সময়- ঋগ্বেদ
মোটামুটি 10000 বছর মতান্তরে 23000 বছর
অথবা তারও আগের।
সময়টা আসলে কালের গর্ভে চলে গিয়েছে। এতটাই প্রাচীন যে কোন সঠিক ধারণা করাও মুস্কিল।
ঋগ্বেদ:
ঋগ্বেদের সময় বহু আগের সময়। এমনকি মহাভারত রামায়ন যুগের বহু আগের সময়ে রচিত হয়েছে ঋগ্বেদ।
ঋগ্বেদ, সামবেদ, যযুরবেদ, অথর্ববেদ। এই চারটি হল মূল বেদ। আগে ছিল 'শ্রুত' অর্থাৎ শুনে মনে রাখা হত। গুরু শিষ্য পরম্পরায় চলে আসতো বেদের শিক্ষা। অনেক পরে হয় লিখিত। বলা হয় বেদের প্রথম লেখক হচ্ছেন মহাভারত রচিয়তা "বেদব্যাস"।
এহেন পবিত্র গ্রন্থ ঋগ্বেদের1.116.15 ন সুক্ততে বলা রয়েছে এক মহার্ঘ লাইন-
carítraṃ hí vér ivā́chedi parṇám ājā́ khelásya páritakmyāyām
sadyó jáňghām ā́yasīṃ višpálāyai dháne hité sártave práty adhattam
Ye, Lords of many treasures, gave the poet his perfect vision as he mourned his trouble.
When in the time of night, in Khela's battle, a leg was severed vishpala like a wild bird's pinion
মোটামুটি যেটুকু জানা যায়:
বিষপালা নামে এক বীরাঙ্গনা যিনি ছিলেন প্রখর যুদ্ধ কুশলী। যুদ্ধ করেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বামী খেলা মহারাজের সাথে।
যুদ্ধে তার পা কাটা যায়।
কিন্তু পরেরদিন তিনি যুদ্ধে নামেন।
দেখে অবাক হয় শত্রুর দল। আরও অবাক হয় যখন দেখে সেই কাটা পায়ের জায়গায় লাগানো রয়েছে একটি পা। সেই পা এত দ্রুত চলছিল যেন জংলী শিকারি পাখির পায়ের মত বিচরণ করছিল।
পটভূমিকা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
নর্মদা নদীর তীরে ঘন জঙ্গল। বসতি রয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর। জঙ্গল অধিবাসী হলেও তাদের জীবন খুব একটা শিকার নির্ভর নয়। জঙ্গল ভর্তি বিভিন্ন ফলমূল শাক সব্জি খেয়েই শেষ করা যায়না।
কিন্তু শিকার তারা ভুলে না। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন শিকার উৎসব হয় তখন সম্মিলিত ভাবে বেরোয় শিকারে। এছাড়াও যখন নরমাংসভোজী হয়ে যায় বাঘ তখন শিকার করা হয়। সাধারণত বুড়ো হলে অথবা আহত হলে বাঘ, তখন শিকার করে মানুষ।
তবে এগুলো শিকার করতে কষ্ট বিশেষ হয়না। ভালুক চিতাবাঘ এসব শিকার করতেই কষ্ট বেশি।
গাছের উপর রয়েছে তাদের জনগোষ্ঠীর বসতি। গাছের ডাল কেটে পাতা দিয়ে তাদের ঘর তৈরি। তবে খুব সুরক্ষিত। সাপ মাঝে মধ্যে একটু ঝামেলা করে ঠিকই তবে সেরকম কিছু সুবিধা করতে পারে না। পোষা পেঁচার দল ঠিক সতর্ক করে দেয়।
জনগোষ্ঠীর কাজ:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
তাদের আসল কাজ হচ্ছে নর্মদা নদী পরিক্রমায় যারা আসেন তাদের সুরক্ষা প্রদান করা। কারুর কোন সমস্যা হলে সাহায্য করা। তবে পরিক্রমাকারীদের মধ্যে অনেক ছিনতাইবাজ চোর খুনী ঢুকে থাকে। তাদের শনাক্ত করে নজরে রাখা। কোন উপদ্রব করলেই বেঁধে রেখে রাজার দরবারে খবর দেওয়া। এছাড়াও কোন শত্রু আক্রমন করলে তাদেরকে নজরে রাখা। শত্রুর গোপন গতিবিধির খবর রাজ দরবারে পৌঁছে দেওয়া...
অতি:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆●◆◆●
মোটামুটি সহজ সরল জীবন তাদের। তেমনি সহজ সরল মানুষজন। এরম এক হাসিখুশি পরিবারের ছোট্ট মেয়ে অতি। সবে তার বয়স দুই বছর। বাবা তাকে বানিয়ে দিয়েছে পাতার বাঁশি আর হাওয়াই চরকি। এই দুটো নিয়ে তার খেলা চলছে হল বেশ কয়েকদিন। বাবা মায়ের নয়নের মনি সে।
সকাল হলেই বাবা মা বেরিয়ে পড়ে খাবারের খোঁজে। তখন অতিকে বেঁধে নেয় পিঠে কাপড় দিয়ে। জঙ্গল খুঁজে নিয়ে আসে মধু ফল সমেত বিভিন্ন খাবার। জল নিয়ে আসা হয় মাটির পাত্রে। নিকটবর্তী শহর থেকে আনা হয় বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র কাপড়। তবে তারা জঙ্গলের পশুদের চামড়া আর গাছের ছালেই বেশি সহজ।
ওম দেবতা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কাপড় তারা তখনই পরে যখন যায় নদীর ভেতরে ওম দ্বীপে। সেখানে রয়েছে রাজা মান্ধাতার প্রাসাদ আর মন্দির। মন্দিরও ওম দেবতার। বিশাল মন্দির। যায় যখন সবাই দেখে অবাক হয়। কি বিশাল সব থাম।
তার উপর ছাদ। যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
সেই থামের ছাদের কারুকাজও দেখার মত। যেমন বিখ্যাত রাজা মান্ধাতা তেমনি তার মন্দির। রাজার প্রাসাদ তার অদূরেই।
মন্দিরে প্রণাম করে ওম দেবতাকে জল বেলপাতা ফুল চড়িয়ে তারা যায় মান্ধাতা রাজার প্রাসাদে। রাজা সকালে সাধারণত থাকেন সভায়। তখন সবাই দেখা করতে পারে। সবাই যায় যখন অতিও যায় তার বাবা মার কাঁধে চেপে। ফল মূল মধু ভেট দেয় তারা রাজাকে। রাজা পরিবর্তে দেন খাবার বানানোর সরঞ্জাম। শস্য কাপড় তীর বর্শা তরোয়াল যখন যা লাগে।
মান্ধাতা:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
আজ অতি গেছে প্রথমবার। ছোট্ট অতিকে ভালো লেগে যায় রাজার। রাজা ডেকে পাঠান তখন অতি যায় বাবার কোলে চেপে। ছোট্ট অতি এত আলো এত ঝকঝকে ঘর দেখেনি এত বড় ঘর দেখেনি কখনও। সে অবাক চোখে দেখে যাচ্ছে সব। রাজা যখন কোলে নিলেন তাকে অবাক চোখে দেখল অতি। এরম মিষ্টি বাচ্ছা আর তার এরম স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার দেখে খুব আনন্দ পেলেন রাজা। গলার হার খুলে পরিয়ে দিলেন তাকে। দিলেন তাকে দামী কাপড়। রাজার নির্দেশে অতিকে সাজানো হল। কি সুন্দর লাগছে তাকে। অতির ভয় কেটে গেছে। সে ছুটে বেড়াচ্ছে চারপাশ।
খোলা জায়গা পেয়ে তার খুশি দেখে কে...
বিদায় নেওয়ার সময় হল।
রাজা অতির বাবা মাকে বললেন এই সন্তানকে যেন প্ৰতিবারে নিয়ে আসা হয় তার কাছে আসার সময়। প্রতিবার আসার সময় যেন এভাবেই সে সেজে থাকে।
রাজা মান্ধাতার ইচ্ছা এই বাচ্চাটিকে আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার। যাতে এর মাধ্যমে জঙ্গলের পরবর্তি প্রজন্ম আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে।
এই নিয়ে অতির আসা হল বেশ কয়েকবার। প্রতিবার আসে সে রাজার কাপড়ে সেজেগুজে হার গলায় পরে। এখন সে বুঝতে চিনতে শিখেছে তবে বলতে সেরমভাবে কিছু পারেনা...
দুর্যোগ:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এইরকম একদিন অতি এসেছে রাজার সাথে দেখা করতে সাথে অতির বাবা মা সমেত আরো জনা কুড়ি লোকজন। দেখা করে ফিরছে তারা নৌকায়। এমন সময় শুরু হল ঝড়। আকাশ কালো করে মেঘ উঠল। শুরু হল বৃষ্টি। বাড়ছে হওয়ার বেগ।
নৌকো দুলতে শুরু করল।
শুরু হল নৌকোর টালমাটাল অবস্থা। বাড়ছে বাতাসের বেগ। প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা নৌকো সামলানোর... কিন্তু বিশেষ একটা সুবিধা হয়ে উঠছে না।
পাল্লা দিয়ে জলের তোড় বাড়ছে। বেশ কয়েকবার নৌকো গোলগোল পাক খেয়ে গেল। উল্টানোর উপক্রম হল কিন্তু সামলে নিল অভিজ্ঞ হাত। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।
একে একে সব নৌকো উল্টাতে লাগলো।
অতির বাবা মা চেপে ধরে রয়েছেন অতিকে নিজের বুকে। ছোট্ট অতিও বুঝতে পারছে অঘটন কিছু একটা ঘটেছে। সে কান্না শুরু করেছে। একটা সময় অতির নৌকো গেল উল্টে। উল্টানো নৌকো থেকে সবাই ছিটকে ভেসে গেল জলের সাথে। অতিকে ধরে রেখেছে তখনও তার বাবা। মা কোথায় চলে গেল ভেসে, কে জানে...
জলের ঢেউ আর বাতাসের ঝাপটা একসাথে চলতে লাগলো যেন তারা সবাই মিলে অতিকে টেনে ছাড়িয়ে নিতে চায়।
কিন্তু নয়নের মনিকে হাতছাড়া করবেন না বাবা। হেরে যাবেন না তিনি কোনভাবেই
মজবুত শরীর তার। এত সহজে হাল ছাড়বেন না। কিন্তু প্রকৃতি যেন আজ বাধ সেজেছে। ছিনিয়ে নেবেই নেবে অতিকে তার বাবার হাত থেকে। বেশ কিছুক্ষণ চলল এই অবস্থা। ক্রমশ ক্লান্ত হচ্ছেন বাবা। জল ঢুকে যাচ্ছে মুখে নাকে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চারদিক। বেশ কয়েকবার ডুবে গেলেন তিনি। তবে তিনি নিজে ডুবলেও হাত উপরে করে বাচ্ছাটিকে তুলে ধরেছেন ঠিক জলের উপরে। এরম অবস্থায় চলছে বেশ কিছু মুহূর্ত। অবশেষে একটা সময়ে জলের দুরন্ত মোচড় ছিনিয়ে নিল ছোট অতিকে। ক্লান্ত অবসন্ন অতির বাবার হাত তখন ঢিলে হয়ে গেছে। জ্ঞান হারালেন তিনি।
অতির অন্যজীবন:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
ভোর হচ্ছে। আলো ফুটছে। পাখীর দল জাগছে। শান্ত পরিবেশ। গতরাতের দুর্যোগের পরে এখন আকাশে মেঘ। বৃষ্টি হচ্ছে এখনও হালকা ধরনের।
জাগছে আশ্রম। সবুজ বাগানে ঘেরা মনোরম আশ্রম। আসছেন আশ্রমের থেকে বেরিয়ে এক ঋষি সকালের স্নান করতে। স্নান সেরে তিনি বসবেন পুজোয়। নদীর ধারে বসে মুখ ধুচ্ছেন এমন সময় শুনতে পেলেন শিশুর কান্না। খুব ক্ষীণ সেই কান্না। চমকে তাকালেন তিনি। দেখলেন অদূরে একটা শিশু। নদীর ধারে পড়ে আছে। ছুটে গেলেন তিনি। জল কাদায় মাখা হয়ে পড়ে ছিল শিশুটি। তাই প্রথমে বুঝতে পারেন নি ঋষি। সাবধানে তুলে নিয়ে কাদা পরিষ্কার করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলেন শিশুটিকে। বিশেষ করে চোখ কান নাক মুখের অংশটুকু ভালো করে ধুয়ে নিলেন।
পরিষ্কার করার পর দেখলেন তিনি এ এক অপূর্ব শিশু। পরনে রাজার কাপড়। গলায় রাজার মালা। তবে দেখে তো মনে হচ্ছে না রাজার ঘরের সন্তান বলে। ভালো করে দেখে বুঝলেন না রাজার সন্তান নয়, এই শিশু জঙ্গলের কন্যা।
তবে রাজার কাপড় কেন শরীরে। প্রশ্নটি ভাবাচ্ছে...
না এত ভাবার সময় নেই।
বড্ড দুর্বল এই শিশুটি। সারা শরীর জলে ভিজে সপসপে হয়ে রয়েছে। মাথার চুল কাপড় সব ভিজে। এখনও ভালো রকমের কাদা রয়েছে তার শরীরে। ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার। কান্নার সাথে সাথে ঘড়ঘড় শব্দে জানান দিচ্ছে শিশুটির শরীর ভালো নয়। আপাতত শিশুটির যত্ন দরকার। সারা শরীর ভিজে রয়েছে। সারারাত ভিজেছে। গত রাতের দুর্যোগেই কি ভেসে গেছে শিশুটি...
কোলে তুলে নিয়ে এলেন আশ্রমে।
ঋষিপত্নীর কোলে তুলে দিলেন শিশুটিকে। দ্রুত উনুন ধরাতে ধরাতে বললেন ঋষি কিভাবে পেলেন এই শিশুকে। ঋষিপত্নী দ্রুত ব্যবস্থা নিলেন। বাচ্চাটিকে ভালো করে মুছিয়ে শুকনো করলেন ঘষে ঘষে। হাতে পায়ে তেল মালিশ করে দিলেন।
অভ্যস্ত হাতে উনুন জ্বালিয়ে জল গরম করলেন।
ঋষি এনে দিলেন কয়েকটি ঔষধি পাতা।
গরম জলে ফেলে সেই পাতার নির্যাস খাওয়ানো হল শিশুটিকে। তারপর ভালো করে ওই গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে দিলেন। ভালো করে মুছিয়ে গরম তেল দিয়ে সারাটা শরীর ভালো করে মালিশ করে দিলেন। দ্রুত সেরে উঠল শিশুটি। অবসন্ন ভাবটা কেটে গেল। ঋষিপত্নী দেখছেন আর ভাবছেন জঙ্গলের কন্যা বলেই এত শক্তিশালী। কয়েক প্রহরের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থের দিকে শিশুটি। কি মজবুত এর শরীর। যেমন ভেতরে তেমন বাইরে। মোটামুটি সারাটা দিন আজ তাদের কেটে গেল এই শিশুটির পরিচর্যায়।
পরেরদিন থেকেই সুস্থ শিশু খোঁজে তার পরিচিত মুখগুলো। গলার আওয়াজ শুনতে চায় সেই পরিচিত যা সে জন্মের সময় থেকে শুনে এসেছে। বুঝতে পারছেন ঋষিপত্নী। কিন্তু কোথায় তারা...
অতির জনগোষ্ঠীর বিলোপ:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
খবর এসেছে ভয়ানক দুর্যোগে ভেসে গেছে জঙ্গলের বেশ কিছু জনগোষ্ঠী। তাদের ঘরদোর সমেত কিছুই নেই। সব এখন মা নর্মদা তার কোলে নিয়ে নিয়েছেন।
নর্মদা মায়ের কোলে ফিরে গেছে পুরো জনগোষ্ঠী। নর্মদা আসলে নদী নন। তিনি নদীর রূপে স্বয়ম শিবকন্যা। তার কোলে আশ্রয় মানে শিবলোকে আশ্রয়।
প্রণাম করলেন ঋষিপত্নী। বললেন- মা নর্মদা, সবাইকে ভালো রেখো। তুমি যা চাও ভালোর জন্যই চাও। তাই হয়ত এই শিশুটির পরিবার সমেত পুরো জনগোষ্ঠীকে টেনে নিলে নিজের কাছে।
ছেড়ে দিলে একটি শিশুকন্যাকে।
কি ভাগ্য নিয়ে এসেছে এই কন্যাটি...
কয়েকদিনের মধ্যে এল খবর রাজার লোকজন গিয়ে খোঁজ নিয়েছে নর্মদার ওইধারের জনগোষ্ঠীর। না, কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। কয়েক যোজন জুড়ে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভেসে গেছে। গাছপালা বেশিরভাগ অর্ধেক জলে। কোথাও খোঁজ নেই কারুর। যেন কোনদিন ছিলই না...
শৈশব:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
এদিকে বাচ্চাটি অভ্যস্ত হচ্ছে নতুন আওয়াজে। স্নেহের কন্ঠস্বর বুঝতে কে না পারে। যত্ন আত্তি করা এই নতুন মাকে দ্রুত আপন করে নিচ্ছে শিশুটি। দুজনেই একে অন্যের সাথে এক নতুন বন্ধনে বন্ধিত হচ্ছে...
কেটে গেছে কয়েকটি বছর। শিশু বড় হচ্ছে। তার হাসি খেলা দৌড়ে ভরে থাকে সারা প্রাঙ্গণ। মাঝে মধ্যে সে ছুটে চলে যায় দূরে। পাঠশালায়। সেখানে ঋষি সবাইকে পড়ান। সেখানে যায় শিশুটি। সবার সাথে বসে পড়ে থেবরে। সবাই লিখলে সেও লেখে। তার সামনেও স্লেট দিয়েছেন ঋষি। খড়ি নিয়ে সবাই লেখে, সে কাটে আঁকিবুকি। তারপর সেই খড়ি নিয়ে মুখে শরীরে মেখে সে সাজে একটি আস্ত ভুত। সবাই হাসে তার অবস্থা দেখে। শিশুটিও হাসে।
পড়তে আসা সমস্ত শিশুদের মধ্যে রয়েছে ছেলে মেয়ে সবাই। এসেছে আজ এক নতুন শিক্ষার্থী। তার নাম অতি। এমন সময় ঋষি ডাক দিলেন অতি নামের সেই শিক্ষার্থীকে।
'অতি' শব্দটা শুনে থমকে গেল শিশুটি।
খেলা বন্ধ করে সে তাকাতে শুরু করল এদিক ওদিক। হতভম্ব হয়ে গেল যেন সে।
লক্ষ্য করেছেন ঋষি। আবার ডাকলেন- অতি। সাড়া দিল শিক্ষার্থী। এবারে শিশুটি তাকালেন ঋষির দিকে। ঋষি তার দিকে তাকিয়ে বললেন 'অতি'। বাচ্চাটি বলল আধো স্বরে 'অতি'।
সেদিন আর ঋষি কোন পাঠ আর নিলেন না। ছুটি দিলেন সবাইকে। ফিরে এলেন বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে। ঋষিপত্নীকে বললেন সব খুলে। এরপর থেকে বাচ্চাটিকে তারা ডাকতে শুরু করলেন অতি নামে। অতি নামে ডাকলে বাচ্চাটি খুব দ্রুত সাড়া দেয়। তারা বুঝলেন বাচ্চাটির আসল নাম এটাই। যে নামে তার বাবা মা ডাকত...
পাঁচ বছর বয়স হলে তার হাতেখড়ি হল অতঃপর ঋষি তাকে তার পাঠশালায় পাঠ দিতে শুরু করলেন। মন দিয়ে শেখে সে। খুব বুদ্ধিমতী। দ্রুত শিখতে থাকল সব কিছু। শাস্ত্র খেলাধুলা যুদ্ধ অস্ত্র সস্ত্র সব শিখতে থাকল সে। তবে দিন যত যায় তত সে শেখে আর আগ্রহ বাড়তে থাকে যুদ্ধবিদ্যার দিকে।
অতির শিক্ষা:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
এরপরে ঋষি তাকে নিয়ে গেলেন মহাবিদ্যালয়। মহাবিদ্যালয় অর্থাৎ অনেক বড় বড় আশ্রমের সমাবেশ। এক একটি আশ্রমে সেখান হয় এক একটি বিদ্যা।
অতি খুব সহজেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় হল উত্তীর্ণ। এরপরে তার পাঠ চলতে লাগলো বিভিন্ন বিষয়ে। সাহিত্য, ইতিহাস, রসায়ন, জ্যোতিষ, সমাজবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, যুদ্ধ, শরীরবিদ্যা, কলা, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ে শেখানো হতে থাকে।
তবে অতির সহজ ব্যুৎপত্তি দেখা যেতে থাকলো সমরশিক্ষা তথা যুদ্ধবিদ্যার দিকে।
তখন তাকে যুদ্ধবিদ্যা শেখানোর জন্য বিশেষভাবে মনোনীত করা হল।
শেখে অনেকে একসাথে। ছেলে মেয়ে একসাথেই। কিছুদিন হল একটি ছেলে খুব মন দিয়ে দেখে তাকে। বুঝতে পারে অতি। সে হল খেলা। রাজার সন্তান সে।
অতির নিজেরও বেশ ভালো লাগে। তবে মুখে কিছু বলেনা। সময় যত এগোয় খেলা আর অতি দুজনের একে অন্যর কাছাকাছি আসতে থাকে। একসাথে তারা অনুশীলন করে। তবে অনুশীলন ক্ষেত্রে অতি কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা। খেলাকেও না। মাঝে মধ্যেই খেলা হেরে যায়। এখানে অতির সমকক্ষ কেউ নেই।
শুরু হয় এবারে আসল পরীক্ষা। এতদিন চলছিল কাঠের তরোয়াল নিয়ে অনুশীলন।
এবারে শুরু হল আসল তরোয়াল নিয়ে। আসল বর্শা আসল তীর। এগুলো খুব ভয়ানক। একটু এদিক ওদিক হলেই আশু জখমের সম্ভাবনা। যতটা নিজের জন্য ভয়ানক, ততটাই সামনের পক্ষের জন্যেও।
তবে সবকিছুই অতি পেরিয়ে আসছে কৌশলী হাতে।
এবারে শুরু হল আসল অস্ত্র নিয়ে সম্যক জ্ঞান। অস্ত্রের পরিচিতি এবং বানানো প্রক্রিয়া। ধাতু গলানো প্রক্রিয়া এবং তার থেকে বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণ ঘটানো।
সবশেষে তার থেকে অস্ত্র বানানো...
তামা রুপ সোনা ব্রোঞ্জ ইত্যাদি ধাতুর ব্যবহার। দস্তা আলুমিনিয়াম ইত্যাদি ধাতুর প্রলেপ ব্যবহার করে অস্ত্র সংরক্ষন। অস্ত্রের ধার বাড়ানো।
বর্শা আর তরোয়াল এই দুইটি বেছে নিল অতি। তার পছন্দের অস্ত্র হিসেবে। ঘোড়া চড়া শিখেছে সে। এবারে শুরু হল ঘোড়ায় চড়ে তরোয়াল যুদ্ধের শিক্ষা। হাতির পিঠে চেপে বর্শা যুদ্ধের শিক্ষা। রথে চেপে যুদ্ধ করা।
ইদানিং তারা শিখছে বিভিন্ন বিষের প্রয়োগ সম্বন্ধে। কোন বিষ কিরকম ক্ষতি করে।
কি কি লক্ষণ তার। তার চিকিৎসা কি
ইত্যাদি সমস্ত খুঁটিনাটি...
বিষপলা:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
অনুশীলন শেষে অতি তার প্রিয় বর্শাটা নিয়ে বসে বসে ভাবে... কিভাবে এই বর্শাটাকে বিষবর্শা বানানো যায়। যার দিকে ছোড়া হবে লাগলে পরে মৃত্যু যেন হয় অনিবার্য। অবশেষে অনেক ভাবনা চিন্তা করে সে বর্শার মুখ বিশেষভাবে পরিবর্তন করতে সমর্থ হল। বানাল এক বিশেষ বর্শা, যার মধ্যে ভরা থাকবে বিষ।
শরীরে গাঁথা হলে পরে তেমন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখনই বর্শা বের করা হবে টেনে, তখনই সেই বিষ মিশতে থাকবে শরীরে। এবং বর্শা হচ্ছে ভারী জিনিস, চিকিৎসা করতে গেলে টেনে বের করতেই হবে। বের করলেই মৃত্যু চোখের পলকে...
তার এই অভূতপূর্ব আবিস্কার সেই সময়ের যুদ্ধবিদ্যার পরিস্থিতি আমূল বদলে দিয়েছিল অদ্ভুতভাবে। সাড়া ফেলে দিল সারা মহাবিদ্যালয়ে। আশ্রমের ঋষিরা নাম দিলেন তাকে বিষপলা। অর্থাৎ
'বিষ পালন করে যে'
রানী বিষপলা তথা যোদ্ধা বিষপলা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
মোটামুটি শিক্ষা শেষ।
এবারে শিক্ষার্থীদের দল যে যার মত করে পরবর্তী জীবনের পেশা বেছে নিচ্ছে। কেউ যাচ্ছে শিক্ষক হিসেবে। কেউ চাষি, কেউ কুম্ভকার, কেউ তাঁতী, কেউ কামার, কেউ তৈরি করছে শকট। অর্থাৎ বিভিন্ন গাড়ী রথ ইত্যাদি। যুদ্ধ সরঞ্জাম বানাচ্ছে কেউ।
অতি বেছে নিল যোদ্ধার জীবন। রাজ্যের মহিলা বাহিনীর নেতৃত্বে সে অচিরেই জায়গা করে নিল। বিভিন্ন ছোটখাটো যুদ্ধে সে নেতৃত্ব দেয় আর খুব সহজ জিৎ তার পক্ষ নেয়। একের পর এক যুদ্ধে জয় তাকে রাজকুমার খেলার আরো কাছাকাছি নিয়ে আসে।
খেলা হলেন রাজা মান্ধাতার ভাইয়ের ছেলে। কিছুদিন পরে রাজা মান্ধাতা খেলাকে এক প্রদেশের রাজা করে পাঠিয়ে দেন সেই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে। রাজা হন খেলা। বিবাহ হয় দুজনের। এখন রানী হলেন বিষপলা।
মাঝেমধ্যেই বিষপলা নিজে বেরোন ঘোড়ার পিঠে করে রাজ্যের ভালোমন্দ দেখতে।
এছাড়াও তিনি রাজকোষ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্ণয় নেওয়ার কাজে রাজাকে সাহায্য করেন।
বিদেশী শক্তির আক্রমণ:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
একদিন খবর আসে বৈদেশিক শত্রু আক্রমনের তোড়জোড় করছে। খেলার রাজ্য সেজে উঠল সামরিক সাজে। রসদ সংগ্রহ করে রাখা হল। ঘোড়া হাতি সৈন্য সবকিছু চাঙ্গা করে রাখা হল। অস্ত্রশস্ত্রে পড়ল নতুন করে ধার।
সীমানায় মোতায়েন করা হল সৈন্য। শিবির ফেলে কাছাকাছি রইলেন রাজা খেলা।
প্রাসাদের দেখভাল করলেন বিষপলা। তবে তার প্রমীলা বাহিনীও প্রস্তুত। নিজের হাতে তৈরি করেছেন তার বাহিনীকে। এখন আগের চেয়ে অনেক বড়, অনেক বেশী শক্তিশালী। প্রয়োজন অনুসারে নামবে তারাও যুদ্ধক্ষেত্রে।
যোদ্ধা বিষপলা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆●◆◆
যুদ্ধ শুরু হল। প্রথমদিনের অতর্কিত আক্রমণে মারা গেল রাজ্যের বহু সেনা। পরেরদিন নামলেন বিষপলা তার বাহিনী সমেত। ঘোড়ায় টানা রথে চেপে শুরু করলেন আক্রমন। ঝড়ের গতির সেই ভয়ানক আক্রমণে খড়কুটোর মত উড়ে যেতে থাকল শত্রুর সেনা। বর্শা তিরের বর্ষণ যেন শুরু হল শত্রুর উপরে। সামনে যারাই এল বাধা দিতে তরোয়ালের আঘাতে হল ভূপতিত।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে হল যুদ্ধবিরতি।
দেখা গেল আজ খেলারাজ্যের বিশেষ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে শত্রুর অবস্থা বেশ ক্ষতির দিকেই...
পরেরদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শুরু হল যুদ্ধ। আজ বিষপলা এলেন হাতির পিঠে চেপে যুদ্ধে। এসেই শুরু করলেন অতর্কিত আক্রমন। নতুন পদ্ধতিতে নতুন কৌশলের এই যুদ্ধে একরকম কোণঠাসা হয়ে গেল শত্রুবাহিনী। তারা রক্ষণাত্মক হয়ে উঠল তবুও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেল না। হাতির পিঠে চেপে বিষপলার বিষবর্শা বৃষ্টির মত নেমে আসতে শুরু করল শত্রু সৈন্যের উপরে। দিনের শেষে শত্রুপক্ষের এক সেনাপতি সহ মারা গেল বহু।
বিপর্য্যস্ত শত্রুবাহিনী বুঝল বিষপলা থাকলে কোন আশা নেই। তাদের পরিকল্পনা হল পরেরদিন তারা দুইভাগে তৈরি হয়ে থাকবে। যেভাবে হোক বিষপলাকে আটকাতেই হবে। যদি হাতির পিঠে চেপে আসেন বিষপলা, তবে একদল ঠেকাবে বিষপলার হাতিকে। আর যদি রথে চেপে আসেন তবে আরেকদল আটকাবে বিষপলার রথকে।
আহত বিষপলা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কিন্তু পরেরদিন বিষপলা এলেন ঘোড়ার পিঠে চেপে হাতে তরোয়াল নিয়ে। প্রমীলাবাহিনীর পুরোটাই আজ ঘোড়ার পিঠে। আজ আবার ঝড়ের মত গতি।
রক্ষণাত্মক আক্রমণ ওদের চূর্ণ হয়ে গেল।
শেষে সবাই মিলে ঠিক করল একযোগে আক্রমন করবে বিষপলাকে। সেই অনুযায়ী শুরু হল আক্রমন। কিন্তু বিষপলাকে ঠেকানো মুশকিল। সেদিনের যুদ্ধ পরিবেশ বদলে গেল সম্পূর্ণ। যেন শুধুই বিষপলা আর শত্রুর দল। সেই অনুযায়ী বদলে নেওয়া হল যুদ্ধক্ষেত্রের সেনা সন্নিবেশ।
চারিদিকে প্রমীলাবাহিনীর ঘেরাটোপ।
মাঝে রয়েছেন কয়েকজনের সাথে বিষপলা। তির, বর্শা, তরোয়াল চালাচ্ছেন তিনি একসাথেই। পরের পর ক্রমান্বয়ে...
সমগ্র শত্রুর দল যখনই আসছে বিষপলাকে আক্রমনের উদ্দেশ্যে, বেশিরভাগ কাটা পড়ছে প্রমীলা বাহিনীর তরোয়ালের ঘায়ে। একে একে কমছে শত্রুবাহিনী। যুদ্ধ প্রায় শেষের মুখে।
এমন সময় শত্রুর দল ঘোড়ার পিঠে চেপে এসে একযোগে আক্রমন করল অতর্কিতে। ধারালো তরোয়ালের আঘাত লাগল বিষপলার পায়ে। অর্ধেকের উপর কাটা হয়ে ঝুলে গেল সেই পা। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে গেলেন বিষপলা। ওই অবস্থায় ঘিরে ফেলল প্রমীলা বাহিনী। আহত যোদ্ধাকে নিয়ে চলে গেল নিরাপদ স্থানে। সন্ধ্যে হতে বাকী এখনো বেশ কিছু সময়।
খবর পাঠানো হল তার ঋষি বাবা-মা'কে।
সন্ধ্যের মুখে এসে গেলেন তারা। শুরু করলেন সেবা শুশ্রূষা। কিছুক্ষনের মধ্যেই আধা কাটা পা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে বিশেষ ধরনের জরিবুটি মাখিয়ে দিয়ে ঋষি সুস্থ করে দিলেন বিষপলাকে।
অশ্বিনী কুমারদ্বয় এর সহায়তা:
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
কোন যন্ত্রণা নেই কিছু অনুভব নেই। সম্পূর্ণ সুস্থ এখন। অদ্ভুত চিকিৎসার গুণ।
বসে রয়েছেন বিষপলা আর তার ঋষিপিতামাতা। কেঁদে চলেছেন তিনি। পরেরদিন কি করে যুদ্ধ করবেন।
আর একদিনের যুদ্ধ হলেই শেষ হবে শত্রু।
এই যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। করতেই হবে।
কিন্তু পা নেই... কিভাবে করবেন তিনি।
ঋষিমাতা আশ্বস্ত করলেন। আয়োজন করা হল এক বিশাল যজ্ঞ। বসলেন ঋষি। শুরু করলেন মন্ত্র উচ্চারণ। অগ্নিদেব আবির্ভূত হলেন। ঘী দিয়ে আবাহন করা হল অশ্বিনী কুমারদ্বয়দের। তারা এলেন সোনার রথে চেপে। দুই যমজ দেবতা। সুপুরুষ তারা। মুখগুলো ঘোড়ার। এসে সব শুনলেন তারা।
তারপর দিলেন বিশেষ এক ধরনের ধাতুর পা। অত্যন্ত হালকা। ততটাই মজবুত।
সাথে দিলেন বিশেষ ধরনের ওষুধ।
প্রয়োগ পদ্ধতি বলে দিয়ে তারা অন্তর্হিত হলেন।
কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে আবার যুদ্ধের ময়দানে:
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
ক্ষতস্থানে সেই ওষুধ লাগিয়ে দিয়ে পরেরদিন সকালে পরে নিলেন বিষপলা সেই ধাতুর পা। খেয়ে নিলেন কিছুটা ওষুধ। ধীরে ধীরে সেই পা যেন তার শরীরের অঙ্গ হয়ে উঠল। ওষুধের গুনে তার গতি বহুগুণ বেড়ে গেছে। নিজের প্রমিলা বাহীনির সকলকে খাওয়ালেন তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ। এরপর ঝড়ের বেগে তারা প্রবেশ করল যুদ্ধ ময়দানে। সামনে নেতৃত্বে বিষপলা। শত্রুর দল তো দেখেই অবাক।
কাটা পা নিয়ে কোন মানুষ কিভাবে বেঁচে ফিরতে পারে? তাও সে আবার যুদ্ধে নেমেছে...
তবে বেশিক্ষণ এই অবাক ভাব স্থায়ী হল না। বিষপলার তরোয়াল নেমে এল তাদের ঘাড়ে। মোটামুটি দুপুরের মধ্যেই শত্রুর দল সব শেষ। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওদের সমস্ত সেনাপ্রধান হল কচুকাটা। বাকী বাহিনী আত্মসমর্পণ করল।
■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■◆●◆■
সেদিন সন্ধ্যায় বিষপলা আর রাজা খেলা বসে রয়েছেন প্রাসাদের ছাদে। রাজ্যে আজ বিজয়ৎসব। সারা রাজ্য জুড়ে আজ আলোর উৎসব চলছে।
ওদিকে বহুদূরে জ্বলছে চিতার পর চিতা।
কিছু স্বপক্ষের জ্বলছে তবে বেশিরভাগ বড় চিতাগুলো জ্বলছে শত্রুপক্ষের।
শত্রু মিত্র সবার অন্তেষ্টিক্রিয়ার দ্বায়ীত্ব নিয়েছেন ঋষিবাবা-মা।
"আসাতো মা সদ গময়া, তমস মা জোত্যর্গময়া, মৃত্যর মা অমৃতম গময়া"
সবার পারলৌকিক যাত্রা হোক সুগম।
মনে মনে প্রার্থনা করলেন বিষপলা।
এরপর বসলেন পুজোয়। অশেষ ধন্যবাদ দিলেন অশ্বিনী কুমারদ্বয়দের। আবির্ভূত হলেন দুই কুমার তাদের ভাসমান সোনার রথে। আশীর্বাদ দিলেন। বললেন- "কালজয়ী হও"
মাথা নিচু করে প্রণাম করলেন বিষপলা।
যখন তুললেন মাথা, তারা চলে গিয়েছেন...
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
এই হল বিষপলার জীবনী।
সেই কোন যুগে ঔষধি গুণ আর কৃত্রিম অঙ্গের প্রচলন ছিল এই ভারতের বুকে।
সেই ঔষধি গুণের কথা উল্লিখিত রয়েছে মহাভারতেও... কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আহত সেনানীদের এক রাতের মধ্যে সুস্থ করে তুলতেন অশ্বিনী কুমারদের দুই পুত্র নকুল আর সহদেব। এতটাই সুস্থ হয়ে যেত সেনারা যে পরেরদিন সেই তারা আবার যুদ্ধে নামতে পারত।
প্রযুক্তি এবং চিকিৎসাবিদ্যার উৎকর্ষে ছিল সেই সময়টা সন্দেহ কোথায়?
সেই বিচারে কি আমরা সত্যিই এগিয়েছি...
ভাববার বিষয় বেশ
যাইহোক
ঋগ্বেদ তার সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলেই চুপ হয়ে রয়েছে। সেখানে আমি এই লেখাটি এখানেই শেষ করলাম।
যদি ভালো লাগে
পরবর্তী অংশটুকু নিয়ে লিখব আবার...
ধন্যবাদ।।।
✍️ Prithwis Sen
নোট:
- ওম পর্বত হচ্ছে ওমকারেশ্বর পর্বত ও মন্দির
- রাজা মান্ধাতা
- শ্রীরামের পূর্বপুরুষ
- যিনি সাধনা করে তৈরি করেছেন পবিত্র নদী নর্মদার বুকে ওম পর্বত ও মন্দির।
- এখনও ওমকারেশ্বর গেলে সেই রাজার প্রাসাদ ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
- মধ্যপ্রদেশ।।।
0 মন্তব্যসমূহ