রাধা কে? কৃষ্ণের সাথে রাধার সম্পর্কই বা কি? এরকম প্রশ্ন মাঝে মাঝে কুৎসিত আকারে নোংরা বোধের, নিম্মদৃষ্টি ভঙ্গির জম্ম দেয়। যিনি প্রশ্নকর্তা তিনি কি জানার জন্য আসলে প্রশ্ন ছুঁড়ে ফেলেন নাকি শ্রেষ্ঠতা প্রমাণ করতে চান?!
আবার একদল রাধাকে সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানায় কারণ বেদে রাধা নেই, আবার বিষ্ণু পুরাণ ছাড়া অন্যান্য পুরাণে রাধাকে তো কোথাও পাওয়া যায় না! আবার বৈষ্ণবদের দাবি রাধা ছাড়া কৃষ্ণ ভাবা যায় না।
এই বিশাল মার প্যাচে আমার মত গরীব, মূর্খ যাবে কোথায়?
যাদের ভালো লাগবে গ্রহণ করলে করবেন নতুবা ভদ্রলোকের মত এড়িয়ে যাবেন কারণ আপনার পূর্বে মাথায় fixed হওয়া ধারনাকে বদলানোর কোনো অভিপ্রয়াস করছি না।
সে যাইহোক। যদি লেখা বা বলা শুরু করি শেষ হবে না কারণ গত তিন চার বছর ধরে " রাধা" নামক যাইহোক তার উপর চেষ্টা করেছি জানার। তারই সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা চেষ্টা করছি।
" ভক্তি, প্রীতি, দয়া মনুষ্য বৃত্তির মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তন্মধ্যে ভক্তিই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই তিনটি গুণই যখন ঈশ্বরমুখী হবে তখনই রাধা হতে পারা যায়। যারা রাধাকৃষ্ণকে ইন্দ্রিয় সুখরত মনে করে তারা পিচাশ।" -- (বঙ্কিম রচনাবলী প্রবন্ধ)
রাধা অর্থ যিনি আরাধনা করেন। প্রাচীন ভারতে স্ত্রীগণের জ্ঞানমার্গ নিষিদ্ধ ছিল। ( ছিল কি ছিল না আপনারা নিজেরাই বিচার করুন।) অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তারা। বেদাদির অধ্যায়ন নিষিদ্ধ ছিল তাদের, এমনকি এখনো অনেক মহিলাই মনে করে এসব তাদের পড়া অনুচিত।
কিন্তু স্ত্রী জাতির এক দিব্য বর বা গুণ তারা জম্মগতভাবে পেয়েছে সেটি ভক্তি। এমন আশীর্বাদ পুরুষদের মধ্যে তথা অন্য কোথাও নেই। মানুন বা নাই মানুন। ( কিন্তু দুর্ভাগ্য বর্তমানে পাশ্চাত্যের প্রভাবে তারা স্ত্রীজাতি নিজের স্বরুপকেই ভুলতে বসেছে!)
মাতৃভক্তির প্রবল শক্তি স্ত্রীজাতি ছাড়া পুরুষদের মধ্যে নেই বললেই চলে এজন্য তারা মা। স্ত্রীলোকদের মধ্যে কর্মমার্গ কষ্টসাধ্য কিন্তু ভক্তিতে তাদের বিশেষ অধিকার; মানতেই হবে।
অনুরাগ বিভিন্ন কারণে জম্ম নিতে পারে। সৌন্দর্যের মোহঘটিত যে অনুরাগ, তা মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বলবান। অনন্ত সুন্দরের সৌন্দর্যের বিকাশ ( নোংরামিপনা নয়, ভালো করে বুঝুন) ও তার আরাধনাই অপরের হোক বা না হোক, স্ত্রী জাতির জীবনস্বার্থকতার মুখ্য উপায়। এই তত্ত্বাত্মক রূপকই রাসলীলা। ( বঙ্কিমচন্দ্র)
চিত্ত যাদের শুদ্ধ একমাত্র তাদের কাছেই এটি বোধগম্য। পৌরাণিক সনাতন ধর্মে আনন্দের কিছু বাড়াবাড়ি আছে, স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু সনাতন ধর্মের মর্ম যে বুঝতে পারবে, সে অনায়াসেই আব্যশকীয় এবং অনাবশ্যকীয় অংশ বুঝতে পারবে এবং পরিত্যাগ করতে পারবে। সনাতন ধর্মের এটিই মহত্ত্ব কারণ একমাত্র এই ধর্মই ভালোকে ভালো এবং খারাপকে পরিতাজ্য করে সংশোধন করে নিতে পারে। আর তা না করলে সনাতন ধর্মের উন্নতি নাই। ( বঙ্কিম) ( উন্নতি কিরূপে হয় অন্যদিন আলোচনা করা যাবে।)
ভক্তি সহজ নয়, এটা সহজে মানুষের আসেও না। কিন্তু স্ত্রীজাতির মধ্যে এটি ঈশ্বর প্রদত্ত গুন বা যাকে বলে God gifted! বলে।
আর এই ভক্তিতেই তারা কৃষ্ণপ্রেমে নিজেদের সমার্পন করে হয়ে ওঠে একেকজন রাধা। শুধু নারীই নয় ঈশ্বরের প্রতি যিনিই নিজেকে সমার্পন করে মগ্ন হবেন, ঈশ্বরকে পাবেন তারা প্রত্যেকেই রাধা। আমাদের মন আজ নিম্নগামী বলেই রাধাকে অস্বীকৃতি জানাই। কিংবা একেবারেই ঝেড়ে ফেলি। রাধা কোনো চরিত্র নয়। মানুষই নিজের স্বার্থে নোংরামিতে পৌঁছেছে বলেই রাধা চরিত্রতে পরিণত হয়েছে।
======
রাধা কে:
রাধা সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্র।
শ্রীকৃষ্ণের প্রামাণ্য জীবনী পাওয়া যায় মহাভারত এবং হরি বংশে। সেখানে কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা নামক চরিত্র নেই। বৈষ্ণবদের প্রধান গ্রন্থ বিষ্ণুপুরাণ এবং মূল ভাগবত পুরাণ সেখানেও রাধা নেই। স্কন্দ পুরাণ, মৎস্য পুরাণ ও নারদ পুরাণে রাধার নাম মাত্র উল্লেখ আছে।
কিন্তু ১০০০ /১২০০ বছর আগে লেখা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে শুধু রাধা কৃষ্ণের প্রেম। সেখানে কৃষ্ণের কোনো কাজ নেই শুধু ২৬ বছরের বড় আন্টির পেছনে ঘুরে বেরানো ছাড়া।
তাছাড়া, শ্রীকৃষ্ণ মানুষ ছিলেন। প্রেম অনুভূতি সৃষ্টির জন্য যেসকল হরমোন প্রয়োজন সেগুলো ৯/১০ বছরের বাচ্চার দেহে উৎপন্ন হয় না।
এখন বলতে পারেন, শ্রীকৃষ্ণ ভগবান ছিল, সব পারে ।
ভগবান উপাধির মতন। যখন কেউ পূর্ণ ঐশ্বর্য, পূর্ণ বীর্য, পূর্ণ যশ, পূর্ণ শ্রী, পূর্ণ জ্ঞান এবং পূর্ণ বৈরাগ্য এই ছয় গুণাবলী অর্জন করে গুণান্বিত হয় তখন তাকে ভগবান বলে। তার আগে নয়।
ভগবান হতে ৬ টি গুন লাগে তার ব্যখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো:
- ১। ঐশ্বর্য = সত্যভাষণাদি শ্রেষ্ঠ গুণাবলী।
- ২। বীর্য্য = ব্রহ্মতেজ অর্থাৎ ব্রহ্মচর্যের যথাযথ পালন দ্বারা লব্ধ তেজ বা বল।
- ৩। যশ = ধার্মিক ও বিদ্বানদের নিকট প্রশংসিত হওয়া।
- ৪। শ্রী = অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য অর্থাৎ চারিত্রিক শুদ্ধতা বা পবিত্রতা।
- ৫। জ্ঞান = বেদাদি সত্য শাস্ত্রের অধ্যয়ন ও গুরুকৃপায় লব্ধ বিদ্যা, যা দ্বারা সত্য-অসত্য, ধর্ম-অধর্ম, নিত্য-অনিত্য ইত্যাদির ভেদ নির্ণয় করা যায়।
- ৬। বৈরাগ্য = স্ত্রী, পুত্র, ধন, মান ইত্যাদি বিষয়ের অর্থাৎ জাগতিক সুখের প্রতি মোহ বা আকর্ষণ না থাকা।
0 মন্তব্যসমূহ