এটাই আমার সংস্কৃতি- কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
এটাই আমার সংস্কৃতি,
এটাই আমার স্বাভিমান!
সৃষ্টির আদি থেকে আমরা
মূর্তিপূজা করে আসছি,
শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে
প্রলয় পর্যন্ত করেই যাব।
ওরে হিংসুটে দুর্বৃত্ত!
আমার পূজার মূর্তি ভেঙ্গেছিস,
এতে কি হয়েছে!
ভগবান কি শুধুই মূর্তিতে?
তিনি সর্বত্রই বিরাজিত
"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"।
পূজার মন্দির ভেঙেছিস,
এতে কি ক্ষতি হয়েছে আমার?
ভেবেছিস এতে আমি
পূজা বন্ধ করে দিব?
বড্ড বোকা তুই,
প্রত্যেকটি ভক্তের হৃদয়ে
পাতা রয়েছে তাঁর সোনার মন্দির।
সে মন্দির তুই ভাঙবি কিসে?
সে সাধ্য তোর আছে?
বড্ড নিষ্কর্মা, হিংসুটে হাদারাম তুই!
আমার হৃদয়ে প্রাণগোবিন্দের
জ্যোতির্ময় সোনার আসন পাতা।
পারবি সে আসন থেকে আমার
ইষ্টের বিগ্রহকে ভেঙে ফেলতে?
পারবি না, কোন দিনও পারবি না,
বরং আমার প্রাণের প্রাণগোবিন্দ
আরও সর্বগ্রাসী হয়ে প্রাণাসনে
আসন পেতে বসবেন।
আমি ধরিত্রীমাতার স্বরূপে
মাটির পূজা করি।
বড়জোর হিংসাত্মক মনোভাবে
মাটিকে দুষিত করতে পারবি।
কিন্তু মাটিকে কখনো বিনাশ করতে পারবি?
না পারবি না, কখনই পারবি না
এর আগে নিজেই বিনাশ হয়ে যাবি!
আমি প্রাণের রক্ষণে
জলব্রহ্মের প্রত্যক্ষ স্বরূপে
জলের পূজা করি।
ওরে হিংসুটে গোদারাম!
তুই পারবি জলকে ধ্বংস করতে,
অথবা শুকিয়ে দিতে?
আমি জ্ঞানরূপ ব্রহ্মের প্রতীকে
আগুনের পূজা করি।
আমি যজ্ঞে দেবতাদের মুখ হিসেবে
আগুনে আহুতি দেই।
আগুন আমার কাছে ব্রহ্মস্বরূপ।
মৃত্যুর পরে অন্তেষ্টিক্রিয়ায়
আমার নশ্বর পরিত্যক্ত দেহও
সমর্পিত হবে তাঁর কাছে।
ওরে অতিরিক্ত ভাট বকা গাড়ল!
তুই পারবি আমার উপাস্য আগুনের
এককণা ক্ষতি করতে?
উল্টো আগুনের লেলিহান শিখায়
নিজেই পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবি।
অচিন্ত্য ব্রহ্মের
জ্যোতির্ময় প্রত্যক্ষ স্বরূপে
আমি সূর্যের পূজা করি,
ওরে তুই কস্মিনকালেও পারবি
আমার উপাস্য সূর্যকে ধ্বংস করতে?
আমি অমৃতের প্রতীকে
শান্ত স্নিগ্ধ চন্দ্রের পূজা করি।
ওরে মূর্খ হাদারাম! তুই কি পারবি
আমার উপাস্য চন্দ্রের আলোর
কিঞ্চিৎ পরিমাণ নিভিয়ে দিতে?
আমি শাশ্বত ধর্মের প্রতীকে
অশ্বত্থ বৃক্ষের পূজা করি।
পারবি জগতের সকল বৃক্ষকে
ধ্বংস করতে?
সামান্য চেষ্টা করে দেখতে পারিস।
তবে অক্সিজেনের অভাবে
নিজেই চিৎপটাং হবি।
এসব কথা সারাদিনেও
শেষ হবে না জেনো।
প্রামাণ পেয়ে আমার কথাটি মেনো।
শুধু একটি প্রশ্ন তোমায় তাই,
তুমি কি 'সনাতন' অর্থ জান ভাই?
আচরণে বুঝেছি জানো না তাই,
তবে হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে
আজ সনাতনকে জেনে রাখ ভাই।
যা অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে,
এবং ভবিষ্যতেও থাকবে অবিকার;
তাই আমার সনাতনের অঙ্গীকার।
আমি তুমি জানি বা না জানি
জগতে কিছুই সনাতনের বাইরে নয়।
রক্তের প্রতিটি কণায় কণায় সনাতন!
ধমনীর স্পন্দনে স্পন্দনে সনাতন!
সৃষ্টির অণুতে-পরমাণুতে সনাতন!
মূর্ত-অমূর্ত সকল রূপেই সনাতন!
সাকার-নিরাকার উভয় রূপেই সনাতন!
শাশ্বত সনাতন সনাতন সত্য ছাড়া
আর কি আছে জগতে?
এ জগৎ সনাতনের খেলা,
ভাই, তুমি বিদ্বেষ করেছ মেলা!
অনেক হয়েছে এবার থাম,
গলা থেকে ছুড়ে ফেলো
হিংসাত্মক পূতিগন্ধময় মালা।
----------------------
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
https://www.facebook.com/KushalBaranBD/posts/pfbid0u5EAmjC63hcFGsrLnP6PUZbGaoEsVvkqpobBC9VFFcK5m5Xz1WJDGZFsdMkvJJ8gl
0 মন্তব্যসমূহ