হিন্দু নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেয়ার হাইকোর্টের রুল জারির প্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রেক্ষাপট

হিন্দু নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেয়ার হাইকোর্টের রুল জারির প্রেক্ষিতে কয়েকটি প্রেক্ষাপট

 

হাইকোর্ট এর থেকে রুল জারি করা হয়েছে যে কেন হিন্দু নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমানাধিকার দেয়া হবে না।


আইন অনুযায়ী রুলটি মানবিক এবং বেদ অনুযায়ী কন্যাসন্তানের সমানাধিকার পাওয়া উচিত।


কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা কি? কয়েকরকম প্রেক্ষাপট আছে।


প্রেক্ষাপট একঃ-

বাংলাদেশে অসংখ্য নারী এখনো স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম কবুল করে বিয়ে করে। সমানাধিকার পেলে সেই মুসলিম দুলাভাই এসে সম্পত্তির ভাগ চাইবে।


এখন এখানে অনেকে বলবে ধর্ম বদলালে সম্পত্তি পাবে না।

এখানেই রয়েছে চমক। বাংলাদেশে স্পেশাল ম্যারেজ এক্টে ধর্ম না বদলিয়ে বিবাহ করা যায়। তাই হিন্দু নারী ধর্ম কাগজ কলমে না বদলিয়ে পুরোদমে সন্তানদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে।


উদাহরণস্বরূপ: এই সমানাধিকার আন্দোলনের শুরুতে থাকা কথিত হিন্দু নারী নেত্রী শ্যামলী ভট্টাচার্য যিনি পেশায় আইনজীবী । উনি স্পেশাল ম্যারেজ এক্টে বিয়ে করেছেন একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে। তার সন্তানকে নিজ দায়িত্বে নামাজ শিখিয়েছেন। ফেসবুকে সেই ভিডিও আছে। তাই ধর্মান্তরিত হলে অধিকার থাকবে না, এই যুক্তি আসলে মুল্যহীন।


এবার অনেকে বলতে পারে অনেক ছেলেও তো ধর্ম বদলায়। বর্তমান প্রচলিত হিন্দু আইনে ধর্ম বদলালে সম্পত্তিতে অধিকার থাকে না। আর স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের গ্যাড়াকল থেকেই যায়। তবুও সংখ্যার বিচারে গেলে, আমার কাছে কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও, এটুকু মোটাদাগে বলা যায় নারীদের বিবাহ বিষয়ক ধর্মান্তর পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। মেয়েদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত অথচ মুসলমান ছেলেদের সাথে পালাচ্ছে যারা অধিকাংশ মাদক সেবী, যার কোন কারণ এখনো উদ্ধার হয়নি।


প্রেক্ষাপট দুইঃ-

পাকিস্তানে প্রায়ই হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করা হয় জোর করে। এই আইন হলে ভবিষ্যতে হিন্দু মেয়েদের জোর করে বিয়ে করার সং্খ্যা অনেক বেড়ে যাবে। তারা হয়তো স্পেশাল ম্যারেজ এক্টে বিয়ে করে কাগজে কলমে হিন্দু রেখে পিতার সম্পত্তির ভাগ নিয়ে সেখানে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান গড়বে।


ভয়ংকর অনিরাপদ হবে আমাদের বোন, কন্যাদের জীবন।


ইতোমধ্যেই আমাদের জীবন যথেষ্ট বিপদগ্রস্থ। তাই জীবনের প্রয়োজনে নিজেদের কন্যাদের নিরাপত্তার জন্য এই আইন যাতে পাশ না হয় সেজন্য সচেতন হতে হবে।


প্রেক্ষাপট তিনঃ-

বাংলাদেশে হিন্দুদের জন্য কোন আইন নেই, কোন ছেলেমেয়ে ধর্মান্তর হলে জোর করে তাদের সম্পত্তি দখল করছে অহরহ প্রমাণ আছে, কুমুদিনি ট্রাষ্টের জমি দখল করেছে কয়েক বার আমাদের গ্রামে অনেক আগেই রকম ঘটনা ঘটেছে, পূর্বেই আইন আছে ধর্মান্তর হলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, পাকিস্তানে এই ধরনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়ে। আফগানিস্তানে একই ভাবে শতভাগ হিন্দু থেকে আজ শূণ্য।


প্রেক্ষাপট চারঃ-

কিভাবে হিন্দু মেয়েরা তাদের পিতার সম্পত্তির অধিকার গ্রহন করবে? তারা কি পিতার ভিটাতে চলে আসবে না জমি বিক্রি করে স্বামীর বাড়িতে চলে যাবে, এই জমি তখন বিক্রি হবে পাশের কোন মুসলমান এর কাছে উচ্চ মূল্যে। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, ফলশ্রুতিতে দেশ ত্যাগের হিড়িক। এমনিতেই হিন্দুদের জমি ক্রয়ের স্বক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। মুসলমান পরিবার ঢুকে গেছে উদাহরণ স্বরূপ বলি আমাদের গ্রামে এই রকম অনেক হিন্দুদের জমি ক্রয়ের স্বক্ষমতার অভাবে।


প্রেক্ষাপট পাঁচঃ-

বাংলাদেশের দেবোত্তর সম্পত্তি গুলি যেখানে মন্দির ব্যতীত হস্তান্তর করা অবৈধ সেখানে হাজার হাজার একেকর মুসলমান দখলদারের হাতে এখনও প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও দখল হচ্ছে, এই বিষয়ে মহামান্য আদালত নিরব। যেমন খোদ রাজধানীতে রমনা মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বরেদশ্বরী কালি মন্দির, জাতীয় শিব মন্দির, ভোলাগীরী ট্রাস্ট জমি এর অবৈধ হাতে এছাড়াও টিপুসুলতান রোডের বিদ্যানিধি মন্দির, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে একটি দেবোত্তর সম্পত্তি, রাজধানী সুপার মার্কেটটি মন্দিরের সম্পত্তি যা হিন্দুদের থেকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট দখলে নিয়েছে অথচ সেখানে একটি মসজিদ আছে, ধোলাই খাল এলাকাতে হরিচাঁদ ঠাকুরের নামে একটি দেবোত্তর সম্পত্তি ট্রাক স্টেশনের নামে বেদখল, পল্টনে তিনটি দেবোত্তর সম্পত্তির একটিতে মসজিদ, একটি হাউজিং কোম্পানি দখল করে ভবন তৈরী করে ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছে, অন্যটিতে স্কুল দখলে, টিকাটুলিতে এস আলমের দখলে অনেক জমি - এইতো খুব হালকা বিবরণ উপস্থাপন করলাম। এই রকম উদাহরণ ঢাকাতেই আরো অনেক, বাকী ৬৩ জেলাতো আছেই। হিন্দু মেয়েদের প্রতি এতই দরদ থাকে নও মুসলমানের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দের বন্ধ করে হিন্দুদের মেয়েদের জন্য ঐ সকল সম্পত্তি উদ্ধার কর একটি প্রকল্প ঘোষনা করুন।


প্রেক্ষাপট ছয়ঃ-

এখন প্ৰসঙ্গে আসি অসহায় হিন্দু পরিবারের হিন্দু মেয়েদের কিডন্যাপ করে প্রতিনিয়ত ধর্মান্তর নিয়ে, এই বিষয়টি বাংলাদেশে পান্তা ভাতের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই পাকিস্তানের মত। এই ধরনের ঘটনা গুলি দেখলে মনে হয় বাংলাদেশে এখনও স্বাধীন নয়, যেন একটি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ভর করে আছে।


প্রেক্ষাপট সাতঃ-

মিথ্যা ধৰ্ম অবমাননার অজুহাতে রামু, নাসির নগর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, শাল্লা, ভোলাতে পর পর অনেক বার, নড়াইল সহ অনেক স্থানে গনহারে হিন্দুদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর হয়েছে আজও ঘটনাগুলিতে আদালত নিরব।


প্রেক্ষাপট আটঃ-

মিথ্যা ধৰ্ম অবমাননার দায়ে হিন্দু শিক্ষকদের নির্যাতন এতো এক মহামারী, অথচ এই হিন্দু শিক্ষকগন এই দেশে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিল, তখন এরা কে হিন্দু কে মুসলমান মননে আনেননি। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিন্দুরাই প্রতিষ্ঠা করেছিল তা নাম পরিবর্তনের ফলে হিন্দুদের অবদান ধংসের দিকে।


প্রেক্ষাপট নয়ঃ-

বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানে মন্দির ও মুর্তি ভাঙচুর এখন তথাকথিত পাগলের দখলে, অথচ কোন মুর্তি ভাঙচুরে রত পাগল এখনও গু খাইছে তার প্রমাণ নেই। এখানে মহামান্য আদালত ও সরকার উভয়েরই নিরব এমন দরদী মহিলা পরিষদ টিনের চশমা পারিয়া আছেন।


প্রেক্ষাপট দশঃ-

হিন্দু মেয়েদের সম্পত্তির জন্য আন্দোলন করতেছে মুসলমান মহিলা ও ধর্মান্তরিত মহিলারা অথচ তাদের মুসলমান মহিলা গুলি প্রতিনিয়ত নির্যাতন, তালাকের শিকার হচ্ছে, অধিকাংশ মুসলমান মহিলাকে বোরকার ভেতর থাকতে হচ্ছে। এদের জন্য আইন পরিবর্তন এর জন্য এরা পুরোটাই নিরব।


প্রেক্ষাপট একাদশঃ-

বাংলাদেশে যে হারে ধর্মান্তর ও নির্যাতন চলছে তাই সর্বস্থরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল হিন্দুদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে হিন্দু জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আসন বন্টন, সংখ্যালঘুদের জন্য সুরক্ষা আইন প্রনয়ন, সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন, উদ্ধারকৃত মুর্তি হিন্দুদের মন্দিরের ফেরত দান, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত, সাথে সময়ের দাবী ধর্মান্তর আইনের মাধ্যমে বন্ধকরণ, নও মুসলমানের জন্য বাজেট বন্ধ করা।


এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন ও শালিশি পরিষদ, মুসলিম আধিক্য মহিলা পরিষদ, ধর্মান্তরিত মুসলিম খৃষ্টান মহিলারা, মহামান্য আদালত ও সরকার একেবারেই নিরব কেন এর জবাব নেই।


উপসংহারে বলি উপরোক্ত বিষয় সমাধান করুন আমরাও আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করব।

Post a Comment

0 Comments