১০ই জুলাই ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার একটি সংবাদ সম্মেলন হয়। উক্ত সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় লতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গত ১১ মাসে মোট ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই সম্মেলনের খবর কোন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়নি। অনলাইনে খুঁজে এই সংবাদ সম্মেলনের খবর কোথাও পাওয়া গেল না। রীতিমতো ব্লাকআউট। সেই সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ পুলিশ আজ ১৫ই জুলাই ২০২৫ তারিখে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করে। হিন্দু নির্যাতন বিষয়ে পুলিশের প্রতিবাদের সেই খবর প্রকাশ করতে অবশ্য বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো কার্পণ্য করে নি। পুলিশের বক্তব্য নিয়ে অনেকগুলো পত্রিকার মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিত দুইটি নিউজ মিডিয়ার খবর নিচে প্রকাশ করা হল।
সংখ্যালঘু হত্যা-সহিংসতায় সাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ
15th July, 2025 2:17 pm
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গত ১১ মাসে মোট ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত চালিয়েছে। জানিয়েছে, ঐক্য পরিষদের সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। এতে সাম্প্রদায়িকতার কোনো প্রমাণ মেলেনি।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়, ২৭ মৃত্যুর ঘটনায় ২২টিতে নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টির ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই জনের প্রাণহানি হয়। তারমধ্যে একটি ভাতিজা হত্যা করেছে চাচাকে। আরেকটি হত্যার ঘটনা চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারিতে।
আর্থিক লেনদেনের জেরে দুইজনের প্রাণহানি হয়। তারমধ্যে মাদক কেনাবেচার টাকা পাওনা নিয়ে একজন ও অপরটি ডাকাতির ঘটনা।
অন্যদিকে দস্যুতার ঘটনায় ৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে একজন, তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে আরেকজন নিহত হয়। গলায় ফাঁস নিয়ে তিন জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১১ জনের। এদের মধ্যে রয়েছে ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন। জুম চাষে গিয়ে নারী নিহত, তামাক ক্ষেত থেকে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর মৃতদেহ উদ্ধার, বাড়ির পাশ হতে মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাকেও সংখ্যালঘু হত্যা বলে দাবি করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
এসব হত্যার ঘটনায় এরইমধ্যে মোট ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১৫ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের ১৮ জন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। তদন্তে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাদের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে, গত ১১ মাসে সংখ্যালঘু ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ২০টি ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ভাষ্য, এরমধ্যে ১৬টি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ ২৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
তিনটি ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীর তানোরে এক আদিবাসী নারী ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। বরং অভিযোগকারীর সঙ্গে অভিযুক্তের আগে থেকেই পারিবারিক বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে। মাগুরার শ্রীপুরের হরিনন্দীগ্রামে ডাকাতির পর গৃহবধূ গণধর্ষণের অভিযোগও তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি এবং কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।
এ সময় জানানো হয়, গত বছর ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয় ঘিরে ১২৭টি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা এবং ৬১টি ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। মামলাগুলোয় মোট ৬৪ জন গ্রেফতার হয়েছে।
বলা হয়, মন্দির বা পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা বা স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল ও উচ্ছেদের চেষ্টা সংক্রান্ত ৬০টি অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানায়, এসব ঘটনার মধ্যে ২০টি চুরির ঘটনা তদন্তে উঠে এসেছে। যার মধ্যে ১৪টি নিয়মিত মামলা এবং ৫টি জিডি হয়েছে। প্রতিমা বা মন্দির ভাঙচুরের ২৪টি ঘটনার মধ্যে ১৮টি মামলা এবং ৪টি জিডি হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১০ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। একটি চুরি এবং দুটি ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অগ্নিসংযোগের চারটি ঘটনার মধ্যে দুইটির পেছনে কোনো নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। জমি ও সীমানা নিয়ে জটিলতা ছিল এমন চারটি ঘটনার দুইটি স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছে। ছয়টি জায়গা দখলের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
খিলক্ষেতের বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় থাকা অস্থায়ী পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ করা হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ভাঙার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন করে শ্মশানঘাট নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তখন তারা জানান, সংঘটিত ঘটনাসমূহ পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে খতিয়ে দেখবে তারা। এমনকি অন্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সকল স্থাপনা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
/এসআইএন
সূত্র: যমুনা টিভি
----------
সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে যা বললো পুলিশ
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, আপডেট: ১৩:৫৭, জুলাই ১৫, ২০২৫
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কর্তৃক সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে গত ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে বিগত ৬ মাসে ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ গত ১১ মাসে ২ হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
ব্যাখ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ উল্লিখিত ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে। ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্যে ২২টি ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টির ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা/সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি মর্মে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের কারণসমূহের মধ্যে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২টি (ভাতিজা কর্তৃক চাচাকে হত্যা, চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারির ফলে ১ জন নিহত), আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে ২ জন (তন্মধ্যে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে ১ জন), ডাকাতি/দস্যুতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৭ জন, সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে ১ জন, তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে ১ জন, গলায় ফাঁস নিয়ে ৩ জনের আত্মহত্যা।
লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় (ভবঘুরে/মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর সন্দেহজনক মৃত্যু, জুম চাষে গিয়ে খেয়াং নারী নিহত, তামাক ক্ষেত থেকে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর লাশ উদ্ধার, বাড়ির পাশ থেকে জখমহীন লাশ/অন্যান্য স্থান থেকে লাশ উদ্ধার ইত্যাদি) তদন্ত চলমান রয়েছে।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১৫ জন আসামি বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে এবং ১৮ জন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ সংক্রান্তে মোট ২০ ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০ ঘটনার মধ্যে ১৬টি ঘটনার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ২৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনা সংক্রান্তে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীর তানোরে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের সঙ্গে আগ থেকে বাদীনির পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল মর্মে জানা যায়।
মাগুরার শ্রীপুর হরিনন্দীগ্রামে কিশোর কুমার রায়ের বাড়িতে ডাকাতির পর সহধর্মিণীকে গণধর্ষণের ঘটনাটিতে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি এবং ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি।
সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত; ২ হাজার ১০টি, যার মধ্যে ১ হাজার ৭৬৯টি সম্প্রদায়িক আক্রমণ এবং হামলার ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশ ১ হাজার ৭৬৯ ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ৫৬টি জেলায় মোট ১ হাজার ৪৫৭টি ঘটনার সত্যতা পায়। ১ হাজার ৪৫৭ ঘটনার মধ্যে মোট ৬২টি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয় এবং ৯৫১টি ঘটনায় জিডি দায়ের করা হয়। ৬২ ঘটনায় মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে দেখা যায় যে, ১ হাজার ৭৬৯টি ঘটনার মধ্যে ১ হাজার ৪৫২টি ঘটনা (৮২.৮ শতাংশ) ৫ আগস্ট/২০২৪ এ সংগঠিত হয়। ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত। ১৬১টি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত পূজামণ্ডপ/উপাসনালয় সংক্রান্তে মোট ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা এবং ৬১টি ঘটনায় জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়। দায়ের করা মামলায় মোট ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নি-সংযোগ, জমি দখল, উচ্ছেদ, উচ্ছেদের চেষ্টা ইত্যাদি সংক্রান্তে মোট ৬০টি ঘটনার অভিযোগ করা হয়।
ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরের মূর্তি, অলংকার, আসবাবপত্র বা দান বাক্সের টাকা ইত্যাদি সংক্রান্তে বাংলাদেশ পুলিশ ২০টি চুরির ঘটনার সংবাদ পায়। ২০টি ঘটনায় ১৪টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয় এবং ৫ ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রতিমা বা মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুরের মোট ২৪টি ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় এবং এ সংক্রান্তে মোট ১৮টি মামলা ও ৪টি ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এসব মামলায় মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। একটি চুরির ঘটনায় এবং দুটি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ৪টি অগ্নি-সংযোগের ঘটনার মধ্যে ২টি অগ্নি-সংযোগের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। ৪টি ঘটনায় জমি ও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল মর্মে জানা যায়। তন্মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়।
৬টি জায়গা দখলের অভিযোগের সংবাদে তদন্তে প্রকৃতপক্ষে জায়গা দখলের তথ্য পাওয়া যায়নি। খিলক্ষেত থানার বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গার অস্থায়ী পূজামণ্ডপটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ঠিকাদার কর্তৃক ভেঙে ফেলার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় শ্মশান ঘাট নির্মাণ করে দেওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংঘটিত অন্যান্য ঘটনাসমূহ পরে সুনির্দিষ্টভাবে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনাসমূহের বিস্তারিত জানানো হবে।
সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সব স্থাপনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এজেডএস/আরবি
সূত্র: বাংলা নিউজ
1 Comments
আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত তথ্যসমূহ এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিক্রিয়া দেখে গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন।
ReplyDeleteসংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বিগত ১১ মাসে ২৪৪২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, ২৭ জন নিহত এবং বহু ধর্ষণ, মন্দির ভাঙচুর, জমি দখলের মতো ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ পুলিশ এই ভয়ংকর পরিসংখ্যানকে খণ্ডন করতে গিয়ে প্রায় সব ঘটনাকে ব্যক্তিগত বিরোধ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বা সাধারণ অপরাধ হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। এমনকি কিছু ঘটনায় অভিযোগ দায়ের না হওয়াকে ‘ঘটনা না হওয়া’র প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে—যা গভীরভাবে দুঃখজনক ও সত্য আড়াল করার চেষ্টার শামিল।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি—একটি ঘটনার আইনি সংজ্ঞা যা-ই হোক না কেন, যখন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ বারবার টার্গেট হয়, বারবার তাদের মন্দিরে আগুন লাগে, তাদের মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়, জমি দখলের চেষ্টা চলে—তখন সেটি শুধুই বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক নিরাপত্তাহীনতা ও অস্তিত্ব সংকট।
পুলিশ হয়তো তাদের ভাষায় ব্যাখ্যা দিতে পারে, কিন্তু আমার প্রশ্ন—
> আমরা সংখ্যালঘুরা কি এ দেশে নিরাপদ? আমাদের অস্তিত্ব কি শুধুই সংখ্যার হিসাব? আমাদের প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি অবিচার কি শুধুই "সাধারণ অপরাধ"?
এই প্রশ্নের উত্তর আমি চাই—একজন নাগরিক হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে, একজন প্রতিবাদকারী হিসেবে।
আমি পুলিশের আত্মরক্ষামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই।
আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সংঘটিত সব সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করি।
আমি একটি মানবিক, দায়বদ্ধ ও সাম্যের বাংলাদেশ চাই—যেখানে কেউ ধর্মের কারণে ভয় নিয়ে বাঁচবে না।