হিন্দু মহাজোটের দাবি, এক বছরে ৩১,৫০৫ জন সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার

হিন্দু মহাজোটের দাবি, এক বছরে ৩১,৫০৫ জন সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার

স্টাফ রিপোর্টার, ৩ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন


গত এক বছরে সারা দেশে ৬৮৩টি ঘটনায় ৩১,৫০৫ জন ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়  হিন্দু মহাজোট। এর মধ্যে ১০৮ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪২ জন। প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, জমি দখল, ধর্মান্তর, ডাকাতি ও দেশত্যাগে বাধ্যকরাসহ নানা ঘটনা ঘটে।


গতকাল ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের এসব তথ্য তুলে ধরেন জোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। বলেন, বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক দ্বারা এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে হামলা লুটপাটসহ ৬৮৩টি ঘটনা ঘটে। ৯৫০৭ দশমিক ২২ একর ভূমি জবর দখল হয়েছে। ১০৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ৩৭৮টি পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ২২৬১টি পরিবার। ৭৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে ও ৪৩৪টি পরিবারকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন করে ৩৬ জন হিন্দু মুক্তিযোদ্ধার গায়ে রাজাকার তকমা যুক্ত করেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন হিন্দু রাজাকার ছিলো না। আর কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। এঘটনায় সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও তথাপি দুষ্টচক্র এই রিপোর্ট নিয়ে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করবে। বর্তমানেই অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছে।


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত এক বছরে পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ২৭৭টি, বসত বাড়িতে হামলা হয়েছে ৩৮৭টি, অগ্নিসংযোগ করা হয় ৯২টি বাড়িতে, দেশত্যাগের হুমকি পেয়েছে ৬৪১টি পরিবার, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও ধর্মান্তরের চেষ্টা হয়েছে ১৪৮টি, অপহরণের শিকার হয়েছেণ ৭৬ জন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে ২৪৬টি।


জোটের মহাসচিব আরো বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দুদের উপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। তৎকালীন ক্ষমতাশীন সরকার কোন বিচার করে নাই। বর্তমান আওয়ামী সরকার সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা বিশ্বব্যাপী প্রচার করে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা লাভ করছে। হিন্দুদের উপর নির্যাতনকারী করো বিচার আজও হয়নি। আজ আমরা হতাশার মাঝে অবস্থান করছি। বিচার না হওয়ায় বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নিরবে প্রতিদিনই হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করছে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে এদেশে হিন্দুর সংখ্যা শূন্য হয়ে যাবে।  লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রশাসনেও হিন্দু বিদ্বেষ চরম আকারে। প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করলেও আজ পর্যন্ত কটুক্তির অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। উপরন্তু ফেসবুক হ্যাক করে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে শতাধিক হিন্দু যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার সকল শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ইসলামীকরণ করছে। হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের বাধ্যতমূলক ইসলাম ধর্ম পাঠ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। হিন্দু মহাজোট পাঠ্যপুস্তকে অসাম্প্রদায়িক করার দাবি জানাচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধ কল্পে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিশ্চিত করে জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয় জোটের পক্ষ থেকে।


সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট বি বি গোস্বামী, প্রদীপ চন্দ্র পাল, প্রধান সমন্বয়কারী বিজয় কৃষ্ণ ভট্টচার্য, যুগ্ম মহাসচিব মনিশঙ্কর হালদার, শ্যামল চন্দ্র ঘোষ, প্রবীর হালদার, শুকদেব মন্ডল, নিপুন পাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


https://mzamin.com/article.php?mzamin=206639

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ