জ্ঞানার্জনই শ্রেষ্ঠ ধর্ম - নারায়ণ দেবনাথ

জ্ঞানার্জনই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। জ্ঞানই সনাতন ধর্মকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

জ্ঞানার্জনই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। জ্ঞানই সনাতন ধর্মকে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।

✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️

ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি বসবাস করলেও মুসলিম শাসনে হিন্দুদের মনে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও তিক্ততার সৃষ্টি  হয়েছে তা কোনদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। কারন মুসলিম আক্রমণের উদ্দেশ্যই ছিল মন্দির ধ্বংস ও হিন্দুদের বলপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করে ভারতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতি হিসাবে সনাতন ধর্মকে মুছে দেওয়া। এই অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টির পিছনে ছিল একটি ধর্মগ্রন্থ যার ছত্রেছত্রে রয়েছে জাতি বিদ্বেষ দাসত্ব আর বৈরিতা। ফলে যতদিন পৃথিবীতে এই গ্রন্থের প্রভাব থাকবে ততদিন জাতি হিসাবে এই গ্রন্থের কট্টর অনুসারীরা হবে অবিশ্বাসী। 


অনেকের মনে হতে পারে এক কালের মধ্যযুগে মুসলমানরা হিংস্রতা নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা করেছে বটে। কিন্তু সভ্যতার বিবর্তনে দিন পাল্টেছে তাই তারা সেই সব হিংস্রতা আজ আর করবে না। কিন্তু যতদিন এই গ্রন্থের অমিয় বানী অপরিবর্তিত থাকবে ততদিন সৌভ্রাতৃত্ব পুনর্জাগরনের কোন সম্ভাবনা নেই। মন্দির ধ্বংস ও বিগ্রহ চূর্ন করা ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। বিগ্রহ শুধু ভাঙ্গা নয় তাকে পদদলিত করে চরম লাঞ্চনা দেয়ার মধ্যে রয়েছে এক স্বর্গীয় তৃপ্তি। কারন আল্লাহর একমাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ নিজ হাতে কাবায় স্থাপিত ৩৬০টি মূর্তি ভেঙেছিলেন। এই বিগ্রহ ভাঙার পিছনে একটি মনস্তাত্ত্বিক কারনও ছিল আর তাহল, হে কাফের হিন্দু তোরা কার উপাসনা করিস দেখ তোদের দেবতা কত দুর্বল এবং অসহায় সে নিজেকেও রক্ষা করতে পারেনা। হিন্দু ধর্মে ও মর্মে আঘাত দেয়ার এই যে গৌরবময় ঐতিহ্য মুসলমানরা সৃষ্টি করেছে একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসেও মুসলমানরা তা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে। এক বছর আগে দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশে পাঁচশয়ের অধিক মন্দির প্রতিমা ও বিগ্রহ ভাঙচুর করেছে একটি নির্দিষ্ট গ্রন্থের অনুপ্রেরণায়। সেই জন্য যে তারা অনুতপ্ত এমনটি ভাবার কোন কারন নেই।


এত মন্দির ধ্বংস ধর্মান্তর হত্যা নির্মমতার পরও সনাতন ধর্মকে কিন্তু নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।মন্দির ভাঙা হয়েছে ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় কিন্তু আবার সেই মন্দিরই পুনঃনির্মিত হয়েছে মহাকালের উন্মাদনায়।কারন যুগে যুগে মহারানা প্রতাপ সিং, মহারাজ যশোবন্ত সিং, মহারানা রাজ সিং, যুবরাজ ভীম সিং, রাজা দূর্গাদাস, ছত্রপতি শিবাজি, প্রতাপাধিত্য, রাজারাম, ইন্দোরের মহারানী অহল্যা বাই হোলকররা ছিল বলেই সনাতন ধর্মের অস্তিত্ব সুদীর্ঘ পাঁচ হাজার বছরেরও অধিক সময় ধরে এই ধরনীতে স্বমহিমায় টিকে রয়েছে।


সনাতন কোন অলৌকিক ধর্ম নয়। সনাতন ধর্ম জ্ঞানের ধর্ম।জ্ঞানই সনাতন ধর্মকে পৃথিবীর সুউচ্চমার্গে পৌঁছে দিয়েছে। হিন্দু ধর্মের নির্দিষ্ট কোন প্রবর্তক নেই। হিন্দু ধর্ম অনাদি সনাতন নামে অভিহিত। অনন্ত জ্ঞানরাশি যাহা ঋষিগনের অতীন্দ্রিয় অনুভূতির নিকট যুগ পরম্পরায় বেদরূপে প্রকাশিত হয়েছিল যাহা অবিনাশী। কারন কোন ব্যক্তি বিশেষের ধারনার দ্বারা এই ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়নি।এই জন্যই হিন্দু ধর্ম শাশ্বত ও সনাতন।হিন্দুদের প্রাচীনতম এই গ্রন্থটির নাম বেদ। বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান।জ্ঞান কথাটির উৎপত্তিই হয়েছে বেদ থেকে। অনুমান করা হয় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চদশ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে বেদ রচিত হয়েছিল। বেদের পান্ডুলিপি তৈরি হয় সৃষ্টির অন্তত এক সহস্রাব্দ পরে। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে বেদ ধর্মগ্রন্থ হিসাবে নয় জ্ঞানের ভান্ডার হিসাবে পরিচিত। বেদেরই পরিপূর্ণ রূপ হল গীতা। আজ থেকে ৫ হাজার ২৪১ বছর আগে অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে কুরুক্ষেত্রের রনাঙ্গনে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন তা ১৮টি অধ্যায়ে ৭০০ শ্লোকের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই জ্ঞানই হল গীতার মর্মার্থ।


একটি বিশেষ গ্রন্থে চন্দ্র-সূর্যকে বলা হয়েছে তার পদানত। তার ইচ্ছায় নাকি সূর্য উদিত হয় এবং তার ইচ্ছায় দিনশেষে তার আরসের নীচে আশ্রয় নেয়। কিন্তু বেদ সূর্য গ্রহণ চন্দ্র গ্রহণ, অনু পরমানুর গঠন সহ অত্যাশ্চর্য বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর সঠিক বর্ননা দেয়া হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা ইদানিং এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের পরবর্তী তথ্যের জন্য বেদ এবং বেদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন।


ভারতবর্ষ ছিল মানব সভ্যতার তীর্থভূমি। ভূমন্ডলে যদি এমন কোন দেশ থাকে যে দেশটি প্রকৃতির অকৃপণ দানে শক্তি-সম্পদ ও সৌন্দর্যে নন্দনকাননতুল্য তবে তা ছিল ভারতবর্ষ। এই অবনীতলে যদি কোন দেশে মানব-আত্মার চরম বিকাশ হয়ে থাকে তবে তা ছিল ভারতবর্ষ। মহান এই সভ্যতার ভিত্তি ছিল তপোবন। নগর সভ্যতার বিকাশের পর মন্দির ছিল সেই সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু।হিন্দুস্থানের মন্দির একদিকে যেমন ছিল সমাজের সকলের মিলন ক্ষেত্র। তেমনি অন্যদিকে ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পীঠস্থান। দেশভাগের পর থেকে সেই ভারতের অস্তিত্ব ছিল বিলুপ্তের পথে। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী ভারতের প্রাচীনতম আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে নুতনভাবে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন।কেদারনাথ মন্দিরের পুনরুজ্জীবনই হোক বা অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনই হোক, সোমনাথ মন্দিরের কমপ্লেক্স পুনঃস্থাপন হোক, অথবা চারধাম মন্দিরকে সংযুক্ত করার প্রকল্প হোক, কিংবা কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডরের উদ্বোধন থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদী শুধু একজন বড় নেতা হিসাবে নয় তিনি আবির্ভূত হয়েছেন সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক দূত হিসাবে যা ভারতের অতীত পরম্পরা উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমার্থক।


সারা ভারতে এখন শুধু একটিই নাম নরেন্দ্র মোদী যিনি দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। একই ভাবে শত্রুদের কাপুনি ধরাতেও সক্ষম হয়েছেন। একদিন এই ভারত আবার তার অতীত ঐতিহ্য  ফিরে পাবে। যারজন্য এই লোকটি গত ৮বছর যাবৎ দৈনিক ১৮ঘন্টা করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।


সূত্র: লিংক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ