মণিপুর থেকে মেইতি হিন্দুদের কাশ্মীরের মতো তাড়াতে চায় - নারায়ণ দেবনাথ

মণিপুর, ভারতে মেইতি হিন্দুদের মশাল মিছিলের দৃশ্য
মেইতি হিন্দুদের মশাল মিছিলের দৃশ্য

 

২৩ জুলাই ২০২৩


মনিপুর ভারতের আরেক কাশ্মীর।হিন্দু ঐতিহ্যের উত্তরসূরী কাশ্মীর থেকে হিন্দু পন্ডিতদের যেভাবে তাড়িয়ে কাশ্মীর একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে মনিপুর থেকেও হিন্দু মেইতিদের তাড়িয়ে মণিপুরকে একটি খ্রিস্টান রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশের জন্যই মনিপুর আজ জ্বলছে। কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতদের পাশে দাড়ানোর কেউ ছিল না। কিন্তু মনিপুরে এত সহজে মেইতি হিন্দুদের তাড়াতে পাচ্ছেনা বলেই ভারত বিদ্বেষীদের এত গাত্রদাহ হচ্ছে।


মনিপুরে যেভাবে দুজন মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাটানো হয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। কিন্তু এমন কয়েকশ ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাবে যেখানে মনিপুরের ঘটনা তুচ্ছ মনে হবে। তারপরও ভারত সরকার অত্যন্ত সচেতনতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে বিদেশে যেভাবে ভারত বিদ্বেষীরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে ভারত তার অভীষ্ট লক্ষ থেকে পিছু হঠবে এমন আশা করা ঠিক নয়।


মনিপুরে আততায়ী কারা? ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান কুকিরা। তারা কোথা থেকে এসেছে মায়ানমার থেকে। মনিপুরে তাদের আশ্রয় দিয়েছে কারা ভারতকে টুকরো করতে চায় যারা। তাদের আক্রমণ মনিপুরি মেইতি হিন্দুদের প্রতি কেন? কারণ তাদের অস্ত্র মৃদঙ্গ বা খোল কর্তাল। আর যারা আক্রমণ করছে তাদের অস্ত্র কি? চীনা অত্যাধুনিক AK-56 অ্যাসল্ট রাইফেল। কারা তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে? চার্চেস অফ নর্থ ইন্ডিয়া, নেপথ্যে চীন। উদ্দেশ্য মনিপুর দখল করা যেভাবে তারা পুরো নর্থ ইস্ট দখল করেছে। তাদের রাজনৈতিক সহযোগি কারা? নেহেরুর উত্তরসূরী, বাম আর তৃণমূলীরা।


মেইতিরা মনিপুরের ভূমিপুত্র।


মনিপুরের মাত্র ১০%সমতল ভূমিতে মেইতিদের বসবাস বাকি ৯০% পাহাড়ি এলাকায় জনজাতি কুকিদের বাস। মেইতিরা জনসংখ্যার ৬০%, বাকিরা কুকি নাগা এবং মুসলিম। কিন্তু মেইতিরা এখন আর তাদের জনসংখ্যার হার ধরে রাখতে পাচ্ছে না। এখন তাদের জনসংখ্যা ৪৪%তে নেমে এসেছে। কারণ মায়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের ফলে মনিপুরের জনসংখ্যার বিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। এতে সরাসরি মেইতিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একেতো জমির স্বল্পতা তার উপর মেইতিদের কাছ থেকে কাশ্মীরের মতো পাহাড়ি এলাকায় জমি কেনার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু জনজাতি কুকিদের বেলায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে মেইতিদের জনসংখ্যার ক্রমানুগতি এবং সমতলে জমি হাতছাড়া হতে থাকায় মেইতিরা বাধ্য হয়ে ইনার পারমিট সিস্টেম চালু করার দাবি তোলে যা অরুনাচল, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরামে চালু রয়েছে। কিন্তু কুকিদের বাধার মুখে এই সিস্টেম চালু করা সম্ভব হয়নি।


ফলে বাধ্য হয়ে মেইতিরা তাদের অস্তিত্ব পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি সংরক্ষণ এবং নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদে তাদের পূর্ব্ববর্ত্তী তপশিলি জনজাতিভুক্ত করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তোলে। মেইতিরা ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তপশিলি উপজাতির মর্যাদা ভোগ করে আসছিল। কিন্তু দেশভাগের পর নেহেরু তাদের সে অধিকার তুলে নিয়ে জনজাতি কুকিদের দিয়ে দেয়। এ নিয়ে মেইতিরা মনিপুর হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট মেইতি জনগোষ্ঠীকে তপশিলি জনজাতির তকমা দেয়ার স্বপক্ষে রায় ঘোষণা করে। এরপর থেকেই অশান্তির সূচনা।


মনিপুর বিধান সভায় ৬০টি আসনের মধ্যে ৪০টি মেইতিদের দখলে বাকি ২০টি কুকিদের। মেইতিরা মনিপুরে অধিকতর শক্তিশালী তাদের শিক্ষা সংস্কৃতি ঐতিহ্য কালচার ভারতের পরম্পরার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং রাজনৈতিক ভাবেও তারা বুদ্ধিদীপ্ত ও ক্ষমতাবান। মেইতিরা যে ভাষা ব্যবহার করে তার নাম মৈথিলান। কিন্তু ভাষাটি বাংলা হরফে লেখা হয়। ভারতীয় সংবিধানে এই ভাষাটি অন্তর্ভুক্ত এবং দশম শ্রেনী পর্যন্ত মনিপুরের প্রত্যেকটি স্কুলে এই ভাষা পড়ানো হয়।


সেই তুলনায় কুকিরা অনেক পিছিয়ে। কুকিদের ধারনা মেইতিরা যদি তপশিলি জনজাতির অধিকার ফিরে পায় তাহলে তারা আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ তাদের কোন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নেই। তারা পাহাড়ি এলাকায় বেআইনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। একসময় মনিপুরের পাহাড়ি অঞ্চল গোল্ডেন ট্রায়াংগেলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের এই বেআইনি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য কুকিরা বেআইনি অস্ত্র মজুদ করে পুরো পাহাড়ি এলাকা একটি দুর্গে পরিনত করে রেখেছে।


মনিপুরের পুরনো পান্ডুলিপি থেকে জানা যায় মেইতি ঋষিরা ধর্ম সমাজতত্ত্ব রাজনীতি ইতিহাস এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে অনুশীলন করতেন। মূলত তাদের হাত ধরেই মনিপুরের মূল সভ্যতার গোরা পত্তন হয়েছিল।


মণিপুরের নাম মনে আসলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্তরে ভেসে উঠে রাধা-কৃষ্ণের নৃত্য ও রাসলীলার কথা। মনিপুরি নৃত্যের সাথে জড়িয়ে আছে মনিপুরের সনাতন ধর্মে বর্নিত সৃষ্টিতত্ত্বের কথা। এটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি অন্যতম প্রধান ধারা। রাসনৃত্য মণিপুরী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্রুপদী ধারার এক অপূর্ব শৈল্পিক সৃষ্টি। অদৃশ্য রসের দৃশ্যমান রূপই হলো রাস। পরম আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মানুষের প্রেমাকুল আত্মার মিলনকে গীত নৃত্য মৃদঙ্গ এবং মুদ্রাসহযোগে আধ্যাত্মিকতার অনুভূতির এক অপূর্ব স্পন্দনের শৈল্পিক ধারা প্রাচীন কাল থেকেই মনিপুর বহন করে আসছে।


সনাতন সংস্কৃতির এই ধারার সাথে খ্রিস্ট্রীয় ধারা কখনো একাত্ম হতে পারবে না। কারণ তাদের কৃষ্টি কালচার অনেক ক্ষেত্রে সভ্যতাকে ম্লান করে দেয়। মনিপুরে যাদের বিবস্ত্র করে হাটানো হয়েছে সভ্যতার বিচারে এটি একটি চরমতম অন্যায়। কিন্তু পাহাড়ি মেয়েরা প্রতিবাদের নামে যেনতেন ভাবে গায়ের কাপড় খুলে প্রকাশ্য রাস্তায় অবলীলায় নেমে পড়বে। এই কালচার ভারতীয় সভ্যতা স্বীকৃতি দেয় না। তাই সনাতন সংস্কৃতি ধ্বংসে খ্রিস্টানরা এগিয়ে আসবে এতে নুতন কিছু নয়। তবে এটি নুতন ভারত সব আর আগের মতোই চলবে না। তাই ভারতের পুনঃজাগরণে কোথাও এমন অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হবে আবার রাষ্ট্রবাদী সেনাদের দেশপ্রেমে আবার সব ঠিকও হয়ে যাবে।


সূত্র: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ