বিশ্বাসঘাতক যোগেন মন্ডল আজও বেইমানির ইতিহাসে বিরল।
আজকে সেই দিন যে দিনে সে পদত্যাগ করেছিল।
✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️
যে যোগেন মন্ডল নেহেরু-
গান্ধীর ভারতে দলিতরা নিরাপদ নয় বলে পাকিস্তানের পক্ষে গিয়েছিলেন সেই যোগেন মন্ডল দেশভাগের ৩ বছর যেতে না যেতেই মোহভঙ্গ হয়ে কলকাতা পালিয়ে এসেছিলেন।সামাজিক প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে যোগেন্দ্র মন্ডল আশংকা প্রকাশ করেছিলেন বর্ন হিন্দুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কৌশলগত ভাবে দলিতদের স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়। যোগেন মন্ডল মনে করতেন নমঃশূদ্র এবং দলিতরা একটি পৃথক জাতিসত্ত্বা এবং এদের প্রতি সামাজিক ন্যায় বিচার ছাড়া যেকোন স্বাধীনতা অর্থহীন হবে। এই ভিত্তি এবং দলিতদের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন যারজন্য দেশভাগে যোগেন মন্ডলের সরাসরি ভূমিকার কারনে মুসলিম-দলিত ভোটে সিলেট ভারতের হাত ছাড়া হয়েছিল।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫বছরের ও অধিক সময় পর সেই মুসলিম-দলিত জোটের কথা সম্প্রতি পঃবঙ্গে নির্বাচনের সময় আইএসএফ(isf) এর ভাইজানের মুখে শুনতে পেয়েছিলাম। সেই ভোটে একটা মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের সাথে বামেদের সমঝোতা হয়েছিল। যা ১৯৪৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে জিন্নাহর মুসলিম লীগকে সমর্থনের মাধ্যমে। ভেবে দেখুন এই সমঝোতার পিছনে কাদের স্বার্থ জড়িত ছিল। আপনি আমি ভুলে গেলেও সেই বিভেদকামী শক্তি আজও ভুলেনি তাদের সমঝোতার কথা।
সেদিন লাখোলাখো দলিত তপশিলি যোগেন মন্ডলকে বিশ্বাস করে দেশভাগের সময় ভারতে না এসে পাকিস্তানেই রয়ে গিয়েছিলেন।কিন্তু সে বিশ্বাস যখন অবিশ্বাসে পরিনত হল তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তার ফল দুই বঙ্গেই দলিত তপশিলিরা ভোগ করছে সমানভাবে।
১৯৪৬এর অক্টোবর মাসে নোয়াখালীর তপশিলি সহ হিন্দুদের শতকরা ৯৫জন অত্যাচারিত হয়ে ও প্রানের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। হিন্দুদের মা, বোন, স্ত্রী, কন্যারা সতীত্ব হারিয়েছিলেন। খুন লুটপাট আগুনে পুড়েছিল মাথা গোজার আশ্রয়টুকু। সেই সময় যোগেন মন্ডল বিমানে এক চক্কর নোয়াখালী এবং ত্রিপুরার উপর দিয়ে ঘুরে এসে বলেছিলেন ও-ই দাঙ্গায় তপশিলিদের একজন মানুষও নিহত বা আহত হয়নি (স্টেটসম্যান(২৫/১০/৪৬)। যোগেন বাবু সত্য বলেছিলেন কি? কিন্তু সেই যোগেন মন্ডল পূর্ব-পাকিস্তান থেকে কলকাতায় পালিয়ে এসে বলেছিলেন,
"পাকিস্তানে হিন্দুদের বসবাস কারার কোন ও সুযোগ নেই।ওখানে থাকতে হলে হিন্দুদের হয় মুসলমান হয়ে থাকতে হবে নয়তো অন্ধকারে বিলীন হয়ে যেতে হবে"।
এই উপলব্ধি কেন হয়েছিল যোগেন মন্ডলের??
নিজের পৈত্রিক ভিটেয় এসে মৃতদেহের স্তুপ দেখে যোগেন মন্ডল ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ধর্ষিতা মহিলাদের আর্তচিৎকারে যখন আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল তখন যোগেন বাবু আর স্থির থাকতে পারেননি। বিমানে নোয়াখালী ও ত্রিপুরার উপর দিয়ে ঘুরে এসে তিনি যা বলেছিলেন সেটা যে গুরুতর অন্যায় ছিল নিজের বাস্তুভিটায় এসে যোগেন মন্ডল সেটা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং তার সারা জীবনের রাজনীতি দলিত তপশিলিদের প্রতি তার দায়বদ্ধতা যে এক লহমায় উবে গিয়েছিল সেটা তার দেশত্যাগের মধ্যেই প্রতিভাত হয়েছিল। কিন্তু পঃবঙ্গে যোগেন মন্ডল আর তপশিলি জাতি উপজাতিদের বিশ্বাসভাজন হতে পারেননি।
৪৬ এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং কেন? নোয়াখালীতে হিন্দু গনহত্যা কেন? ৫০এর বরিশাল কেন? ৬২ ভৈরব ব্রিজে ট্রেন থামিয়ে মেঘনা নদীর জল রক্তবর্ন হয়েছিল কেন? ৬৪ খুলনা কেন? আর ৭১ই বা ঠিক কি হয়েছিল। ইতিহাস তো আর ভালমন্দ মিশিয়ে হয়না। ইসলামের নৃশংসতা গুলোকে লুকিয়ে রেখে বিধিনিষেধ আরোপ করে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে সব ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে নিরন্তর। সেই শিক্ষা থেকে যোগেন মন্ডল শিক্ষা নিয়েছিলেন এমন একটা সময়ে যখন কোটিকোটি দলিত তপশিলিদের পূর্ব-বঙ্গে হায়েনার মুখে ফেলে স্বার্থপরের মতো একা পালিয়ে এসেছিলেন। পঃবঙ্গে এসেও পূর্ব-বঙ্গের তপশিলিদের উদ্ধারে কোন কথা বলেননি। বেইমানি যোগেন মন্ডলের রক্তের সাথেই ছিল। যারা সেদিন বাড়িঘর পৈত্রিক ভিটে হারিয়ে পঃবঙ্গে এসেছিলেন তারা আজও দেশ হারানোর নুনতম অধিকার পায়নি। এবারে পঃবঙ্গের নির্বাচনে দলিত তপশিলিরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতন নিপীড়ন হত্যা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
অতীতের শিক্ষা ভবিষ্যতের দিশারি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মধ্যযুগের ভারত ইতিহাস প্রনয়নে এই স্বীকৃত মানদন্ডকে যথেচ্ছভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রনীত ইতিহাসে মুসলিম অত্যাচারের ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে।প্রজাহিতৈষী মুসলিম শাসকগন কোন হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেনি। তাদের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ছিল প্রশংসনীয়। প্রচার করা হয়েছে ভারতবর্ষে মুসলিম রাজত্ব বিদেশি শাসন ছিল না। স্বাধীনতার পর এই প্রচার ছিল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।গত অর্ধ শতাব্দী ধরে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রনীত ইতিহাসের লক্ষই ছিল মিথ্যা মোহজাল সৃষ্টি করে জনমানস থেকে অতীতকে বিস্মৃত করা। সেই ইতিহাস বিকৃতির ধারাবাহিকতা দেশভাগের পরের সরকারগুলো বিজেপি সরকার আসা পর্যন্ত স্বযতনে করে গিয়েছে।সময় এসেছে সে ইতিহাস জানার অন্তত নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে। হিন্দু খুনে সেই সব রক্তাক্ত ইতিহাস না জানার জন্যই আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সেকুলার বনেছে তোষামোদির রাজনীতির দিকে আগ্রহী হয়েছে।
ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বাস করে প্রায় হাজার বছর। অথচ হিন্দুরা মুসলমানের ইতিহাস ধর্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ন অজ্ঞ। তারা কোরান পড়ে না জানে না হযরত মুহাম্মদের জীবনাচার। ইসলাম ধর্মের অজ্ঞতার জন্য মুসলমানদের ভারত বিজয়ে সহায়ক হয়েছিল যার পরিনতিতে ভারত ভাগ। ইসলাম সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান ব্যতিরেকে ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের স্বরূপ অনুধাবন সম্ভব নয়। উদ্দেশ্য পরিস্কার ভারতবাসীকে অতীত ইতিহাস সম্বন্ধে অজ্ঞ রাখা, মুসলিম শাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং দেশভাগের কারন সম্পর্কে ভারতবাসীর যদি সম্যক ধারনা না থাকে তবে তার পরিনতি দিনদিন অবনতি হবে। আত্মবিস্মৃত বাঙালি কোন দিন পারেনি নিজের স্বজাতিপ্রীতিতে নিজেকে উজার করে দিতে। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অত্যাচারে পঃবঙ্গবাসীদের কখনো উদ্বেলিত হতে দেখা যায়নি বরং বাংলাদেশের হিন্দুরা যখন নির্যাতন নিপীড়নে দিশেহারা হয়ে দেশ ছেড়ে পঃবঙ্গে এসেছে তখন তাদের উপর নেমে এসেছে আরেক অত্যাচার অবিচার যা একজন হিন্দু হিসাবে বর্ননা করা খুব লজ্জার। তাই নতুন ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমে স্বজাতির অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। কারন আমরা সবাই ভারত মাতার সন্তান।
0 মন্তব্যসমূহ