![]() |
আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদের মতামত |
মুরদনগরে মুসলমান যুবক কর্তৃক হিন্দু নারীর ধর্ষণ বিষয়ে আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ ও লেখক সুষুপ্ত পাঠক ফেসবুকে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। তাদের মতামত নিচে প্রকাশ করা হল।
Imtiaz Mahmood
29 June 2025
·
মুরাদনগরে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনাটার বর্ণনা দেখেছেন আপনি? না, নারীটিকে কোথাও একা পেয়ে ধর্ষণ করেছে বা সেরকম কোন ঘটনা নয়। মেয়েটি যে বাড়ীতে ছিল সেখানে গিয়ে ধর্ষক তার ধরণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। ভয়ে নারীটি ঘরের দরোজা আটকে দেয়। ধর্ষক দরোজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে ও নারীটিকে ধর্ষণ করে চলে যায়। ভাবখানা যে ধর্ষণ করা তার অধিকার এবং ধর্ষণ করা থেকে কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারবে না। বিস্ময়কর লাগছে? আরেকটা তথ্য যুক্ত করি, তাইলে আর অবাক লাগবে না।
নারীটি ধর্ম বিশ্বাসে হিন্দু আর ধর্ষক একজন মুসলমান। এই পোড়ার দেশে একটি হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করতে চাওয়া খুব বড় কোন অপরাধ বিবেচিত হয় না। আসলে ধর্ষণ ব্যাপারটাকেই আমাদের দেশে এমনিতে বড় কোন অপরাধ বিবেচনা করে না বেশিভাগ মানুষ। ধর্ষণের শিকার নারীকেই সাধারণত কোন না কোনভাবে দায়ী করা হয় ধর্ষণের জন্য। মুরাদনগরের মেয়েটি শুধু যে নারী সেটাই কেবল নয়, তিনি একজন হিন্দু নারী। নারীকে আমরা পূর্ণ মানুষ মনে করিনা এবং হিন্দুদেরকে আমরা পূর্ণ নাগরিক মনে করি না। ফলে হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধর্ষক যদি কোন সঙ্কোচ না করে বা ভয় না সেটাতে তো বিস্ময়ের কিছু নাই আরকি।
না, কেবল বিচারের দাবী করছি না। বিচার পাওয়া তো ভিক্টিমের অধিকার, আর সেটা নিশ্চিত করা সে তো সরকারের দায়িত্ব। বিচার তো হবে। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করছি, সত্যটা এড়িয়ে যাবেন না- মুরাদনগরের এই ঘটনাটি একটি সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের ঘটনা। এইটা যতদিন আমরা স্বীকার না করবো, ততদিন আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে পারবো না। এইটা একটা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস- এই নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তিনি হিন্দু বলেই। ওঁর জায়গায় একজন মুসলিম নারী হলে ধর্ষক সম্ভবত এতো বেপরোয়া হতো না।
আপনি আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলুন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন মানুষই নিজেকে পূর্ণ নিরাপদ মনে করে? করে না। হিন্দুরা আমাদের এখানে সবসময় আতঙ্কে থাকে, একজন হিন্দু এই দেশে মুসলমানদের সমান ভাতে পারে না নিজেকে। কেন? কারণ সেই ১৯৪৭ থেকে অদ্যাবধি এই দেশে আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। আমি এমন পরিবার জানি, যারা নিজের মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, সেইখানেই পড়াশুনা বিবাহ ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে। কেন? কারণ মেয়েটির বাবা মা এই দেশে নিজের কন্যাকে নিরাপদ মনে করেননি। আপনি কি এইরকম কাউকে জানেন না? খোঁজ নিন আপনার আশেপাশে, দেখবেন, পাবেন।
প্রকৃত সমস্যা উপেক্ষা করবেন না। প্রকৃত কারণটি চিহ্নিত করুন এবং সেটা স্পষ্ট কণ্ঠে স্বীকার করুন। আমাদের দেশে তীব্র সাম্প্রদায়িকতা বিরাজ করে এবং প্রতিদিন প্রতি সপ্তা প্রতি মাস দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দুদের সাথে অন্যায় করি আমরা। এমনিতেই দেশের সকল মানুষই আতঙ্কে থাকে, পুলিশ ঠিকমত কাজ করে না, প্রতিনিধিত্বমুল সরকার নাই, গুণ্ডার দল কখন কার বাড়ীতে দলবেঁধে এসে হাজির হবে কেউ জানেনা। হিন্দু নাগরিকদের এই নিরাপত্তাহীনতা মুসলিম নাগরিকদের তুলনায় দ্বিগুণ, কেননা বাড়তি হিসাবে ওদের প্রতিনিয়ত শঙ্কায় থাকতে হয় সম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের। কেবল ধর্মবিশ্বাসের কারণে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হওয়া এই দেশে অভিনব কিছু নয়।
মেহেরবানী করে সাম্প্রদায়িকতাকে আরেকটি আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি ইস্যু ভাববেন না। সাম্প্রদায়িকতা এখন এমনভাবে ছড়িয়েছে যে এমনকি আপনি যাদেরকে বাম প্রগতিশীল লিবারেল বা সেক্যুলার হিসাবে চেনেন, ওদের পেটের মধ্যেও ঠিকই লুকিয়ে থাকে সাম্প্রদায়িকতা। আমি তো এমনকি একজন দুইজন কমিউনিস্টের মুখেও ঐসব কথা শুনেছি, যেগুলি স্পষ্টতই পেটের অভ্যন্তরে বিরাজমান সাম্প্রদায়িকতা থেকে উৎসারিত।
ভুলে যাবেন না, সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা দেশ কখনোই সভ্য হতে পারে না, গণতন্ত্র তো দূর কি বাত।
----------
![]() |
লেখক সুষুপ্ত পাঠকের মতামত |
সুষুপ্ত পাঠক
29June 2025
কুমিল্লায় হিন্দু নারীকে ধর্ষণের পর জাতীয় জাষ্টিফিকেশন :
-ধর্ষকের কোন ধর্ম নাই।
-ইসলাম ধর্ষণ অনুমোদন করে না।
-এগুলো ভারতেও হয়।
-হিন্দু নারী ধর্ষণ হচ্ছে না বলে শুধু নারী বলুন।
-ভারতের আসন্ন নির্বাচনের আগে হিন্দুত্ববাদীদের এরকম একটা ঘটনার দরকার ছিল।
-এই ঘটনায় ভারতই লাভবান হবে।
-হিন্দু হওয়ার কারণে নয় জমিজমা নিয়ে সমস্যা ছিল।
-বিষয়টি রাজনৈতিক, হিন্দু হিসেবে করা হয়নি।...
0 Comments