নির্মলকুমার বসু লিখিত 'সাতচল্লিশের ডায়েরী' বই থেকে একটি হিন্দুবিদ্বেষী ঘটনা

নির্মলকুমার বসু লিখিত 'সাতচল্লিশের ডায়েরী' বই থেকে একটি হিন্দুবিদ্বেষী ঘটনা
নির্মলকুমার বসু লিখিত 'সাতচল্লিশের ডায়েরী' বই থেকে একটি হিন্দুবিদ্বেষী ঘটনা
 

আমার নাম শ্রী হরেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী। সাং বটগ্রাম। থানা বেগমগঞ্জ। গত ১৪/১০/৪৬ ইং সোমবার স্থানীয় কতিপয় মুসলমান আমাকে ও আমার বাড়ীর লোকজনকে জোর করিয়া ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করিয়াছিল এবং আমাদের বাড়ি হইতে ২০ টাকা লিগের চাঁদা আদায় করিয়া নিয়াছিল। এই ঘটনার পর তিনদিন পর অর্থাৎ ১৭ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার অনুমান রাত্রি ১১টার সময় ৮/১০ জন মুসলমান গুণ্ডা বাড়ীর ভিতরে ঢুকিয়া আমার বৃদ্ধ খুড়োমহাশয় শ্রীযুত অক্ষয়কুমার চক্রবর্তীকে (তিনি আজীবন বটগ্রাম উচ্চ প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক ছিলেন) তাঁহার ঘরের সম্মুখে হইতে জোর করিয়া এই বলিয়া টানিয়া লইয়া যায় -


"তুমি মুসলমান হইয়াছ, কিন্তু এখনও দুর্গানাম ছাড় নাই। তোমার একখানা চিঠি আমার হাতে ধরা পড়িয়াছে। তাহার প্রারম্ভে শ্রীদুর্গা নাম লেখা আছে, তোমাকে দুর্গার সঙ্গে বলি দিব।"


আমি আমার ঘর হইতে এই কথাগুলি স্পষ্ট শুনিয়াছি এবং খুড়োমহাশয়কে রক্ষা করিবার জন্য ঘর হইতে বাহির হইবার চেষ্টা করিলে গুণ্ডারা ধমক দিয়া বলে যে কেহ যদি ঘর হইতে বাহির হও কল্ল্য উত্তর দিব। আমার আর একজন খুড়া শ্রীযুত দেবেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিলেন কিন্তু তাঁহাকেও এইভাবে ধমক দিয়া ঘরে ঢুকাইয়া দেয়। আমার খুড়োমহাশয়কে দুর্বৃত্তগণ ধরিয়া লইয়া যাইতে থাকিলে তিনি কাঁদিতে কাঁদিতে বলেন-


"বাপু, তোরা অনেকে আমার ছাত্র, আমাকে প্রাণ ভিক্ষা দে, আমার অপরাধ মার্জনা কর।”


কিন্তু দুবৃত্তরা তাঁহার কোন কথা কর্ণপাত করে নাই। তাঁহাকে তাহারা কোথায় লইয়া গিয়াছে ও কি করিয়াছে আজ পর্য্যন্তও জানা যায় নাই। জনরবে শুনা যায় তাঁহাকে কাটিয়া দক্ষিণ যুগীবাড়ীর সম্মুখের পুকুরের পূর্ব্ব দক্ষিণ কোণে কবর দেওয়া হইয়াছে এবং সম্প্রতি ঐ কবর হইতে মৃতদেহ কোন অজ্ঞাতস্থানে সরানো হইয়াছে। এই দুর্বৃত্তগণের মধ্যে আমি কয়েকজনকে চিনিয়াছি ও সনাক্ত করিতে পারি। ইহাদের নাম: -


  • ১) আনওয়ার উল্লা পিতা মৃত আবদুল।
  • ২) আনওয়ার উল্লার ভাই একটী নাম জানিনা।
  • ৩) মহম্মদ
  • ৪) আউশী (ডাক নাম) বাড়ী করিমপুর। সে আমাদের গ্রামে এনায়েতুল্লা ভুঞার বাড়ীতে থাকে।
  • ৫) মুসলিম পিতা মৃত রজ্জব আলি। সাকিন বটগ্রাম।


গতকল্য ২৬/১০/৪৬ ইং পুলিশ আমাদের বাড়ীতে গিয়া আমাদের সকলকে উদ্ধার করিয়া নিয়া বেগমগঞ্জে আনিয়াছে।


আমার খুড়া অক্ষয়বাবুর বয়স ৭৩ বৎসর ছিল। আমি থানায় এজাহার করিয়াছি।


শ্রী হরেন্দ্রকুমার চক্রবর্তী

২৭.১০.৪৬ (ইং)

তথ্যসূত্র: সাতচল্লিশের ডায়েরী, নির্মলকুমার বসু।


সূত্র: অগ্নিবীর

Post a Comment

0 Comments