শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী এবং সন্তান সংখ্যা - মনোজ প্রভাকর মন্ডল

শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী এবং সন্তান সংখ্যা - মনোজ প্রভাকর মন্ডল

আমাদের হিন্দুরা যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে অন্য ধর্মের লোকেরা আমাদের ধর্ম সম্পর্কে কিঞ্চিত জেনে সেটা নিয়ে আমাদের ধর্মের এবং ভগবানের উপহাস উড়ান।

এবং, আমাদের মধ্যে অনেকেই এটির প্রতিবাদ করতে পারে কারণ আমরা নিজেরাই সেই সম্পর্কে কিছু জানিনা তো প্রতিবাদ কি করে করবো!


সেরকম ই একটা বিষয় হল: ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ১৬০০০ স্ত্রী ।


তারা বলে তোমাদের ধর্মের প্রাণপুরুষ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের ১৬০০০ বৌ আছে। আপনাদের ধর্ম মহান হয় কি করে, কেন মানেন এমন ধর্ম, ভগবান এরকম কি করে হয় ব্লা ব্লা?


চলুন প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক যাতে আপনারা আজকের পর থেকে প্রতিবাদ করতে পারেন।


বিস্তারিত বলতে গেলে পোস্টটা একটু লম্বা'ই হবে ধৈর্য্যসহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।


হ্যাঁ, এটা সত্যি যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ষোলো হাজার স্ত্রী ছিল। কিন্তু, প্রকৃত সংখ্যা টা ১৬,১০৮ ।


শ্রীকৃষ্ণের প্রধান স্ত্রী ছিল ৮ জন।


সংখ্যাটি কিন্তু বিষ্ণুপুরাণ অনুসারে নির্ণিত।


বিষ্ণু পুরাণ মতে নরকাষুর তাঁর অন্তঃকূপে ১৬১০০ কুমারী মেয়েকে বন্দি রেখেছিল। এবং শ্রীকৃষ্ণ তাদের উদ্ধার করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন।


এখন দেখি, পুরাণ কি? 


পুরাণ হল এমন একটা ধর্ম গ্রন্থ যেটা আমাদের ধর্মীয় চরিত্র এবং কাহিনীগুলো বিকৃত করে আসছে। এবং, আমরা বেদ এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতার পরেই পুরাণের স্থান দিয়েছি। সেই সুযোগে পুরাণ সনাতন ধর্মটাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে।


কেন এমনটা বললাম?


আসলে, আমাদের ধর্মের বিকৃতি শুরু হয়েছে বিষ্ণুপুরাণে এবং সেটা বিস্তৃতি লাভ করেছে ভাগবত পুরাণে।

না বুঝে পুরাণকে যেহেতু আমরা হিন্দুরা- বেদ, গীতার পরেই স্থান দিয়ে এসেছি, সেহেতু পুরাণে উল্লিখিত এই সব ঘটনাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা আমাদের হিন্দুদের ছিলো না, আর পুরাণের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো জ্ঞানী লোকও খুব কম ছিলো, তাই এই ঘটনাগুলো ডালপালা মেলে কৃষ্ণ চরিত্রকে হাজার হাজার বছর ধরে কলুষিত করেছে এবং হিন্দু সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়েছে।


দুজন পুরাণ লেখকের নাম বলি।


মূল আলোচনার পূর্বে ভাগবত পুরাণ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার, তাহলে বুঝতে পারবেন যে ভাগবত পুরাণ কী জিনিস, আর এই ভাগবত পুরাণের উদ্দেশ্যটা কী?

বাংলায় দুই ধরণের ভাগবত পুরাণ পাওয়া যায়, একটা হলো সুবোধচন্দ্রের ভাগবত, অন্যটা বেনী মাধব শীলের ভাগবত। দুই ভাগবতের কাহিনী মোটামুটি একই। কিন্তু সুবোধ চন্দ্রের ভাগবতে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে এমন অশ্লীল যে, তা কাউকে পড়ে শোনানো যায় না এবং নিজে পড়লেও যৌন গল্প পড়ার অনুভব পাওয়া যায়।


সুবোধ চন্দ্রের ভাগবতে কৃষ্ণের রাসলীলা একটা যৌন উৎসব, যেখানে নয় লক্ষ পুরুষ এবং নয় লক্ষ নারী নগ্ন হয়ে একত্রে কামলীলায় মেতে উঠে। এর মধ্যে কৃষ্ণও আছে। কিন্তু কোথাও এই কথা বলা নেই যে, রাসলীলার সময় কৃষ্ণের বয়স ছিলো মাত্র ৮, তাই তার পক্ষে ঐ ধরণের যৌনলীলায় অংশ গ্রহন করা সম্ভবই ছিলো না। আর বস্ত্রহরণ পর্বে কৃষ্ণ তো একটা মহা লম্পট, যার উদ্দেশ্যই মনে হবে মেয়েদের নগ্ন শরীর দেখা। এমনভাবে বর্ণনা করে সুবোধের ভাগবত পুরাণ লেখা। আমি ভেবে অবাক হই যে, শত শত নয়, হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুরা এসব গো গ্রাসে গিলে আসছে, আর কেউ এর প্রতিবাদ করে বলে নি যে, না, কৃষ্ণ চরিত্র এমন হতেই পারে না; এমন কি কেউ এমন প্রশ্নও তুলে নি যে, ৭/৮ বছর বয়সী একজন বালকের পক্ষে এই রকম যৌন সম্পর্কিত ব্যাপারে জড়ানো কিভাবে সম্ভব? এর বিপরীতে সবাই সরল বিশ্বাসে ভাগবত পুরাণের কাহিনীকে বিশ্বাস করে এসেছে এবং হিন্দু সমাজকে দিনের পর দিন রসাতলে নিয়ে গেছে।


আগেই বলেছি, সুবোধের ভাগবত এবং বেণীমাধবের ভাগবতের কাহিনী প্রায় সেম। কিন্তু বেণী মাধবের ভাগবতের বর্ণনায়, সুবোধের ভাগবতের তুলনায় অশ্লীলতা কিছুটা কম। কিন্তু রাসলীলা এবং বস্ত্রহরণের ঘটনা একই, উভয়ক্ষেত্রেই কৃষ্ণ যৌনতার জ্বরে আক্রান্ত। তার মানে প্রকৃত সত্য উভয় ভাগবতেই অনুপস্থিত এবং উভয় ভাগবতের উদ্দেশ্যই হলো কৃষ্ণ চরিত্রকে কলুষিত করা। গোপীদের কাপড় চুরির ঘটনার সময় কৃষ্ণের বয়স যে মাত্র ৭ এবং রাসলীলা সময় তার বয়স মাত্র ৮, এমন তথ্যকে আড়াল করে উভয় ভাগবতেই কৃষ্ণকে পূর্ণ যুবক হিসেবে দেখানো হয়েছে, ফলে এই ভাগবতগুলো পড়ে হিন্দুরা প্রকৃত সত্যকে জানতে পারে না, এইদিক থেকে বিবেচনা করলে ভাগবতের প্রায় সমস্ত কাহিনী মিথ্যা বা মিথ্যার আড়ালে সত্যকে গোপন করা।


এমন ভাগবতকে আমরা হিন্দুরা ধর্ম পুস্তক জ্ঞান করে পূজা করে আসছি, হিন্দু ধর্ম ও সমাজের পতন কি আর এমনি এমনি?


যা হোক, কৃষ্ণের ষোল হাজার একশ স্ত্রীর কাহিনী এই সব ভাগবতের মাধ্যমেই লোক সমাজে প্রচারিত, যে ভাগবতের উদ্দেশ্য হলো কৃষ্ণ চরিত্রকে মহান করে তোলা নয়, তাকে ছোট করা; আর যারা ভাগবতকে ধর্ম পুস্তক মনে করে তাদের পক্ষে এসব ঘটনাকে অস্বীকার করার কোনো উপায়ও থাকে না। কিন্তু হিন্দু ধর্ম বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে, কৃষ্ণের তথাকথিত সেই ষোল হাজার একশ স্ত্রীর ঘটনাকে গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্য আমরা নানারকম ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করে যুক্তি দিই, সত্য কথা বলতে কি, প্রকৃত সত্যকে না জেনে এই ধরণের যুক্তি আমার আগের পোস্টগুলোতে আমিইও দেবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রকৃত সত্য জানলে এই ধরণের কোনো যুক্তি দেবার প্রয়োজন ই পড়বে না, সেই সত্যই আজ তুলে ধরবে আপনাদের সম্মুখে।


বিষ্ণু যখন বরাহ অবতার রূপ ধারণ করে জলমগ্ন পৃথিবীকে উদ্ধার করেছিলেন, তখন পৃথিবী ও বরাহের সংস্পর্শে নরকাসুরের জন্ম, এই সূত্রে পৃথিবী মানে Earth হলো নরকের মা। এখন বলেন, বাস্তবে এটা কি সম্ভব? পৃথিবী কি মানুষ, যে সে সরাসরি কোনো মানব সন্তানের জন্ম দেবে? নরকাসুরের জন্মের এই অবাস্তব কাহিনীই বলে দেয় যে, নরকের ঘটনা সম্পূর্ণ বানানো, বাস্তবে কোনো দিন নরকাসুর ছিলোই না, তাই তার ১৬,১০০ মেয়েকে বন্দী করে রাখা, কৃষ্ণের গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে আনা এবং বিয়ে করা সম্পূর্ণই কাল্পনিক। তাছাড়াও যদি ধরে নিই যে, বরাহ অবতার ও পৃথিবীর সংস্পর্শে কোনোভাবে নরকাসুরের জন্ম হয়েছিলো, তাহলেও কি কৃষ্ণের সময় পর্যন্ত নরকের বেঁচে থাকা সম্ভব ছিলো? বরাহ অবতার বিষ্ণুর তৃতীয় অবতার রূপ ধারণের ঘটনা, যেটা ঘটেছিলো সত্য যুগে, আর কৃষ্ণ, বিষ্ণুর নবম অবতার, এই দীর্ঘ সময় কি নরকাসুর জীবিত থেকে রাজত্ব করে যাচ্ছিলো?


শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী এবং সন্তান একজন ই ছিল।


তারা হল রুক্মিণী ও প্রদুম্ন।


বাকি সবটাই কাল্পনিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ