গজনীর সুলতান মাহমুদ এর সাথে একটি কল্পিত সাক্ষাৎকার - সুষুপ্ত পাঠক

গজনীর সুলতান মাহমুদ এর সাথে একটি কল্পিত সাক্ষাৎকার - সুষুপ্ত পাঠক

 

  • গজনীর সুলতান মাহমুদ আপনাকে ধন্যবাদ আমার সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হওয়ার জন্য।
  • তোমাকেও ধন্যবাদ, সুষুপ্ত। কি জানতে চাও বলো?
  • ১৭ বার ভারত আক্রমন করে আপনি ইতিহাস গড়েছেন। এজন্য আপনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পাঠ্যসূচীতে- বিশেষত পাকিস্তানের পাঠ্যসূচীতে মুসলিম বীর হিসেবে সন্মানিত। অন্যদিকে হিন্দুদের কাছে কুখ্যাত হয়ে আছেন। কিভাবে মূল্যায়ন করবেন এগুলোকে?
  • ভারত আক্রমন করে সফল হওয়ার পর ইসলামী বিশ্বের খলিফা বাগদাদের খলিফা কাদির বিল্লাহ আমাকে বিপুল সংবর্ধনা জানিয়ে আমাকে ‘ইয়ামিন-উদ দৌলা’ অর্থ সাম্রাজ্যের দক্ষিণ হস্ত ও ‘আমিনউল মিল্লাত’ অর্থ ধর্মের রক্ষক উপাধী দিয়েছিলো। ইতিহাস এখন আমাকে যেভাবে মনে রাখবে আমি সেটাই।
  • ইতিহাস তো এখন তিন চার রকম। এখন আপনাকে রীতিমত ধর্মনিরপেক্ষ দেখানোর একটি ইতিহাস ভারতে লিখছে কেউ কেউ। তারা বলছে আপনার ভারত আক্রমন ও মন্দির ধ্বংস ছিলো স্রেফ সেকালের সমরনীতির বহির্প্রকাশ। রমিলা থাপার বলেছেন মন্দির অনেক হিন্দু রাজাও সম্পদের লোভে লুট করত। কাজেই আপনাকে মুসলিম বিরোধী দেখানো ঠিক হবে না।
  • পন্ডিত নেহরু কিংবা ঐতিহাসিক খাজা নিজামউদ্দিন বা মিনহাজ-ই-সিরাজ কিন্তু আমাকে হিন্দুদের ধর্মকে চরম অপমান করার জন্য দায়ী করেছে। এক হাজার মন্দির ভাঙ্গার জন্য আমি মুসলিম বিশ্বে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছি যা আজো অম্লাণ। কাজেই রমিলা থাপার কি বলছে তার কোন মূল্য নেই, কারণ যারা আমাকে আজো পিঠ চাপড়াচ্ছে তারা আমাকে হিন্দুদের অপমানিত ও পরাজিত করার জন্যই সেটা করছে।
  • হিন্দুদের ধর্ম অপমানের কথা যখন তুললেন তাহলে সোমনাথ মন্দিরের কথা বলি। মক্কার মানাত দেবীই নাকি ভারতে অপভ্রংশ হয়ে সোমনাথ হয়েছে? মক্কা দখলের পর পৌত্তলিকদের একটি দল দেবী মানাতের বিগ্রহটি ভারতে নিয়ে এসেছিলো বলে শোনা যায়। যদিও এরকম কোন ঐতিহাসিক পরিস্কার প্রমাণ নেই।
  • হ্যাঁ, আমরাও তাই জানতুম। আমি সেটা জেনেই মানাত দেবীকে ভেঙ্গে চার টুকরো করি। একটা গজনীতি জামা মসজিদের প্রবেশের মুখে এমনভাবে বসাই যাতে এই বিগ্রহে পা দিয়ে ঢুকতে হয়। আরেকটা অংশ আমার প্রসাদে বসাই। বাকী দুটো অংশ মদিনা ও মক্কায় পাঠাই। মানাত রক্ষা করতে গোপনে ভারতে চালান করা হয়েছিলো বলে শত শত বছর ধরে আমরা জেনে এসেছি। আমি এটা বিশ্বাস করে ভারতের সোমনাথে কেবল লুন্ঠন করতে মনোযোগ দেইনি, মানাত দেবী ছিনিয়ে আনার ব্যাপারে পুরো মনোযোগ আমার ছিলো।
  • কিন্তু বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের পিতা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ হাবিব বলেছেন, আপনি ধর্মীয় কারণে সোমনাথ মন্দিরের আক্রমন করেননি। করেছেন সম্পদের লোভে।
  • তাহলে মানাত দেবীকে কেন গনজনীর মসজিদে প্রবেশের মুখে পা রাখার জন্য রাখলাম। কেন সেটা মক্কা মদিনায় পাঠালাম? ঐতিহাসিক আল বেরুণী আমার সমসাময়িক ছিলেন। তিনি কি লিখেছেন আমার সম্পর্কে জানো? তিনি লিখেছেন, হিন্দুদের যেন ধূলিকণার মত, পুরাতন জনশ্রুতির মত চারদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো। তাদের বিক্ষিপ্ত অবশেষ মুসলমানদের উপর গভীর ঘৃণা পোষণ করে।
  • প্রথমবার সোমনাথ আক্রমনের স্মৃতিটা একবার বলবেন?
  • আমার আক্রমনের সময় মন্দিরের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিলো লক্ষাধিক নারী-পুরুষ। এক হাজার ব্রাহ্মণ। আর শত শত নতর্কী আর গাইকা। তারা নিশ্চিন্ত ছিলো যে দেবতারা তাদেরকে রক্ষা করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। আমি একদম মেরে কেটে সাফ করে দিলুম। যে পরিমাণ ভারতীয়দের ক্রিতদাস বানিয়েছিলাম তাতে গজনবীর দাস বাজার সর্বনিন্ম দর হয়েছিলো। মাত্র পাঁচ দিনারে একটা দাস বিক্রি হচ্ছিলো হাঃ হাঃ হাঃ...
  • কতজনকে দাস বানিয়েছিলেন?
  • বাগদাদের খলিফাকে গণিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দিয়েছিলাম। সে হিসেবে তিনি দাস দাসীই পেয়েছিলেন এক লাখ পঞ্চাশ হাজার। তার মানে আমি ভারত থেকে দাস দাসী নিয়ে গিয়েছিলাম সাত লক্ষ পঞ্চাশ হাজার! যে রুট দিয়ে ওদের নিয়ে যেতাম সেটা পাহাড়ী গিরিখাদ, খুবই কঠিন পথ। দাসরা এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পথেই মরে পড়ে থাকত। এই কারণে সে পথের নামই হয়ে গেলো ‘হিন্দুকুশ’ মানে হিন্দুদের মেরে ফেলা! ঐতিহাসিক আল উতবি লিখেছে, আমার কারণে ইরানী ও গজনী দাস বাজারে দাস একদম সস্তা হয়ে গিয়েছিলো।
  • অনেক সম্পদ এনেছিলেন?
  • অনেক। হাতির পিঠে, ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে এনেছিলাম। সোমনাথের চন্দন কাঠের দরজাগুলি খুলে এনেছিলাম। সেগুলোকে আমার সমাধিতে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম।
  • মথুরা নগরী দেখে আপনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।
  • হ্যাঁ। এরকম শহর তৈরি করতে দুইশো বছর লাগে।
  • সেই সৌন্দর্যকে তাহলে নরক বানালেন কেন?
  • এটা তো মানব জাতির জিনের মধ্যে রয়ে গেছে সুষুপ্ত! সুন্দর ফুল দেখলে ছিড়ে নেও কেন? যে সুন্দর পাখি গান গাইতে পারে তাকে উড়তে না দিয়ে খাঁচায় পোষো কেন? তাছাড়া অন্যের এমন সম্পদ দেখলে নিজেদের দৈন্যতার জন্য ক্ষোভ হয়। আমি ভারত লুট করে গজনীকে চোখ ধাঁধানো বানিয়েছিলাম। কিন্তু রাখতে পারিনি।
  • কেন?
  • ঐ যে ঘুরি বংশ, ওরা আমার উপর প্রতিশোধ নিলো ভ্রাতৃ হত্যার। আমার পুরো শহরে ওরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। আসলে কি জানো আমরা তো গ্রীকদের দ্বারা শাসিত হয়েছিলাম। ওদের রক্ত আমাদের শরীরে বইছিলো। এই যে যুদ্ধ লুটপাট এইসব ইসলামের সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গ্রীক রক্ত কাজ করছিলো। আমাদের মেয়েদের দেখেছো তো, কী রকম সুন্দরী হয় তারা। এগুলো গ্রীক জিন বহন করছে।
  • আপনি কি অনুতপ্ত?
  • নো কমেন্টস।
  • ইতিহাস আপনাকে কিভাবে মনে রাখবে বলে মনে করেন?
  • মধ্যুযুগীয় একজন সমরনায়ক হিসেবে। ভালো মন্দ যেটাই আমাকে মনে করো আমার সময়টাকে বিবেচনা করো।
  • কিন্তু আপনাকে যারা এখনো নায়ক বানাতে চায়...
  • আমার দায় তাহলে তাদেরকে নিতে হবে।
  • আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • তোমাকেও।


©সুষুপ্ত পাঠক


সূত্র: সুষুপ্ত পাঠক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ