৭১২ সালে, ইরাকের শাসন কর্তা ‘হেজাজ’ এর ভাইপো ‘মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের ‘ঘুর’ রাজ্যে থেকে আসা ‘মোহাম্মদ ঘোরী’ কেউ ভারতে বসবাস করেনি। এরা সবাই ভারতীয় হিন্দুদের ধন সম্মপত্তি লুট করে নিয়ে নিজের দেশে গিয়ে তাদের আরামদায়ক প্রাসাদ বিলাস বৈভবের মধ্যে বাস করেছ। নিজেদের দেশে চলে যাবার সময়, নিজের বশংবদ কাউকে শাসন কর্তা হিসাবে রেখে গেছে যারা নিয়মিত ভাবে সেই লুটেরা বিদেশীর বিলাসিতার যোগান দিয়ে গেছে। মুহাম্মদ বিন কাসিম থেকে শুরু করে সুলতানী আমল এমনকি মোঘল আমলেও তুরষ্কের বিলাসবহুল প্রাসাদে বাস করা খলিফার খেদমতগারী করা এই আরবী এবং তুর্কি দের একমাত্র কাজ ছিলো।
আমাদের ধারনা, ব্রিটিশ শাসনেই ভারতীয় হিন্দু দের সর্বনাশ হয়েছে । ১৯০ বছরে লন্ডন সমৃদ্ধিশালী হয়েছে ভারতীয় অর্থে, আর আমরা দরিদ্র হয়ে গেছি। আমরা তাই নিয়ে আজো বিশদ ভাবে তর্ক বিতর্ক ইতিহাস ঘাটা ঘাটি করে চলেছি। কিন্তু, ১০০০ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে যে বিপুল ধন সম্পদ আরব, ইরাক, ইরান, বাগদাদ, ব্যাবিলন, সিরিয়া,দামাস্কাস, তুরষ্ক, ইস্তানবুল, কাবুল, গজনী ইত্যাদি শহর গুলোকে এবং আমাদের ঘরের কাছে, বুখারা , সমরখন্দ, তাসখন্দ ইত্যাদি শহর গড়ে ঊঠেছে তা নিয়ে মোটাই চিন্তা ভাবনা করি না। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস শুরু হয় গান্ধীকে নিয়ে। কিন্তু আমাদের পরাধীনতার ইতিহাস, যা আমরা প্রকারান্তরে আজো আছি এবং সম্ভভবত ভবিষ্যতে হতে চলেছি । যে মোঘলদের নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, সেই মোঘল শাসনের সুত্রপাত যাকে দিয়ে, সেই বাবুর তার লেখা ‘বাবুর নামা’য় সারা জীবন তার সাধের ‘কাবুল’ এ বাস না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গেছে। এই সব বিদেশীদের বংশ ধর আজো তাকিয়ে থাকে পশ্চিমের দিকে,পুবের দিক তাদের না পছন্দ। অথচ তারাই আমদের কাছে মহান এবং তাদের আজো আমরা আমাদের পোষ্য পুত্র করে রেখে দিয়েছি।, একের পর এক নিজ ভুমি তাদের হাতে তুলে দেবার সব ব্যাবস্থা, আন্দোলন করে চলেছি।
১০০০ বছর ধরে কতো হিন্দু সম্পত্তি লুন্ঠিত হয়ে বিদেশে গেছে??? তার পরিমান কতো????
এখানে শধু গজনীর মাহমুদ ৩০ বছরে ১৭ বার ভারত আক্রমন করে যে ধন সম্পত্তি তার দেশে নিয়ে গেছে সেই খতিয়ান দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুর অর্থে গজনীর শহর তৈরী হয়েছিলো। শুধূমাত্র মাহমুদের প্রাসাদ (যা তার আততায়ীরা পুড়িয়ে দিয়েছিলো) তৈরীতে খরচ হয়েছিলো ৭০ লক্ষ স্বর্ন মুদ্রা, যার একটির ওজন ছিলো ১২০ গ্রাম। কতো সেই অংক টা????? হিসাব করুন। ১৯০ বছরে ব্রিটিশ তার ১০০ ভাগের এক ভাগ ও নিতে পারেনি, কারন নিয়ে যাবার মতো বিশেষ কিছু আর বাকি ছিলো না। ঝড়তি পড়তি যা স্থানীয় মুসলিম শাসক দের কাছে পড়েছিলো বা জিহাদীদের নজরে পড়েনি, তাই নিয়ে গেছে ,যেমন “কোহিনুর”, আর বেশী কি????
নীলের (ইন্ডিগো) কথা বলছেন??? ইংরেজ আমলের অনেক আগে থেকেই ‘নীল” এই দেশে চাষ হতো এবং তা গেছে ঐ সব আরবী, তুর্কি দুনিয়ায়। ভারতের সব মসলিন দিয়েই তৈরী হতো খালিফা,সুলতান, আমীর উমরাহ দের পোষাক আসাক, দরজা জানালার পর্দা।
এই হিসাব, কারো কষ্ট কল্পিত কাহিনী নয়। মাহমুদের সচিব ‘আবু নাসের মোহাম্মদ উথবী’, যে সেই হিসাব স্বযত্নে লিখে রেখেছিলো তার মনিবের জন্য এবং তার কাছে হিসাব দেবার জন্য, সেই হিসাব আজ আমাদের সামনে এসেছে। তার ভিত্তিতে লেখা ঐতিহাসিক কে এস লাল’এর লেখা ভারতে ইসলামিক আগ্রাসনের তিন অধ্যায় ( সিন্ধু বিজয়, গজনীর মাহমুদ এবং ঘোরী –পৃথ্বীরাজ)। সেই থেকে সংকলিত হয়েছে, “THe legacy Of Jihad Edited by Andrew G Bostom”.Published by Prometheus Books, New York.Page-440-446. আমি শধু বাংলা ভাষায় তার সার সংক্ষেপ করেছি আপনাদের জন্য। দেখুন সেই হিসাব, যে হিসাব আমাদের কাছ থেকে আজ অবধি লুকিয়ে রাখা হয়েছে আমাদের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবার জন্য।।
*** হিসাব কষার আগে এটা জানতে হবে ‘দিনার’ এবং ‘দিরহাম’ কাকে বলে। দিনার হচ্ছে এক একটি স্বর্ন মুদ্রা যা সেই সময় প্রচলিত ছিলো আরবে। ভারতে সেটা স্বর্ন মুদ্রা নামেই প্রচলিত ছিলো। একটি স্বর্ন মুদ্রায় থাকতো ১২০ গ্রাম খাটি সোনা। বর্তমান বাজার মুল্যে সেটা দাঁড়ায় প্রায় ৩৬০০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার) একটি স্বর্ন মুদ্রার দাম। সেই সময় ১ টাকায় ৪০ মন চাল বাজারে পাওয়া যেতো।
- ১) মাহমুদ ‘হিন্দু শাহী রাজ’ রাজা জয়াপাল এবং তার ১৫ জন আত্মীয়, সৈন্যাধক্ষ্য কে আটক রেখে ২৫০,০০০ (আড়াই লক্ষ দিনার ) এর মুক্তিপন আদায় করে।
- ২) রাজা জয়াপালার গলার নেকলেস টির সেই সময়কার দাম ছিলো ২০০,০০০ (দুই লক্ষ দিনার)। সেটি মাহমুদ নিয়ে যায়।
- ৩) রাজা জয়াপালার আত্মীয় স্বজন দের গায়ের গহনা ইত্যাদির মোট মুল্য ৪০০, ০০০ (চার লক্ষ ) দিনার
- ৪) ‘ভেরা’ শহর, যাকে মাহমুদের সেক্রেটারী ‘উথবী’ উল্লেখ করেছে, ‘ মানুষ যতোটা কল্পনা করতে পারে তেমনি সম্পদশালী’ ছিলো। সেই ভেরা লুট করতে প্রায় ২ বছরে ২ বার মাহমুদকে আসতে হয়। সমস্ত ধন দৌলত নিয়ে যেতে কয়েক হাজার ঊঠ নিয়ে আসতে হয় ।
- ৫) ১০০৫ থেকে ১০০৬ সাল লেগে যায় ‘মুলতান’ লুট করতে । সেখান থেকে যে সম্পত্তি নিয়ে যায় তার মোট মুল্য ২০,০০০,০০০ (কুড়ি লক্ষ) ‘দিরহাম’ (রৌপ্য মুদ্রা)
- ৬) রাজা জয়াপালের এক সেনাপতি যাকে মাহমুদ মুসলমান বানিয়ে নাম দিয়েছিলো ‘নওয়াশা শাহ’, সে রাজা জয়াপালের আগুনে আত্মাহুতি দেবার পর পুনরায় হিন্দু হয়। মাহমুদ তাকে পরাজিত এবং আটক করে। তাকে শুধু হত্যা করে তাই নয় তার সব সম্পত্তি যার মোট মুল্য ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) দিরহাম (রৌপ্য মুদ্রা)
- ৭) মাহমুদ “ভীম নগর” দুর্গ দখল করে সেখানকার ‘হিন্দু শাহী মুদ্রা’ র ৭০,০০,০০০ (সত্তর লক্ষ) লুট করে নিয়ে যায়। ‘ভীম নগর’ দুর্গে ছিলো একটি পুজা মন্ডপ। সেটি ছিলো ১৫ গজ (৪৫ ফুট) চওড়া, ৩০ গজ (৯০ ফুট) লম্বা। তার দুটি খুটি ছিলো সোনার,দূটি রুপোর, ওপরের ছাঊনি (গম্বুজ) রুপোর । মন্ডপটি খুলে রাখা যেতো। সেটি সে নিয়ে যায়। তার মুল্য ‘উথবী’ উল্লেখ করে নি।
- ৯) ‘বারান’ (বুলন্দসর) থেকে মাহমুদ লুট করে ১০,০০০,০০০ (দশ লক্ষ) রৌপ্য মুদ্রা।
- ১০) ‘মথুরা’ মন্দির লুট করে ৫ টি সোনার ‘রাধা –কৃষ্ণ’ মুর্তি নিয়ে যায়, যার মোট ওজন ৯৮৩০০ মিসকাল (দশ মন) । তাছাড়া মোট ২০০ টি রৌপ্য নির্মিত নানা দেব দেবীর মুর্তি নিয়ে যায়।
- ১১) কনৌজ, মুঞ্জ,আশনি, সার্বা ইত্যাদি লুট করে অপরিমিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে যায়।
- ১২) ‘সোমনাথ’ মন্দির থেকে মাহমুদ নিয়ে যায় এক বিপুল ঐশ্বর্য্য। তার পরিমান শুনলে পরম বিশ্বাসীর ও অবিশ্বাস হবে। কিন্তু ‘উথবী’ র লেখা বিশ্বাস না করে কার কথা বিশ্বাস করবো? সেই লুটের মোট অংক উথবী করেছে ২০,০০০, ০০০ স্বর্ন মুদ্রা বা ‘দিনার’।
- ১৩) লুটের বহর ৩০ বছরে এতো বিশাল ছিলো যে মাহমুদ, সেই অপর্য্যাপ্ত সম্পদ দেখভাল করা এবং সুষ্ঠ ভাবে গজনীতে নিয়ে যাবার জন্য দু জন হিসাব রক্ষক এবং ব্যাবস্থাপক নিযুক্ত করে। সেই দুজনের নাম ও উথবী বার বার উল্লেখ করেছে। সেই দুই মহাপুরুষ হচ্ছেন ‘আলতুন্টাস’ এবং ‘আশীক্তিন’।
- ১৪) শুধু মাত্র সুলতান নয়। তার সৈন্য সামন্ত হিন্দু রাজাদের মৃত হিন্দু সৈন্যদের দেহ তল্লাশী করে তাদের গয়না পত্র, সাধারন হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুট করে তাদের সম্পত্তি নিয়ে যায়। লুটের এই ‘মহা সুযোগ’ নিতে স্থানীয় হিন্দু লোকের মধ্যেও মাহমুদের সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য কাড়া কাড়ি পড়ে যায়।
- ১৫) শাহী সাম্রাজ্য থেকে লুটের বহর এমনই ছিলো যে, রাজা জয়াপাল, আনন্দপাল, ত্রিলোচন পাল, কারো মুদ্রা আজো খুজে পাওয়া যায়নি।
- ১৬) অর্থনিতী বিদেরা বলেন “ মাহমুদের লুটের পর অর্থের বন্যা ভারত থেকে চলে গেলো সিন্ধুর পশ্চিম পারে। গজনীর এবং আরবী দুনিয়ার মুদ্রা (দিনার এবং দিরহাম) শক্ত পোক্ত হয়ে শুধু স্থিরতা পেলো তাই নয়, হয়ে গেলো বিশেষ দামী। ভারতীয় স্বর্ন মুদ্রার সোনার পরিমান ১২০ গ্রামের জায়গায় নেমে এলো ৬০ গ্রামে আর রৌপ্য মুদ্রার দাম আর প্রায় রইলো না ব্যাবসার জন্য। সারা দুনিয়ার কাছে ভারতীয় মুদ্রা আর খুব বেশী আকর্ষনীয় রইলো না”।
সূত্র: ফেসবুক পোস্ট
0 মন্তব্যসমূহ