যে ভারতের উপর বিদেশী হানাদারদের আগ্রাসী অপশাসনের কুঠারাঘাত হলেও, পুর্ণবিনাশ করার চেষ্টা হলেও, ভারত ক্রমশ বর্বরদের পৈচাশিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হিসাবে আজ আবার দেখাচ্ছে বেদজ্ঞানের অপরাশক্তির সঙ্গে পরাশক্তির স্বাভাবিক মেলবন্ধনে কীভাবে ক্ষমতাকে অর্জন করেও “বসুদেব কুটুম্বকম্”-এর শিক্ষায় গোটা দেশকে পরিচালনা করে ক্রমশ বিশ্বগুরু হতে হয়।


ভারতের বহু মানুষ আজও রামায়ণ ও মহাভারতকে ঐতিহাসিক গ্রন্থ বলতে স্বীকার করেনা‌। এটাও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ব্রেনওয়াশ করা অশিক্ষা ও আংশিক শিক্ষার সুদুরপ্রসারী প্রভাব। ভারতের প্রাচীন ইতিহাস জানতে রামায়ণ, মহাভারত, হরিবংশ এবং অষ্টাদশ পুরাণ ও উপপুরাণগুলি যেমন সাহায্য করে তেমনিই মন্দির, সৌধ, প্রাসাদ, গুহা, নদী, শিলালিপি, মুদ্রা, স্তম্ভ ও সাহিত্যের উপাদান দারুণভাবে কার্যকর। যাঁরা ইতিহাসের সঙ্গে সাহিত্যের যোগ নেই বলে মনে করেন, তাঁদের বুদ্ধি হয় জং ধরেছে নয়তো অলসদানব ভর করেছে তাঁর শরীরে। শুধু সাহিত্য নয়, বিজ্ঞান ও ভূগোলের সঙ্গেও ইতিহাস সরাসরি যুক্ত। সুতরাং ইতিহাস নিঃসন্দেহে এক উৎকৃষ্ট শাস্ত্র। তবে যাঁরা ভারতের ইতিহাসকে ভারত আক্রমণকারী বর্ণিত কাহিনীর আলোকে পড়বেন, তাঁরা হতদরিদ্র হতভাগ্য আত্মগৌরববর্জিত মনুষ্য ছাড়া আর কী বা হবেন !!! 


ভারতের ইতিহাস জানতে ভারতীয় দেশভক্ত লেখকের লেখা না পড়ে বিদেশী হানাদার মদতপুষ্ট কুলেখকদের লেখা পড়ার কী যৌক্তিকতা আছে? ভারতীয় ঐতিহাসিকের মধ্যে যেমন যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিস তৎকালীন ভারতীয় সামাজিকতার যে অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছিলেন তা তার ইণ্ডিকা গ্রন্থ অধ্যায়নেই জানতে পারা যায়। আজ এখানেই সমাপ্তি করলাম। পরবর্তীতে আরার কোনো ঐতিহাসিক তথ্যযুক্ত রোমাঞ্চকর ইতিহাস নিয়ে লিখবো। নমস্কার 🙏🏻


- শ্রী সন্তু পাল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ