যশোরের অভয়নগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন - কী ঘটেছিল সেখানে

গত বৃহস্পতিবার একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এ সম্প্রদায়ের বাৎসরিক যজ্ঞ উৎসবের মধ্যেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১৮টি বাড়ি এবং ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়।
গত বৃহস্পতিবার একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এ সম্প্রদায়ের বাৎসরিক যজ্ঞ উৎসবের মধ্যেই পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১৮টি বাড়ি এবং ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়।

আগুনে পোড়া বাড়ি, ছবির উৎস, Zahid Hassan


জান্নাত, বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫



যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহরমসিয়াহাটি গ্রামের বাড়েদা পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি গ্রামে ধর্মীয় একটি উৎসব চলার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার হামলা করে ১৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ও ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়েছে। বিএনপির স্থানীয় একজন নেতার হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


ভবদহ অঞ্চলের বিলের মধ্যেই অবস্থিত এ গ্রামটিতে সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করেন, যাদের বেশিরভাগই মতুয়া সম্প্রদায়ের।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই উপজেলারই নওয়া পাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদার গ্রামটিতে নিহত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হামলা, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।


পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেদিন মতুয়া সম্প্রদায়ের বাৎসরিক যজ্ঞ উপলক্ষ্যে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। এর মধ্যেই হামলা ঘটনা ঘটে। আগুনে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জ্বলে পুড়েছে এ গ্রামের বাড়িগুলো।


এখনো গ্রামে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ।


তবে তিনদিন পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত ওই হত্যাকাণ্ড এবং হামলার ঘটনায় কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আলীম।


হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারও এখনো মামলা দায়ের করেনি।


পুলিশের পক্ষ থেকেও হামলার ঘটনায় কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


এদিকে, হামলার ঘটনার দুইদিনের বেশি পার হলেও ওই সম্প্রদায়ের মানুষরা এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।


ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, রাতে নিজের বাড়িতে থাকছেন না তারা। আশেপাশের গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে রাতে থাকছেন।


যদিও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন ভালো আছে বলে দাবি অভয়নগর থানার ওসির। এর সাথে রাজনীতির কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে পুলিশ দাবী করেছে।


আগুনে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জ্বলে পুড়েছে এ গ্রামের বাড়িগুলো
গুনে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জ্বলে পুড়েছে এ গ্রামের বাড়িগুলো

আগুনে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জ্বলে পুড়েছে এ গ্রামের বাড়িগুলো ছবির উৎস, Zahid Hassan


ঘটনার সূত্রপাত কিভাবে?


স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারের সাথে বাড়েদা পাড়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তির সাথে মাছের ঘেরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।


যশোরের ওই ভবদহ দীর্ঘদিন ধরেই জলাবদ্ধ এলাকা। সেখানেই তাদের দুজনের যৌথভাবে এই মাছের ঘের ছিল।


পাঁচই অগাস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ওই মাছের ঘেরের ইজারা নিতে চান নিহত মি. সরদার। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দু' জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।


স্থানীয় সাংবাদিক সাজেদ রহমান বকুল বিবিসি বাংলাকে জানান, "যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ওইদিন ওই ব্যক্তি তরিকুলকে মাছের ঘের লিখে দেওয়ার কথা জানায়। তরিকুলকে ডিড (চুক্তিপত্র) করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ আছে। "


নিহত তরিকুল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে বাড়েদা পাড়ায় যান। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।


মাছের ঘেরকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং এরপর ওই অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাংচুর হয় বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন অভয়নগর থানার ওসিও।


তরিকুল ইসলামের হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার সমর্থকরা ওই বাড়েদা পাড়ার বাড়িগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। একইসাথে চলে লুটপাট ও ভাঙচুর।


ভুক্তভোগীরা যা বলছেন


বাড়েদা পাড়ার যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া অন্য বাড়িগুলো থেকে বেশ কিছুটা দূরে হলেও পরেও সেসব বাড়িতেও হামলা চালানো হয়।


গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যে সময়ে পৌর কৃষক দল সভাপতি মি. সরদার নিহত হন সে সময় পার্শ্ববর্তী বাড়িতে চলছিলো মতুয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বাৎসরিক যজ্ঞ উৎসব।


তিন দিনব্যাপী এই উৎসব বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলার কথা ছিল। যজ্ঞ উপলক্ষ্যে পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন।


ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মানব বিশ্বাসের বাড়িও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, করা হয়েছে লুটপাট ও ভাঙচুর।


" এক লাখ টাকার উপরে ক্যাশ নিয়েছে, সোনার চেইন নিয়েছে একটা। টিভি, ফ্রিজ ভাঙচুর করেছে। এগুলো একদম অকেজো হয়ে গেছে। আলমারি, ড্রেসিং টেবিলও ভাঙচুর করেছে। আমার বসতবাড়িতে এরপর আগুন দেয় " বলেন মি. বিশ্বাস।


তিনি জানান, গ্রামের মোট ১৮ টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টা দশ মিনিটের দিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং পরে পৌনে সাতটায় আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।


প্রায় চার ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস রাত এগারটার পর উপস্থিত হয়েছিল বলে দাবি করেন মি. বিশ্বাস।


"আগুন দেওয়ার পর প্রায় চার ঘণ্টা ধরেও প্রশাসনের কেউ আসেনি। আসতে পারেনি নাকি আসেনি এটা তাদের ব্যাপার। চার ঘণ্টা ধরে তারা লুটপাট, অগ্নি সংযোগ করেই গেছে " বলেন মি. বিশ্বাস।


ওইদিন যজ্ঞের কারণে মাইকের শব্দ এবং ঢাকের আওয়াজের কারণে কেউ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বুঝতে পারেনি বলে জানান তিনি।


পরে যখন ওই পাড়া থেকে দুই – একজন মহিলা দৌঁড়ে আসে তখন সবাই হত্যার কথা জানতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে শত শত মানুষ গ্রামে হামলা চালাতে শুরু করে।


তবে প্রথমে গ্রামবাসী নিজেদের বাড়িতে থাকলেও আগুন দেওয়া শুরু হলে জীবন বাঁচাতে বিলের আশেপাশের মাঠে গিয়ে আশ্রয় নেয়।


মি. বিশ্বাস জানান, 


"পাঁচ - ছয়শো লোকের জন্য রান্না চলছিল। প্রথম হামলা ওরা ওইখানে চালায়। রান্নার কড়াই টড়াই সব উল্টে ফেলে দেয়। মহিলা থেকে শুরু করে বয়স্ক লোক সবাইকে মারধর শুরু করে।"


উৎসবে যোগ দিতে আসা সবাইকেই মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মি. বিশ্বাস।


পরে হামলাকারীরা নিকটস্থ সুন্দলী বাজারের কয়েকটি দোকান লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।


তিন দিনব্যাপী এই উৎসব বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলার কথা ছিল। যজ্ঞ উপলক্ষ্যে পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসব বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলার কথা ছিল। যজ্ঞ উপলক্ষ্যে পাঁচ থেকে ছয়শো মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সেদিন।


দিনের বেলা বাড়িতে ফেরেন গ্রামবাসী ছবির উৎস, Zahid Hassan


কাটছে না উদ্বেগ, আতঙ্ক


ওই গ্রামেরই আরেকজন বাসিন্দা হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়ির তিনটি ঘরও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।


ওই সময় বাড়িতে তার বৃদ্ধা মা উপস্থিত ছিলেন। পাশের গ্রামের একটি বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছিলেন মি. বিশ্বাস।


তিনি জানান, তার বৃদ্ধ মা হামলাকারীদের জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িতে আগুন না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু হামলাকারীরা সেসময় তাকেও পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।


"আমার মা বাড়িতে ছিল। মা বলছিলো কী একটা ছড়ায়ে দিয়ে তারপর আগুন ধরায়ে দিছে। ওই গান পাউডার দিয়ে ধরাইছে" বলেন মি. বিশ্বাস।


সেসময় চার- পাঁচজন ব্যক্তি তাদের বাড়ির তিনটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছিলো।


"বুড়ো মানুষ মা বলছিলো তোমরা সব নিয়ে যাও, পোড়াইও না। মারে গালিগালাজ করছে। বলছে তোরেও পোড়ায়ে দেব " বলেন মি. বিশ্বাস।


আতঙ্কে এখনো বাড়িতে থাকছেন না বলে জানান এই শিক্ষক।


"বাড়ি পোড়ানোর পর আতঙ্কে আছি। রাত হলে ভয়ে বাড়িতে থাকি না। এদিক - ওদিক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাই। দিনে আজ এখন বাড়িতে আসছি। এখন ভাবছি কত এভাবে চলা যাবে " বলেন মি. বিশ্বাস।


তার বাড়ি থেকে তিন ভরি গহনা, নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।


পুলিশ আশ্বাস দিলেও আতঙ্ক কাটছে না বলে জানান তিনি।


কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 


" পুলিশের কর্তৃত্ব তো কেউ মানে না। ঘটনার দিন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশকেও আসতে বাধা দেয়া হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিসকেও বাধা দেয়া হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী এসে......... মরিয়মপুর থেকে পরে ফায়ার সার্ভিসের একটা দল এসে কিছুটা আগুন নিভাইছে।"


পরে পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ জনকে ১৬ পিস টিন, ৩০ কেজি করে চাল এবং ছয় হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুইটি কম্বলও দেওয়া হয়েছে।


পুলিশ যা বলছে


পৌর কৃষক দল সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়েদাপাড়ায় বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।


তবে এ ঘটনা রাজনৈতিক কোনও ঘটনা নয় বলে দাবি পুলিশের।


অভয়নগর থানার ওসি মি. আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, 


" এটা রাজনৈতিক কোনও সহিংসতা না। ওইখানে পাশেই মাছের একটা ঘের আছে। ওই মৎস্য ঘেরের জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।"


অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।


এখন পর্যন্ত ওই ঘটনা সম্পর্কে কেউ কোন অভিযোগ থানায় দেয়নি বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।


তবে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, বলে দাবি করে মি. আলীম।


পুলিশ মামলা করবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 


"আইনের যে বিধিবিধান রয়েছে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।"


গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে
অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে


ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘরছবির উৎস, Zahid Hassan


কৃষক দলের সন্দেহ রাজনৈতিক পূর্ব শত্রুতার


প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড মনে করলেও রাজনৈতিক কারণে এ হত্যাকাণ্ড কীনা সেটি খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছেন যশোর জেলা কৃষক দলের সভাপতি অধ্যাপক মকবুল হোসেন।


মি. মকবুল বিবিসি বাংলাকে বলেন, 


" আমরা প্রাথমিকভাবে এটা ব্যবসায়িক মনে করেছি। কিন্তু যেহেতু তরিকুলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ আমলের ১৭টা মামলা রয়েছে।"


"সেই কারণে ব্যবসায়িক বিষয়কে ইস্যু করে তৃতীয় পক্ষ পেছন থেকে রাজনৈতিকভাবে কাজ করেছে কীনা সেটা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টার তদন্ত করে দেখা হোক " 


বলেন মি. মকবুল।


কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা হিন্দুদের বাড়ি - ঘরে আগুন ও লুটপাট চালিয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, এমন প্রশ্নে মি. মকবুল বলেন, 


"একটা মানুষ যখন হত্যা হয় তখন উত্তেজিত জনতা কে কোন দিক থেকে কী করেছে এটা বোঝা মুশকিল। তবে দুই-একটা ঘরে আগুন দেওয়ার কথা আমরা শুনেছি।"


নিহত তরিকুলকে গুলি করার পরেও কোপানো হয়েছিল এবং তার শরীরে ৩৪টি কোপানোর দাগ ছিল।


আর হত্যাকাণ্ডের এই নৃশংসতার কারণেই মানুষ উত্তেজিত হয়ে অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে বলে দাবি করেন মি. মকবুল।


তবে পরে খুলনা বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ ঘটনা জানার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে দাবি করেন মি. মকবুল।


মতুয়া সম্প্রদায়ের যজ্ঞ উৎসবের স্থানে নয় বরং শুধুমাত্র যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেই বাড়িতেই অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মি. মকবুল।


যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা অপরিচিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সত্যিকারের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পারে সেজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি।


পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন না হিন্দু নেতারা


পাঁচই অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের ওপর বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠে।


এমন প্রেক্ষাপটে ভারত বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কয়েক মাসে ভারতের সাথে এই ইস্যুতে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। বাংলাদেশের সরকার বারবারই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।


এমন প্রেক্ষাপটে যশোরের অভয়নগরের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে কীনা এমন সম্ভাবনা নাকচ করে দেন যশোর জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন।


দীপঙ্কর দাস রতন বিবিসি বাংলাকে বলেন, 


" সবচেয়ে সমস্যাটা হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা এখনও মেরামত শেষ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই অন্ধকার হয়ে আসলে ওরাতো ট্রমাটাইজড, আতঙকগ্রস্ত হয়ে আছে। সেজন্য প্রবলেম হচ্ছে, ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছে না।"


আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে তিনি জানান।


গ্রামবাসীর আতঙ্ক কাটাতে আজ রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নিয়ে ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।


সূত্র: বিবিসি

Post a Comment

0 Comments