দুর্গা পূজার থীম - নিরঞ্জন ভট্টাচার্য

দুর্গা পূজার থীম - নিরঞ্জন ভট্টাচার্য

প্রতিমাকে বলা হয় ঋষি শিল্প । এই শিল্পের মাধ্যমে ঋষি অব্যক্ত বাণীকে ব্যক্ত করেন। অনির্বচনীয় তত্ত্বকে বচন বদ্ধ করেন, বোধগম্য করে তোলেন সাধারণ মানুষের । শিল্পীর তুলিতে স্বল্প পরিসরে বিশাল প্রবন্ধ লিখে ফেলেন অনন্ত কালের মানুষের জন্য, যে প্রবন্ধ পড়তে কোন অক্ষর জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, একটু গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলেই বুঝা যায় কি ছিল ঋষির বাণী, কি ছিল তাঁর বলার বিষয়।


এভাবেই ঋষি শিল্পের মাধ্যমে রাজা কংসনারায়ণ এবং পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী দৃশ্যমান করে গেছেন জগতের মহত্ত্বম এক তত্ত্বকে । শারদীয় দুর্গা পূজার এই তত্ত্ব বা থীম অনন্ত কাল ধরে ঘোষণা করে যাবে সঙ্ঘশক্তির জয়, দেবশক্তির জয়, মানবতার জয়। অসুরকে পরাভূত করার অপূর্ব একটি কৌশল বিবৃত করা হয়েছে দুর্গা বিগ্রহের কাঠামোয় ।


দুর্গা বিগ্রহ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মায়ের ডান দিকে আছেন লক্ষ্মী ও গণেশ। সরস্বতী ও কার্তিক আছেন বাম দিকে । মাথার উপরে আছেন সর্ব মঙ্গলময় শিব এবং পদতলে অসুর। সরস্বতী শুদ্ধজ্ঞান বা ব্রাহ্মণ শক্তির প্রতীক, দেবসেনাপতি কার্তিক প্রতিনিধিত্ব করেন ক্ষত্রিয় জাতির । কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্যের অর্থাৎ বৈশ্য সম্প্রদায়ের প্রতীক লক্ষ্মী, আর গণশক্তির বা শূদ্র জাতির প্রতীক গণেশ।


সংক্ষেপে সমাজের চারটি বর্গ - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র ভেদাভেদ ভূলে এক মঞ্চে, এক কাঠামোয় একত্রিত বা সম্মিলিত হলেই উদ্বোধন বা আবির্ভাব হবে মহাশক্তির, মা দুর্গার। বর দানে ব্যগ্র সত্য, সুন্দর, সর্ব মঙ্গলময় শিব আবির্ভূত হবেন মাথার উপরে, আর অসুর হবে পদদলিত, নিহত।


তাই সাবেকী এক কাঠামোয় পূজা হতে হবে মা দুর্গার।  লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশকে আলাদা আলাদা প্লাটফর্মে বসানোর অর্থ সমাজকে আবার একতাবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা ।


বৃহত্তর সমাজকে শক্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করে শক্তি সঞ্চয়ই দুর্গা পূজার মূল থীম বা মূলমন্ত্র । তাই রাজা কংসনারায়ণ এবং পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর এক থীমেই অনন্ত কাল ধরে প্রতি শরতে মা দুর্গার পূজা চলতে থাকুক । জয় মা দুর্গা ।


( লেখক নিরঞ্জন ভট্টাচার্য)


 (সংগৃহীত) 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ