দিল্লি। দিল্লি মানেই ভারতের রাজধানী। দিল্লি মানেই কুতুব মিনার, লালকেল্লা। দিল্লি মানেই পার্লামেন্ট হাউস, ইন্ডিয়া গেট, রাষ্ট্রপতি ভবন। শুধু কি তাই? দিল্লির ইতিহাস বলতে ইতিহাস বইয়ের পাতায় কেবল মামলুক বংশ, তুঘলক বংশ, মোগল, ইংরেজ এসবের গল্প। অংকের হিসাবে এসব ইতিকথার যাত্রা শুরু মাত্র ৯০০ বছর আগে। কিন্তু দিল্লি যে কতটা প্রাচীন তার সাক্ষ্য দেন দিল্লির দুই প্রাচীন অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তাঁরা হলেন যোগমায়া দেবী এবং কালকাজী। কালকাজী যে আসলে দেবী কালিকা তথা বাঙালির মা কালী তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। দুই মন্দিরই প্রায় তিনহাজার বছরের পুরনো। বর্তমানে একমাত্র বাঙালিই মাতৃকা উপাসক জাতি। অথচ দিল্লির প্রাচীন দুটি মন্দিরই মাতৃকার মন্দির। যদিও খ্রীষ্ট পরবর্তী যুগে দিল্লির রাজনীতিতে, ধর্মে, সংস্কৃতিতে ঘটেছে নানা উত্থান পতন। রাম, হনুমান, শিব, বিষ্ণু ঢুকেছে দিল্লির মানুষের ধর্মচেতনায়। কিন্তু কালকাজি, যোগমায়া দেবী আজও আছেন স্বমহিমায়। তবে নতুন করে আর দেবী মন্দির গড়ে ওঠেনি দিল্লির বুকে বহুদিন।
বিশ শতক বাঙালির জন্য নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারতের ক্ষমতা ইংরেজ সরকারের হাতে থাকলেও দেশকে পরিচালনা করছে বাঙালি। সারা দেশে নানা উঁচু পদে বসে আছে বাঙালি। বাঙালি যেখানেই গেছেন সেখানেই নির্মাণ করেছেন তাঁর পরিচয়ের ক্ষেত্র তথা কালী ক্ষেত্র। এখনো পর্যন্ত দিল্লির বাঙালিরা দিল্লির বুকে গড়ে তুলেছেন বারোটা কালীমন্দির। এছাড়া দিল্লি লাগোয়া নয়ডা, গ্রেটার নয়ডায়, গুরগাঁও, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদেও আছে কালীক্ষেত্র। আজ আসুন দিল্লির মন্দিরগুলি সম্পর্কে জেনে নিই।
নিউদিল্লি কালীবাড়ি
দিল্লির মন্দির মার্গে ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরটি। ১৯৩৫ সালে গঠিত হয় মন্দির কমিটি। এই মন্দির কমিটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন সুভাষচন্দ্র বোস অর্থাৎ আমাদের নেতাজি। মন্দিরটি উদ্বোধন করেছিলেন মন্মথনাথ মুখার্জী। দিল্লির অন্যতম পুরনো লাইব্রেরি আছে এই মন্দির চত্বরে। বাঙালি অতিথিদের জন্য গেস্টহাউসও আছে। নিউদিল্লি কালীবাড়ির দুর্গাপূজা ও জগদ্ধাত্রী পূজা বিখ্যাত।
সফদরজং মাতৃমন্দির
১৯৬৬ সালে দিল্লির সফদরজং এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মাতৃমন্দির। এই মন্দির কমিটির সদস্যরা নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত। দিল্লির বাঙালিকে তার শেকড়কে চিনিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। বাংলা ভাষা শিক্ষার ক্লাসের পাশাপাশি গান, নাচ, নাটক ইত্যাদি শিক্ষার ব্যবস্থাও এখানে আছে।
দক্ষিণ দিল্লি কালীবাড়ি
দিল্লির দক্ষিণে ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্টের কাছে অবস্থিত এই কালীবাড়িটি। প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়ে। ১৯৮৩ সালের ২০শে জুলাই মন্দিরটির ভিতপূজা হলেও ১৯৬৮ সাল থেকেই অস্থায়ী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে মাতৃমূর্তির পূজা শুরু হয়ে যায়।
সি আর পার্ক কালীবাড়ি
দিল্লির বুকে একটুকরো কোলকাতা হলো সি আর পার্ক। এখানের দুর্গাপূজা দিল্লির মধ্যে বিখ্যাত। আর বিখ্যাত এখানের কালীবাড়ি। ১৯৭৩ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বর্তমানের অসম্ভব সুন্দর টেরাকোটা কাজের মন্দিরটি ১৯৮৪ সালে নির্মিত হয়। এই মন্দির কমিটি সারাবছর জুড়েই বাঙালির নানা উৎসবের আয়োজন করে থাকেন।
পশ্চিম বিহার কালীবাড়ি
দিল্লির পশ্চিম বিহারের বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন ১৯৮৩ সালে প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা করেন। তখন থেকে শুরু হয় একটা কালীবাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা। অবশেষে ২০০২ সালের ২৩শে মার্চ কালীবাড়ির দ্বার উন্মোচিত হয়।
পূর্ব দিল্লি কালীবাড়ি
দিল্লির বিখ্যাত সঞ্জয় লেকের পাশে অবস্থিত এই মন্দিরটি। এটিকে অনেকে সতী মাতার মন্দির-ও বলে থাকেন।
ময়ূর বিহার কালীবাড়ি
১৯৮০ সালে দিল্লি উন্নয়ন অথোরিটি ( DDA) নগর পরিকল্পনার লক্ষ্যে পূর্ব দিল্লির ময়ূর বিহারে পাঁচটি স্থান নির্বাচন করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন। পাঁচটি স্থানকে পাঁচটি পকেট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৮১ সালে বেশকিছু বাঙালি পরিবারকে পকেট/পেজ ওয়ানে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। সেই বাঙালি পরিবার নিজের সাংস্কৃতিক পরিচিতিকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে এই ময়ূরবিহার কালীবাড়িটি নির্মাণ করেন। এখানকার কালীমূর্তিটি প্রাচীনযুগের কালীমূর্তির মতো।
শালিমার বাগ কালীবাড়ি
দিল্লির উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত এই কালীমন্দিরটি। ২০০৪ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাঙালিদের পাশাপাশি অবাঙালিদের কাছেও মন্দিরটি খুবই জনপ্রিয়।
পূর্বাশা কালীবাড়ি
পূর্ব দিল্লির সবচেয়ে বড় মন্দির হলো এই পূর্বাশা কালীমন্দির। মন্দিরটি অবস্থিত প্রতাপগঞ্জে। ১৯৯৩ সালে মন্দিরের সূচনা হয়।
দ্বারকা কালীবাড়ি
২০০৩ সালে সোসাইটি রেজিষ্ট্রেশনের মধ্যে দিয়ে দ্বারকার কালীবাড়ির যাত্রা শুরু। ধর্মশালা, লাইব্রেরীর পাশাপাশি এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রমও আছে।
রোহিনী কালীবাড়ি
রোহিনী পশ্চিম মেট্রো স্টেশনের খুব কাছে অবস্থিত এই মন্দিরটি। এটিও স্থানীয় বাঙালিদের দ্বারা পরিচালিত।
সরোজিনী নগর কালীবাড়ি
সরোজিনী নগর কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত। তবে এখানের কালীবাড়িটিও বেশ জনপ্রিয়। সমস্ত বাঙালি উৎসব অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয় মহাসমারোহে।
আজ রইলো দিল্লির এক ডজন কালীক্ষেত্রর কথা। দিল্লির বুকে আরও কালীবাড়ি আছে। যেগুলির সম্পর্কে পরে আলোচনা করবো।
দিল্লির বাঙালি ভালো করেই বুঝে গেছে বাঙালি যদি তার নিজস্বতা নিয়ে বাঁচতে চায় তবে সবার প্রথম তার পরিচয় হতে হবে সে কালী মায়ের সন্তান। শেকড় বিচ্ছিন্ন মানুষই বেশি করে বোঝে শেকড়ের গুরুত্ব। বাঙালির শেকড়, বাঙালির পরিচয়ে আছেন মা কালী। দিল্লির কালীমন্দিরগুলি কালীবাড়ি হিসাবে পরিচিত তারও কারণ সেই বাঙালিয়ানা। মন্দির শব্দ দিয়ে কেবল বাঙালির অধিকার দিল্লির অবাঙালিদের বোঝানো সম্ভব নয় সেকারণেই দিল্লির সবই কালীবাড়ি।
জয় মা....
© কালীক্ষেত্র আন্দোলন
ফেসবুকে কালীক্ষেত্র আন্দোলন। লিংক:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804...
যোগ দিন জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপ
https://www.facebook.com/groups/1208680915856872
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, লিংক
https://reclaimkalikhetro.data.blog
ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro
টুইটার https://twitter.com/kaliksetra
0 মন্তব্যসমূহ